তারকা খেলোয়াড়দের নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই দর্শক-সমর্থকদের। তারা কী খায়, কেমন বাড়িতে থাকে, তাদের পারিবারিক জীবন কেমন- এসব জানতে চায় ভক্তরা। তেমনি তারকা খেলোয়াড়দের আয়-উপার্জন কেমন সেটি নিয়েও রয়েছে প্রবল আগ্রহ। এবার তোমাদের জানাবো ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি আয়করা কয়েকজন ক্রীড়াবিদের নাম। অবশ্য তালিকাটি করা হয়েছে ১ জুন ২০১৯ থেকে ১ জুন ২০২০- পর্যন্ত সময়ের উপার্জনের হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফোর্বস ম্যাগাজিন এই তালিকাটি করেছে।
তার আগে জানিয়ে রাখি ক্রীড়াবিদদের আয়ের উৎসগুলো সম্পর্কে। শীর্ষ পর্যায়ের খেলোয়াড়রা দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য বড় অঙ্কের অর্থ পেয়ে থাকেন। তবে খেলাভেদে সেটির মাঝে পার্থক্য রয়েছে। যেমন ক্রিকেটাররা সংশ্লিষ্ট দেশের ক্রিকেট বোর্ড থেকে বেতন পান। তাদের প্রায় সারা বছরই জাতীয় দলের খেলার মধ্যে থাকতে হয়। এর বাইরে বিভিন্ন লিগে খেলেও তারা উপার্জন করেন।

আবার ফুটবলারদের প্রধান ব্যস্ততা ক্লাবকেন্দ্রিক। বছরের খুব কম সময়ই তারা জাতীয় দলকে সার্ভিস দিয়ে থাকেন। তাই ফুটবলারদের আয়ের প্রধান উৎস ক্লাব থেকে পাওয়া পারিশ্রমিক। সেটি কখনো মৌসুম হিসেবে এককালীন চুক্তি হয়, কখনোবা মাসিক বেতন। এর বাইরে বিভিন্ন টুর্নামেন্টের প্রাইজমানিও পেয়ে থাকেন তারা। একক খেলা যেমন টেনিস কিংবা অ্যাথলেটিকসে শিরোপা জিততে হয় একক প্রচেষ্টায়, তেমনি জিতলে প্রাইজমানির টাকাটাও আসে নিজের পকেটে। এ বছর ইউএস ওপেন টেনিসের চ্যাম্পিয়ন প্রাইজমানি ছিল ৩০ লাখ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশী টাকায় যা ২৫ কোটিরও বেশি। তো সিঙ্গেলসে চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড় একাই জিতেছেন এই অর্থ, এতে ভাগ বসানোর কেউ নেই। এছাড়া বিভিন্ন সময় বোর্ড বা সংস্থা থেকে বোনাস পেয়ে থাকেন খেলোয়াড়রা।

এর বাইরে স্পন্সর থেকে অর্থ পান তারা। যেমন লিওনেল মেসি যে কোম্পানির বুট পরে খেলবেন তাদের সাথে থাকবে চুক্তি। ওই কোম্পানির জন্য এটি একটি মার্কেটিং পলিসি। এ জন্য মেসিকে অর্থ দেবেন তারা। কারণ একজন সুপারস্টারের পায়ে যে বুট থাকবে স্বাভাবিকভাবেই আরো অনেকে ওই বুট পরতে চাইবেন। মডেলিং ও অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রম তো আছেই। যেমন একটি কোম্পানির প্রচারণায় অংশ নিলেও পান টাকা।
এসব বিষয় মাথায় রেখেই ফোর্বস ম্যাগাজিন ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি উপার্জনকারী খেলোয়াড়দের একটি তালিকা করেছে। তাতে সবার উপরে রয়েছেন টেনিস তারকা রজার ফেদেরার। এই সময়ে তিনি আয় করেছেন ১০৬ মিলিয়ন বা ১০ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার। এই পরিমাণ অবশ্য কর পরিশোধ করার আগের। প্রথম কোন টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে এই তালিকার শীর্ষে উঠলেন সুইজারল্যান্ডের এই তারকা। এর আগে ২০১৩ সালে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে উঠেছিলেন এই টেনিস তারকা।

