(গত সংখ্যার পর থেকে)
পুষ্প কিছুক্ষণ আগে জানতে পেরেছে জলপরি, ফুলপরি, স্থলপরিরা বেড়াতে এসেছে আকাশপরির দেশে। শোনার পর থেকে ওর মধ্যে আনন্দের ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। গতকাল সারাদিন ঘুরে বেড়িয়েছে। সারাপরিদের সাথে ঘুরতে ঘুরতে মজার অভিজ্ঞতা হয়েছে। দারুণ ভালো লেগেছে। আকাশপরির দেশটা যেন এক অন্য জগৎ! সাদাপরিরা তাকে অনেক জায়গায় নিয়ে গেছে। অনেক কিছু দেখিয়েছে। নীলপরি। লালপরি। হলুদপরি। সুখপরি। দুখপরি। এমন কী রানিপরির সিংহাসনেও গিয়েছে। তবে দেখা হয় নাই রানিপরির সাথে। রানিপরি নাকি খুব ব্যস্ত থাকে। পরিরাজ্যের সবকিছুই যে তাকে দেখাশোনা করতে হয়। সাদাপরিদের একজন খুব বেশি আদর করেছিল। গতকাল সারাদিনের মজাটাই ছিলো অন্যরকম। কত গান, কত আয়োজন, কত আনন্দ এই পরিদের জীবনে। সারাক্ষণ ঘুরে ঘুরেও ক্লান্ত হয়নি পুষ্প। পরিরা আসলে এক মজার প্রাণী। স্কুলে বিজ্ঞানের প্রাণিজগৎ অধ্যায় পড়াতে গিয়ে রবিউল স্যার বলেছিলেন, ‘প্রাণীদের মধ্যে মানুষ সবচেয়ে বুদ্ধিমান আর শ্রেষ্ঠ।’ পুষ্পর মনে হয় তাহলে প্রাণিজগতের সবচেয়ে মজার আর আনন্দময় প্রাণী হলো পরিরা। দুষ্টুপরির কথাও শুনেছে সে। দুষ্টুপরিরা মানুষদের ক্ষতি করে। পরশু রাতে যখন পুষ্প উৎসবে যাচ্ছিল তখন দুষ্টুপরির দল পিছু নিয়েছিল। দাদুপরি থাকায় বিপদ হয়নি। তাই সাদাপরিদের সাথে একা যেতে দেয়নি। দাদুপরিও গিয়েছিল।
– পুষ্পমণি, একেবারে শুয়ে পড়েছ?
দাদুপরির কথায় উঠে বসল পুষ্প। উল্লাসের সাথে জিজ্ঞেস করল, দাদুপরি, ওরা কোথায়?
– ওই তো আসছে?‘
পুষ্প সম্মুখে তাকিয়ে দেখল সত্যি সত্যি জলপরি, ফুলপরি আর স্থলপরি। পুষ্পকে দেখে সবাই হাসছে। হাসতে হাসতে জলপরি বলল, কেমন আছো সোনামণি?
ঘাড় বাঁকিয়ে জবাব দিলো পুষ্প, খুব ভালো।
স্থলপরি বলল, পরিদের এ রাজ্য কেমন লাগছে?
– ভারি সুন্দর। হেসে বলল পুষ্প।
ফুলপরি বলল, চল, আমরা ঘুরতে যাই।
ফুলপরির কথায় রাজি হলো পুষ্প। দুজনে হাত ধরে হাঁটছিল। ঠিক সেই মুহূর্তেই এক পরি এসে হাজির। পুষ্প একটু একটু চিনতে পারল পরিটিকে। কোথায় যেন দেখেছে বলে মনে হলো। হ্যাঁ মনে পড়েছে সেদিন পিছু নেয়া দুষ্টুপরিদের দলে এ পরিটিও ছিল। ভয় ভয় করতে লাগল পুষ্পর। পরিটি প্রথমে ফুলপরির কাছে গিয়ে তার মাথায় হাত রাখল। পুষ্পর দিকে আড়চোখে তাকাল কয়েকবার। ফুলপরিকে বলল, চল তোমার বন্ধুকে নিয়ে বেড়িয়ে আসি। ফুলপরি তাতে রাজি হলো না। তাতে খুশি হলো পুষ্প। পুষ্প কিছু বলতে যাবে ঠিক সেই মুহূর্তেই একদল পরি উপর থেকে নামল। নেমেই ঘিরে ধরল ওদের। ঝটপট পুষ্পকে ধরে ফেলল। ফুলপরি কিছু বলার সময় পেল না। শাঁ-শাঁ, শোঁ-শোঁ শব্দে উড়ে গেল পুষ্পকে নিয়ে। পুষ্পর সামান্য চিৎকার শোনা গেল। তারপর নিমেষেই অদৃশ্য। ফুলপরি নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। খবর পেয়ে দৌড়ে এলো জলপরি, স্থলপরি, দাদুপরি এবং অন্য পরিরা। দাদুপরির মেয়ে ফুলপরির কাছ থেকে আক্রমণ করা পরিদের বর্ণনা শুনল। এ সময় জলপরিকে খুবই অস্থির দেখাল। মেয়েপরি তাকে শান্ত থাকতে বলল। দাদুপরির সাথে পরামর্শ করে এবং ফুলপরির বর্ণনা শুনে মেয়েপরি নিশ্চিত হলো এটা সেদিনের সেই দুষ্টুপরিদের কাজ।
ফুলপরি আরও বেশি মন খারাপ করে বসে রইল।

