আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। বাতাসে অনিশ্চয়তার ক্লেশ। মুখ থুবড়ে পড়েছে বাংলাদেশের বিজ্ঞান গবেষণা। এ পর্যন্ত দশজন বিজ্ঞানী নিহত হয়েছে। দুষ্ট বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন অত্যাধুনিক রোবট। যা আদতে মানুষের বিরুদ্ধেই ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশের ঈর্ষনীয় সাফল্য অর্জনের ক্ষেত্রে দুষ্টদের বিজ্ঞান জগতে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠাই সবচেয়ে বড়ো বাধা। নিঃসঙ্গ, একা হাঁটছেন তরুণ বিজ্ঞানী হাসান জুবায়ের । চুপিসারে ল্যাবরেটরি থেকে বেরিয়েছে সে। হাসান জুবায়েরদের গবেষণা কেন্দ্রটি বেশ সুরক্ষিত। লোকালয় থেকে দূরে নিদ্রিত পরিবেষ্টনে। দুষ্ট বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত গোয়েন্দা রোবটগুলো এখনো এটার খোঁজ পায়নি। বিজ্ঞান জগতে এখনো ব্যাপক পরিচিতি পায়নি হাসান জুবায়ের। এটাই তাঁর এই মুহূর্তের স্বস্তির কারণ।
পাহাড়ি ঢাল বেয়ে রাস্তাটা সমতলে নেমে এসেছে। রাস্তার দুই পাশে ঘন পাম বন। হঠাৎ হাসান জুবায়েরের ঘড়ির অ্যালার্মটা বিপ বিপ শব্দে রেড সংকেত দিতে লাগল। শব্দটা ক্রমেই জোরালো হয়ে উঠল। অথার্ৎ কোনো বিপদ এগিয়ে আসছে। অ্যালার্মটা বন্ধ করে দ্রুত রাস্তার পাশের ঝোপে লুকিয়ে পড়ল সে। সাবধানে রাস্তার দিকে চোখ রাখল। যৎসামান্য পরেই ছুটে এলো ছোট্ট অপরিচিত একটা ফ্লাইং সসার। ওটা দেখা মাত্রই ঝোপের মধ্যে নিজেকে সম্পূর্ণ লুকিয়ে ফেলল সে। ক্যামেরা সেট করা আছে ওটাতে। সহসাই খুব জোরে অ্যালার্ম বেজে উঠল ফ্লাইং সসারে। তবে কি তার উপস্থিতি ক্যামেরায় ধরা পড়ে গেল? তড়িৎ গতিতে চলে গেল ফ্লাইং সসারটা। দু’টো কন্ঠস্বর শুনে ভাবনায় ছেদ পড়ল হাসান জুবায়েরের। সাবধানে উঁকি দিয়ে দেখল, রাস্তা দিয়ে এগিয়ে আসছে দু’টো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স রোবট আর্মি। মাথাটা ডিম আকৃতির। চোখগুলো অস্বাভাবিক বড়ো। এছাড়া দেহের অন্যান্য অংশ মানুষের আকৃতির সাথে বেশ মিল। উচ্চতায় আনুমানিক ছয় ফুট হবে। ঘাড়ে ঝোলানো লেজার গান। কোনকিছু নিয়ে মতপার্থক্যের কারণে তর্ক করছে দু’জন। তর্ক এক পর্যায়ে হাতাহাতিতে রূপ নিলো। শক্তিধর রোবটটা অন্যটাকে রাস্তার ওপর ফেলে দিলো। তার লেজার গানটা কেড়ে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলল হাসান জুবায়েরের দিকে। ওরা তাঁর উপস্থিতি এখনো খেয়াল করেনি। শক্তিধর রোবটটা অন্যটার দিকে লেজার গান তাক করেছে। ট্রিগারে আঙুল চলে যাচ্ছে তাঁর। দ্বিতীয় রোবটটা মাথা নাড়িয়ে নিষেধ করছে। হাসান জুবায়েরের সামনে লেজার গানটা পড়ে আছে। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল সে। লেজার গানটা কুড়িয়ে নিয়ে প্রথম রোবটের দিকে তাক করল। ওর উপস্থিতি টের পেয়ে সাথে সাথে নিজের গানটা ওর দিকে ঘুরিয়ে নিলো প্রথম রোবটটা। হাসান জুবায়ের শুধু সাবধান করতে চেয়েছিল। উপায়ন্তর না দেখে নিজের গানের ট্রিগার টিপে দেহটা ছেড়ে দিলো রোডের সমান্তরালে। ব্যাস, সেকেন্ডের ব্যাবধানে দু’ভাগ হয়ে গেল প্রথম রোবটটা। যথাসময়ে না শুয়ে পড়লে সে নিজেও দু’ভাগ হয়ে যেত। ওকে ধন্যবাদ দিলো দ্বিতীয় রোবটটা। হাসান জুবায়ের তখন গানটা ওর দিকে তাক করে আছে। আস্তে আস্তে হেঁটে গিয়ে সে প্রথম রোবটটার লেজার গান তুলে ঘাড়ে নিলো। হেঁটে চলে গেল সামনের রাস্তার দিকে। একটু দূরে গিয়ে একবার পেছনে তাকাল ওটা। তারপর হাঁটতে হাঁটতে অদৃশ্য হয়ে গেল।

দুই.
