বেঁচে থাকতে হলে খেতেই হয়। খাওয়া ছাড়া বেঁচে থাকা দায়! তবে খেলেই বেঁচে থাকে না সবাই। খেয়ে খেয়েই মারা যায় মানুষ। কিন্তু বেঁচে থাকলে খেতে হয়! খেতে হয় কারণ- না খেলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। ক্লান্ত হয়ে যায়। চলার শক্তি থাকে না। একাধারে কয় বেলা না খেলে ওঠা বসাও অসম্ভব হয়ে যায়। শুকিয়ে যায় শরীর। দেহে মাংস কমে যায়। এক সময় হাড্ডিসার হয়ে পড়ে। এক কথায় জীবনকে জাগ্রত রাখার জন্য খেতে হয়! শরীরের শক্তি বৃদ্ধির জন্য খেতে হয়। এবং চলাচলের যোগ্য থাকার জন্য খেতে হয়।
কিন্তু কি খাবে? এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এ বিষয়ে প্রথম কথা হলো- খাবারটি নির্ভেজাল হতে হবে। যদিও বাংলাদেশে সকল খাবারে ভেজাল মেশানো। পৃথিবীতে খাবারে এতো ভেজাল আর কোথাও নেই। কোনো দেশে নেই। জেনে শুনে ভেজাল খাবার পরিবেশন করা। অথবা বাজারে বিক্রি করা। চিন্তারও বাইরে! অথচ আমাদের দেশে সবাই জানে ভেজাল খাবারের খবর। জেনে শুনে দিব্যি ভেজাল খেয়ে চলেছি। এই তো আমাদের অবস্থা।
তবুও বলি যতটা সম্ভব ভেজালমুক্ত খাবার খেতে হবে। বাইরের খাবারকে না বলতে হবে। বিশেষ করে ফাস্টফুড বর্জন করতে হবে। ফাস্টফুড শরীরের জন্য ক্ষতিকর। যারা নিয়মিত ফাস্টফুড গ্রহণ করে তারা অতিরিক্ত মোটা হয়ে যায়। শরীরে চর্বি জমে যায়। মেদ হয়ে শরীর হয়ে যায় বেসাইজ। ফলে দেখতে অসুন্দর! চলতে কষ্ট! বসতে অসুবিধা। ঘুমাতে সমস্যা। অল্পতে কাহিল। জামাকাপড়ের সাইজ পাওয়া মুশকিল। কম বয়সে বুড়ো বুড়ো।
ফাস্টফুড ছাড়াও খাবারের বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল করতে হবে। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের খাবারের বিষয়ে সাবধান থাকা চাই। শুধু মাংস বা মাংস দিয়ে তৈরি খাবার সবসময় খাওয়া উচিত নয়। মাছ এবং শাকসবজি খেতে হবে। খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। তাজা খাবার খেতে হবে। তাজা ফল খাওয়া জরুরি। ফ্রেশ খাবারের তুলনা হয় না।
সবচেয়ে ভালো হয় ঘরে তৈরি খাবার খাওয়া। ঘরের খাবার শরীরের জন্য বেশ ভালো। সুস্থ থাকার জন্য ঘরোয়া খাবারের বিকল্প নেই।

