বৃষ্টি কেনো হয়? বৃষ্টি হয় মানুষের প্রয়োজনে। জীবনের প্রয়োজনে। ফলফলাদি ও ফসলের প্রয়োজনে। বৃষ্টি যদি না হতো পৃথিবীতে কোনো প্রাণ বেঁচে থাকা সম্ভব ছিলো না। কোনো প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্ম হতো না। কোনো নদী ও ঝর্ণা বইতো না। শুধুমাত্র ফসলের কথাই যদি ধরি- তাহলেও বিস্ময় জাগে! জাগে কারণ বৃষ্টি না হলে মাটি শুকিয়ে ফেটে চৌচির হয়ে যায়। একটি ঘাসও জন্মায় না। সুতরাং ফসল জন্মাবে কেমন করে! ফসল যদি না হতো কি করে বেঁচে থাকতো মানুষ! কি আহার করতো তারা। কি মুখে পুরতো ক্ষুধার তাড়নায়! উদ্ভিদ এবং বৃক্ষও যদি না জন্মাতো তাও মানুষের বাঁচা কঠিন ছিলো। তাই বলতে হয়- বৃষ্টি মহান সৃষ্টি কর্তার বিরাট দান মানুষের প্রতি। সেই সাথে সৃষ্টির অসাধারণ এক কৌশলও বটে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কীভাবে বৃষ্টি হয়? এই নিয়ে এক সময় ছিলো বড় জিজ্ঞাসা। মানুষ বুঝতে পারতো না কী করে বৃষ্টি হয়? কীভাবে মেঘ জমে আকাশে!? কেমন করে বৃষ্টি নামে আকাশ থেকে! একটি স্বচ্ছ আকাশে হঠাৎ মেঘ। তারপর আকস্মিক শীতল বাতাস। তারপর ফোটা ফোটা অঝর ধারায় বৃষ্টি! কেনো এবং কী করে এ বৃষ্টি ঝরতো সবার মনেই ছিলো এমন প্রশ্ন। প্রশ্ন তো ছিলো কিন্তু এর জবাব কি অতটা সহজ ছিলো? না মোটেই সহজ ছিলো না। এবং এর কোনো উত্তর মিলেওনি। ফলে মানুষের কাছে এটি ছিলো এক বিরাট রহস্য! যখনই বৃষ্টি হতো ভাবতো মানুষ। খুঁজতো রহস্যের কূলকিনারা! কিন্তু কূল তো অত সহজে মেলে না।

তবে মানুষের চেষ্টাও থেমে থাকে না। অনবরত চেষ্টা করে মানুষ। জানতে চায় মনের প্রশ্নগুলো। মীমাংসা করতে চায় রহস্যময় বিষয়ের। এ চেষ্টার ফল হিসেবে এক সময় মানুষ আবিষ্কার করলো রাডার। রাডার আবিস্কারের পরই মানুষ জানতে পারলো কি করে বৃষ্টি হয়! মজার বিষয় হলো রাডার আবিস্কার হয় এই সেদিন মাত্র ১৯২২ সালে। দুজন বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেন এটি। তারা হলেন- এ এইচ টেলর এবং লিও সি ইয়ং।
রাডার আবিস্কারের পর বৃষ্টি নিয়ে যা জানা গেলো সে কথাই আগে বলি- বৃষ্টির জন্য প্রথমে দরকার জলীয় বাষ্প। এটি সূর্যের তাপে পানি থেকে সৃষ্টি হয়। প্রচণ্ড তাপে পানি উষ্ণ হয়ে বায়ুমণ্ডলের সাথে মিশে যায়।
তারপর ধীরে ধীরে উঠে যায় উপরে। সেই সাথে হয়ে ওঠে আরও উষ্ণ। একই সাথে হাল্কা হতে থাকে। হাল্কা হওয়ার কারণে আরও উপরে উঠে বাতাসের ধূলিকণা, বালুকণার সাথে মিশে যায়। এভাবে মিশেই জমাটবদ্ধ হয়ে সৃষ্টি হয় মেঘমালা। সে মেঘ থেকে বৃষ্টি নামে।

কিন্তু এখানে কাজ করে এক রহস্যময় কৌশল। একটু বড় করে যদি বলা যায় এভাবে বলতে হয়- সমুদ্রের ফেনায় বৃষ্টি হয় বাতাসের অসংখ্য বুদ্বুদ। এ বুদ্বুদ বিরামহীন ফাটতে থাকে। ফেটে গিয়ে পানির কণাগুলোকে আকাশের দিকে ঠেলতে থাকে। পানির এ কথাগুলো থাকে লবনে ভরা। লবনাক্ত কথাগুলো বাষ্পীভূত হয়ে উপরে উঠে যায়। এ কণাগুলোই পানির ফাঁদ হিসেবে কাজ করে। এবং নিজেদের চারিদিকে পানি বাষ্পজড়ো করে। জড়োকণাগুলো উৎপন্ন করে মেঘকণা। এমন মেঘে পানি কণাগুলো বাতাসে ঝুলে থাকে। এরপর মেঘকণাগুলো একাকার হয়ে সৃষ্টি করে বৃষ্টিকণা।
বৃষ্টিকণাগুলো যখন ঘন ও বাতাসের চেয়ে ভারী হয়ে যায়। তখন বৃষ্টিকণাগুলো মেঘ থেকে সরে আসে। ঠিক তখনই এসব পানিকণা বৃষ্টি হয়ে ঝরতে থাকে। ঝরতে ঝরতে নেমে আসে পৃথিবীর মাটিতে। পাহাড়ে। নদী ও সমুদ্রে। এবং ফসলি ভূমি ও বনবনানী জুড়ে।

এখানে মজার বিষয় হলো সমুদ্রের লবণাক্ত পানিগুলো বাষ্প হয়। অথচ বৃষ্টি তো বেশ মিষ্টি। কি করে মিষ্টি হয়? এর জবাব বিজ্ঞান দিতে পেরেছে কি? এর জন্য ফিরতে হয় মহান আল্লাহ তায়ালার দিকে। যিনি এই বৃষ্টিরও কারিগর।
মানুষ বৃষ্টির এ বিষয়টি আবিষ্কার করেছে মাত্র একশ বছর আগে। অথচ মহাগ্রন্থ আল কোরআনে প্রায় পনের শ বছর আগে এর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বেশ কটি আয়াত আছে বৃষ্টি নিয়ে। এখানে শুধু একটি তুলে দিচ্ছি- তিনি আল্লাহ যিনি বায়ু প্রেরণ করেন। অতঃপর তা মেঘমালাকে সঞ্চারিত করে। তারপর তিনি মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তাকে রাখেন স্তরে স্তরে। এরপর তুমি দেখতে পাও তার থেকে ঝরতে থাকে বৃষ্টিধারা। তিনি তাঁর বান্দাদের যাকে ইচ্ছে পৌছান। তখন তারা আনন্দিত হয়। আল কোরআন ৩০ তম সূরা রূম, আয়াত ৩০।
আকাশে মেঘমালার ছড়িয়ে যাওয়া সম্পর্কে বিজ্ঞান কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। অথচ কোরআনের এ আয়াতে কি চমৎকার করে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- তিনি মেঘমালাকে আকাশে ছড়িয়ে দেন।
এই তো বৃষ্টি আমাদের। এই তো বৃষ্টিধারা। এই তো বৃষ্টির মিষ্টি পানির কাহিনি।

Share.

মন্তব্য করুন