স্বাস্থ্যই সম্পদ বা স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল- এ কথা আজ সবাই জানে এবং মানে। না মানার কোনো সুযোগও নেই। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে কোনো ভালো কাজই করা যায় না। ফলে কোনো স্বপ্নও পূরণ হয় না। সুতরাং স্বাস্থ্য সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। আর এ বিষয়টা সময়ে সময়ে পরিস্থিতির আলোকে পরিবর্তন হয়। প্রযুক্তির এ যুগে স্বাস্থ্য সেবায় প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে বৈপ্লবিকভাবে। ফিটনেস ট্রাকার তেমনই এক প্রযুক্তি পণ্য। ফিটনেস ট্র্যাকার হলো- হাঁটা বা চলা, ক্যালোরি গ্রহণ এবং কিছু ক্ষেত্রে হৃদস্পন্দন ইত্যাদির মতো ফিটনেস-সম্পর্কিত ম্যাট্রিকগুলি পর্যবেক্ষণ এবং ট্র্যাক করার জন্য একটি ডিভাইস বা অ্যাপ্লিকেশন। এটি এক ধরনের পরিধানযোগ্য কম্পিউটার। সম্প্রতি এতে যুক্ত হয়েছে করোনা বিষয়ক সেবা। কোনো উপসর্গ না থাকলেও কেউ কেউ করোনা আক্রান্ত হতে পারে- এই তথ্য দেবে ফিটনেস ট্র্যাকার। অ্যাপল (Apple), গারমিন (Garmin), ফিটবিট (Fitbit)-এর মতো ফিটনেস ট্র্যাকারগুলো শরীর খারাপ লাগার আগেই বলে দিতে পারবে করোনা আক্রান্ত কি-না।

এই ফিটনেস ট্র্যাকারগুলো হার্ট রেট মনিটর করে। ফলে শরীর খারাপ হলেই এরা সেটা বুঝতে পারে। দুটি হার্ট বিটের অর্থাৎ হৃদস্পন্দের মাঝের সময়টা এরা মেপে থাকে। যদি কারও শরীর ঠিক থাকে এবং শরীরে কোনো ইনফেকশন না থাকে, তা হলে হৃদস্পন্দন ওঠা-নামা নির্ভর করে কোন পরিস্থিতিতে একজন মানুষ রয়েছে তার ওপরে। সে ক্ষেত্রে হার্ট রেট পরিবর্তিত হবে নার্ভাস সিস্টেম, স্ট্রেসের ওপরে নির্ভর করে। আর যদি শরীরে কোনও ভাইরাস থাকে, বিশেষ করে ইনফ্ল্যামেটরি ইনফেকশন, তা হলে নার্ভাস সিস্টেম খুব দেরি করে কাজ করে ও তার জন্য হার্ট রেটে সহজেই পরিবর্তন হয় না। আর এই বিষয়টি লক্ষ্য করলেই ইনফেকশনে সংক্রমিত কি-না তা বোঝা যাবে।

মাইন্ট সিনাই হেলথ সিস্টেমের তরফে এই সংক্রান্ত যে গবেষণাটি করা হয়েছে, এর লেখক রব হার্টেন বলছেন, আমরা বর্তমানে মানুষজনের মুখের কথায় বিশ্বাস করছি। কেউ যখন বলছেন যে, তার শরীর ভালো লাগছে না বা দুর্বল লাগছে, তখন তাকে পরীক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু যাদের এই ধরনের সমস্যা নেই অর্থাৎ উপসর্গ নেই, তারা কিন্তু এই ধরনের ফিটনেস ট্র্যাকারের সাহায্যে পুরো বিষয়টি ধরতে পারে। এবং সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণে এই ফিটনেস ট্র্যাকার বড় ভূমিকা নিতে পারে। কেননা, ইনফ্ল্যামেটরি ইনফেকশনের ক্ষেত্রে হার্ট রেটে পরিবর্তন হয়। আর করোনা সংক্রমিত হলেও ইনফ্ল্যামেটরি সমস্যা থেকে যায়। ফলে এই ট্র্যাকারের সাহায্যে এই ভাইরাসও চিহ্নিত করা সম্ভব।

এদিকে ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার লেখক মিশেল স্নিডার বলছেন, স্মার্টওয়াচ বা ফিটনেস ট্র্যাকার ব্যবহারের সুবিধা হলো, যে কেউ একটু লক্ষ রাখলেই করোনা আক্রান্ত কি না তা বুঝতে পারবে। এই পরিস্থিতিতে যেভাবে করোনা পরীক্ষা করাতে সমস্যা হচ্ছে, সময় লাগছে, তাতে আগে থেকে যদি কেউ বুঝতে পারে যে তিনি করোনা আক্রান্ত, তা হলে অকারণ পরীক্ষা করার প্রবণতা কমবে। পাশাপাশি, মানুষও সচেতন হয়ে যাবে, ফলে সংক্রমণ ছড়াবে না। তবে আমাদের দেশে এটি আসতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

Share.

মন্তব্য করুন