অবশ্য করোনা ভাইরাসের কারণে এ বছর লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর বেতন কমে যাওয়ায় তাদের ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন ফেদেরার। মার্চ মাস থেকে প্রায় তিন মাস খেলাধুলা বন্ধ ছিলো। তারপর ফুটবল লিগ মাঠে গড়ালেও ম্যাচ হয়েছে দর্শক ছাড়া। যে কারণে ক্লাবগুলোর আয় কমেছে। আর সে জন্য বেতন কেটে নেয়া হয়েছে ফুটবলারদের।
এ বছর অনেকটা সময় খেলা বন্ধ থাকলেও স্পন্সরশিপ থেকে প্রচুর অর্থ পেয়েছেন পুরুষদের সিঙ্গেলসে ২০টি গ্র্যান্ডস্লাম টেনিস শিরোপা জেতা ফেদেরার। মার্সিডিজ বেঞ্জসহ বিশে^র নামিদামি ১৩ কোম্পানির সাথে চুক্তি রয়েছে তার। এ বছর খেলাধুলা বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকলেও তাই তার উপার্জন কমেনি। ১০৬ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১০০ মিলিয়ন ডলারই তার এসেছে মাঠের বাইরের উপার্জন থেকে। মাঠের বাইরে থেকে এক বছরে এত উপার্জনের রেকর্ড আছে আর শুধুমাত্র একজনের, তিনি গলফ তারকা টাইগার উডস।

যাই হোক সবচেয়ে বেশি উপার্জনকারী খেলোয়াড়ের তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছেন যথাক্রমে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসি। এ বছর দুজনেরই বেতন কর্তন করেছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। লিওনেল মেসি ও তার অন্য টিমমেটরা মিলে বার্সেলোনার ক্ষতির কথা চিন্তা করে করোনাকালীন সময়ে ৭০ শতাংশ বেতন কম নিয়েছেন। আর জুভেন্টাসে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও তার টিমমেটরা মিলে ক্লাবকে মওকুফ করেছেন ১০০ মিলিয়ন বা ১০ কোটি মার্কিন ডলার। যেখানে রোনালদোর একার বেতন থেকেই কাটা গেছে ১ কোটি ১০ লাখ ডলার। সব মিলে রোনালদোর আয় ছিলো ১০৫ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বেতন ও প্রাজইমানি থেকে এসেছে ৬০ মিলিয়ন, বাকি ৪৫ মিলিয়ন এসেছে স্পন্সর ও অন্যান্য উৎস থেকে। এই পর্তুগিজ তারকার প্রধান স্পন্সর ক্রীড়াসামগ্রী নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নাইকি।
বার্সেলোনা ও আর্জেন্টাইন সুপারস্টার লিওনেল মেসির আয় ছিলো ১০৪ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বেতন ও প্রাইজমানি থেকে এসেছে ৭২ মিলিয়ন, বাকি ৩২ মিলিয়ন এসেছে স্পন্সরশিপ থেকে। মেসির প্রধান স্পন্সর ক্রীড়াসামগ্রী নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাডিডাস। এ ছাড়া মাস্টার কার্ড, পেপসিকোসহ অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি আছে তার।

তালিকায় ৪ নম্বরে আছেন ব্রাজিলীয় ফুটবলার নেইমার জুনিয়র। যার আয় ছিলো ৯৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার। যার মধ্যে স্পন্সরশিপ থেকে এসেছে ২৫ মিলিয়ন।
ফোর্বস ম্যাগাজিনের করা তালিকায় সবচেয়ে উপার্জনকারী একশো খেলোয়াড়ের মধ্যে ৩৫ জনই বাস্কেটবল তারকা। আগের প্রতি বছরই সবচেয়ে বেশি স্থান পেত ফুটবলাররা। তবে এবার করোনা মহামারীর কারণে ফুটবলারদের বেতন কাটা যাওয়ায় তারা পিছিয়ে গেছেন। এবারের তালিকায় ফুটবলার আছে ১৪ জন। লিভারপুল এফসি ও মিসরীয় ফরোয়ার্ড মোহাম্মাদ সালাহ আছেন ৩৪ নম্বরে। উপার্জন ৩৫ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলার। ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন ৩৬ নম্বরে, উপার্জন ৩৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার। ক্রিকেটারদের মধ্যে আছেন একমাত্র ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি। যার অবস্থান ৬৬ নম্বরে। কোহলির উপার্জন ছিলো ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

Share.

মন্তব্য করুন