৯.
দুষ্টুপরিরা পুষ্পকে যেখানটায় নিয়ে গেল তার চারপাশে কোনোরকম পরির আনাগোনা নাই। চারিদিকে নীরব-নিঃশব্দ। পাঁচজন দুষ্টুপরি পুষ্পর সামনে দাঁড়িয়ে। পুষ্প সবার দিকে তাকাল। কারো মুখে কথা নাই। হাসি নাই। গম্ভীর চেহারা। পরিদের এমন ভাব এই প্রথম দেখল পুষ্প। দাদুর গল্প বলা সেই খারাপ পরিদের কথা মনে ভেসে উঠল। খারাপ পরিরা রাজকুমারীকে ধরে নিয়ে বন্দি করে রেখেছিল। অনেকদিন পর রাজকুমার তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল। দাদুর সেই গল্পটা বেশ বড়। পুষ্প আজ সত্যিকারেই সেই খারাপ পরিদের কাছে বন্দি। পুষ্প আবারও তাকাল দাঁড়িয়ে থাকা দুষ্টু পরিদের দিকে। আগের মতোই দাঁড়িয়ে আছে। পুষ্পই মুখ খুলল, তোমরা আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছ?

কেউ কোনো কথা বলল না। এমনকি নিজেদের জায়গা থেকে কেউ একটু নড়াচড়াও করল না। পুষ্প তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল। সবাই নির্বিকার। খাট চেহারার এক পরি পুষ্পর মুখের দিকে তাকাল মাত্র। পুষ্প তার দিকে তাকিয়েই বলল, আমাকে তোমরা কেন ধরে এনেছ? খাট চেহারার দুষ্টুপরি গম্ভীর মুখে বলল, তোমার কোনো ভয় নাই। পুষ্প অস্থিরতার সাথে বলল, আমি বাড়ি যাব।

