পৃথিবীর সর্বত্র বসবাসকারী মানুষ মেঘ দেখেন। মেঘ সম্পর্কে জানেন। বাংলার কিংবা বাংলাদেশের মানুষ মেঘ যেমন দেখেন তেমন মিতালী করেন মেঘের সঙ্গে। এই মেঘের রূপ-বৈচিত্রের শেষ নেই। কবির কবিতা কিংবা গায়কের সুরের ছন্দে মেঘের অপরূপ রূপের সন্ধান পাওয়া যায়। মেঘডম্ব^র, মেঘনির্ঘোষ, কিংবা মেঘাত্যয় কিংবা জালোমেঘ এমন সব বর্ণনায় মেঘের রূপ-বৈচিত্রের চিত্র প্রকাশ পেয়ে থাকে। মেঘের এ রূপের চিত্র ধরে রাখতে কবি লেখক খাতা-কলম নিয়ে বসেন। শিল্পী বসেন রঙ-তুলি ক্যানভাস নিয়ে। কবি-লেখক-শিল্পীর বর্ণানায় স্পষ্টভাবে ধরা দেয় বৈচিত্ররূপী মেঘ। মেঘডম্ব^র বা মেঘের ঘনঘটা, মেঘনির্ঘোষ বা মেঘের ডাক, জলোমেঘ বা বৃষ্টি বর্ষনকারী মেঘ কিংবা মেঘাত্যয় বা মেঘের অভাব কিংবা মেঘাত্যয় আকাশের শরৎশশীর অপরূপ দৃশ্য যা আমাদের কাজ ভোলায়, শরৎকালের সোনালী আকাশ আপিস-আদালত মাটি করে দেয়। শুধু তাই নয়, ‘কুলবধূর কুলের কাজও ভুলিয়ে দেয়। সে আমাদের সমস্ত ভালো-মন্দ থেকে বাহির করে আনে।’ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
বৈষ্ণব কাব্যে কাজ ভোলানো এসব মেঘের রসালো বর্ণনা পাওয়া যায়।

রসের কবি, রস সৃষ্টির (চিত্রকর্ম) কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একবার লন্ডন গিয়ে মেঘ নিয়ে গবেষেণায় মেতেছিলেন। তিনি সন্তোষ নামক একজনকে পত্র লিখে সে গবেষণার কথা রসিয়ে রেিসয় বলেছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘আমার এ চিঠি যখন শান্তিনিকেতন পৌঁছবে তখন শিউলি ফুুলের গন্ধে তোমাদের বন আমোদিত হয়ে উঠেচে এবং সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত শারদশ্রীর সোনার পদ্মবনের আশ্চর্য্য শোভা ধরে দেখা দিচ্ছে। সেই চিরপরিচিত আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়ে এখানকার আকাশের বিরুদ্ধে আমার মাথায় অত্যুক্তি জাগচে। আমার মন বলচে, এখানকার আকাশের মধ্যে রূপের খেয়াল নেই, সেই মানুষের মন ভোলাতে চায় না।’ (লন্ডনের পত্র, প্রবাসী, ভাদ্র ১৩৪১, ৫ম সংখ্যা, ৩৪শ ভাগ, ১ম খন্ড)।

