বছর পেরিয়ে আসে ঈদ। আসে দীর্ঘ একমাস রোজার পবিত্রতা নিয়ে। রোজা বা সিয়াম পালন করা কষ্টের! কিন্তু এ কষ্টের সঙ্গে আছে মিষ্টিময় আনন্দ! রোজাদার জানেন এ আনন্দের খবর। জানেন ভেতর থেকে। তলদেশ থেকে। একেবারে গোড়া থেকে।
যারা রোজা রাখে তাদের মন কী যে গভীর সুখে ভরে ওঠে! কি যে অন্তর্গত সুন্দর থাকে তাদের বুকে। শুধু তারাই জানে এ খবর যারা রোজাদার। যারা রোজা রাখে শুধু মহান রবের সন্তুষ্টির জন্য। পুরো একটি মাস সারাটি দিন না খেয়ে না পিয়ে রোজা রাখার পর যখন এক সকাল হয় ঈদের সকাল। আহা তখন মনটি আনন্দে উদ্বেলিত হয়! খুশিতে নাচতে থাকে।
মজার বিষয় হলো ঈদ শব্দের অর্থও আনন্দ! খুশি! উচ্ছলতা! প্রাণবন্ততা! উল্লাস! উচ্ছ্বাস! এরকম আনন্দের সব শব্দকে জড়ো করা যায় ঈদ শব্দটির সাথে। এক করা যায় ঈদের আনন্দের সাথে। সত্যি সত্যি এতসব শব্দের যমজ অর্থ হলো ঈদ। ঈদ আনন্দ অন্যরকম আনন্দ!

ঈদের দিনের সাথে অন্য কোনো দিনের তুলনা হয় না। কোনভাবেই হয় না। হবেও না। কেমন করে হবে। অন্যদিন কি মানুষ জগতের সব কাজ ভুলে সকাল সকাল নামাজের দিকে ছোটে? নামাজে দাঁড়িয়ে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে! নামাজ শেষ করে কোলাকুলি করে! বুকে বুক মেলায়! শত্রুতা ভুলে যায়! নিজের করে নেয় অন্যকে। এসব ঈদ ছাড়া আর কোনো দিন হয় কি! হয় না। যেহেতু হয় না। যেহেতু এমন করে আর কোনো দিনকে ভাবে না কেউ। তাই ঈদের দিনের সাথে আর কোনো দিনের তুলনাও হয় না। তুলনা চলে না। ঈদের দিন অন্যরকম দিন। অন্য আনন্দের দিন। অন্য সুন্দরের দিন। অন্য প্রাণের দিন।
কিন্তু এ দিনটি আনন্দের সাথে উদযাপনের পথ কী? উপায় কী? পদ্ধতিই বা কী? কিভাবে বেশি আনন্দ পাওয়া যায়! কিভাবে আনন্দ উদযাপন করা যায়।

খুব সাধারণ একটি কথা আছে। কিন্তু এর প্রভাব অসাধারণ! তাহলো নিজের মনটি খুলে দেয়া। মনটিকে উদার করে দেয়া। হ্যাঁ এটিই সাধারণ কথা। কিন্তু প্রভাব অসাধারণ। মন খুলে না দিলে আনন্দ উদযাপন করা যায় না। সুখ পাওয়া যায় না। আনন্দ পেতে হলে, সুখ পেতে হলে মন খুলে দিতে হবে। খুলতে হবে কারণ- মন যদি সঙ্কীর্ণ হয় তবে আনন্দ পালিয়ে যায়। দূরে সরে যায়। ছেড়ে যায়। কেননা আনন্দ কখনো বন্দী মনে প্রবেশ করে না। বদ্ধ মনে বসত করে না। ছোট মনে বেঁচে থাকে না। সুতরাং মন বড় করতে হবে। উদার করতে হবে। উজাড়ও করতে হবে। খোলা মনের মানুষ সব সময় আনন্দে থাকে। বদ্ধ মনের মানুষ থাকে কষ্টে। মন খোলা না হলে অন্যকে গ্রহণ করা যায় না। বরণ করা যায় না। যদি অন্যকে গ্রহণ না করা যায় তো আনন্দ হবে কী করে।

ঈদের আনন্দ উদযাপনের জন্য পরস্পর কোলাকুলি করতে হয়। মিলতে হয়! কাছে টেনে নিতে হয়। মন খোলা না হলে কিভাবে কোলাকুলি করবে সবার সাথে! কথাটা বুঝে আসেনি নিশ্চয়। খোলাসা করি তবে। ধরুন যার সাথে সম্পর্ক ভালো আছে তার সাথে কোলাকুলি করা সহজ। বুকে টেনে নেয়া সহজ। এবং বুকের সাথে ধরে রাখাও সহজ। আবার যার সাথে সম্পর্ক ভালো নয়, আবার খারাপও নয় তার সাথেও কোলাকুলি করা কঠিন নয়। কিন্তু সম্পর্ক খারাপ যার সাথে তাকে বুকে টেনে নেয়া কঠিন। অনেক কঠিন। নিতে হলে খোলা মন লাগে। উদারতা লাগে। এখানে প্রথমত ক্ষমা করার প্রসঙ্গ এসে যায়। ক্ষমা করা না গেলে কোলাকুলি কেনো হাতে হাতও মেলানো সম্ভব হয় না। হবে না। ক্ষমা করতে হলেই উদারতার কথা মানতে হবে। খোলা মনের কথা মানতে হবে।

ঈদ আনন্দ উদযাপনের জন্য পরস্পর সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। যারা দুঃখী, অভাবী গরিব এদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে। অসহায় যারা তাদের সহায় হতে হবে। সমাজে কত মানুষ আছে যারা ঈদের দিন নতুন পোশাক ছাড়াই আসে ঈদগাহে। কত শিশু আছে যারা পুরনো শুধু নয়! ছেঁড়া জামা গায়ে ঈদ করে। তাদের দিকে সাহায্যের হাত না বাড়ালে ঈদের আনন্দ উদযাপন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ঈদের দিন অনেক শিশুর মুখ যখন মলিন তখন ঈদের আনন্দ কি করে উদযাপিত হবে! সুতরাং আনন্দ পেতে হলে মানুষের, শিশুদের মলিন মুখ উজ্জ্বল করার আয়োজন করতে হবে। মানুষের প্রতি ঘৃণা, বিদ্বেষ, হিংসা ও প্রতিশোধ নেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তবেই উদযাপন করা যাবে পরিপূর্ণ ঈদের আনন্দ!

Share.

মন্তব্য করুন