কী করছিস তুই! পরে কিন্তু আমার কাছে টাকা চাইতে পারবি না, বলে দিলাম। জিসান তার ছোট ভাইকে এভাবেই সতর্ক করছে। জিয়াদ ভাইয়ের কোনো কথাই শুনলো না। পকেট থেকে ২০ টাকার একটা নোট বের করে রাস্তায় দাঁড়ানো বয়স্ক ভিক্ষুকের হাতে দিলো। ভিক্ষুক জিয়াদের মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করলেন। জিসানের কাছে ব্যাপারটি ভালো লাগেনি। কারণ টিফিন আওয়ারে জিয়াদ যদি টিফিনের জন্য জিসানের কাছে টাকা চায় তখন তো আর না করতে পারবে না। প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার সময় দুই ভাই বাবার কাছ থেকে টিফিন বাবদ বিশ টাকা করে পায়। কিন্তু জিয়াদ প্রায় সময় যাওয়া-আসার পথে দশ টাকা দান করে দেয়। আজ দান করার সময় জিসান বারবার বাধা দেয়ায় পুরো বিশ টাকাই দান করে দিয়েছে। মনে মনে ভাবছে আজ না হয় টিফিন নাই করলাম।

স্কুলে টিফিন আওয়ার চলছে। ক্লাসের ক্যাপ্টেন জিয়াদকে হেড স্যার ডেকেছেন। সেখানে সকল ক্লাসের ক্যাপ্টেনই আছে এবং স্যারের পক্ষ থেকে টিফিনের ব্যবস্থাও আছে। স্কুলের শৃঙ্খলা বিষয়ে তিনি সবাইকে তাদের করণীয় সম্পর্কে উপদেশ দিলেন। স্যারের কথা শেষ হলে সবাই যার যার ক্লাসে চলে যাচ্ছে। জিয়াদ খেয়াল করলো যে তার ভাই জিসান মন খারাপ করে ক্যান্টিনের পাশের বেঞ্চিতে বসে আছে। জিয়াদ এগিয়ে গিয়ে বসে থাকার কারণ জানতে চাইলো। জিসানের চোখ দু’টি ছল ছল করছে। সে বললো তার টিফিনের টাকা খুঁজে পাচ্ছে না। গেইট দিয়ে বের হওয়ার সময় ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেছে। ‘ভাইয়া! তুমি তো আমাকে দান করতে বারণ করছিলে আর এখন তোমার টাকাই হারিয়ে গেলো? এটা আল্লাহর বিচার!’ বললো জিয়াদ। কখনো কোনো অসহায় মানুষকে দান করতে দেখলে নিষেধ করা বা দান করা নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা ঠিক না। কেননা একজন ধনী মানুষও যেকোনো সময় অসহায় হয়ে যেতে পারে যেমন আজ তুমি হলে। পবিত্র কুরআনের সূরা তাওবায় ৭৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “যে সকল ঈমানদারগণ স্বেচ্ছায় দান করে এবং নিজেদের শ্রম ব্যতীত তাদের কিছুই থাকে না, তাদেরকে নিয়ে যারা বিদ্রƒপ করে আল্লাহ তায়ালাও তাদেরেকে (বিদ্রƒপকারীদের) বিদ্রƒপ করবেন এবং তাদের জন্য রয়েছে মর্মপীড়াদায়ক শাস্তি।” হ্যাঁ ভাই, তোকে দান করতে বারণ করছি বলেই হয়তো আল্লাহ আমাকে এই শাস্তি দিয়েছেন। আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি এ জন্য তাওবা করছি এবং এখন থেকে তোর মতোই টিফিনের টাকা থেকে অসহায় মানুষকে দান করার চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ।

Share.

মন্তব্য করুন