মেঘের সঙ্গে মিতালী আমাদের দেশের মানুষের স্বাভাবিক ঘটনা। জলোমেঘ থেকে নেমে আসা বৃষ্টির পানি মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নিয়ামত। পবিত্র কুরআনে সূরা যুমারের ২১ নং আয়াতে বলা হয়েছে- ‘তুমি কি দেখ না, আল্লাহ আকাশ হইতে বারি বর্ষণ করেন অতঃপর ভুমিতে স্রােতরূপে প্রবাহিত করেন এবং তদ্দ¦ারা বিবিধ বর্ণের ফসল উৎপন্ন করেন। অতঃপর ইহা শুকাইয়া যায় এবং তোমরা ইহা পীতবর্ণ দেখিতে পাও, অবশেষে তিনি উহা খড়কুটায় পরিণত করেন? ইহাতে অবশ্যই উপদেশ রহিয়াছে বোধশক্তি সম্পন্নদিগের জন্য।’ বোধশক্তি সম্পন্ন মানুষদের জন্য আল্লাহ প্রেরিত সূরা যুমার এ আয়াতে বৃষ্টি, বৃষ্টির সৌন্দর্য কিংবা বৃষ্টিভেজা জমিনের সজীবতা, জলোমেঘহীন সময়ের খড়তাপের বিরুপতা এবং খড়তাপে বিশুষ্ক ফসলের খড়কুটায় পরিণত হওয়াসহ নানা বিষয়ে সৃষ্টি রহস্যের গভীর তাৎপর্য প্রকাশ পেয়েছে। চৈত্রের খড়তাপে রসালো ভূমি যখন রসহীন হয়ে ফেটে চৌচির হয়ে যায়, খাল-বিল, নদীনালা পানি শূন্য হয়ে পড়ে- জীবজন্তু, মানুষ একফোটা বৃষ্টির পানির জণ্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে থাকে। তৃষ্ণায় হ্যাঁ করে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকে পাখি। ধর্মপ্রাণ মানুষেরা একত্রিত হয়ে মাঠে-ময়দানে প্রার্থনার আয়োজন করে বৃষ্টির জন্য। পাড়ার ছেলেরা- ‘আল্লাহ মেঘ দে, পানি দে, ছায়া দে রে তুই, আল্লাহ মেঘ দে’ রবে গান গেয়ে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে চাল-ডাল-টাকা তুলে সিন্নির আয়োজন করে। বোধশক্তিসম্পন্ন জ্ঞানী মানুষদের বৃষ্টিহীন-রসহীন এবং প্রাণ অতিষ্ঠ করা প্রকৃতি সম্পর্কে বিলাপ গাথা স্পষ্টতই বিরুপ কিংবা অসহনীয় প্রকৃতির চিত্রকেই তুলে ধরে। প্রকৃতির এই বিরুপ পরিবেশের মাধ্যমে বৃষ্টি কিংবা পানির মূল্য কতটা মহান আল্লাহ তা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।

খরা কিংবা তাপদাহ শেষে বৈশাখে যখন আকাশে মেঘডম্বর এর স্বাক্ষাৎ মেলে এবং জলোমেঘ থেকে অঝোরে নেমে আসে বৃষ্টির ধারা, তখন তপ্ত ও তৃষ্ণার্ত ভূমিতে শীতল পানির স্রােত বইতে থাকে। যে স্রােত ঘুর্ণি ধুলিতে ছয়লাব হওয়া, ধরণীকে উর্বর করে। প্রশান্তির পরশে কাণায় কাণায় পূর্ণ করে ধরণীকে। যেমনটি আল্লাহ বর্ণনা করেছেন, তাঁর সূরা যুমারের বর্ণানায়। বৈশাখ, জৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ- এ মাসগুলোতে বাংলার আকাশ থাকে জলোমেঘে পূর্ণ। ফলে অঝোর ধারায় বৃষ্টির পানি ঝড়তে থাকে ভূমিতে। ভূমি হয় উর্বর। নদ-নদী, খাল-বিল জলাশয় পূর্ণ হয় পানিতে। সজীবতা ফিরে পায় ভূমি। পশুপাখি, জীবজন্তু ফিরে পায় স্বাভাবিক জীবন। প্রকৃতিতে যেন প্রাণের জোয়ার বইয়ে যায়। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও বৃষ্টির বেহেস্তি শীতলতায় মানুষ অনেক কিছু ভুলে যায়। তাই তো রবীন্দ্রনাথের পাঠিকা বলে ওঠে-
বহিছে হাওয়া উতল বেগে
আকাশ ঢাকা সজল মেঘে
ধ্বনিয়া উঠে কেকা।
করিনি কাজ পরিনি বেশ
গিয়েছে বেলা বাঁধিয়ে কেশ
পড়ি তোমারই লেখা।

