এ দিন আজি কোন ভোরে গো খুলে দিলে দ্বার
আজি প্রাতে সূর্য ওঠা সফল হলো কার!
মাঝে মাঝে স্বপ্ন জীবন্ত হয়ে ওঠে। মনের আঙিনায় বেড়ে ওঠে বাস্তব চিত্র। মনে হয় এই বুঝি স্বপ্ন সত্যি হয়ে গেলো। এই বুঝি বাস্তব হলো আমার কল্পনা।
এই তো স্বপ্ন দেখছি আমি, আমার স্বপ্নে ঢাকা নগরী হয়ে উঠেছে তিলোত্তমা ঢাকা। যানজট নেই, পথের মোড়ে মোড়ে আবর্জনার স্তূপ নেই, ফুটপাথ দখল করে কেনাবেচা নেই, স্কুলে যাওয়ার পথে কোন বখাটে ছেলের আক্রমণের ভয় নেই, সওদা করতে গিয়ে পাঁচ টাকার জিনিস পঞ্চাশ টাকায় কিনে আনার ভীতি নেই, সবই যেন সহজ সরল নিরাভরণ এক শান্তির পথ চলা। আহা স্বপ্নটি কী সুুুন্দর!
বৈশাখের ভোরে সূর্য উঠেছে রক্তিম আভায় পূর্ব আকাশ রাঙিয়ে দিয়ে। ভোরের বাতাসে মৃদুমন্দ দোলা দোল দিয়েছে গাছের শাখে শাখে এবং আমাদেরও মনে। রাতের কুয়াশাতে যা ছিল অস্পষ্ট দিনের আলোতে তা সোনামাখা অবয়ব নিয়ে ধরা দিয়েছে। নতুন বছর। নতুন আনন্দের গান।
যদি বিগত দিনের হালখাতা খুলে বসি, দেখতে পাই স্কুলগুলোতে সিলেবাসের ঠিক নেই, ট্রেন বা বাসের ঠিক সময়ে চলার তাগিদ নেই, বৃষ্টি হলেই ফুটপাথ ছাপিয়ে নোংরা পানির প্রবাহ। পথ চলতে বাধার সৃষ্টি করছে। গ্রামেগঞ্জে এমনকি বড় শহরেও মেয়েদের স্কুল কলেজে যাওয়া আসার পথে নানা ধরনের উৎপাত শঙ্কিত করে তুলছে অভিভাবকদের। খেলার মাঠের অভাবে শিশুরা বসার ঘরকেই মাঠ মনে করে বল খেলা শুরু করেছে, তার শব্দ এবং জিনিস ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় মায়েদের ভীরু পদক্ষেপ।
ঢাকায় ছেলেদের খেলার মাঠ নেই। বেড়ানোর সুন্দর জায়গা নেই। দীর্ঘশ্বাস নেয়ার পরিবেশ নেই। নেই নেই নেই। এতো নেই এর ভেতর কি স্বপ্ন দেখবে আমাদের ছেলেমেয়েরা।
নতুন বছর নতুন করে স্বপ্ন দেখার কথা বলি আমরা। কিন্তু নতুন স্বপ্ন দেখা সহজ হয় কি! নানারকম বিষয় কাজ করে এখন। আমাদের ছেলে মেয়েদের জীবনে কত কিছু প্রবেশ করছে। কত নতুন বিষয় যোগ হচ্ছে।
আজকাল পোশাক-আশাকে বিপ্লব দেখা যায়। অতীতে টিভি প্রোগ্রামে শাড়ি পরে অংশ নেয়ার বিধান ছিল। আজকাল সেই নির্দেশ বাক্সবন্দী। তাই দেখা যায় নানা রকম বিদেশি সাজে দেশি মহিলারা অংশ নিচ্ছেন। এতে করে তাদের সৌন্দর্যও যে পরাহত তা বুঝতে অপারগ তারা। জিনস ফতুয়া প্যান্ট শার্ট তো মেয়েলি পোশাক নয়। রবীন্দ্রনাথের কথা স্মরণ করি, ‘যেমন আছ তেমনি এসো, আর করো না সাজ।’
সিলেটের মৌলভীবাজারে আলি আমজাদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শতবর্ষ অতিক্রমের চমৎকার অনুষ্ঠান হলো। সেই বিখ্যাত কথাগুলো স্মরণ করি ‘চান্নিঘাটের সিঁড়ি, বঙ্কুবাবুর দাড়ি, জিতুমিয়ার বাড়ি আর আলি আমজাদের ঘড়ি।’ এখনো আলি আমজাদের কথা লোকের মুখে মুখে ফিরছে। আমাদের শৈশবে যে স্কুলটি ছিল আয়তনে ছোট, ছাত্রী সংখ্যা কম, আজকে তা বিরাট ভবনে রূপান্তরিত হাজারের উপরে ছাত্রী, তেমনি তাদের শিক্ষা, নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকমণ্ডলী এবং অতি সুন্দর মঞ্চ আমাকে মুগ্ধ করল। শহরের দুটো রাস্তা আমার নানা খান বাহাদুর সৈয়দ সিকান্দার আলি ও ছোট মামা সৈয়দ মুজতবা আলির নাম ফলক ধারণ করেছে। নিজের অজান্তেই চোখ থেকে দু’ফোঁটা অশ্রু ঝরে পড়ল, কণ্ঠ হলো বাকরুদ্ধ।
নববর্ষ এলো। আসে সে। আসবে বারবার। কিন্তু নতুন বছর আমাদের কি নতুন করে স্বপ্ন দেখাতে পারে? নাকি পারছে?
কেনো পারে না? এটি কি নববর্ষের দোষ? না। দোষ নববর্ষের নয়। দোষ আমাদের। আমরা আমাদেরকে বদলাতে পারি না। পরিবর্তন করতে পারি না। এটাই আমাদের সীমাবদ্ধতা।
এই নতুন বছরে আমার প্রার্থনা ঘরে ঘরে জ্বলে উঠুক শিক্ষার আলো, নিশ্চিত হোক দু’বেলা পেট ভরে খেতে পাওয়ার অধিকার, আমাদের মেয়েরা অর্থ উপার্জনে আরো অগ্রণী ভূমিকা পালন করুক। ছেলে মেয়ে সবাই নিজেদের নতুন করে বদলে নিক। সবাই নতুন স্বপ্নে বিভোর হোক। নববর্ষের নব আনন্দে জেগে উঠুক। নতুন করে লেখাপড়ায় মন দিক। নতুন কাজের পরিকল্পনা হোক। নতুন উৎসাহে শুরু হোক জীবন গড়ার কাজ। জীবনকে গড়ে তুলতেই হবে। সুন্দর করতে হবে জীবনের কাজগুলো। নববর্ষে এই আমার প্রত্যাশা। সবাইকে জানাই নববর্ষের অভিনন্দন।

Share.

মন্তব্য করুন