গল্পটি মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর। কোনো এক যুদ্ধ থেকে ফিরছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন তাঁর অনেক সাহাবী। তাঁরা ফিরছিলেন মদীনায়। পথ চলতে চলতে খানিকটা বিশ্রাম নেবার প্রয়োজন হলো তাঁদের। বিশ্রামের উপযোগী জায়গাও পেয়ে গেলেন। এমন একটি উপত্যকা পেলেন যেখানে গাছগাছালি ভরা। ছায়া ঢাকা এমন জায়গাটি বিশ্রামের জন্য বেছে নিলেন মহানবী (সা.)। উট ঘোড়া খচ্চর থেকে নামলেন সবাই। মহানবীর সাথীরা বিভিন্ন গাছের নীচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যে যার মতো আশ্রয় নিলেন। শুয়ে পড়লেন তাঁরা। ছায়ার শীতল আরামে ঘুমিয়ে গেলেন সবাই।
মহানবী (সা.) ও একটি গাছের নীচে শুয়ে পড়লেন। গাছের একটি ডালে ঝুলিয়ে রাখলেন তাঁর তরবারিটি।
ঘুমিয়ে গেলেন তিনিও। ঠিক তখনই ঘটলো ঘটনাটি।

রাসুল (সা.) কে শত্রু মনে করে এমন একজন লোক মহানবী (সা.) ও তাঁর সাহাবীদের অনুসরণ করছিলো। মহানবীর ক্ষতি করার চেষ্টা ছিলো তার। সে ছিলো মুশরিক অর্থাৎ মহান আল্লাহকে একক শক্তি না মেনে আরও কাউকে মানে সে। যেই না মহানবী (সা.) কে একা ঘুমুতে দেখলো অমনি চুপে চুপে পৌঁছে গেলো তাঁর কাছে। এসেই ডাল থেকে মহানবীর তরবারিটি নিয়ে নিলো। মহানবী (সা.) এর মাথার পাশে দাড়ালো। একরকম উচ্চ কণ্ঠে বললো- হে মুহাম্মদ এখন তোমাকে আমার হাত থেকে কে রক্ষা করবে?

মহানবী স জেগে উঠলেন ঘুম থেকে। চোখ খুলে দেখেন তাঁরই তরবারিটি উন্মুক্ত হাতে দাঁড়িয়ে আছে শত্রু! খোলা তরবারি থেকে যেনো ছড়িয়ে পড়ছিলো মৃত্যুর ঝিলিক! আল্লাহর রাসুল একা! শোয়া অবস্থায়। শরীরে কোনো বর্মও নেই। কেবল সাধারণ পোশাক গায়ে। সঙ্গীরা দূরে। যে যার মতো ঘুমে অচেতন।
মুশরিক লোকটি আনন্দে প্রায় আত্নহারা! তার খুশির কারণ- আজই মহানবীকে তরবারির আঘাতে শেষ করে দেবে চিরদিনের জন্য। তার মনে জয়ের উল্লাস! খুশিতে তরবারি নাড়াচ্ছিলো। আর মুখে একটি কথাই বলছিলো- আজ তোমাকে কে রক্ষা করবে আমার হাত থেকে?

বিস্ময়ের বিষয় হলো মহানবী (সা.) শান্ত মনে শুয়েই রইলেন। এমন ভয়ানক পরিস্থিতিতেও তিনি স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন উন্মুক্ত তরবারি উঁচু করা শত্রুর দিকে।
তরবারি নাচিয়ে শত্রুটি যখন আবার বললো- আজ কে তোমাকে আমার হাত থেকে রক্ষা করবে?
রাসুল (সা.) দৃঢ় কণ্ঠে একটি মাত্র শব্দ উচ্চারণ করলেন- আল্লাহ!
মহানবী (সা.) এর মুখ থেকে উচ্চারিত এ একটি মাত্র শব্দের ভেতর কি লুকিয়ে ছিলো কে জানে। শত্রুর কানে শব্দটি পৌছানোর সাথে সাথে মুশরিক লোকটির সমস্ত শরীর কাঁপতে শুরু করলো। কম্পন এমনই ছিলো যে কাঁপতে কাঁপতে হাত থেকে তরবারিটি পড়ে গেল।
মহানবী (সা.) উঠে দাড়ালেন। হাতে তুলে নিলেন খোলা তরবারিটি। বদলে গেলো দৃশ্যটি। তরবারি এখন রাসুল স এর হাতে। খালি হাতে মুশরিক লোকটি।

রাসুল (সা.) খুব শান্ত কণ্ঠে বললেন- এখন তোমাকে আমার হাত থেকে কে রক্ষা করবে?
কথাটি কানে যেতেই লোকটির চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেলো। তার মুখের ওপর ভেসে উঠলো মৃত্যুর ছায়া। কম্পন বেড়ে গেলো আরও। থরথর করে কাঁপছিলো সে। তার মনে হচ্ছিল মৃত্যু তার ঘাড়ে এসে বসে আছে। ভয়ে চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো একদম! পরিস্থিতি দেখে ক্ষমা চাইতে শুরু করলো সে। একেবারে কাতর কণ্ঠে বললো- আপনার হাত থেকে আমাকে বাঁচানোর মতো কেউ নেই! আমার প্রতি দয়া করুন। আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমি আপনার সাথে অধম আচরণ করেছি। আপনি আমার সাথে উত্তম আচরণ করুন।
মহানবী (সা.) বললেন- তুমি কি ইসলাম গ্রহণ করবে?

জবাবে শত্রুটি বললো- না। কিন্তু যেসকল লোক আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে অথবা করতে চাইবে, আমি তাদের সঙ্গী হবো না।
আল্লাহর রাসুল (সা.) লোকটিকে ক্ষমা করে দিলেন। তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করলেন। সম্মানের সাথে বিদায় দিলেন তাকে।
লোকটি ছিলো কোনো এক গোত্রের নেতা। সে ফিরে গেলো তার গোত্রের কাছে। কিন্তু যেতে যেতে তার মনে নানারকম প্রশ্ন পাল্টা প্রশ্ন জাগলো। বড় প্রশ্ন এ কেমন মানুষ যে মৃত্যুর মুখে পড়লো। অথচ মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে শত্রুর প্রতি এতো শান্ত ব্যবহার, এতো উত্তম আচরণ করলো। একদম শর্তহীন ছেড়ে দিলো তাকে।
এ তো কোনো সাধারণ মানুষের কাজ হতে পারে না।
লোকটি তার গোত্রের কাছে পৌঁছালো। ঘটনাটি শোনালো সবাইকে। শুনে বিস্ময়ে হতবাক সবাই! ঠিক তখনই লোকটি সবাইকে বললো- তোমরা ইসলাম গ্রহণ করো। তার আহবান শুনে গোত্রের সকলেই মুসলমান হয়ে গেলো।

Share.

মন্তব্য করুন