অনেক দিন আগের কথা। এক রাতে মনির স্বপ্নে দেখে সে একটা রাজ্যের রাজা হয়ে গেলো। হঠাৎ বিড়ালের মিউ-মিউ ডাকে তার ঘুম ভেঙে যায়। সে লাফ দিয়ে উঠে টেবিলের ড্রয়ার থেকে টর্চলাইট হাতে নিয়ে বিড়ালটি খুঁজতে ঘরের এদিকে-ওদিকে এক কথায় চতুর্দিকেই লাইট মারতে লাগলো। কিন্তু বিড়ালটি কোথাও দেখতে পায়নি। সে ভাবছে এটা হতো আমার মনের ভুল। বিড়াল থাকলে তো দেখতে পেতাম।
এই বলে এক গ্লাস জল খেয়ে আবারও ঘুমানোর উদ্দেশ্যে বিছানায় গেলো। বিছানায় গিয়ে দেখে তিনটা কার্টুনের বই ছড়িয়ে আছে! সে দেখে তো অবাক! সে মনে মনে ভাবছে এখানে এতো সুন্দর প্রচ্ছদ আঁকা বইগুলো কে রেখে গেলো? কে দিয়েছে বা কিভাবে এলো এসব প্রশ্নের সম্মুখীন না হয়ে। মনের আনন্দে রূপকথার গল্প নামক বইটি হাতে তোলে, প্রথম পৃষ্ঠাটা মেলে দেখে কয়েকটা ভূতের ছবি আঁকা। সে একবার দেখেই বইটা বন্ধ করে দেয়। তারপর দ্বিতীয় বই হাতে তোলে। সেটার নাম হলো চাঁদের সাথে মেঘের আড়ি মনিরের বইয়ের নামটা বেশ পছন্দ হয়েছে।
তাই দেরি না করে; সেই বইয়ের মতো এই বইটাও মেলে দেখে প্রজাপতি আর বাগানের কয়েকটা মনোরম দৃশ্য আঁকা। আর পাশে বড় করে লেখা ‘এসো আমরা বন্ধু হই।’ সে লেখাটা দেখে প্রথমে খুশি হয়ে বলে হ্যাঁ এসো আমরা বন্ধু হই। তারপর সে পরের পৃষ্ঠায় গিয়ে দেখে লেখা, চলো আমরা বাগানের প্রতি যত্নবান হই। তার আনন্দটা দ্বিগুণ হয়ে গেলো। তাই সে ছটফট করছে পরের পৃষ্ঠা দেখার জন্য। অনেক আশা নিয়ে হাসিমুখে পরের পৃষ্ঠা উলটিয়ে দেখে ‘লেখা আজ আর নয়’।

মন খারাপ করে এই বইটাও বন্ধ করে দিলো।
তারপর তৃতীয় বইটা হাত বাড়িয়ে নিলো। সেটার নাম ছিলো ‘রহস্যময় জীবন’। নামটা তার কাছে অদ্ভুত ছিল। তাই পূর্বের বইটার মতো আপ্লুত হয়ে প্রথম পৃষ্ঠাটা মেলে। কিন্তু সে প্রথম পৃষ্ঠায় চোখ বুলাতেই দেখে একটা রাজপ্রাসাদ! সে স্বপ্নে যেটা দেখেছিল সেটা আর এটার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সে চিন্তিত! বলছে, এটা কি করে সম্ভব। প্রথম পৃষ্ঠায় কিছু লেখা ছিল না। শুধু রাজপ্রাসাদের ছবিটাই ছিল। দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় গিয়ে দেখে একটা সোনার বিড়াল। আর পাশে লেখা ‘আমি তোমার বাগানে অপেক্ষা করছি। তুমি আসো তোমাকে আমার খুব প্রয়োজন।’ মনির খুব সাহসী ও পরোপকারী ছেলে, তাই বইটা হাতে নিয়ে দরজা খুলে বাগে গেলো। গিয়ে দেখে কেউ নেই। বইয়ের পরের পৃষ্ঠা উল্টে দেখে লেখা ‘বাগানের পুকুরপাড়ে এসে নীল লাল সাদা পরী করে তিনবার ডাক দিও।’
মনির বইয়ের লেখা অনুযায়ী পুকুরপাড়ে গিয়ে ‘লাল নীল সাদা পরী’ বলে তিনবার ডাক দেয়া মাত্র তিনটা জলপরী ভেসে উঠলো দীঘির জলে। মনির বিস্মিত হয়। বইয়ের পরের পৃষ্ঠা উল্টে দেখে লেখা ‘তুমি চোখ বন্ধ কর আমরা যা জিজ্ঞাসা করি তার উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবে।’ মনির চোখ বন্ধ করে, তারপর লাল জলপরী মনিরকে জিজ্ঞাসা করলো, ‘তোমার যদি প্রচুর ধনদৌলত থাকতো তুমি কী করতে?’ মনির বজ্রকণ্ঠে বলে, ‘আমার চাহিদা মতো রেখে আমার প্রতিবেশী এবং অনাহারীদের মাঝে বিলিয়ে দিতাম।’
মনিরের জবাব পেয়ে লাল পরী নিজের স্থানে গেলো।

তারপর নীল জলপরী এসে মনিরকে জিজ্ঞাসা করলো, ‘তুমি যদি বিশ্বের একমাত্র শক্তিমান হতে তাহলে কী করতে?’
মনির অশ্রুভেজা চোখে বলে, ‘আমি দেশের-দশের তরে আমার সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করতাম।’
নীল জলপরী উপযুক্ত জবাব পেয়ে নিজের স্থানে গেলো। সাদা জলপরী এসে মনিরকে জিজ্ঞাসা করলো, ‘তুমি যদি বৃক্ষ হতে তাহলে কী করতে?’
মনির বলল, ‘আমি শাখা-প্রশাখা ফল ও অক্সিজেন দিয়ে মানুষকে উপকার করতাম।’
তিন জলপরীর প্রশ্নের জবাব মনির যথাযথভাবে দিয়েছে। তাই জলপরীরা মনিরকে চোখ খুলতে বললো এবং তারা মনিরের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে সোনার বিড়াল ও স্বপ্নে দেখা রাজপ্রাসাদ বানিয়ে দিলো তার কুঁড়েঘরটা ভেঙে। মনির খুব খুশি। জলপরীরা যাওয়ার পূর্বে মনিরকে বলল, কখনো লোভ করবে না। আমরা যা দিয়েছি এটা তোমার সততার ও বিশুদ্ধ চিন্তাচেতনার উপহার। এই গুণটা চিরকাল অন্তরে লালন করে যেও। তাহলে জীবন মধুময় হবে।

Share.

মন্তব্য করুন