ভালো সবসময় ভালো। খারাপ সবসময় খারাপ। ভালো যেমন খারাপ হয় না। তেমনই খারাপও ভালো হতে পারে না। ভালো খারাপের দ্বন্দ্ব পৃথিবীতে খুব পুরাতন। চিরকাল ভালোর প্রতিপক্ষ খারাপ। কিন্তু তবুও ভালো আছে। থাকবে। খারাপও আছে এবং থাকবে। ভালো থাকতে হলে খারাপের ওপর বিজয়ী হতে হয়। খারাপকে অস্বীকার করতে হয়। সাধনা করতে হয় অনবরত। কিন্তু খারাপ হওয়ার জন্য কোনো চেষ্টা বা সাধনা দরকার পড়ে না। বিনা পুঁজিতে খারাপ হওয়া যায়। কিন্তু ভালো হতে হলে পুঁজি লাগে। ভালো চিনতে হয়। জানতে হয়। চিনে ও জেনে মানতে হয়। মানতে গেলেই প্রয়োজন সৎ সাহসের।

একজন মানুষ কিভাবে ভালো হয়। কিভাবে ভালো থাকে। কিভাবে ভালো থাকতে হয়! ভালো থাকার পথ কী? এসবের জবাব এক কথায় দেয়া যায় না। যাবে না। কেননা ভালো থাকার জন্য কাজ অনেক। কিন্তু একটি পথ আছে। যে পথটি খুব সহজ। আবার খুব কঠিন। সহজ হয় যখন পথটি মানার বিষয়ে কেউ দৃঢ সঙ্কল্প করে। আর কঠিন এ কারণে- এ পথে চলতে হলে অনেক কিছু ত্যাগ করতে হয়। ত্যাগের বিষয়টি সবসময় কঠিন। সবসময় ভারি। ত্যাগের আনন্দ আছে। কিন্তু সে আনন্দ নিতে হলে সাহস লাগে। দৃঢ়তা লাগে। সাহস ছাড়া নির্ভেজাল আনন্দ নেয়া যায় না।

তবে এ কথা ঠিক সবাই শুধু অন্যের কাছে ভালো হতে চায়। সবাই চায় অন্যরা তাকে ভালো বলুক। বলুক- আরে এমন লোকই তো হয় না। এতো ভালো মানুষ হয় না। আমার দেখা সব চেয়ে ভালো মানুষ। এর কোনো তুলনা নেই। এমন কথা শুনতে কার না ভালো লাগে। কে না চায় তার বিষয়ে প্রশংসা হোক। তার আলোচনা করুক। তাকে বলুক- আপনি খুব ভালো। আপনার মন ভালো। আপনার কাজও ভালো। সত্যি এমন প্রশংসায় কে না গলে যায়! সবাই এমনই চায়। এমনই আকাক্সক্ষা সকলের। অথচ মানুষকে ভালো হতে হয় নিজের কাছে নিজের। নিজেকে ভালো হতে হয় নিজের বিবেকের কাছে।

কেনো নিজের কাছে ভালো হতে হয়? কারণ অন্যের চোখে ভালো হবার প্রবণতা যখন কারো মনে দেখা দেয়। তখন তিনি সত্যকে সবসময় ধারণ করতে পারেন না। সত্য ধারণ করতে গেলে কখনও কখনও কারো বিরুদ্ধে চলে যেতে হয়। কখনও অন্যের মন মতো কাজ হয়ে ওঠে না। অন্যের অপছন্দের জায়গায় দাঁড়াতে হয়। যখন অন্যের প্রশংসা পেতে কাজ করে তখন সত্য পরাজিত হয়।
কিন্তু কেউ যদি নিজের কাছে নিজে স্বচ্ছ থাকে। নিজের বিবেকের কাছে থাকে পরিষ্কার তখন তিনি সত্যকেই ধারণ করবেন। সত্যকেই লালন করবেন। তার কাছে কেবল জয় হবে সত্যের। তার হাত দিয়ে মিথ্যার পতাকা উড়বে না। কে খুশি হলো। কে হলো না। এই নিয়ে কোনো ভাবনা তাকে বিচলিত করে না। করবে না। কেউ অখুশি হলেও নিজের খুশিতে আনন্দিত থাকে সে।

