কথা শুনে রাহাত ভ্রু কুঁচকালো। হুজুরের বক্তব্যটার অনেকাংশ বুঝতে পারলেও একটি কথায় একটু খটকা লেগে আছে। দাদুর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই দাদু ইশারা করলেন যে বাসায় গিয়ে বুঝিয়ে দিবেন। আজ শুক্রবার, বরাবরের মতো রাহাত দাদুর সাথে জুমার সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে এসেছে। হুজুর জুমার খুতবায় বললেন ‘মানুষের জীবনে যদি কেউ কাউকে আদর্শ বা অনুকরণীয় ব্যক্তি হিসেবে গ্রহণ করতে চায় তবে অবশ্যই মুহাম্মাদ সা.-কেই গ্রহণ করতে হবে। কেননা এর বিকল্প কোনো ব্যক্তি নাই যাকে অনুসরণ, অনুকরণ বা আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা যায়।’ রাহাত ভাবছে যে স্কুলের বন্ধু-বান্ধবরা সবাই বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তি বা মডেলের স্টাইল অনুসরণ করে। মাথার চুল কাটা থেকে শুরু করে কথা বলার স্টাইলটাও হয় প্রিয় কোনো ব্যক্তি বা মডেলের আদলে। তাহলে এই সব কি মুসলমানদের জন্য ঠিক নয়? হুজুরের কথা শুনে রাহাতের মনে এই প্রশ্নটি বারবার উঁকি দিচ্ছে। বাসায় ফিরে দাদুর কাছে জানতে চাইলো, এই কথার মানে কী? দাদু পবিত্র আল-কুরআন থেকে একটি আয়াত তিলাওয়াত করলেন। “আসলে তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ, এমন ব্যক্তির জন্য যে শেষ বিচারের দিনে (মুক্তির) আশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।” (সূরা আহযাব : ২১)। দাদু বললেন, ‘আমরা যদি পরকালে জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাই তবে অবশ্যই আল্লাহর রাসূল সা. এর জীবনের আদলে আমাদের জীবন গঠন করতে হবে। এই আয়াতে আর কোনো বিকল্প রাখা হয়নি। পৃথিবীর যত বড় মাপের খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তি বা মডেল হউক না কেন কারো আদর্শ আমাদেরকে আখেরাতে মুক্তি দিতে পারবে না। সুতরাং আমাদের মাথার চুল কাটা, পোশাক পরা, হাঁটা-চলা, খাওয়াদাওয়া, হাসি-কান্না, অর্থাৎ একজন মানুষের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি কাজ প্রিয় নবী সা.-এর অনুকরণে হতে হবে। কেননা নবী সা.-এর জীবনের প্রতিটি কাজই আধুনিক ও বাস্তবসম্মত। এই ধরো, আমাদের সময় অনেকে বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিদের লাইফস্টাইলকে অনুসরণ করছে পরবর্তী তোমাদের সময়ে তা পুরাতন বা সেকেলে মনে হলো। আবার তোমাদের সময় যারা বিখ্যাত তারা পরবর্তীতে পুরাতন হয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের প্রিয় নবী সা.-এর লাইফ স্টাইল এতোই আধুনিক ও বাস্তবসম্মত যে কিয়ামত পর্যন্ত আখেরাতে নাজাত প্রত্যাশী কারো কাছে সেকেলে বা পুরাতন মনে হবে না। কেননা তিনি সর্বকালের সেরা ব্যক্তিত্ব ও অনুকরণীয় আদর্শ। মনোযোগ দিয়ে শুনছিল রাহাত। হঠাৎ একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো দাদুর জন্য, ‘আচ্ছা দাদু, আমরা নবী সা.-এর লাইফস্টাইল সম্পর্কে কিভাবে জানবো? তিনি তো প্রায় দেড় হাজার বছর আগেই ইন্তেকাল করেছেন। দাদু মুচকি হেসে বললেন, ‘তিনি আমাদের মাঝে না থাকলেও আছে পবিত্র আল-কুরআন, হাদিস ও নবী সা.-এর সিরাত। যা থেকে সহজেই আমরা উনার লাইফস্টাইল সম্পর্কে জানতে পারি।’ রাহাত সিদ্ধান্ত নিলো যে, এই মাসে শত কষ্ট হলেও প্রিয় নবীর সা. লাইফ স্টাইল জানতে একটি সিরাত গ্রন্থ পড়া শেষ করবে।

Share.

মন্তব্য করুন