জলোমেঘের বৃষ্টিভেজা প্রকৃতি যে কতটা রূপের ডালা সাজিয়ে বসতে পারে, কতটা রূপসী হয়ে উঠতে পারে তারও সন্ধান পাওয়া যায় শিল্পীর ক্যানভাসে। শিল্পচার্য জয়নুল আবেদীন, যিনি গ্রামীণ পরিসর গ্রামীণ নিসর্গ এবং গ্রামীণ সংস্কৃতি চর্চায় পুরো জীবনটাই অতিবাহিত করেছেন। এঁকেছেন বৃষ্টি-বাদলের অপূর্ব সুন্দর চিত্র। বর্ষাকালে গ্রামীণ জনপদে যে মাছ ধরার ধুম পড়ে যায় সে খবরও বাদ যায়নি দৃষ্টি থেকে। তিনি ক্যানভাসে বিবৃত করেছেন সে খবর। ১৯৫৭ সালে জলরঙে লেখা তার মাছ ধরা সে কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, মোমের আঁচড়ে ফুুটে ওঠা সাদা রেখা আর রঙের ওয়াশে সম্মুখে এগিয়ে চলার মাধ্যমেও বৃষ্টির সৌন্দর্য়ের প্রকাশ ঘটেছে। চিত্রকর্ম সমাজেরই দর্পন। এসব দর্পনে বর্ষা, বন্যা এবং বৃষ্টির প্রকৃত রূপ বিধৃত হয়েছে। বিধৃত হয়েছে শিল্পী জামাল আহমেদের জেলে সম্প্রদায়ের মাছ ধরার দৃশ্য, শিল্পী শামসুদ্দোহার বৃষ্টি¯œাত গ্রামবাংলা এবং বিল পাড়ে সোনালী আঁশ পাট ধোয়ার দৃশ্যের মাধ্যমে। কবিরাও পিছিয়ে নেই এই দৃশ্যায়নের ক্ষেত্রে। কবি জাকির আবু জাফর লিখেছেন-
প্রথম বৃষ্টির মধুময় স্পর্শ জমে আছে
আমার সমস্ত আবেশের আর্শিতে
কোনদিন ভাবিনি বর্ষার প্রথম বর্ষণ নিয়ে
আমি রমণীর চোখে সাজাবো অশ্রুর উপমা
আজ মেঘ-মগ্ন নীলে দাঁড়িয়ে আসন্ন বৃষ্টিদিন প্রথম আষাঢ়
তুমি কি সেদিন বর্ষা রমণীকে প্রথম দেখেছ বৃষ্টির অঙ্গনে
এমন জিজ্ঞাসা আমাকেই আমি করেছি।