সত্যি কথা হলো- অন্যের খুশির জন্য কাজ করলে কোথাও না কোথাও আপস করতে হয়। এবং আপসটি হয়ে যায় আসলের সাথে। তখন জয়ী হয়ে যায় নকল। নকল যখন জয় পায় আসলের ওপর তখন জীবন সুখের হতে পারে না। কিন্তু সত্যকে ধারণ করে যদি কাজ হয় তবে সত্যের জয় হয়। সত্য জেগে ওঠে। সত্য জেগে ওঠা মানে সুন্দর জেগে ওঠা। আর সত্য ও সুন্দরের মিলনেই সুখী হয় জীবন। ভালো থাকে জীবন।
এখানে বিষয়টি খুব করে বুঝতে হবে। ভালো থাকাটা অন্যের জন্য যতটা জরুরি। তার চেয়ে বেশি জরুরি নিজের জন্য। ভালো থাকলে নিজেরই লাভ। এবং নিজের লাভই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। খারাপ হলে নিজেরই ক্ষতি। এবং নিজের ক্ষতি সবচেয়ে বড় ক্ষতি।

আসলে ভালো থাকার ভালো মাপকাঠি হলো নিজের মনের কাছে ভালো থাকা। নিজের বিবেকের কাছে ভালো থাকা। যিনি নিজের কাছে ভালো থাকেন তিনি কখনও খারাপ কাজ করবেন না। অন্যের অগোচরেও না। কেউ না দেখলেও না। কেউ না বুঝলেও না। এই যে নিজের কাছে স্বচ্ছতা এটিই ভালো থাকার সবচেয়ে ভালো পথ। ভালো থাকার ভালো বিষয় এটিই।

একটি মজার ব্যাপার হলো- প্রকাশ্যে সবাই ভালো বলে। সবাই ভালোর স্বীকৃতিও চায়। একজন অপরাধী মানুষ তিনিও চান তাকে কেউ অপরাধী না বলুক। যে চুরি করে সেও চোর শব্দটি শুনতে চায় না। তারও ইচ্ছে অন্তত সামনাসামনি তাকে ভালো বলুক। কেউ যেনো চোর বলে না ডাকে। একইভাবে একজন ডাকাতও ডাকাত শব্দটি শুনতে চায় না। তার মানে খারাপ লোকটি খারাপ শব্দটি লোকমুখে শুনতে চায় না। মানতে চায় না। অথচ চুরি, ডাকাতি ভালো হবে কি করে! কিন্তু লোকটি যদি সত্যি বিবেকবান হতো। নিজের কাছে ভালো থাকতো। তবে সে ডাকাতি বা চুরি করার চেষ্টা করতো না। এমনকি চিন্তাও করতো না। অথচ এসব খারাপ করেও ভালো শব্দটি শোনার জন্য লালায়িত।

সমাজে ভালো লোকের সংখ্যা এখনও বেশি। এখনও ভদ্র মানুষ বেশি। এখনও বিবেকবান মানুষের সংখ্যাই বেশি। কিন্তু ভালো মানুষগুলো বিচ্ছিন্ন। এক হতে পারে না। পারছে না। সে কারণে খারাপ মানুষগুলো দাপটের সাথে বিচরণ করছে সমাজে। শুধু বিচরণ করছে ঠিক নয়। বরং নিজেদের ভালো বলে পুরস্কারও হাতিয়ে নিচ্ছে। একইসাথে ভালো মানুষগুলোকে বলছে খারাপ। অদ্ভুত সময়। অদ্ভুত সমাজ!
মানুষ নিজের সম্পর্কে খুব করে জানে- কি করে সে। কি করছে সে। এবং কতটা করছে। কতটা ভালো করে। কতটা মন্দ করে। নিজের ব্যাপারে নিজের জানাশোনা নিশ্চয় বেশি। নিয়তের গভীরে কি আছে। কোন নিয়তে কাজ করছে। নিজের ব্যাপারে সবই জানে মানুষ। তাই এ কথা বলতেই হবে- ভালো থাকতে হবে নিজের কাছে।

Share.

মন্তব্য করুন