করোনা ভাইরাসের মহামারীর কারণে এক বছর পিছিয়ে এ মাসেই মাঠে গড়াচ্ছে বিশ^ ফুটবলের দ্বিতীয় বৃহত্তম আসর ইউরোপীয়ান ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপ। যার অফিশিয়াল নাম উয়েফা ইউরো। দুর্যোগের কারণে ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত হলেও আসরের নাম ‘ইউরো ২০২০’-ই বহাল রাখা হয়েছে। অর্থাৎ এটা ২০২০ সালেরই আসর, শুধু তারিখটা পিছিয়েছে। পরবর্তী আসরটি যথানিয়মে ২০২৪ সালেই আয়োজন করা হবে।
বিশ^ ফুটবলে শক্তিশালী দলগুলোর বেশিরভাগই ইউরোপ মহাদেশে। যে কারণে এই টুর্নামেন্টের দিকে চোখ থাকে সারা বিশে^র ফুটবলপ্রেমীদের।ইউরো ফুটবলের ১৬তম আসরটি মাঠে গড়াবে ১১ জুন শুক্রবার। রোমে তুরস্ক ও ইতালি খেলবে উদ্বোধনী ম্যাচ। ১১ জুলাই লন্ডনে ফাইনালের মাধ্যমে পর্দা নামবে আসরের। ইউরোপ মহাদেশের ফুটবল সংস্থা উয়েফার ৫৫টি সদস্য দেশ থেকে বাছাইপর্বের মাধ্যমে ২৪টি দেশ জায়গা করে নিয়েছে মূলপর্বে। ছয় গ্রুপে ভাগ হয়ে দলগুলো খেলবে রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে।
প্রতি গ্রুপের সেরা দুটি দল এবং ছয় গ্রুপে তৃতীয় হওয়া দলগুলোর মধ্য থেকে পয়েন্টের ভিত্তিতে সেরা চারটি দল- এই ১৬ দল খেলবে নকআউট পর্বে, যার নাম রাউন্ড অব সিক্সটিন। সেখান থেকে জয়ী ৮ দল কোয়ার্টার ফাইনালে। এভাবে সেমিফাইনাল ও ফাইনাল পার হয়ে শিরোপা উঠবে সেরা দলটির হাতে।
এবারের টুর্নামেন্টের একটি ব্যতিক্রমী বিষয় হচ্ছে- কোন একক স্বাগতিক দেশ না থাকা। উয়েফার পূর্বঘোষণা অনুযায়ী এবার খেলা হবে ১১ দেশের ১১টি স্টেডিয়ামে। সেমিফাইনাল ও ফাইনাল হবে লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে। এছাড়া ইতালির রোম, রাশিয়ার সেন্টপিটার্সবার্গ, ডেনমার্কের কোপেনহেগেন, নেদারল্যান্ডের আমস্টারডাম, রোমানিয়ার বুখারেস্ট, স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো, স্পেনের সেভিয়া, জার্মানির মিউনিখ, হাঙ্গেরির বুদাপেস্ট ও আজারবাইজানের বাকু নগরীতে হবে খেলাগুলো। এর মধ্যে আজারবাইজান ও রোমানিয়া টুর্নামেন্টের মূলপর্বে উঠতে পারেনি। তাই দেশের মাটিতে তাদের থাকতে হবে দর্শক হয়েই।