কবি, সাহিত্যিক, লেখক, শিল্পী জলোমেঘ বৃষ্টি ঝড়ার যে চিত্র তুলে ধরেছেন আমি নিজেও একদিন সেই বৃষ্টির সৌন্দর্য উপভোগ করেছি। সে ২০০৪ সালে ৬ জুলাই এর কথা। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত। অবিরাম ধারায় ঝমঝম বৃষ্টি পড়ছে। আমি কুমিলাø বার্ড-এ অর্থাৎ বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমিতে অবস্থান করছি। সর্বত্র ফুলের বাগান। মাঝেমধ্যে রাতজাগা পাখির সুরেলা আওয়াজ ভেসে আসছে। ক্যাম্পাসের সর্বত্র বৈদ্যুতিক আলোর বন্যা বইছে। সব মিলে নয়নাভিরাম রহস্যময় শৈল্পিক পরিবেশ। অবিরাম ধারায় নিপতিত ছাদের পানি বৈদ্যুতিক আলোয় রুপালী তারার মত ঝিকমিক করছে। ঝোপঝাড় এবং অন্যান্য ফুল বৃক্ষের পাতায় পতিত বৃষ্টির ফোটার টপটপ আওয়াজ সমগ্র ক্যাম্পাসকে সঙ্গীতমুখর করেছে। হঠাৎ লক্ষ করলাম পাতা এবং পাতাসম পাপড়িওয়ালা ফুলবৃক্ষ বৃষ্টির পানিতে ভিজে চুপসে গেছে এভং প্রতিটি বৃক্ষের মাথা পানির ভাড়ে নুইয়ে পড়েছে। ফুলের পাপড়িগুলোর প্রত্যেকটা প্রত্যেকটার সঙ্গে গভীর ভালবাসা কিংবা মমতায় যেন লেপ্টে রয়েছে। এসকল বৃক্ষের উপর নিপতিত অস্পষ্ট আলো রহস্যময় পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। বৃক্ষ এবং ঝোপঝাড়ের চারপাশে জমেছে বৃষ্টির পানি। বৃক্ষ ও ঝোপঝাড়ের পাশে ঘাসপাতার মধ্যে জমে থাকা বৃষ্টির পানি আলোতে ঝলমল করছে। আলো ঝলমলে পানির অদূরেই ঝোপঝড়গুলো অন্ধকারে ডুবে আছে। যেনো আধারের কালো রঙের চাদরে এগুলোকে কেউ মুড়ে দিয়েছে। ফলে বিশ^বিখ্যাত শিল্পী রেমব্রান্টের সৃষ্ট গভীর আলোছায়ার মত রহস্যের সৃষ্টি করেছে। আলো-আঁধারির রহস্যময় এ পরিবেশে বৃষ্টিভেজা শুভ্র পুষ্পপূর্ণ বৃক্ষ দেখে সদ্য বিবাহিতা ঘোমটা টানা গ্রামের লজ্জাবনত নববধূর কথা মনে পড়ে গেল। মনে পড়ে গেল শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ‘¯œান’ নামক পেইন্টিংয়ের কথা। মনে পড়ে গেল শিল্পী কামরুল হাসান অঙ্কিত ১৯৫৮ সালের ‘জলকেলি’ নামক চিত্রের কথা। ভারতের প্রখ্যাত শিল্পী রবিবর্মার অঙ্কিত ভেজা কাপড় শরীরে চুপসে যাওয়া রমণীর কথাও বাদ রইলো না।