হাসান জুবায়েরের হাতে পেনড্রাইভ আকৃতির ছোট্ট ডিভাইস। বিধ্বস্ত রোবটের কাছে পেয়েছে ওটা। ডিভাইসের এক পাশে ছোট্ট একটা বৃত্ত। খুব ভালো করে না দেখলে বোঝা যাবে না যে বৃত্তের মাঝখানে অনুজ্জ্বল লাল আলো জ্বলছে ও নিভছে। এই ডিভাইস দিয়ে সার্বক্ষণিক হেডকোয়ার্টারের সাথে কমিউনিকেশন রক্ষা করে রোবটরা। ঘটনাস্থলেই সিগন্যাল বন্ধ করে দিয়েছে হাসান জুবায়ের। ফলে রোবট হেডকোয়ার্টার এর লোকেশন জানতে পারছে না।
আবার ঘটনাস্থলের দিকে রওনা দিলো সে।
ফ্লাইং সসারে এসে ঘটনাস্থলে নেমে পড়ল হাসান জুবায়ের ও তার সহকারী। ঘটনাস্থলে এসেই ছোট ডিভাইসটার সিগন্যাল অন করে দিলো। সাথে সাথে ডিভাইসের লাল আলো উজ্জ্বল হয়ে উঠল। সেই সাথে শুরু হলো বিপ বিপ শব্দ। অবাক করার বিষয় হলো ডিভাইসটাতে ছোট্ট অস্বচ্ছ স্কিন দৃশ্যমান হয়েছে। সবুজ রংয়ের অ্যারো চিহ্ন উত্তর দিকে নির্দেশ করছে। ফ্লাইং সসারে উঠে বসল হাসান জুবায়ের। উত্তর দিকে চলার নির্দেশ দিলো পাইলটকে। মিনিট পাঁচেক চলার পর সসার থেকে নেমে গেল হাসান জুবায়ের ও তার সহকারী। এই পাঁচ মিনিটে ওরা ২৪১ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে এসেছে। এখানে আসার পর হাসান জুবায়েরের হাতে থাকা ডিভাইসটির স্কিন মিলিয়ে গেছে। বিপ বিপ শব্দটাও বন্ধ। লাল আলোটা এবার আরো স্পষ্ট, কিন্তু স্থির হয়ে আছে। ব্যাপারটা রহস্যজনক। আশেপাশে কিছু খুঁজতে শুরু করল সে। তার ধারণা এখানে কিছু না কিছু পাওয়া যাবে। পূর্ব-পশ্চিম প্রান্তে নিঝুম অরণ্য। সেদিকে এগিয়ে গেল হাসান জুবায়ের। গভীর চিন্তায় ডুবে আছে প্রধান বিজ্ঞানী। প্রশ্ন না করে অনুসরণ করল সহকারী বিজ্ঞানী। পরিত্যাক্ত বনভূমি মনে হচ্ছে এটাকে। গাছগুলো ছাড়া যেন কোথাও কোনো প্রাণের সন্ধান নেই।
‘স্যার, এখানে কিছু আছে বলে মনে হচ্ছে না, সবকিছু কেমন যেন…।’
দূরে মিলিয়ে গেল সহকারী বিজ্ঞানী খালিদের কন্ঠস্বর। চমকে উঠল হাসান জুবায়ের। চারিদিকে খুঁজল সে। আশ্চর্য! কোথাও নেই খালিদ। কিন্তু কয়েক সেকেন্ড আগেও সে তার সাথেই ছিল। ওয়াকিটকি বের করল সে। জবাব এলো ওপাশ থেকে, ‘স্যার, আমি ভূগর্ভে পড়ে গেছি। সাবধানে পা ফেলুন স্যার, ওখানে চোরা গর্ত আছে।’
‘ঠিক আছে, ওয়েট করো। ডোন্ট অরি। আমি দেখছি ব্যাপার টা।’
সাবধানে পা ফেলতে লাগল হাসান জুবায়ের। হাতে থাকা ডিটেক্টর এর সাহায্য খালিদের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে চোরা গর্ত খুঁজে বের করল সে। ঘাসে গর্তের মুখ ঢেকে আছে। খুব ভালো করে না দেখলে দৃষ্টিগোচর হয় না। দৌড়ে গিয়ে সসার থেকে লাইলন কর্ড নিয়ে এলো সে। একটা গাছের সাথে কর্ডের এক মাথা বেঁধে কর্ডটা গর্তে ফেলে দিলো।
‘খালিদ, দড়ি তোমার কাছে পৌঁছেছে?’