পুষ্পর কথা শেষ হতেই কে যেন বলে উঠল, অবশ্যই বাড়ি যাবে, আর আগে এখানে কিছুদিন থেকে যাও। পুষ্প ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে চাইল কে কথা বলল। কিন্তুু তার আগেই বিশালদেহী দুষ্টুপরিদের সর্দার পুষ্পর সামনে এসে দাঁড়াল। পুষ্প ভালো করে তাকিয়ে দেখল পরিটিকে। পরিতো নয় যেন আস্ত একটা ডাইনি। দাদির কাছ থেকে পুষ্প অনেক-অনেক গল্প শুনেছে। তার মধ্যে ডাইনি বুড়ির গল্প শুনে পুষ্পর খুব ভয় লেগেছে। ডাইনিরা নাকি ঘাড় মটকে রক্ত খায়!
ভয় পেয়েও নিজেকে শক্ত করে রাখল পুষ্প। ডাইনিপরির মুখের দিকে তাকিয়ে দৃঢ়কণ্ঠে বলল না, তোমাদের এখানে থাকব না। তোমরা দুষ্টুপরি।
ডাইনিপরি পুষ্পর কথা শুনে জোরে হাসতে হাসতে বলল, তুমি তো দেখছি খুব সাহসী। পুষ্প কিছু না বলে ডাইনিটির মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। সর্দার ডাইনিপরি বিশ্রিভাবে হাসতেই থাকল। পরিদের হাসি এমন ভয়ানক হয় এবারই প্রথম দেখল পুষ্প। সর্দার গম্ভীর মুখে পাঁচ পরিকে উদ্দেশ করে বলল, এটা যেন তোদের ল্যাং মেরে উড়ে না যায়। যে সাহস দেখলাম ওর!

বাইরের পাহারা জোরদার করতে আর পুষ্পকে কিছু খেতে দিতে বলে সর্দার ডাইনিপরিটি পুষ্পর পেছন দিক দিয়ে চলে গেল। পুষ্প যে ভয়ানক বিপদের মধ্যে পড়েছে সে তা বুঝতে পারল। তবে ভয়ে অস্থির হলেও একেবারে চুপসে গেল না সে। পুষ্পর মনে পড়ল বাংলা ক্লাসে অহিদুল স্যার পড়িয়েছিলেন,

বল দেখি এ জগতে ধীর বলি কারে,
বিপদে যে স্থির থাকে, ধীর বলি তারে।

লাইন দুটি বারবার আবৃত্তি করেছিলেন স্যার। আর নিজের বিপদের সময় কিভাবে স্থির থেকে বিপদকে জয় করেছেন তা সুন্দর করে বলেছিলেন। পুষ্পও তাই নিজের অস্থিরতা কাটিয়ে স্থির হতে চাইল। এ বিপদকে জয় করতেই হবে। এখন প্রয়োজন উপস্থিত বুদ্ধির। পুষ্প চারপাশ ভালো মতো দেখে নেয়। এখান থেকে পালানোর কোন পথ আছে কিনা। আপাতত আশপাশে কেউ নাই। গম্ভীর পরিরা হয়তো সর্দারের কথা মতো বাইরে পাহারা দিতে গেছে। পুষ্প যেখানে বসেছিল সেটা একটা কাঠের চেয়ারের মতো মনে হলো। কিন্তু আসলেই ওটা কাঠের তৈরি কিনা সন্দেহ হলো পুষ্পর। পাশেই কিছু ফলমূল রাখা আছে একটা টুলের ওপর। পুষ্পর খুব ক্ষুধা পেয়েছে। তবু কিছু খেলো না। চারপাশটা ভালভাবে দেখতে লাগল।

ইতোমধ্যেই সাদাপরির দল দাদুপরির কাছে এসে হাজির হল। তারাও সন্দেহ করল এটা ওই দুষ্টুপরিদের কাজ।
– আর দেরি করা যায় না, চলো রওনা হই। বলল জলপরি।
– ঠিকই বলেছো। বলল স্থলপরি।
– দেরি হলে সর্বনাশ হয়ে যেতে পারে। বলল এক সাদাপরি।
– ওরা খুবই দুষ্টু। মানব সন্তান পেলে মেরে ফেলতে চায়। বলল মেয়েপরি।
– মানুষের ওপর কি ওদের খুব রাগ? জিজ্ঞেস করল ফুলপরি।
– হবে হয়তো। জবাব দিল দাদুপরি।

