বন্ধুরা, স্কুলব্যাগ আর বইপত্রের চাপে পিস্ট হচ্ছো? পড়াশোনা ভালো লাগে না! মনে হয় স্কুলে না গেলেই বাঁচি! এই স্বভাবটা কিন্তু রবীন্দ্রনাথেরও ছিল। তোমাদের বয়সে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও স্কুলে যেতে চাইতেন না। স্কুলের গণ্ডিবদ্ধ জীবন তার ভালো লাগতো না। তবে ছেলেবেলা থেকেই তিনি সাহিত্যের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। তাদের বাড়িতে জমতো সাহিত্য-আড্ডা। তখনকার বড় বড় কবি-সাহিত্যিকগণ আসতেন তাদের জোড়াসাঁকোর বাড়িতে। বড়দের আড্ডার এক কোনায় চুপটি করে বসে থেকে তিনি শুনতেন সব। মনের আগ্রহ না মিটিয়ে কি থাকা যায়!
বুক-শেল্ফ ছিল বইয়ে বইয়ে পূর্ণ। তিনি সেসব বই হাতে নিয়ে পাতা উল্টিয়ে নেড়েচেড়ে দেখতেন। এমনিভাবেই শিখে ফেলেন দুটি ভাষা। সংস্কৃত ও ইংরেজি। আর তার বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে ধর্মবিষয়ক জ্ঞান দানের জন্য বাড়িতে পুরোহিত রেখে দিলেন।

মাত্র নয় বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ লিখে ফেললেন তার জীবনের প্রথম ছড়া-কবিতা- “জল পড়ে, পাতা নড়ে” এই দুটি লাইন। তোমাদের কি কখনো কবিতা লেখতে ইচ্ছে করে?
তখন ছিলো দোয়াত কলমের যুগ। একটা কৌটার ভেতর থাকতো তরল কালি, আর সাথে থাকতো পাখির পালক বাঁধা একটা বাঁশের কঞ্চি। কঞ্চিটাকে কালিতে চুবিয়ে কাগজে অক্ষর লিখতে হতো। কিশোর রবীন্দ্রনাথের ইচ্ছে হলো গোলাপের সুগন্ধিযুক্ত কালি তৈরি করবেন। ভাবনা মতো কাজ। তার বড় ভাই জ্যোতিন্দ্রনাথকে নিয়ে বাগান থেকে কয়েকটি গোলাপ এনে জলে পাপড়ি চটকিয়ে সে জলকালির সাথে মেশালেন। তোমরাও কিন্তু তোমাদের ভাই বোনদেরকে সাথে নিয়ে এমন অভিনব কোনো সৃজনশীল কাজ করতে পারো।

তুমি পড়তে বসলে মা তোমার পাশে গ্লাসভরা দুধ নিয়ে বসে থাকেন, স্কুলে যাবার সময় বইপত্র গুছিয়ে দেন, টিফিন বাটিতে ভরে দেন মজার মজার খাবার। মাঝে মাঝে তোমাকে স্কুল পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসেন। তবু তুমি পড়াশোনা করতে চাও না।
আর এদিকে নজরুল দরিদ্রতার জন্য পড়াশোনার খরচ জোগাতে রুটির দোকানে কাজ করতেন, রেলওয়ে গার্ডের স্টাফদের সাথে ফুট-ফরমায়েশ করতেন। কোন নজরুল জানো তো? বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। এসময় পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর কাজী রফিজউল্লাহর সাথে তার পরিচয় হয়। রফিজউল্লাহ তার পড়াশোনার খরচ বহনের দায়িত্ব নেন।
স্কুলে নিয়মিত বিতর্ক প্রতিযোগিতা, নাট্যাভিনয়, কবিতা আবৃত্তি, রচনা ও সঙ্গীত প্রতিযোগিতার আয়োজন হতো। নজরুল একবার প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সা.-এর জীবনী ও রবীন্দ্রনাথের ‘পুরাতন ভৃত্য’ কবিতা আবৃত্তি করে প্রশংসিত হয়েছিলেন।
ক্লাসে তোমার রোল নাম্বার কত? নজরুল কিন্তু দুর্দান্ত মেধাবী ছিলেন। জানা যায়, প্রতি বছর বার্ষিক পরীক্ষায় তিনি প্রথম বা দ্বিতীয় হতেন।
ঘটনাটি অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময়ের। বাংলা ক্লাস। ক্লাসে নজরুল শিক্ষককে বললেন- স্যার, আপনি শুনুন। আমি পড়াচ্ছি। দেখুনতো ঠিকমতো পড়াতে পারি কিনা! নজরুল বাংলা পড়ালেন। প্রবীণ শিক্ষক মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতে লাগলেন। তার চমৎকার পড়ানোর কায়দা দেখে শিক্ষক অভিভূত। এমন যদি হয়, তুমি হয়ে গেলে তোমার স্কুলে সহপাঠীদের শিক্ষক, কেমন লাগবে?

তোমরা নিশ্চয়ই ভারতীয় বিজ্ঞানী এবং প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ.পি.জে আবদুল কালামের নাম শুনেছো? তিনি খুব দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন। তাঁর বাবা ছিলেন একজন নৌকার মাঝি। পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবারের খরচ জোগাতে তিনি সংবাদপত্র ফেরি করতেন। ভাবতে পারো! তোমার মতো অল্পবয়সী একটা ছেলে কাঁধে এত্তগুলো সংবাদপত্র নিয়ে ট্রেনে, বাসে, ট্রামে দাঁড়িয়ে বিক্রি করছে। তুমি তো স্কুলে যাবার সময় নিজের বইগুলোই কাঁধে নিতে চাও না।
মা যখন রান্নাবান্না নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন, আবদুল কালাম তার ছোট ভাইবোনদের দেখাশোনা করতেন। স্কুলে তিনি খুব ভালো ছাত্র ছিলেন এমন নয়, তবে তার আচার-আচরণ দেখে শিক্ষকরা তাকে খুব ভালোবাসতেন। কিন্তু সহপাঠীরা তার কাছে ঘেঁষতে চাইতো না। কারণ তিনি গরিব ছিলেন, দেখতে অসুন্দর ছিলেন। তোমার ক্লাসের গরিব বন্ধুটিকে কিন্তু তুমি কখনো অবহেলার চোখে দেখো না, অসুন্দর বলে অবজ্ঞা করতে যেও না। বন্ধুত্ব যে কারো সাথে হতে পারে। আবদুল কালাম বই পড়তে ভালোবাসতেন, জ্ঞানচর্চার প্রতি তার তীব্র আকর্ষণ ছিল। তিনি বলেছেন, “একটি বই একশটি বন্ধুর সমান, কিন্তু একজন ভালো বন্ধু পুরো একটি লাইব্রেরির সমান।”

Share.

মন্তব্য করুন