‘হ্যাঁ স্যার, কিন্তু আমি মনে হয় কিছু আবিষ্কার করেছি। আপনি ওয়াল স্ক্যানার ও একটি লাইট নিয়ে এখানে আসুন, স্যার।’
আগ্রহী হয়ে উঠল হাসান জুবায়ের। বলল, ‘একটু অপেক্ষা করো, আমি আসছি।’ পাইলটকে ওপরের দিকটা দেখতে বলে ইকুইপমেন্ট ব্যাগসহ কর্ড বেয়ে নেমে গেল সে। আনুমানিক পনেরো ফিট নিচে এসে নামল। গর্তটা ঢালু ভাবে নেমে একটা ওয়ালের কাছে শেষ হয়েছে। ভূমিকম্প এই ডেঞ্জারাস হোল তৈরি করেছে। ভ্রু কুঁচকালো হাসান জুবায়ের। নতুন কিছু পাওয়ার জন্য খুশিও হলো। ওয়াল স্ক্যানারটা ব্যাগ থেকে বের করে ওয়ালে সেট করল সে। এই স্ক্যানার দেয়ালের ওপারে একটা সিগনাল প্রেরণ করে। দেয়ালের ওপারে কোনো বস্তু থাকলে স্ক্যানারে একটি সিগন্যাল ফিরে আসে। ফিরে আসা সিগন্যাল থেকে ওয়াল স্ক্যানারের ডিসপ্লেতে প্রতিবিম্ব গঠিত হয়। প্রথমেই ডিসপ্লেতে ধরা পড়ল কতগুলো সুবিন্যাস্ত কক্ষ। কন্ট্রোল রুম ও লাল রং চিহ্নিত রোবটের আনাগোনা। হাসান জুবায়েরের সহকারী বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে স্কিনের দিকে।
‘খালিদ, এটা ওদের কোনো ঘাঁটি হবে। শীঘ্রই এদের ঘাঁটির একটা নকশা তৈরি করে ফেলো। কোনকিছু যেন বাদ না যায়। আজ রাতেই আবার আসতে হবে।’
হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল সহকারী বিজ্ঞানী।

তিন.
ঘোর নিশুতি। সারি সারি গাছের তলে ঝোঁপের মধ্যে লুকিয়ে হাসান জুবায়ের। তাঁকে দেখলে এখন নিরেট রোবট মনে হবে। রোবটের খোলস বানিয়ে নিয়েছে। মৃত রোবটের আইডেন্টিটি কোড সম্বলিত কার্ড এখন তার হাতে। কাঁধে ঝুলছে অত্যাধুনিক প্লাজমা রাইফেল। সিদ্ধান্ত মতো একাই এসেছে সে। কারণ যুদ্ধটা বুদ্ধির হবে এখানে। শক্তির নয়। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না ওকে। আঁধারের বুক চিরে উদয় হলো সঙ্গীহীন রোবট আর্মি। গজ বিশেক সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেল। মরা একটা গাছ। এক মিটার ব্যাস বিশিষ্ট গুঁড়িটার ওপরের দিকে একটা ছোট্ট কোটর। তার মধ্যে আঙুল ঢুকিয়ে দিলো রোবটটা। গাছের গুঁড়িটা মুহূর্তে স্টিলের দরজায় রুপান্তরিত হলো। দরজার লকের কি-বোর্ডে নির্দিষ্ট বাটন চেপে লক খুলে ফেলল সে। উন্মুক্ত হলো নিচে নামার আলোকোজ্জ্বল সিঁড়ি। রোবটটা চলে যাওয়ার পর দরজা আগের মতোই গাছের গুঁড়িতে প্রকারান্তর হলো। আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল হাসান জুবায়ের। শেষবারের মতো পুরো ঘাঁটির নকশা দেখে নিলো সে। যথানিয়মে দরজা খুলে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এলো। সিঁড়িটা একটা ঘরে এসে শেষ হয়েছে। ঘরের অপর প্রান্তে টানেলের মুখ। দরজাটা স্বয়ংক্রিয়। কোনো রকম বাধা