খবরটি রানিপরির কাছেও পৌঁছে গেছে। আগে থেকেই দুষ্টুপরিদের প্রতি ভীষণ রাগ রানির। কারণ এই দুষ্টুপরিরা দিনের পর দিন পরিরাজ্যে অশান্তি ডেকে আনছে। উৎসবের দিনেও তাদের জন্যই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হয়। গুটি কয়েক নষ্ট পরির জন্যই যত ঝামেলা। দু-একটি দুষ্টুপরিকে যে শাস্তি দেয়া হয়নি, তাও বলা যায় না। কিছুদিন আগেও একপরিকে রাজ্য থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপরও তারা সুযোগ পেলে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। রানিপরি সৈন্যপরিদের ডাকল। দুষ্টুপরিদের হাত থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করার নির্দেশ দিলো। সেই সাথে দোষীদের শাস্তি দেওয়ার আদেশ করল রানি।

রানির আদেশ পেয়ে সৈন্যপরিগণ ব্যস্ত হয়ে পড়ল। অভিযান পরিচালনার জন্য সিনিয়র এক সৈন্যকে প্রধান করে টিম গঠন করা হলো। পরিরাজ্যের কোথায় কোথায় দুষ্টুপরিদের আস্তানা থাকতে পারে তা খুঁজে বের করার পরিকল্পনা করল সৈন্যপরির দল।
সৈন্যপরিদের অভিযানের কথা শুনে খুশি হলো দাদুপরি। শুরু হলো দুষ্টুপরিদের হাত থেকে পুষ্পকে উদ্ধারের চেষ্টা।

১০.
পুষ্প কিছু খেয়ে-দেয়ে দেখল দুষ্টুপরিরা ঘুমোচ্ছে। একবার ভাবল সে দৌড়াবে। কিন্তু পরেই চিন্তা করল, দৌড়ালে এখান থেকে সে যেতে পারবে না। একে তো পথ চেনা নাই। তারপর ওরা টের পেলে ধরে আনতে বেশি সময় লাগবে না। পায়চারি করতে করতে মনে হলো নিশ্চয় দাদুপরিরা তাকে খুঁজতে বেড়িয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো, এখানে যে সে আছে তাদের তো জানা নাই। এ দিকটায় আসলেও হয়তো টের পাবে না। কারণ এটা একটা গুপ্ত আস্তানা। অনেকটা গুহার মতো। একটা মাত্র পথ আছে এখান থেকে বের হওয়ার। আর বের হওয়ার পথটা পেরুলেই ফাঁকা জায়গা। পুষ্পর ভাবনা দাদুপরিরা বড়জোর ওই ফাঁকা জায়গা পর্যন্ত এসে ফিরে যাবে। কারণ ওখান থেকে এই গুপ্ত আস্তানার অস্তিত্ব টের পাওয়া খুবই কঠিন।

হঠাৎ পুষ্পর মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। ওই ফাঁকা জায়গা পর্যন্ত তাকে যেতে হবে। যত সময় সম্ভব হয় ওখানটায় অবস্থান করবে। তারপর দুষ্টুপরিরা টের পেলেও অসুবিধা নাই। পুষ্প তার মাথার ক্যাপটা ফেলে রেখে আসবে। ভাগ্য ভালো হলে দাদুপরির দল এদিকে আসলে ক্যাপটা চোখে পড়লেই চিনতে পারবে। তখন নিশ্চয়ই অভিযান চালিয়ে এই গুহার খোঁজ তারা বের করবেই।

