প্রথমত নিজের প্রয়োজনেই সত্য বলতে হবে। নিজের ভালোর জন্য সত্য বলতে হবে। নিজেকে উন্নত মানুষ হওয়ার জন্য সত্য বলতে হবে। এবং সত্যবাদী হওয়ার প্রয়োজনে সত্য বলতে হবে। সত্যবাদীতা মানুষের সব চেয়ে বড় গুণের একটি। পৃথিবীতে সত্যের বিকল্প কেবলই সত্য। সত্যের কোনো অন্যথা নেই। ছিলো না কোনোকালে। থাকবেও না। কেননা সমগ্র সৃষ্টি জগৎ দাড়িয়ে আছে সত্যের ওপর। সৃষ্টি জগতের সকল কিছু জেগে আছে সত্য ধারণ করে। যেমন দিন রাত সত্য। সকাল সন্ধ্যা সত্য। সূর্য চন্দ্র সত্য। আলো অন্ধকার সত্য। জন্ম মৃত্যু সত্য। রোদ বৃষ্টিও আকাশ জমিন এসবই সত্য। মানুষের জীবনও সত্যের সাথেই জাগ্রত। জীবন্ত !

তাই সত্যকেই গ্রহণ করতে হয় মানুষকে। মানতে হয়। সত্যকেই সম্মান করতে হয়। ধারণ করতে হয়। সত্য ছাড়া মানুষের মুক্তি নেই। কল্যাণ নেই। এমনকি সাফল্যও নেই। মানুষের সৌন্দর্য দীপ্তি পায় সত্যের ঔজ্জ্বল্যে। ভেতর জগৎ বৃহৎ হয় সত্যের প্রবাহে। মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ ব্যক্তিত্ব। এটি নির্ভর করে সত্যের দৃঢ়তার ওপর। যার সত্য নেই। তার ব্যক্তিত্ব নেই। যার সত্য নেই তার মর্যাদা নেই। সত্যহীন মানুষ অবিশ্বাসী। কেউ বিশ্বাস করে না তাদের। কেউ আস্তায় নিতে পারে না। সত্যবাদিতা এমনই এক গুণ যার কোনো তুলনা হয় না। যার সাথে কোনো তুলনা চলে না। সত্য ছাড়া মানুষ প্রকৃত মানুষও হতে পারে না। যদি মানুষকে মানুষ হতে হয় তবে নিশ্চয় তাকে সত্য গ্রহণ করতে হবে। সত্য ধারণ করতে হবে। সত্যের শক্তিতে উজ্জ্বল হতে হবে। সত্যের মতো শক্তিও নেই। এ এক বিস্ময় সম্পদ যার কোনো শত্রু থাকে না। যার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীও থাকতে পারে না। সত্য একাই বিশাল! একাকীই বৃহৎ। সবকিছুর ওপর সত্যের বিজয় নিশ্চিত। একে পরাভূত করার কোনো অস্ত্র নেই। হারিয়ে দেবার কোনো কৌশল নেই। হয় তো সাময়িক মিথ্যা দিয়ে ঢাকা যায় তাকে। কিন্তু একদিন সে তার নিজস্বতায় বেরিয়ে আসে। প্রকাশ্য হয় সবার সম্মুখে। অনেক সময় সত্য ইতিহাস লুকিয়ে রাখে মানুষ। মিথ্যার আবরণে ঢেকে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যায়। কিন্তু সময়ের প্রয়োজন ও ব্যবধানে সত্য বেরিয়ে আসে ঠিক ঠিক। সুতরাং কে ঠেকায় সত্যের গতি। কে আড়াল করে সত্যের মুখ। কে না শোনে সত্যের গান।

এখন জিজ্ঞাসা হচ্ছে – সত্য ধারণ না করলে কি হয়? জবাব হলো বড় কিছু হয়। বড় রকম ক্ষতি হয়! অনেক অঘটন ঘটে যায়! অনেক অকল্যাণ তেড়ে আসে। অনেক দুর্ভাগ্য তাড়া করে। অনেক অসুন্দর বাসা বাঁধে। সত্যকে ধারণ না করলে অমানুষ হওয়া সহজ হয়। অসুন্দর হওয়া সহজ হয়! অরুচির হওয়া আরও সহজ হয়। কথায় কথায় মিথ্যা বলে যে তাকে মানুষ ঘৃণা করে। যে মানুষের ঘৃণার পাত্র হয় তার জীবনের চেয়ে পশুর জীবনও উন্নত। মিথ্যা বলার অর্থ হলো সত্য গোপন করা। যে সত্য গোপন করে তাকে মানুষ বলা সম্ভব কি!

শুরুর কথাটিতে আসি। আমরা বলেছি মানুষকে নিজের প্রয়োজনেই সত্য বলতে হয়! নিজের জন্যেই সত্য বলতে হয়। কি এই প্রয়োজন? কেনো এই প্রয়োজন? এটি নিয়ে ভাবতে হবে। ভাবা উচিৎ। উচিৎ কারন- মহান আল্লাহ তায়ালা সত্য গ্রহণ করার জন্যই মানুষ সৃষ্টি করেছেন। সত্য পালন করার জন্য মানুষকে নির্দেশ দিয়েছেন। সত্য ধারণ করার জন্য উপযুক্ত করেছেন। পৃথিবীতে যত নবী রসুল এসেছেন তাঁরা সত্যের বাণী নিয়ে এসেছেন। সত্যের দিকে ডেকেছেন। সত্য প্রচার করেছেন।

