জীবন খেয়ার বাঁকে বাঁকে
তুমি কাঁদাও তুমি হাসাও
তুমি মারো তুমি বাঁচাও
তুমি থামাও তুমি জাগাও
রাব্বুল আলামিন;
যুক্ত বিপদ মুক্ত থাকে
জীবন খেয়ার বাঁকে বাঁকে
কত্ত কিছু দাও আমাকে
শুধুই তোমার ঋণ।

হ্যাঁ, সত্যিই! সব প্রাণীই যেন তার কাছে ঋণী। তার ইশারায় সব সম্ভব। সব অসম্ভবকেও সম্ভব করেন অসাধারণ পদ্ধতিতে। তাই তো প্রাণীরাও এই বিষয়টা বুঝে। বুঝে গেল একটি প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত কুমিরও। সে হরিণের বাচ্চাকে অতি সহজে পেয়েও খায়নি। কেন! এই অনুভূতি কোত্থেকে এলো- সে কথা বলছি না। বলছি- সে এটাও জানে তাকে বাঁচাতে হবে। প্রচণ্ড ক্ষুধা, তাতে কী! মহত্ত্ব প্রাণীদেরও আছে, এটা বোঝাতে হবে না! এই ভাবনায় একটি হরিণের বাচ্চাকে আশ্রয় দিলো। বাচ্চাও খুব শান্তিতে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে পিঠে। এ যেন প্রশান্ত মহাসাগরে টাইটানিকের নাবিক। কী আশ্চর্য! বাচ্চাটা এক নিমেষেই শেষ হয়ে যেতো। অথচ অনায়াসেই দাঁড়িয়ে আছে। কুমিরও যেন বুঝলো- সে যেন এতটুকু ভয়ও না পায়। বাচ্চাটারও ভেতরের বাইরের ভয়ের অলিগলি সব বন্ধ হয়ে গেল। এভাবেই যথাযথ ¯েœহ মমতায় তাকে ডাঙায় তুলে দেয় কুমির। কী আশ্চর্য! ছোটবেলা শুনেছি সে ভয়ঙ্কর হিং¯্র, অথচ আজ এই বিষয় দেখে মনটা গলে গেল। এমনও বিষয় আছে পৃথিবীতে! হ্যাঁ আছে। আছে বলেই পৃথিবী এতো সুন্দর। শুধু কি কুমির! অন্যান্য প্রাণীর মাঝেও আছে এই মহৎ বিষয়।

এক কুকুর আর এক বানর। তারা পরস্পর বন্ধু। দারুণ অবাক হবার বিষয়- তাই না! তাও আবার ভিন্ন জাতির মধ্যে! হ্যাঁ, অন্তর স্বচ্ছ ও দরদি হলে তাও সম্ভব। এই জুটি রয়েছে দিল্লির এক ব্যস্ততম রাস্তায়। মানুষ যার যার কাজে ব্যস্ত। কেউ কারো প্রতি খেয়াল রাখার জো নেই। কিন্তু ওরা! ওরা ঠিকই একে অপরের প্রতি খেয়াল রাখে। শুধু কী খেয়াল! একে অপরের জান প্রাণও। বানরটি কুকুরের পিঠে। কুকুরও বানরকে পিঠে রেখেই হাঁটে। বানর হঠাৎ হঠাৎ নেমে দুরন্ত দৌড় দেয়। নিয়ে আসে খাবার। তারপর একে অপরকে খাবার দেয়। কখনো নিজেরটা খেয়ে অপরটা রেখে দেয়। কখনো একসাথে ভাগাভাগি করে খায়। এটা কিভাবে হলো! এ কথা ভাবতেই চোখে পানি চলে এলো।
একটি ছোট জাহাজ বা বোট। মানুষের সাথে একটি কুকুরও ছিল। হঠাৎ পা পিছলে সাগরে পড়ে যায়। চলন্ত বোট অনেকটা দূরে চলে গেলো। মরণ বিপদও থেমে নেই। ভাগ্য ভালো উত্তাল ঢেউ ছিল না। তবুও তো বিপদ! কখন স্রােতের তীব্রতায় ডুবে যায়। কুকুরও বাঁচাও বাঁচাও বলেই যেন কাঁদছে। চিকন চাকন পা। কতটুকুই বা সাঁতার কাটবে! দেখলো এক ডলফিন মাছ। ডলফিনের তুলনায় কুকুর তো অতি ছোট্ট পিঁপড়া। তবুও এতটুকু অহঙ্কারও নেই তার। তাই ছুটে এলো কুকুরের কাছে। যেন বলছে ভয় পেয়ো না! এই বিশাল সাগরের মালিক আমাকে পাঠিয়েছেন। মাথায় তুলে নিলো কুকুরকে। কী আশ্চর্য ! ভিন্ন প্রাণী হয়েও এই ভালোবাসা। পরম সতর্কতায় কুকুরকে বোটে তুলে দিলো। কুকুরও মহা খুশি। শুকরিয়া জানাতেও কার্পণ্য করলো না। সামনের দুই পা তুললো। হাতের মতো পা দু’টি নাড়িয়ে নাড়িয়ে ধন্যবাদ জানালো। ডলফিন কি এই শুভেচ্ছা পেয়ে থামতে পারে! না, এটা হতে পারে না। সেও সাগরে দাঁড়ালো। ও- মাছ কিভাবে দাঁড়ায়! সেটাও অবাক বিষয়। শুধু লেজটুকু পানিতে। ঠিক তখনই সামনের দুই পাখনা দিয়ে কুকুরকেও ধন্যবাদ জানালো। কখনো শুধু ঠোঁট ভাসিয়ে হেসে মাথা নাড়িয়ে শুভেচ্ছা জানালো। অভিনব এই শুভেচ্ছা জানানোর পদ্ধতি আর কেউ পারেনি।

