পৃথিবীতে মানুষ সত্য ও মিথ্যা চিনবে কিভাবে? কিভাবে সত্য মিথ্যার পার্থক্য বুঝবে। সত্য গ্রহণ করলে কি লাভ! মিথ্যায় কি ক্ষতি! কী করে জানবে মানুষ? কিভাবে চলবে সত্যের পথে?
হ্যাঁ, এসব জানার জন্যেই মহান আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তাঁর নির্বাচিত এবং বিশ্বস্ত কিছু মানুষ। যাঁদের আমরা বলি নবী ও রাসূল। এসব নবী-রাসূলদের মাধ্যমে তিনি পাঠিয়েছেন আসমানি কিতাব।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. আমাদের নবী ও রাসূল। এবং তিনিই শেষ নবী। তাঁর পরে আর কোনো নবী বা রাসূল আসবেন না। তাঁর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে মহাগ্রন্থ আল কোরআন।
মহাগ্রন্থ আল কোরআনে মোট সূরা ১১৪টি।
এর একটি সূরার নাম- লুকমান। এটি পবিত্র কোরআনের ৩১তম সূরা। লুকমান একজন ব্যক্তি। তিনি নবী ছিলেন না। অথচ তাঁর নামে মহাগ্রন্থের একটি সূরা অবতীর্ণ করেছেন মহান আল্লাহ তায়ালা। কত বড় ভাগ্যবান ছিলেন এ ব্যক্তিটি। শুধু সূরাটি তাঁর নামে দিয়ে শেষ করেননি আল্লাহ তায়ালা। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে এখানে। হযরত লুকমান তাঁর পুত্রকে কিছু উপদেশ দিয়েছিলেন। সে উপদেশবাণী মহান আল্লাহ তায়ালার এতটাই পছন্দ হলো যে ছেলেকে দেয়া লুকমানের সেসব উপদেশ তিনি কোরআনে বর্ণনা করে দিলেন।
জানা যাক, কী ছিলো হযরত লুকমানের সেসব উপদেশমালা-
(লুকমান বলেছিলেন) ‘হে আমার পুত্র! যদি কোনো জিনিস সরিষার দানা পরিমাণও হয়, আর তা যদি পাথরের মধ্যে লুকিয়ে থাকে, অথবা আকাশে কিংবা পৃথিবীতে তবুও আল্লাহ তা বের করে নিয়ে আসবেন। তিনি সূক্ষ্মদর্শী এবং সবকিছু জানেন।
হে আমার পুত্র! নামাজ প্রতিষ্ঠা করো। ভালো কাজের আদেশ দাও। খারাপ কাজে নিষেধ করো এবং যতো বিপদ আসুক তাতে ধৈর্য ধরো। এ কথাগুলোর প্রতি বড় বেশি জোর দেয়া হয়েছে।
আর মানুষের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কথা বলো না। পৃথিবীর বুকে অহঙ্কার করে চলো না। যারা নিজেকে বড় ভাবে এবং অহঙ্কার করে নিশ্চয় আল্লাহ তাদের পছন্দ করেন না।
তুমি চলাফেরায় ভারসাম্য রাখো। এবং নিজের আওয়াজ নিচু করো। (মনে রেখো) সব আওয়াজের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ হচ্ছে গাধার আওয়াজ। (সূরা লুকমান, আয়াত : ১৬-১৯)

আহা কি চমৎকার করে বাবা তাঁর সন্তানকে উপদেশ দিয়েছেন। কি মূল্যবান এ উপদেশ। মহান আল্লাহ তায়ালা যে কত বড় ক্ষমতার অধিকারী! কি বিশাল তাঁর সামর্থ্য! বিষয়টি বোঝাতে চেয়েছেন পুত্রকে।
তারপর নামাজের উপদেশ দিলেন। ভালো কাজ করার এবং খারাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকার কথা বললেন। তারপর বিপদ আপদে ধৈর্য রাখার কথা বলেছেন। বলেছেন মানুষের সাথে কথা বলার একটি চমৎকার আদবের কথা- মানুষের সাথে মুখ ফিরিয়ে যেনো কথা না বলে অর্থাৎ সুন্দর এবং চমৎকার করে কথা বলতে হবে মানুষের সাথে। আর ঔদ্ধত্য এবং অহঙ্কার করে জমিনে চলাফেরা করা যাবে না। এখানে ভারসাম্য আনতে হবে অর্থাৎ মধ্যমপথ গ্রহণ করতে হবে। নিজের কথার আওয়াজ নিচু করার মানে ভদ্রতা ও নম্রতার সাথে শব্দ করা উচিত, কথা বলা উচিত। কেননা সবচেয়ে কর্কশ এবং খারাপ আওয়াজ হলো গাধার আওয়াজ।
এ বিশ্বজাহানের স্রষ্টা মহান আল্লাহ তায়ালার বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা নেয়া যায় এখান থেকে। একইসাথে নামাজ প্রতিষ্ঠার এবং ভালো কাজ করার প্রেরণা জাগে। এর পরের উপদেশ নিয়ে ঠিক এ কথাটি জোর গলায় বলা যায়- মানুষের জীবন সুন্দর করার জন্য এর চেয়ে আকর্ষণীয় ও মূল্যবান উপদেশ হতে পারে না।

Share.

মন্তব্য করুন