এমনই এক শৈল্পিক রূপধারী পুষ্পবৃক্ষের কথা ভাবতে ভাবতে ডায়নিং হলের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলাম। রাত গভীর হওয়ায় খাবার পর্ব শেষ করে রাত্রি যাপনের জন্য নির্ধারিত দোতলার কক্ষে চলে গেলাম। ছিমছাম সুন্দর কক্ষ। মেঝেতে কার্পেট বিছানো। আমার কক্ষের পাশেই রয়েছে বিশাল এক পুকুর। পুকুরের চারপাশে অসংখ্য বৃক্ষ। আমি যখন শয়ন কক্ষে তখন বৃষ্টির প্রকোপ কিছুটা কমেছে। ক্লান্তিজনিত কারণে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
অবিরাম বৃষ্টিধারা আর বৃষ্টিপাতের রহস্যময় ঝমঝম শব্দে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়লেও গভীর রাতে ঘুম ভাঙলো একদল নর্তকীর নূপুরের ছন্দোবদ্ধ আওয়াজে। হালকা বাল্ব জে¦লে এসি খুলে ঘুমিয়েছি। কিন্তু জেগে দেখি ঘর অন্ধকার। এসি বন্ধ। অর্থাৎ বেশ কিছুক্ষণ হয় বিদ্যুৎ চলে গেছে। ফলে গরমে ঘেমে নেয়ে উঠেছি। ঘুম ভাঙার প্রধান কারণ এটাই। যেনো নূপুরের ছন্দোবদ্ধ আওয়াজ আর কিছু নয়, চার পাশের বৃক্ষসমূহের পাতায় পড়া বৃষ্টির সুমিষ্ট শব্দ। অন্ধকার ঘরের দরজা খুলে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। একটানা বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ। মাঝে মাঝে মৃদুমন্দ বাতাসে দীর্ঘ দাঁড়িয়ে থাকা বৃক্ষগুলোর লুকোচুরি। অন্ধকারে একে অপরকে যেনো গভীরভাবে আলিঙ্গনবদ্ধ করছে। কয়েকদিনের বৃষ্টির পানিতে সমস্ত বৃক্ষ সবুজ সতেজ পাতায় পূর্ণ হয়েছে। দেখে মনে হয়, প্রতিটি বৃক্ষ পূর্ণ যৌবনা। নীরব নিস্তব্ধ নিশীথে আনন্দ উল্লাসে মেতেছে তারা। অঝোর বৃষ্টিধারা আর বাতাসের শন শন শব্দে উন্মাতাল তারা। বাতাসের বেগ বৃদ্ধি পেলে তাদের লুকোচুরির মাত্রা বাড়ে। আকাশ সংস্কৃতি জগতের উলঙ্গপ্রায় নির্লজ্জ নায়ক-নায়িকা কিংবা নর্তক-নর্তকীর মত। তবে বৃক্ষসমূহ তাদের মত অতটা নির্লজ্জ নয়। কারণ একে অপরকে স্পর্শ করেই যে যার স্থানে অবস্থান নিচ্ছে তারা। এরই মধ্যে পুকুরের অশান্ত পানিতে কিছু একটা পতনের শব্দ পাওয়া গেল। মনে হলো, পুকুর পাড়ের বৃক্ষতলে নৃত্যরতা উন্মাতাল নর্তকীরা পুকুরের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়লো। কিন্তু না, নর্তকী নয়। পুকুরের কয়েকটি বড় মাছ একই সঙ্গে লাকিয়ে উঠে পুনরায় পানিতে পড়েছে। পানির ঢেউ দেখে তাই মনে হলো। বর্ষণ মুখর রাতে মাছেরাও বড় উন্মাতাল হয়েছে। হয়েছে উৎফুল্ল। ঝমঝম বৃষ্টির পানি পেয়ে তারা রাতের ঘুম ত্যাগ করেছে। শীতল পানিতে তারা ছোটাছুটি করছে। বর্ষনমুখর রাতের এ মুহূর্তামি যারা না দেখেছেন তাদের পক্ষে মাছদের এ আনন্দ প্রকাশের বিষয়টি অজানাই থেকে যাবে।

মাছদের মাতামাতি প্রেম-ভালবাসা, প্রকৃতির নীরব বৃক্ষরাজিব আষাঢ়ে রাতে উতলা হওয়া, বৃষ্টির অঝোর ধারার ঝমঝম একটানা নূপুরের ছন্দ, অন্ধকার শান্ত প্রকৃতির রূপের ফল্গুধারা রবীন্দ্রনাথের কবিতারই রূপ যেন। দিনের খড় রৌদ্রতাপে, জন-কলরবে, ব্যস্ত মানুষের দৃষ্টির আড়ালেই থেকে যায় যে প্রীতিময় বিষয়। তারই পূর্ণ প্রকাশ ঘটেছে নিস্তব্দ রাতের আঁধারে। শিল্পী কিংবা কবি ছাড়া কেউই যার সন্ধান লাভ করেন না। শিল্পী এবং কবিই কেবল তাদের হাসি, কান্না কিংবা বিষাদের বিষয়গুলো অনুধাবন করেন। আর করেন বলেই কবি কবিতা লিখেন, শিল্পী আঁকেন ছবি। বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাতের অপরূপ দৃশ্য দেখা আর ভাবনার মাঝেই বিদ্যুৎ চলে এলো। আমি বারান্দা থেকে গিয়ে কক্ষে প্রবেশ করলাম এবং ভাবলাম- ছোটবেলায় ‘আঁধারের রূপ’ নামক গল্প পড়েছি। আজ আঁধার রাতের সৌন্দর্য যেমন উপভোগ করালাম তেমনি উপভোগ করালাম বৃষ্টির সৌন্দর্য।

Share.

মন্তব্য করুন