একটি শিম্পাঞ্জি ও একটি পাখি। কেউ কারো সাথে আগের কোনো সম্পর্কও নেই। তবুও ঘটে গেলো অকৃত্রিম ভালোবাসা। পাখিটি পড়ে গেল পানিতে। হাজার চেষ্টা করেও উঠতে পারছে না। হালও ছাড়েনি। ঠিক তখনই নজরে পড়ে এক শিম্পাঞ্জির। কী ছটফট করছে! এই দৃশ্য চোখে পড়তেই শিম্পাঞ্জি চলে এলো। কাছে এসেই দেখে এক বিপদগ্রস্ত পাখি। সে হয়তো ভাবতে পারতো, অনেকেই আমাকে মানুষের পরে স্থান দেয়। প্রায় মানুষই অপরের বিপদে এগিয়ে আসে না। আর আমি! আমি কেন এই কাজ করবো! এমন উদ্ভট ধারণাও তার নেই। নেই মানুষের পরে বুদ্ধিতে বড় হওয়ার অহঙ্কারও। এমন অহঙ্কার নেই অন্যান্য প্রাণীদেরও। প্রথমে সে একটি পাতা ফেললো। এ যেন মানুষের মতো বুদ্ধি কাজে লাগানো পদ্ধতি। পাখিটি পাতায় কামড়ে ধরার ক্ষমতা নেই। অতি দুর্বল হলে যা হয় তা হলো। হাল ছাড়লো না শিম্পাঞ্জি। নিজের সামনের পা-ই ঢুকালো পানিতে। যেন ডুবন্ত অবস্থায় থেকে তুললো। এভাবেই এক পর্যায়ে মুক্তির বাতাস পেলো পাখিটি।

একই বিপদে পড়েছিল একটি কাক। তখন ছিল এক ভাল্লুক। কাকটি পানিতে ভীষণ ছটফট করছিলো। তা দেখে ভাল্লুকের মনে দয়ার উদ্্েরক হলো। ভাবলো কিভাবে উদ্ধার করা যায়! মাংসের কোনো অংশে কামড় দিলে তো ব্যথা পাবে! তাহলে কিভাবে! হঠাৎ বুদ্ধি এলো। ডানার পাখনায় কামড় দেবে। পাখনায় কামড় বসায়। তুলে নিয়ে এলো ডাঙ্গায়। তুলে দেখলো ভিজে তো একাকার। রোদ কোথায়! বুঝে সুঝে রোদেই রেখে দিলো। কাক তার আগের অবস্থা ফিরে পেলো।

ইউরোপের একটি খামার। হাঁস, মুরগি ও পশু-পাখির খামার। একটি মা হাঁস। কয়েকটি সুন্দর ফুটফুটে বাচ্চা দিয়ে মারা গেলো। এখন বাচ্চাদের কী অবস্থা! একটু ভাবলেই বোঝা যায় ঠিক তখনই একটি বিড়াল এগিয়ে এলো। এগিয়ে এলো দরদি হৃদয়ে। মখমল কোমল পায়ে। লোভের চোখ বন্ধ করে। দায়িত্ব নিলো বাচ্চাদের। একেবারে মা হাঁসের মতোই যেন। আদর সোহাগ দেয় পরম মমতায়। বাচ্চারাও যত্ন পেয়েই বড় হয়। এমনকি বড় হওয়ার পরেও ঐ বিড়ালের পিছু পিছু হাঁটে। আরও মজার বিষয় হলো এই বিড়ালের নিজস্ব বাচ্চাও ছিলো। তবুও এতটুকু কমতি হয়নি আদর সোহাগ আর যতেœর। যেন বাচ্চাকে বলে দিলো এই হাঁসের বাচ্চারা তোরই আপন ভাই-বোন। এই চিত্র দেখে কার না মন গলে!

Share.

মন্তব্য করুন