এখন কথা হচ্ছে কিভাবে খেতে হবে খাবার? খাবার শুধু খেলেই হয় না। প্রতিটি জিনিসের নিয়ম আছে। পদ্ধতি আছে। নিয়ম মেনে খাবার গ্রহণ করতে হয়! নিয়ম না মানলে খাবারের উপকারিতা পুরোপুরি পাওয়া যায় না। শুধু তাই নয়- কখনও কখনও ক্ষতিকরও হতে পারে।
খাবারের নিয়ম জানার আগে জানতে হবে কখন খাবে?
খেতে হবে ক্ষুধা লাগলে। ক্ষুধা না থাকলে কোনোভাবে খাওয়া উচিত নয়। আবার কম ক্ষুধায় ভারী খাবারও খাওয়া যাবে না। মোট কথা যেমন ক্ষুধা তেমন খাবার। ক্ষুধা নেই তো, খাবার নেই। এটিই হলো মূলনীতি।
এবার আসা যাক খাবার খাওয়ার নিয়মে।
আমাদের প্রিয় নবী সা. চমৎকার করে খাবারের নিয়ম বলে দিয়েছেন। তাঁর নিয়মটি এতোটাই আধুনিক এবং বিজ্ঞানভিত্তিক যার কোনো তুলনাই নেই। হয় না। এবং হয়নি। পৃথিবীর চিকিৎসাবিজ্ঞান এর কাছাকাছি কোনো নিয়মও হাজির করতে পারেনি।
জানা যাক কি নিয়ম দেখিয়েছেন তিনি-
খাবার খাওয়ার আগে দু’হাত ভালো করে ধুতে হবে। খাবারের জায়গা হতে হবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। বসতে হবে দু’ হাঁটু সমান রেখে। অথবা দু’পা গুটিয়ে। অথবা এক পা গুটিয়ে আরেক পা খাড়া রেখে। এই তিন পদ্ধতির যে কোনো একটি মান্য করলেই হবে। সামনে দস্তরখান বিছিয়ে দিতে হবে। পরিবারের সবাই একসাথে খেতে হবে। প্লেটে খাবার নিতে হবে প্রয়োজন মতো। বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া শুরু করতে হবে। খাবারের একটি দোয়াও শিখিয়ে দিয়েছেন তিনি। দোয়াটি হলো- বিসমিল্লাহি ওয়া’লা বারাকাতিল্লাহ্।
খেতে হবে প্লেটের সামনের দিক থেকে। ছোট ছোট লোকমা ধরে খেতে হবে। খেতে হবে চিবিয়ে। মনোযোগ দিতে হবে খাবারে। খেতে বসে কথা বলতে হবে কম। প্রয়োজনের বাইরে কথা না বলাই ভালো। খাবার খাওয়ার সময় সালাম দেয়া যায়। সালামের জবাবও দেয়া যায়।
খাবারের পরিমাণ নিয়ে চমৎকার নিয়ম বলেছেন তিনি। বলেছেন- পাকস্থলীকে তিন ভাগে ভাগ করো। একভাগ খেয়ে ভরাও। একভাগ পানির জন্য। আরেক ভাগ রাখতে হবে খালি। কী চমৎকার নিয়ম।
পানি খেতে হবে খাওয়ার আগে। খেয়ে সাথে সাথে পানি খাওয়া যাবে না। খেতে হলে খাওয়ার অন্তত বিশ মিনিট পর খেতে হবে।

প্লেটের খাবার সুন্দর করে খেতে হবে। প্লেট মুছে খেতে হবে। খাবার নষ্ট করা যাবে না। বাসি খাবার খেতে নিষেধ করেছেন তিনি। আঙুল চেটে খেতে হবে। খাওয়া শেষ হলে হাত ধুয়ে নিতে হবে। তারপর মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে। এখানে একটি দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন মহানবী সা.। দোয়াটি হলো- আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আত্য়ামানা ওয়া সাকানা ওয়া জায়ালানা মিনাল মুসলিমিন। আছে আরও কিছু নীতি- খাবার খেতে হবে পরিতৃপ্তির সাথে। পছন্দের খাবার খেতে হবে। খেতে বসে কোনো খাবার অপছন্দ হলে তার বিষয়ে নীরব থাকতে হবে। কোনো খারাপ মন্তব্য করা যাবে না। কারো পছন্দের খাবার নিয়েও অসুন্দর মন্তব্য চলবে না।
খেতে খেতে কোনো খাবার যদি পড়ে যায়, সেটি তুলে খাওয়া গেলে খেয়ে নেয়া ভালো। এমনকি ধুয়ে খাওয়া গেলেও খেয়ে নিতে হবে।

খাওয়ার দাওয়াত পেলে গ্রহণ করা উচিত। আবার দাওয়াত খেতে গেলে সময়ের বেশি আগে যাওয়া যাবে না। খাওয়ার পর বেশি সময় অবস্থান করাও ঠিক নয়। মেজবানের কষ্ট হয় এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। খাবারের প্রশংসা করা যেতে পারে। দাওয়াত দেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত।
কোনো খাবার কারো সামনে খেলে তাকে দিয়ে খেতে হবে। যদি দেয়ার মতো পর্যাপ্ত না থাকে তবে তার আড়ালে খেতে হবে। অভুক্ত প্রতিবেশী থাকলে তাদের খাবার দেয়া কর্তব্য।
সব মিলিয়ে খাবার যেমন খুব প্রয়োজনীয়। ঠিক তেমনি আনন্দের! প্রয়োজনকে আনন্দের সাথে গ্রহণ করলে তা হয়ে ওঠে জীবনের জন্য অন্যরকম সুন্দর!

Share.

মন্তব্য করুন