পুষ্প দেখলো আস্তানা থেকে বের হওয়ার পথে যে দুষ্টুপরিটা রয়েছে, সে আসলে ঘুমিয়ে আছে। সুযোগ পেয়ে পুষ্প ওর পাশ দিয়ে আস্তে করে বেরিয়ে গেল। অনেকটা এগিয়ে গিয়ে ফাঁকা জায়গায় দাঁড়াল। কিছু সময় পর দুষ্টুপরিরা টের পেয়ে পুষ্পকে ভেতরে নিয়ে গেল। যাবার সময় পুষ্প সবার অগোচরে মাথার ক্যাপটা ফেলে রাখল।
ভেতরে গিয়ে দেখল বিশালদেহী সর্দার মতো দাঁড়িয়ে আছে। দুষ্টুপরি পাঁচজনকে আচ্ছামতো গালাগালি করল। দুষ্টুরা গম্ভীর মুখে শুধু শুনেই গেল। যেন সর্দারের বিরুদ্ধে তাদের কিছুই বলার নাই। সর্দার পুষ্পর কাছে এসে ধমকের সুরে জিজ্ঞেস করল, কেন বাইরে গিয়েছিলে?
– এমনি। স্বাভাবিকভাবে জবাব দিলো পুষ্প।
– এমনি কেন? আরও জোরে বলল ডাইনিটা।
– এখানে আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো, তাই ।
– দম আটকে গেলেও এখানেই থাকতে হবে।
– না, থাকব না। জেদের সুরে বলল পুষ্প।
বলার সাথে সাথেই ডাইনিপরিটা খুব জোরে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো পুষ্পর গালে। মাথা ঘুরে পড়ে গেল পুষ্প। সর্দার সেদিকে না তাকিয়ে দুষ্টুপরিদের সতর্ক করে দিয়ে চলে গেল।

১১.
সৈন্যপরির দলসহ দাদুপরিরা সমস্ত পরিরাজ্য তন্নতন্ন করে খুঁজে এদিকটায় চলে এসেছে। ফাঁকা জায়গাটিতে জড়ো হয়েছে সবাই। কেউ কেউ বলছে এদিকে কোনো আস্তানা নাই। কেউ কেউ বলছে থাকতেও পারে। হঠাৎ দাদুপরির চোখে পড়ল পুষ্পর ফেলে রাখা ক্যাপটা। ফুলপরি দৌড়ে ক্যাপ হাতে নিয়ে বলল, এটা দেখছি পুষ্পর ক্যাপ। সবাই অনুমান করল হয়তো আশপাশে কোথাও পুষ্পকে আটকে রাখা হয়েছে।

টিমের প্রধান পরি সৈন্যপরিদের চারিদিক ভালো ভাবে তল্লাশি করার নির্দেশ দিলো। সৈন্যদের আরও নির্দেশ দিলো, কোনো রকম গুপ্ত আস্তানার নিশানা টের পেলেই যেন তার কাছে সংবাদ পাঠানো হয়। সৈন্যরা চলে গেলে জলপরি, স্থলপরি, দাদুপরি, ফুলপরি, মেয়েপরিরা টিম প্রধানের পাশাপাশি পায়চারি করতে লাগল। দু-একটা শলা-পরামর্শও করছে তারা। ইতোমধ্যে এক সৈন্যপরি এসে জানাল দুষ্টুপরিদের আস্তানার সন্ধান পাওয়া গেছে।

সৈন্যপরি আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলল, ওই পাশটায় একটা সরুপথ অনেক দূর পর্যন্ত চলে গেছে।
টিম প্রধান বলল, দেখে কেমন হয়। কোন পরিদের যাতায়াত আছে বলে কি আন্দাজ করা যায়?
– যায় বলেই অনেকটা শিওর হয়েছি।
– হুম। ঘাড় নাড়ল টিম প্রধান।
– সৈন্যরা আদেশের অপেক্ষায় আছে। বলল সৈন্যপরি।
– দশ-বারোজনকে ভেতরে ঢুকে পড়তে বল, বাকিরা চারিদিকে পাহারায় থাকুক। ওরা যেন পালাতে না পারে। সৈন্যপরি আদেশ নিয়ে চলে গেল।

