নাফিস উদ্দিন ফুয়াদ। ২০২০ শিক্ষাবর্ষে ঈশ^রদীর ইক্ষু গবেষনা কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ-৫ অর্জন করে এবং একইসঙ্গে সে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে প্রথম স্থান অধিকার করে। তার বাড়ি ঈশ^রদীর সাহাপুর ইউনিয়নের মহাদেবপুর গ্রামে; পিতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জনাব মোহাম্মদ মাসুম। বর্তমানে সে নটর ডেম কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। কিশোর পাতার পক্ষ থেকে তার সঙ্গে কথা বলেছেন সাদাত আনোয়ার

কেমন আছো নাফিস?
আলহামদুলিল্লাহ, আমি ভালো আছি।

এসএসসিতে তুমি রাজশাহী বোর্ডে প্রথম হয়েছো, তোমাকে অভিনন্দন। এই রেজাল্ট জানার পর তোমার অনুভূতি কেমন হয়েছিলো?
ধন্যবাদ। রেজাল্ট জানার পর আমি সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ তা’য়ালার কাছে অশেষ শুকরিয়া জ্ঞাপন করি, কারণ তিনি চেয়েছেন বলেই আমি ভালো ফলাফল করতে পেরেছি। সত্যিই এই ফলাফল আমার কাছে অবিশ্বাস্য ছিল। এটি আক্ষরিক অর্থেই আমার বিগত দশ বছরের শিক্ষাজীবনের শিখনফলের একটি মূল্যায়ন। তাই আমার বাবা-মা, সম্মানিত শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ, আত্মীয়স্বজন এবং সর্বোপরি সকল শুভাকাক্সক্ষী যাঁরা আমার পাশে ছিলেন, কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তাঁদের এই ফলাফল উপহার দিতে পেরে আমি আনন্দিত। এই ফলাফল আমাকে আগামীতে ভালো করার আত্মবিশ্বাস জোগাবে।

পরীক্ষার জন্য কিভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলে?
আমার দৈনন্দিন পড়াশোনা শুরু হতো পবিত্র কোরআন শরীফ অধ্যয়নের মাধ্যমে। নিজের সুবিধামতো তৈরিকৃত রুটিন অনুযায়ী পড়াশোনা করার চেষ্টা করতাম। কোনো পড়া জমিয়ে রাখলে তা আমার কাছে বোঝা মনে হতো, তাই প্রতিদিনের পড়া যথাসময়ে শেষ করতাম। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হিসেবে মুখস্থ করার চেয়ে বুঝে পড়াকেই প্রাধান্য দিতাম বেশি এবং দৈনন্দিন জীবনের সাথে পড়ার বিষয়বস্তু মেলাতে চেষ্টা করতাম। স্কুলে নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকতাম এবং শিক্ষকদের মূল্যবান দিকনির্দেশনা মেনে চলতাম। বিভিন্ন গাইড বই এবং কোচিংয়ের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম না।
পরীক্ষার আগে বেশি বেশি অনুশীলন করতাম। ঘড়ি ধরে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সৃজনশীল লিখতে এবং বহুনির্বাচনী প্রশ্নের উত্তর করতে চেষ্টা করতাম। সুন্দর হাতের লেখা ভালো ফলাফলের সহায়ক। তাই, পরীক্ষায় যথাসম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে লেখার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছি। স্বাস্থ্যের দিকেও নজর রাখতাম এবং মহান আল্লাহ তা’য়ালার কাছে ভালো ফলাফলের জন্য প্রার্থনা করতাম।

পড়াশোনার বাইরে আর কী কী করতে পছন্দ করো? এক্ষেত্রে তোমার কোনো উল্লেখযোগ্য অর্জন আছে কিনা, জানাও।
পড়াশোনার বাইরে আমি বিভিন্ন বই পড়তে পছন্দ করি। এছাড়াও অবসরে ছবি আঁকতে, লেখালেখি করতে, বাগানে গাছের যত্ন নিতে ভালোবাসি। বিভিন্ন সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমের আমি নিয়মিত অংশগ্রহণ করি। স্কুলে আমি বিতর্ক ক্লাব, সায়েন্স ক্লাব এবং বাংলাদেশ স্কাউটসের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন সময়ে রচনা, আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছি। ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে সৃজনশীল মেধা অন্বেষণের আমি বিভাগীয় পর্যায়ে ‘বাংলাদেশ স্টাডিজ ও মুক্তিযুদ্ধ’ বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করি। এছাড়াও ২০১৯ ও ২০২০ সালে বাংলাদেশ একাডেমি অফ সায়েন্সেস কর্তৃক আয়োজিত বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে আঞ্চলিক পর্যায়ে যথাক্রমে ষষ্ঠ ও চতুর্থ স্থান অধিকার করি। জীববিজ্ঞান উৎসব ২০২০-এ আঞ্চলিক পর্যায়ে রানারআপ হই। এছাড়াও বিভিন্ন অলিম্পিয়াড, কর্মশালাসহ শিক্ষামূলক কার্যক্রমে নিয়মিত অংশগ্রহণ করি।

