কারো মোবাইল নেই? এ কেমন কথা! এ কেমন বচন! এটিও বিশ্বাস করা যায়! নাকি বিশ্বাসের যোগ্য! কেমন জানি শোনায় কথাটি! বড় আজগুবি! অবিশ্বাস্য! এবং সবাই ভাববে মানুষটি বোধ হয় স্বাভাবিক নেই। স্বাভাবিকই যদি থাকবে তবে মোবাইল নেই কেনো? এমনই বিস্ময় কাজ করবে মোবাইলের বিষয়ে। তাই সবার হাতেই এখন মোবাইল। বড়দের তো বটেই। কিশোরদের হাতও মোবাইলশূন্য নয়। কারো কারো হাতে দুটি, এমনকি তিনটিও দেখা যায়। ব্যবসায়ী হলে তো অন্তত দুটি মোবাইল লাগবেই। নইলে মান রক্ষা হবে কি করে! নেতা হলেও দরকার একের বেশি সেট। নেতার ভাব আছে না!

অভিনেতা, অভিনেত্রী, গায়ক, নায়ক এবং মডেলদের হাতেও কমপক্ষে দু’টি, কারো কারো তিনটিও থাকে। শহর নগর তো আছেই, গাঁও গেরামেও সবাই ব্যবহার করে মোবাইল। সবার হাতেই মোবাইলের আয়োজন। শিক্ষিত, অশিক্ষিত, অর্ধ-শিক্ষিত বাকি নেই কেউ। গরিব, মিসকিন, ফকির সবার কাছে আছে এর উপস্থিতি। এমনকি যাদের ঘর নেই। যারা রাস্তায় বসত করে এমন লোকেরাও মোবাইল সংরক্ষণ করে। ছাত্র-শিক্ষক, হুজুর-দরবেশ, আলেম-ওলামা, ব্যবসায়ী-বেকার সবাই এর আওতায়। ইমাম-মুয়াজ্জিন-মুসল্লি সবাই ব্যবহার করেন ফোন।
মোবাইল এখন শুধু জরুরি নয়। অতি জরুরি জিনিস। ঘরে বাইরে অফিস-আদালতে, পথে, হাটে, মাঠে, ঘাটে, পাহাড়-পর্বতে, জঙ্গলে এবং সমুদ্রের বুকে এমনকি আকাশেও মোবাইলের জয়জয়কার।
নিত্য এবং অতি নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু এখন মোবাইল। মানুষের সুখে-দুঃখে খবরাখবরে মোবাইল এখন জীবনের সঙ্গী। মোবাইল ছাড়া কেউ এখন জীবন কল্পনাও করে না। করা যায় না। সম্ভবও নয়। যেখানে যখন যেমন হোক, মোবাইল সঙ্গে থাকতে হবে। মোবাইল নেই তো মনে হয় জীবনের অনেক কিছুই নেই।
মোবাইল প্রয়োজনের জিনিস। সত্যিই প্রয়োজনের। এই ছোট্ট যন্ত্রটি কত যে সহজ করে দিয়েছে জীবন যাপনের সব। ভাবা যায় না। শুধু মোবাইল বাদ দিয়ে একবার নিজেকে ভবলে বোঝা যায়! মন চেতিয়ে ওঠে ঠিক। চিৎকার করে ওঠে সহসা। বলে-না না। মোবাইল বিনে জীবন চলে না। চলবে না।

সুতরাং কাজের জন্য যোগাযোগের জন্য এবং আনুষঙ্গিক প্রয়োজনে মোবাইল দরকার। ভীষণ দরকার।
কিন্তু কথা হচ্ছে- যাদের জীবন শুরু হয়নি অর্থাৎ শিশু-কিশোর যারা তাদের হাতে মোবাইল কতটা নিরাপদ! কতটা প্রয়োজন তাদের। তারা কিভাবে ব্যবহার করে মোবাইল নামক অতি প্রয়োজনীয় যন্ত্রটি! এর উপর নির্ভর করছে শিশুটির ভাবিষ্যৎ। ছোটরা মোবাইলে কি করে?
গেম খেলে। কার্টুন দেখে। বিভিন্ন ফানি ভিডিও দেখে। কিন্তু এসব দেখতে দেখতে বেশির ভাগ ছেলে-মেয়েদের আসক্তি হয়ে যা মোবাইলে। তখন পাড়ালেখার বিষয়ে অনীহা দেখা দেয়! পড়তে বসলে মন থাকে না পড়ায়! কোনো পড়াই মুখস্থ হয় না। স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যায়। মেজাজ খিটখিটে হয়ে পড়ে। সাধারণ কথাবার্তা কমে যায়। একা থাকতে পছন্দ করে। মা-বাবার চোখের আড়ালে থাকার চেষ্টা করে। এমনকি খাওয়া-দাওয়ার প্রতিও অনীহা দেখা দেয়। কিছু বললেই মেজাজ চড়া হয়ে যায়। এভাবেই জীবন অন্যরকম হয়ে যায়। আর এ সমস্যাটি এখন ঘরে ঘরে। এটি এমন এক সমস্যা এ থেকে সহজে মুক্তিও মিলবে না। মিলছে না। মোবাইল নেশা বড় খারাপ নেশা হয়ে উঠেছে।
অথচ মোবাইল দিয়ে ভালো কাজও করা যায়। ভালো কাজে ব্যবহার করা যায়। লেখাপড়ার কাজে, ভালো কিছু শেখার কাজে এবং গুরুত্বপূর্ণ কোনো কিছু জানার কাজে ব্যবহার করা যায়। গান শেখা যায়। কবিতা আবৃত্তি শেখার সুযোগ আছে। আছে ছবি আঁকা শেখার সুযোগ। ভাষাও শেখা যায়। বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থ সম্পর্কে জানা যায়। পবিত্র কোরআন শরীফ শেখাও খুব সহজ হয়ে উঠেছে। প্রয়োজনীয় হাদীস শেখার সুযোগও কম নয়! রান্না থেকে শুরু করে জীবনের প্রয়োজনীয় প্রায় সব বিষয় শেখা যায়।
কিন্তু কথা হচ্ছে মোবাইলের ব্যবহারটি যথাযথ করতে হবে। ছেলেমেয়েদের ভালো কাজে মোবাইল ব্যবহার করা শেখাতে হবে। শিখতেও হবে সবার। তবেই মোবাইল হবে ভালো কাজের যন্ত্র।

Share.

মন্তব্য করুন