যারা মহামানব এদের কেউ মিথ্যার সাথে ছিলেন না। কেউ না। শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ স. সারা জীবনে একটি মিথ্যাও বলেননি। একটিও না। এমনকি মজা করেও নয়। এটি আনন্দের! একই সাথে বিস্ময়ের! আনন্দের এজন্য যে পৃথিবী এমন একজন মানুষকে পেয়েছে যিনি গোটা জীবনকে সত্যের সুন্দরে জাগ্রত রেখেছেন। বিস্ময়ের একারণে- একজন মানুষ শুধু মাত্র সত্যেকেই জীবনের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। নিজের জীবন থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করেছেন মিথ্যার কলুষতা !
একটু ভাবলেই বোঝা যাবে- মানুষের স্বভাবও সত্য বলার পক্ষে। মানুষের মানসিক জগৎ কেবলই সত্যের পক্ষে। এমনকি শারীরিক আয়োজনও সত্যকেই গ্রহণ করার তৃষ্ণায় উন্মুখ। একজন মানুষ সত্য বলবে এটি খুব স্বাভাবিক বিষয়। কারণ মানুষ সত্য বলে বলেই মানুষ !

আর যখন মিথ্যা বলে তা হয় অস্বাভাবিক। অবিশ্বাস্য। এবং বিস্ময়কর ! কেনো মিথ্যা বলবে মানুষ ! তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সত্য ধারণ করার জন্য। সত্য এড়িয়ে গেলে মানুষের ভেতর অন্যরকম পরিবর্তন ঘটে। এ পরিবর্তনটি অবশ্যই ভালো কিছু নয়। যখন মিথ্যা বলে তখন তার সারা শরীর প্রতিবাদ করে মিথ্যার বিরুদ্ধে। শরীরে অঙ্গগুলো চিৎকার জুড়ে দেয়। বলে আমরা মিথ্যা গ্রহণের জন্য সৃষ্টি হইনি। সত্য আমাদের কাংখিত। সত্য আমাদের পানীয়। মিথ্যা ভীষণ কষ্ট দেয় আমাদের। এভাবে মিথ্যাবাদীর শরীর প্রতিবাদ করে তার মিথ্যার বিপক্ষে। আরও বলে- না তুমি মিথ্যা বলো না। মিথ্যা চর্চা করো না। দেখো মিথ্যা বললে আমরা ঠিক থাকতে পারি না। আমাদের কষ্ট হয়। দুঃখ পাই। আমাদের সেই কষ্ট ও দুঃখে আমাদের ভেতরটি বদলে যায়। মিথ্যার কুৎসিত রঙ ছড়িয়ে পড়ে আমাদের ওপর। শরীরের এ আকুতি ও সত্য। আশপাশে খেয়াল করলেই বোঝা যায় তার নমুনা। কি? নমুনাটি খুব দূরের নয়। কঠিনও নয়। নজর দিলেই বুঝতে পারা যায়। তা হলো- মিথ্যাবাদীর চেহারায় কোনো লাবন্য থাকে না। সৌন্দর্য থাকে না। কোনো আলো থাকে না।

শরীর নিয়ে যারা গবেষণা করেন – এমন বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন খুব ভালোভাবে – একজন মানুষ মিথ্যা বললে তার সারা শরীরে তার খারাপ প্রভাব পড়ে। গোটা দেহে একধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়! এবং সারা শরীর সেই মিথ্যার বিরুদ্ধে চিৎকার করতে থাকে।
মিথ্যা বললে মুখের রঙ বদল হয়ে যায়। চেহারায় প্রকাশ হয়ে পড়ে। চোখের রঙও বদলে যায়। একটি বিস্ময়ের বিষয় হলো- মিথ্যাবাদী মিথ্যা বলার সময় কারো চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারে না। হয় নীচের দিকে মুখ করে বলে। নয় তো ডানে বাঁয়ে দৃষ্টি রেখে বলে। অকারণ মাথা চুলকাবে।কান চুলকাবে।দৃষ্টি লুকানোর চেষ্টা করবে। এভাবে বলতে বলতে আপনাতেই আনমনা হয়ে যায়।
সত্য বলতে হবে নিজের ভালোর জন্য। নিজেকে আলোর আনন্দে সাজিয়ে তোলার জন্য। নিজেকে বিশ্বস্ত করে গড়ে তোলার জন্য।

সত্য বলতে হবে কারণ সত্য ছাড়া কোনো মানুষের মুক্তি নেই। সত্য ছাড়া মানুষের মনুষ্যত্ব নেই। সত্য ছাড়া মানুষের কোনো ব্যক্তিত্ব নেই। যে সত্যবাদী নয় তার গভীরতা থাকে না। একজন ব্যক্তিত্ববান মানুষ কখনও মিথ্যার আশ্রয় নিতে পারেন না। নেনও না। তিনি সত্যকে কোনভাবে লুকোতে পারেন না। লুকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। এবং লুকানোর চেষ্টাও করেন না। বরং ভীষণ সাহসের সাথে সত্য উচ্চারণ করেন। এতে তার অনেক ক্ষতি হলেও। তার দণ্ড হলেও। এমনকি ফাঁসি হলেও।
সত্যবাদী মানেই সাহসী। সাহসী মানেই সত্য ধারণকারী। সত্য বলার জন্য সাহস লাগে। জীবন একটি সত্যের ধারা। একটি সত্যের নদী। এ নদীর ঢেউগুলো সত্যের উল্লাসে ছুটে চলে। যখনই মিথ্যার ঢল নামে তখনই দুর্গন্ধ ঠেসে যায় জীবন নদীর স্রোতে। তাই জীবনে সত্যকেই শুধু সম্ভাষণ জানাতে হয়। কেননা সত্যের মতো সুন্দর কিছু নেই।

Share.

মন্তব্য করুন