বড় হয়ে কী হতে চাও?
স্থপতি।
বর্তমান পড়াশোনা নিয়ে বলো।
আমাদের এসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকে সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। কিন্তু এরই মধ্যে আমরা এক প্রকার নিরুপায় হয়েই অনলাইনে কলেজে ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পাদন করেছি এবং অনলাইনেই নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা চলছে। ব্যাপারটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতোই। নতুন এই পদ্ধতির সাথে খাপ খাওয়াতে আমাদের এবং শিক্ষকদের অনেক সময় লাগছে এবং এখনও এর কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক আছে। আমাদের শিক্ষকরা আমাদের সাধ্যমতো পাঠদানের জন্য নিবেদিতপ্রাণ, কিন্তু বিভিন্ন অবকাঠামোগত সমস্যা এক্ষেত্রে বাদ সাধে। অফলাইন ক্লাসে সশরীরে যেভাবে শিক্ষকেরা আমাদের স্বাচ্ছন্দে পড়াতে পারতেন এবং আমরা যেভাবে উদ্যম নিয়ে পড়তে পারতাম তা কোনোভাবেই অনলাইন ক্লাসে সম্ভব হচ্ছে না। আবার দেশের সিংহভাগ শিক্ষার্থী বিভিন্ন কারণে অনলাইন ক্লাসের সুবিধাটুকু থেকেও বঞ্চিত। এই অবস্থায় নিজে উদ্যোগী হয়ে পড়ার বিকল্প নেই। কোভিড-১৯ এর ক্রমবর্ধমান সংক্রমণে আপাতদৃষ্টিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কিন্তু এখন আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে এবং ছুটি বাড়তে থাকলে এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তেই থাকবে। আশা করছি যেন পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হয় এবং আমরা স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীরে ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারি।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, এ অবস্থায় করোনাকাল কীভাবে কাটাচ্ছো?
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও দিনের অনেকটা সময় অনলাইন ক্লাসে ব্যয় হয়। তবুও যেটুকু অবসর সময় পাচ্ছি সেটুকু বিভিন্ন বই পড়ে কাটাতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আমি নিয়মিত পত্রিকা পড়ি এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বের চলমান ঘটনাবলি জানতে চেষ্টা করি। এখন বাইরে কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই, কিন্তু প্রযুক্তির কল্যাণে সারা বিশ্বই কার্যত এখন হাতের মুঠোয়। বন্দিজীবনেও তাই চাইলেই বন্ধুদের সাথে কথা বলতে পারি এবং সময় কাটাতে পারি। এছাড়াও ছোট ভাই-বোনদের সাথে সময় কাটাই। লকডাউন আত্মোন্নয়নের একটা বড় সুযোগ আছে। এখন আমি ইংরেজিতে আরও উন্নতি করার চেষ্টা করছি।

কিশোর পাতার পাঠক বন্ধুদের উদ্দেশ্যে কী বলতে চাও?
আমি নিজেও কিশোর পাতার নিয়মিত পাঠক এবং জানি যে কিশোর পাতার পাঠক মাত্রই জ্ঞানার্জনে আগ্রহী। আমি সকল পাঠক বন্ধুকে এই জ্ঞানার্জন শুধু পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে অন্যান্য কথাসাহিত্য, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনী, কবিতা ইত্যাদি পড়তে বলব। অপসংস্কৃতি থেকে নিজেকে দূরে রেখে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে এবং স্বদেশ ও মানবজাতির কল্যাণের জন্য ভাবতে হবে। বর্তমানের এই মহামারী পরিস্থিতিতে নিরাপদ থাকতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং আশপাশের সবাইকে তা মানতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সবার কাছে আমি আমার জন্য দোয়া চাই এবং সবার জন্যই রইল অনেক অনেক শুভকামনা।

Share.

মন্তব্য করুন