ছাড়াই টানেল পেরিয়ে বড়ো হল ঘরে পৌঁছে গেল সে। অন্যান্য রোবটরা ওর পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে। তারা নিজেদের কাজে ব্যস্ত। সবাই ওকে স্বজাতি ভাবছে হয়তো। হল ঘরের চার কোনায় চারটা সিঁড়ি। হাসান জুবায়ের কন্ট্রোল রুমে যেতে চায়। ডানপাশের সিঁড়ি দিয়ে নেমে অন্য একটি রুমে চলে এলো সে। এই রুমের পরেই কন্ট্রোল রুম। কন্ট্রোল রুমের দরজায় সার্বক্ষণিক দু’টি রোবট পাহারা দিচ্ছে। রোবটের সাথে ঝামেলা বাঁধলে ক্ষতি ছাড়া উপকার হবে না। অত্যাধুনিক এই রোবটের সামনে সূক্ষ্ম ভুলও তাঁর ধরা পড়ার উপলক্ষ্য হতে পারে। স্বাভাবিকভাবে হেঁটে দরজায় পৌঁছে গেল সে। রোবট দু’টো যন্ত্রের ন্যায় পথ আগলে দাঁড়াল। হাসান জুবায়ের কার্ডটা বের করে দেখাল ওদের। দশ সেকেন্ড সেদিকে তাকিয়ে থেকে সরে পথ করে দিলো রোবট দু’টো। কন্ট্রোল রুমে প্রবেশ করল হাসান জুবায়ের। কন্ট্রোল রুমে দু’টো বড় কম্পিউটার ডিসপ্লে। লম্বা এল আকৃতির টেবিলের সামনে দু’জন বসে আছে। এরা রোবট নয়। মানুষ। একজন ওল্ডম্যান, একজন ইয়াংম্যান। মৃত রোবটের মস্তিষ্ক ল্যাবে পরীক্ষা করে হাসান জুবায়ের জানতে পেরেছে, এদের মস্তিষ্ক তিন ভাগের এক ভাগ নিজের ইচ্ছাতে চলে। আর বাকী দুই ভাগ নিয়ন্ত্রণ করে দুষ্ট বিজ্ঞানীরা। সুনির্দিষ্ট প্রোগ্রাম দ্বারা এদের নিয়ন্ত্রণ করা হয়। হাসান জুবায়ের সেই প্রোগ্রামগুলো ডিজেবল করে দিতে চায়। তাহলেই গোটা দেশে তাঁরা নিয়ন্ত্রণ হারাবে। কন্ট্রোল রুমে প্রবেশ করেই ভেতর থেকে দরজা আটকে দিলো সে। লোক দু’টো উঠে দাঁড়িয়েছে। তাকিয়ে আছে ওর দিকে। ইয়াংম্যানের হাত চলে যাচ্ছে পকেটে রাখা ছোট প্লাজমা গানে। সন্দেহ নেই ধরা পড়ে গেছে সে। অজান্তেই হাসান জুবায়ের হাত চলে গেল তার প্লাজমা রাইফেলের ট্রিগারে। কিন্তু দেরি হয়ে গেছে ততক্ষণে। ইয়াংম্যানের হাতে উঠে এসেছে প্লাজমা গান। মুহূর্তে নিজের দেহটাকে ফ্লোরে ছুঁড়ে দিলো হাসান জুবায়ের। ক্ষিপ্র গতিতে মেঝেতে একটা গড়ন দিয়ে হাঁটু গেড়ে বসেই ইয়াংম্যানের হাত লক্ষ্যে ট্রিগারে টিপে দিলো। হাত থেকে গান পড়ে গেল তাঁর। বাম হাত দিয়ে ডান হাত চেপে বসে পড়ল সে। ওর গানটা কুড়িয়ে নিলো হাসান জুবায়ের। ওদিকে ওল্ডম্যান ভয়ে জমে গেল। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল সে। হাসান জুবায়ের ওর দিকে রাইফেল তাক করে জিজ্ঞেস করল, ‘সিকিউরিটি রোবট নিষ্ক্রীয় করার সুইচ কোনটা?’ কোনো জবাব দিলো না সে । গর্জে উঠল হাসান জুবায়ের কন্ঠস্বর, ‘দ্বিতীয়বার আমি কোনো প্রশ্ন করব না।’ এবার কাজ হলো। দ্বিতীয় কম্পিউটার কি-বোর্ডের কাছের লাল সুইচটা দেখিয়ে দিলো সে। সুইচে একটা রোবটের ট্যাটু। এটা দেখে নিশ্চিত হলো হাসান জুবায়ের, এটা অ্যালার্ম সুইচ নয়। সুইচ চাপতেই ডিসপ্লেতে দেখা গেল রোবটের গুটিয়ে যাওয়ার দৃশ্য। আবার নির্দেশ দিলো হাসান জুবায়ের। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স রোবট সেনাদের কন্ট্রোল করার প্রোগ্রামটা বের করার জন্য। অনিচ্ছা সত্ত্বেও নির্দেশ পালন করল সে। একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ল হাসান জুবায়ের। তার সামনে ডিসপ্লেতে প্রোগ্রামগুলো দেখতে পাচ্ছে সে। দ্রুত টাচ কিবোর্ডে হাত চালাল সে। প্রোগ্রামগুলো ডিজেবল করলেই তাঁর কাজ শেষ। এখানেই সে ভুল করে বসল। কক্ষে থাকা ওল্ডম্যানের দিকে নজর ছিল না এ সময়। সেই সুযোগে সে ক্যাম্পের অ্যালার্ম বাজিয়ে দিলো। অ্যালার্মের শব্দে চমকে উঠল হাসান জুবায়ের। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। দ্রুত কি বোর্ডে হাত চালাল সে। এ সময় কন্ট্রোল রুমের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করল একদল রোবট সেনা। ওল্ডম্যান বসে নেই। অ্যালার্ম বাজিয়েই সে ফিরে এসেছে। হাতে তুলে নিয়েছে লোহার একটা বার। সেটা হাসান জুবায়ের মাথা লক্ষ্যে নেমে আসছে। শেষ মুর্হুতে তা দেখতে পেল হাসান জুবায়ের। মাথাটা একদিকে কাত করল সে। তবুও আঘাত এড়াতে পারল না। চেয়ার সুদ্ধ ফ্লোরে পড়ে গেল। মাথায় রোবট হেলমেট থাকায় আঘাতটা হেলমেটের ওপর দিয়েই গেল। কিন্তু হেলমেট ভেঙে তার মুখ বেরিয়ে পড়ল। ওল্ডম্যানের আরেকটি আঘাত ছুটে আসছিল হাসান জুবায়েরের লক্ষ্যে, আচমকা একটা গুলির শব্দে কেঁপে উঠল ওল্ডম্যান। পাজরে গুলি খেয়ে পড়ে গেল সে। লোহার বারটা ছিটকে পড়ল হাসান জুবায়ের পাশে। উঠে দাঁড়াল হাসান জুবায়ের। পেছনে তাকিয়ে দেখল সেই রোবটটা তার দলবল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেটাকে গতকাল বাঁচিয়েছিল হাসান জুবায়ের। হাত নেড়ে ধন্যবাদ দিলো তাঁকে। প্রোগ্রাম ডিজেবল এর কাজ ৬৯% হয়ে গেছে ততক্ষণে। বাকী কাজটুকুও সম্পূর্ণ করে ফেলল। সেনাবাহিনীর সায়েন্স রিসার্চ সিকিউরিটি ফোর্সকে (এসআরএস) এখানকার খবর জানিয়ে দিলো সে। হাসান জুবায়ের এগিয়ে গেল সেই রোটের কাছে। ওর পিঠ চাপড়ে দিলো হাসান জুবায়ের। নিজের উপকারের কৃতজ্ঞতা সময় মতোই জানিয়েছে সে। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল হাসান জুবায়ের। কিছু করার নেই। রোবট সেনাগুলোকেও আপাতত নিষ্ক্রীয় করে দিলো। মিনিট বিশেক পরে এসআরএস ফোর্স ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিলো। পাঁচজন বিজ্ঞানী ও তাদের ষড়যন্ত্র সম্মিলিত ডকুমেন্টস জব্দ করা হলো। শুরু হলো চাঞ্চল্যকর নিউজের অঘোষিত অপেক্ষা।

Share.

মন্তব্য করুন