অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র নিয়ে তোমাদের নিশ্চয়ই ধারণা রয়েছে। সারা বিশ্বের চলচ্চিত্রে বর্তমানে অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র বড় একটি স্থান দখল করে রেখেছে। অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র নির্মাণ করে এমন দেশের সংখ্যা খুবই কম, কিন্তু গোটা বিশ্বেই এর দর্শক থাকায় প্রতিটি চলচ্চিত্রই প্রচুর মুনাফা অর্জন করে। বাংলাদেশে অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র নির্মিত না হলেও সিনেপ্লেক্সগুলোতে সাধারণত হলিউডে নির্মিত অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। আজ এমন একটি অ্যানিমেশন ফিল্ম কুংফু পান্ডা ট্রিলজির সাথে তোমাদের পরিচয় করিয়ে দেবো।

কুংফু পান্ডাকে নিয়ে পূর্ণদৈর্ঘ্য অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে তিনটি- এদেরকে একত্রে কুংফু পান্ডা ট্রিলজি বলে। সিনেমাগুলোর নাম কুংফু পান্ডা ১, ২ এবং ৩। এছাড়া আরও কিছু শর্টফিল্ম রয়েছে, সে বিষয়ে পরে আসছি।
নাম শুনেই বুঝতে পারছো- এই সিনেমার গল্প একটি পান্ডাকে নিয়ে। তার নাম পো। সিনেমার প্রেক্ষাপট চীন। পো একটি পান্ডা হলেও তার বাবা একটি রাজহাঁস। সে একজন নুডলস বিক্রেতা। পো’কে ছোটবেলায় একাকী পেয়ে সেই তাকে পেলেপুষে বড় করেছে। এই মোটাসোটা পেটুক পান্ডা একদিন ঘটনাচক্রে ড্রাগন ওয়ারিয়র নির্বাচিত হয়ে গেল। অথচ সে কুংফুর কিছুই জানে না। কুংফু পান্ডা ট্রিলজির প্রথম পর্ব মূলত পান্ডার কুংফু শেখা এবং অন্যান্য কুংফু মাস্টারদের নিকট গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠার কাহিনী।

কিছু প্রধান চরিত্র কুংফু পান্ডার সবগুলো সিনেমাতেই রয়েছে। যেমন- টাইগ্রেস, মাংকি, ভাইপার, ম্যান্টিস এবং ক্রেন; এরা হলো পো’র সহপাঠী ও বন্ধু। এছাড়া আছে তাদের কুংফু প্রশিক্ষক শিফু। প্রত্যেকটি চলচ্চিত্রেই পো এবং তার বন্ধুরা তাদের জনপদকে কোন না কোন শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।

কুংফু পান্ডা চলচ্চিত্রের প্রথম পর্বে টাই লাং নামের আরেক কুংফু মাস্টারকে প্রতিহত করতে হয়। কুংফু পান্ডা টু চলচ্চিত্রে আক্রমণকারী হলো পিকক শেন এবং তৃতীয় পর্বে জেনারেল কাই যে কিনা সকল কুংফু ওয়ারিয়রের স্পিরিট দখল করে তার শয়তানী উদ্দেশ্য পূরণের জন্য ব্যবহার করতে চায়। দ্বিতীয় পর্বে পো প্রথম জানতে পারে সে তার বাবার পালিত সন্তান এবং তৃতীয় পর্বে সে তার প্রকৃত বাবার সাক্ষাৎ পায়। এভাবে কুংফু পান্ডা ট্রিলজির তিনটি পর্ব মিলে পো-র জন্ম থেকে বর্তমান পর্যন্ত ঘটনাবলীর পরিচয় পাওয়া যায়।

কুংফু পান্ডা ট্রিলজিতে যে কুংফু দেখানো হয়েছে তার নাম হলো উশিয়া কুংফু। এটি কাল্পনিক হলেও কমিক্স আর সিনেমার কল্যাণে এটি খুব জনপ্রিয়। খুব সহজ ভাষায় যদি উশিয়া কুংফুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই তাহলে বলবো- এই কুংফু লড়াই মাটির তুলনায় শূন্যে বেশি হয় এবং সকলেই উড়ে উড়ে লড়াই করে!
এত সব অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রের মধ্য থেকে কুংফু পান্ডা ট্রিলজি বেছে নেয়ার কিছু কারণ আছে। নিখাদ বিনোদনের জন্য এই সিনেমাগুলো আদর্শ। এ কারণে পৃথিবীর সেরা অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রের তালিকায় এই সিনেমাগুলোর নাম থাকেই। ২০০৮, ২০১১ এবং ২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমাগুলো খুব দ্রুতই অন্যান্য সিনেমাকে টপকে টপ চার্টে অবস্থান করে নিয়েছে। এছাড়া আয় করেছে বিলিয়ন ডলার।
কুংফু পান্ডা সিনেমার জনপ্রিয়তার কারণে বেশ কিছু র্শট ফিল্মও তৈরী হয়েছে। এদের সংখ্যা পাঁচ। এছাড়া, দুটি অ্যানিমেশন সিরিজও তৈরী হয়েছে। আর ভিডিও গেম রয়েছে পাঁচটি।

আরও একটি কারণ অবশ্য রয়েছে। প্রত্যেকটি চলচ্চিত্রেই রয়েছে কিছু মেসেজ, যা কেবল উপলব্ধির বিষয়। যেমন প্রথম চলচ্চিত্রে পান্ডার কুংফু শেখার ব্যাপারটি ধরা যাক। মোটাসোটা বোকাসোকা পান্ডা যে কুংফু শিখতে পারবে তা কেউই বিশ্বাস করতে পারেনি। অথচ পো কুংফু শিখে দেখিয়ে দিয়েছে চেষ্টা করলে কোন কিছুই অসম্ভব নয়। সিনেমার শেষের দিকে পো উপলব্ধি করতে পারে- তার নিজের ভেতরেই রয়েছে সীমাহীন শক্তি, যাকে জাগিয়ে তুলতে পারলে সকল বাঁধাই অতিক্রম করা যায়। এই শক্তি তোমার আমার সকলের মধ্যেই আছে, অথচ আমরা নিজেরাও সে সম্পর্কে অবগত নই।
যদি দুই ঘন্টা নির্ভেজাল বিনোদন পেতে চাও তাহলে কুংফু পান্ডা সেরা। এমনকি তোমাদের বাবা-মা কিংবা বড় ভাই-বোনের কাছেও ভালো লাগবে এই সিনেমাগুলো। আর যদি সিনেমার ভেতরের মেসেজগুলো উপলব্ধি করতে পারো তাহলে তো কথাই নেই- ডাবল পয়সা উসুল হয়ে যাবে!

Share.

মন্তব্য করুন