সকালবেলা। মজনু পুকুর পাড়ে হাতির পিঠে ঘুমোচ্ছে। ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখছে। তার মুখে হাসি ফুটে আছে। হঠাৎ হাতি নড়েচড়ে উঠে দাঁড়ায়। মজনু তাল সামলাতে না পেরে ধপাস্ করে পড়ে যায়। হাতি ছুটে গিয়ে দুটো কলাগাছ সাবাড় করে দেয়। পুকুরের পাড় ঘেঁষে রেললাইন। একটা ট্রেন হুইসেল দিতে দিতে চলে যায় দক্ষিণে। মজনু হাত মুখ ধুইয়ে হাতির উপর চড়ে বসে। হাতি বলল, শরীর ভালো না, বুঝলে?
হুঁ। রাতে কলাগাছ ফুলকপি খেতে দিবো।
ঠিক আছে। হাতি খুশি হয়। সামনের দু’পা উঁচিয়ে আড়মোড়া ভাঙে।
হাতি ধীরে ধীরে হাঁটে। চারদিকে তাতানো রোদ উঠেছে। একটা দোকানের সামনে গিয়ে একটু সময় দাঁড়ায়। তারপর দোকানের ভেতর শুঁড় ঢুকিয়ে দেয়। দোকানদার টাকা দিলে মিজানের হাতে দেয়। মিজান ভেতরে ভেতরে উত্তেজনা অনুভব করে। এক ঘণ্টার ভেতর চার শ’ টাকা জমা হয়। বাজারের শেষে বিশাল বটগাছ। বটগাছের তলে এসে হাতি থেকে নেমে বসে।

লুঙ্গির কোঁচড়ে টাকা নিয়ে গোনে। পাঁচ শ’ দশ টাকা। খুশিতে তার মন ভরে ওঠে। টুক করে একটা শব্দ হয়। শব্দ শুনে সামনে তাকাতেই চমকে ওঠে। মোটু খাঁ ও তার দলবল হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে। মোটু খাঁ বলল, পাঁচ শ’ টাকা দে সবাই মিলে বিদেশী … খাওয়া খাবো।
পাঁচ শ’ টাকা! আজ মার জন্য ঔষধ কিনতে হবে। টাকাটা কাল দি। সে ঢোক গিলে বলল। চারদিকে ভালো করে দেখে নেয়। দেখে তার বিপদে এগিয়ে আসছে কিনা। না, কেউ এগিয়ে আসছে না। উপায় না দেখে মোটু খাঁকে পাঁচ শ’ টাকা দেয়। মোটু খাঁ তার দলবল নিয়ে চলে যায়। হাতি বলল, তুমি একটা ভিতু। তোমার সাহস কম।
সত্যি! কী করবো কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। কিছু একটা করা দরকার।
তার মন ভীষণ খারাপ হয়। সে হাতির ওপর ওঠে বসে। হাতি ধীরে ধীরে হাঁটে। দোকানের ভেতর শুঁড় ঢুকিয়ে তার হাতে টাকা দেয়। এবার সাত শ’ টাকা উঠে। তবু মন খারাপ। তার চোখে শুধু মোটু খাঁর ছবি ভেসে ওঠে। এক সময় সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত নামে। সে বাড়ির সামনে এসে নামতেই তার বৃদ্ধ মা লাঠিতে ভর দিয়ে এগিয়ে এসে বলল, কিরে সব ভালো তো?
খুব ভালো। তাড়াতাড়ি খেতে দাও। ক্ষুধায় পেট জ্বলে যাচ্ছে।
ঠিক আছে। হাত মুখ ধুইয়ে আয়।
রাতে বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করে। কিছুতেই ঘুম আসে না। সকালে হাতিকে গোসল করিয়ে কলাগাছ আর ফুলকপি খেতে দেয়। তারপর হাতির পিঠে চড়ে বসে। কিছু দূর এগোতেই মোটু খাঁর দলবল নিয়ে পথ আগলে দাঁড়ায়। মোটু খাঁ মুচকি হেসে বলল, কিছু টাকা দে মাংস পরোটা খাবো।
একটু কাছে আয়। মোটু খাঁ কাছে আসে। মোটু খাঁ কাছে আসতেই সে চিৎকার করে লোকজন জড়ো করে। তার ব্যবহারে মোটু খাঁ ও তার দলবল ভড়কে যায়। এবার মজনু হাতির কানের কাছে মুখ এনে কী যেন বলে।
তার কথা শুনে হাতি শব্দ করে ডাকে। এবং হাতি তার শুঁড় দিয়ে মোটু খাঁকে পেঁচিয়ে ধরে।
মোটু খাঁ প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায়। মোটু খাঁ বলল, আর কখনও টাকা চাইবো না।
তিন সত্যি। হাতি শব্দ করে হাসে।
হ তিন সত্যি।
মজনু ও লোকজন হাসে। মোটু খাঁ নিজেকে ছাড়াতে প্রাণপণ চেষ্টা করে। কিন্তু পারে না। হাতি মোটু খাঁকে পাশের ডোবায় ছুঁড়ে ফেলে দেয়। লোকজন হাততালি দেয়। মোটু খাঁর এ অবস্থা দেখে তার দলবল দৌড়ে পালায়। হাতি সবাইকে পেছনে ফেলে সামনে এগোতে থাকে। চারদিকে তাতানো রোদ ওঠে। দিগন্ত বিস্তৃত সরিষা ক্ষেত। দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।

Share.

মন্তব্য করুন