সৈন্যপরিদের উপস্থিতি টের পেয়ে গুহাপথ আটকে ফেলেছে দুষ্টুপরির দল। প্রবেশপথ থেকে ফিরে সৈন্যপরিরা বড় বড় পাথর নিয়ে আটকানো দরজায় আঘাত করতে লাগল। দরজা ভাঙতে খুব বেশি দেরি হলো না। তাড়াতাড়ি করে ভেতরে ঢুকল দশ-বারোজন সৈন্যপরি। প্রথমেই দুষ্টুপরিদের বেঁধে ফেলল। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ঢুকল ডাইনিপরির গোপন কক্ষে। ততক্ষণে প্রধানসহ পুরো টিম ভেতরে ঢুকে পড়েছে। ডাইনিটাকে শক্ত করে বেঁধে সবগুলো দুষ্টুপরিকে একসাথে করল। পুষ্পকে ডাইনিটার ঘরেই পাওয়া গেল অচেতন অবস্থায়। জলপরি, দাদুপরি, দুজনে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করল পুষ্পর। অল্প সময় পরেই পুুষ্প জেগে উঠল। সৈন্যপরিদের প্রধান পুষ্পকে দেখে গেল। দুষ্টুপরিদের রানির কাছে পাঠানো হবে। রানিপরি নিজে ওদের শাস্তি ঘোষণা করবে। দাদুপরিসহ সবার কাছ থেকে সৈন্যদল বিদায় নিলো। ফুলপরি পুষ্পর গলা জড়িয়ে ধরল। স্থলপরি বলল, তুমি কি খুব ভয় পেয়েছ, পুুষ্প?
– খুব বেশি না।
– তাই। একসাথে উপস্থিত সব পরি হেসে উঠল।
দাদুপরি পুষ্পর মাথায় হাত রেখে বলল, পুষ্পমণি, বাড়ির কথা মনে পড়ছে না?
পুষ্প বলল, খুব মনে পড়ছে। দাদুপরি, মেয়েপরি, স্থলপরিসহ উপস্থিত সবাই পুষ্পকে বাড়ি পৌঁছে দেয়ার জন্য জলপরিকে অনুরোধ করল। ফুলপরি বারবার চোখ মুছল। বায়না ধরল পুষ্পকে রেখে আসতে সেও যাবে। সে তো এখন আর কম উড়তে পারে না।

জলপরির পিঠে চড়ে উড়ে যাচ্ছে পুষ্প। বহুদিন ধরে ফেলে আসা বাড়ির পানে উড়ে চলছে। আকাশপরির দেশ থেকে সাত-সমুদ্র তেরো-নদী। পাহাড়-পর্বত-অরণ্য পেরিয়ে ছুটে চলছে। যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। এক সময় পুষ্পর মনে হলো তার হাত আলগা হয়ে আসছে। ধীরে ধীরে পিঠের উপর থেকে সরে যাচ্ছে সে। জলপরির সে দিকে খেয়াল নাই। সে শুধু শাঁ-শাঁ শব্দে সামনে এগিয়ে চলছে। পুষ্পর হাত খুব বেশি আলগা হয়ে গেল। জলপরির পিঠ থেকে খসে পড়ল পুষ্প। সে যেন শোঁ-শোঁ করে নিচের দিকে গভীর অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে। আর মা মা করে চিৎকার করছে।

পুষ্পর মা বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলেন, পুষ্প কী হয়েছে রে?
পুষ্প কেঁদে-কেঁদে, কেঁপে-কেঁপে বলল, মা পরিরা কই?
মা হাসতে হাসতে বললেন, কি যা-তা বলছিস?
-সত্যি মা, জলপরি, ফুলপরি, স্থলপরি, দাদুপরি, আরও কত পরি।
-পুষ্প তুই কি স্বপ্ন দেখছিলি।
ঘুমঘুম কণ্ঠে জড়তা নিয়ে পুষ্প বলল, ক-ই, ক-খ-ন!

Share.

মন্তব্য করুন