কে ফেবারিট

এই প্রশ্নে বেশির ভাগ মানুষ ফ্রান্সের নাম বলছে। বর্তমানের বিশ^চ্যাম্পিয়নরাই এবার ইউরোতে টপ ফেবারিট হয়ে মাঠে নামছে। দিদিয়ের দেশমের শীষ্যরা ২০১৮ সালে রাশিয়া থেকে যে দাপটের সাথে বিশ^কাপ নিয়ে ফিরেছে, দলটি সেই চেনা ছন্দেই রয়েছে। একঝাঁক তারকা ফুটবলার রয়েছে দলটিতে। কিলিয়ান এমবাপ্পে, পল পগবা, এন’গলো কন্তে, এন্তানিও গ্রিজম্যান সবাই ক্লাব ফুটবলে দারুণ ছন্দে রয়েছেন। এদের সাথে ৫ বছর পর আবার জাতীয় দলে ফিরছেন স্ট্রাইকার করিম বেনজেমা। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে দারুণ একটি মৌসুম কাটিয়েছেন বেনজেমা। সব মিলে একটি দুর্দান্ত দল ফ্রান্স। একে তো বিশ^চ্যাম্পিয়ন, তার ওপর এই টুর্নামেন্টের গত আসরের ফাইনালে নিজেদের মাঠে পর্তুগালের কাছে হারের দগদগে ক্ষত তাদের হৃদয়ে। সব মিলে তাই ফ্রান্সকেই শিরোপার সবচেয়ে বড় দাবিদার ভাবা হচ্ছে।
তবে জার্মানি ও পর্তুগালের সাথে একই গ্রুপে খেলতে হবে ফ্রান্সকে। এটি তাদের জন্য চিন্তার বিষয়।হিসাবে একটু গোলমাল হলেই দ্বিতীয় রাউন্ডে দেখা হয়ে যেতে পারে ইংল্যান্ড বা ক্রোয়েশিয়ার সাথে। বেলজিয়াম বা নেদারল্যান্ডও আসতে পারে সামনে। তাই ফ্রান্স যে নির্ভার থাকতে পারছে তা নয়। চিন্তা জার্মানি ও পর্তুগালের জন্যও। ফেবারিটের তালিকায় অবশ্য তারা পিছিয়ে আছে ফ্রান্সের চেয়ে। জার্মানিকে এবার কেউ খুব একটা হিসাবে রাখছে না। তবে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। ২০১৬ সালের ফাইনালে তারা ইনজুরি আক্রান্ত রোনালদোকে ছাড়াই হারিয়েছিল ফ্রান্সকে। এবার শিরোপা ধরে রাখার সুযোগটা তারা ছাড়তে চাইবে না।গ্রুপের অন্য দলটি হাঙ্গেরি। ফিকশ্চার অনুযায়ী যদিও এক গ্রুপ থেকে ৩টি দল নকআউট পর্বে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে, তারপরও ৯০ মিনিটের খেলায় যে কোন সময় অঘটন ঘটে যেতে পারে। তেমনটি হলে যে কোন সময় পাল্টে যেতে পারে সমীকরণ।
বেলজিয়ামও টুর্নামেন্টের হট ফেবারিট। দলের সেরা তারকা কেভিন ডি ব্রুইনো এই মুহূর্তে বিশে^র সেরা মিডফিল্ডার। দলে আছেন রোমেলু লুকাকুর মতো স্কোরার। ডিফেন্সও শক্ত দলটির। তাই এই দলটিকে হিসারের বাইরে রাখা যাচ্ছে না। বেলজিয়ামের বর্তমান টিমটিকে বলা হচ্ছে দেশটির ফুটবলের সোনালী প্রজন্ম। গত বিশ^কাপে দারুণ খেলে সেমিফাইনালে উঠেছিল দলটি। এবার এই ফুটবলারদের সামনে শেষ সুযোগ দেশকে আন্তর্জাতিক শিরোপা উপহার দেয়ার। ইংল্যান্ড দলও সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ খেলছে। রাশিয়া বিশ^কাপের সেমিফাইনালিস্টদের অধিনায়ক হ্যারি কেইন দারুণ ফর্মে আছেন। তার গোল করার ক্ষমতা ইংল্যান্ডকে এগিয়ে রাখবে শিরোপার দৌড়ে। গত বিশ^কাপের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়াকেও বিবেচনায় রাখতে হবে। তবে বিশ^কাপ বাছাইপর্বে তারা হেরেছে স্লোভেনিয়ার কাছে। ইতালি ও স্পেনকে খুব একটা হিসেবের মধ্যে রাখছেন না বিশ্লেষকরা।

চমক দেখাবে কারা

ফুটবলের বড় যে কোন আসরেই দেখা যায় ফেবারিটদের তালিকার বাইরে কম শক্তির কোন দল চমক দেখায়। গত ইউরো আসরে যেমন সেমিফাইনালে উঠেছিল ওয়েলস। ক্রোয়েশিয়া, ইতালি, স্পেনকে পেছনে ফেলে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে আইসল্যান্ডের মতো দল। ২০১৮ বিশ^কাপে রাশিয়া উঠেছিল কোয়ার্টার ফাইনালে।
এবারের ইউরোতে ফুটবল বিশ্লেষকরা এই তালিকায় রাখছেন তুরস্ককে। মার্চ মাসে কাতার বিশ^কাপের ইউরোপীয় অঞ্চলের বাছাই পর্বে দলটি চমক দেখিয়েছে। নেদারল্যান্ডকে হারিয়েছে ৪-২ গোলে, নরওয়েকে হারিয়েছে ৩-০ গোলে।
যে কারণে এবার ইউরোতে তুরস্কের ভালো করার সম্ভাবনা দেখছেন অনেকেই। দলটির আক্রমণভাগে আছে এসি মিলানের ফরোয়ার্ড হাকান চালহানোগলু কিংবা ওজান তুফান, বোরাক ইলমাজের মতো খেলোয়াড়।
পোল্যান্ডকে নিয়েও বাজি ধরছেন অনেকে। কারণ দলটিতে আছে এই মূহুর্তের সেরা তারকাদের একজন রবার্ত লেবানোদস্কি। গত মৌসুমে ২৮ ম্যাচে ৪০ গোল করেছেন জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখের এই গোলমেশিন। নেদারল্যান্ড, ওয়েলসকেও ধরা হচ্ছে এই তালিকায়। বিশেষ করে গ্যারেথ বেল ওয়েলসের হয়ে দারুণ কিছু দেখাতে পারেন মাঠে।

Share.

মন্তব্য করুন