কাজ করতে হইবো দেইখা স্কুল ছাড়ছি, কিন্তু পড়ালেখা ছাড়ি নাই। পড়ালেখা ছারুমও না। আমি জানি, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। (মানিক)
বন্ধুরা, কেমন আছে তোমরা? আশা করি, এই করোনাকালেও আল্লাহর রহমতে পবিরার ও বন্ধুদের নিয়ে ভালোই আছো। এই বৈশি^ক মহামারিকালে তোমাদের স্কুল-কলেজও ছুটি। তাই এই অখ- অবসর সময়কে কাজে লাগানোর জন্য আজ তোমাদের সাথে একটি চলচ্চিত্রের পরিচয় করিয়ে দেব, যা বাংলাদেশের চলচ্চিত্র এবং যা তোমাদের মতো শিশু-কিশোরদের চলচ্চিত্র। বাংলা পথশিশুদের জীবন জয়ের গল্প নিয়ে নির্মিত এই চলচ্চিত্র। তাহলে চলো শুরু করি।

‘পাঠশালা’। ২০১৮ সাল নির্মিত একটি পূর্ণদৈঘ্য শিশুতোষ চলচ্চিত্র। যা নির্মান করেছে দেশের মেধাবী নির্মাতা জুটি আসিফ ইসলাম এবং ফয়সাল রদ্দি। ‘সব মানিকের জন্য স্কুল চাই’ এবং ‘শেখনের ইচ্ছা থাকলে পুরা দুনিয়াডাই একটা স্কুল’ এই দুটি শ্লোগান সামনে রেখেই ছবিটি তৈরী করে এই গুণী নির্মাতারা। রেডমার্ক প্রোডাকশনস-এর প্রযোজনায় পাঠশালার কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন শিশুশিল্পী মানিক, মানে হাবিব আরিন্দা; চুমকির চরিত্রে ইমা আক্তার কথা এবং অন্যান্য চরিত্রে নাজমুল হুসেইন রাজু, ফারহানা মিঠু, রুমি হুদা, গাজী ফারুক, তৌফিকুল ইমন, আমিরুল ইসলাম বাবু প্রমুখ।

শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘পাঠশালা’র মিডিয়া পার্টনার দুরন্ত টিভি ও এবিসি রেডিও। এ ছাড়া ডিজিটাল
পার্টনার ও সহ-প্রযোজক স্টেলার ডিজিটাল লিমিটেড (বঙ্গ)।

বুন্ধরা, তোমাদের অনেকে মনে প্রশ্ন জাগছে নিশ্চয়- ‘পাঠশালা’ চলচ্চিত্র তো বুঝতে পারলাম। কিন্তু উপরের মানিকটা আবার কে? এবার এসো তাহলে মানিকে সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। দশ বছরের শিশু মানিক, বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। পিতার মৃত্যুর পর জীবনের কঠিন বাস্তবতার কারণে তাকে শৈশবেই স্কুল ছাড়তে হয় তার। কিন্তু অসম্ভব মেধাবী ছিল মানিক। যে কিনা গণিত পরীক্ষায় ১০০ তে ১১০ পেয়েছিল। তোমাদের কারো কি জীবনে এরকম হয়েছে? অবশ্যই কারো কারো জীবনে হতে পারে। যাক, তা ভিন্ন কথা। মানিক জীবিকার তাগিদে চলে আসে ঢাকা। কাজ নেয় একটা গাড়ির ওয়াকর্শপে। সেখানে সারাদিন খুটিনাটি কাজ, অমানুষিক পরিশ্রম, তবুও স্কুলে পড়ার স্বপ্ন ছাড়ে না মানিক। তার স্বপ্নকে আরো বড় জায়গা থেকে দেখার জন্য মায়ের মুখের বাণীটি তার কাছে অনুপ্রেরণা ছিল, ‘শেখনের ইচ্ছা থাকলে পুরা দুনিয়াডাই একটা স্কুল।’ তার মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছে এ কথাটাই। তার সেই স্বপ্ন পূরণের লড়াইয়ে এগিয়ে আসে আট বছরের আরেক শিশু চুমকি। চুমকি হলো আর্দশ স্কুলের কেরানী কেদার চাচার একমাত্র মেয়ে। মানিক তাকে জাদু দেখানোর ছলে বই, খাতা চায় পড়ার জন্য। সেও আনে। বিনিময়ে মানিকও তাকে শেখায় ‘বস রনেজ্ঞাবি লাখে’ জাদুমন্ত্র; যা উল্টে দিলেই হয় অমোঘ বাক্য ‘সব বিজ্ঞানের খেলা’। মানিক মাথায় চিরুনি দিয়ে ছেঁড়া টুকরো করা কাগজের উপরে ধরে আর কাগজগুলো ঘর্ষণশক্তির ফলে চিরুনিকে আকর্ষণ করে। এ দৃশ্য দেখে চুমকির চোখ কপালে ওঠে! গ্লাসের ভেতর পানি রেখে মুখে কাগজ দিয়ে আটকিয়ে গ্লাসটা দেয় উল্টে, কিন্তু পানি পড়ে না। তার কাছে এটাই বিস্ময়ের, কারণ এমনটা সে দেখেনি আগে। আমাদের শৈশবে আমরা এসব দেখেছি। চুমকি চরিত্রটি সেই শৈশবে ফিরিয়ে নেয় আমাদের। বাবার পরিত্যক্ত গাড়িটিকে সে অন্যভাবে সাজিয়েছে। তার কাছে গাড়ির ভেতরটাই একটা গ্রাম। মানিক সেই পরিত্যক্ত গাড়িকে ঠিক করে তার নিজ যোগ্যতা বলে। পরবর্তীতে সেই গাড়িই কেদার চাচার জীবিকা নির্বাহের বাহন হয়। আর মানিক, চুমকি ও কেদার চাচার কারণেই মূলত তার স্কুলে পড়ার স্বপ্ন পূরন হয়।

মানিকের সাথে পরিচয় হয় কালু নামের আরেক ঝড়েপড়া কিশোরের সাথে। সে মানিককে বলে এই শহর খুব নিষ্ঠুর। তাকে বেঁচে থাকতে হলে শর্টকাট ছাড়া বড়ো হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু মানিক তার কথার মানে বুঝতে পারে না। সে তার কাজ চালিয়ে যায় এবং তার স্বপ্ন পূরণের জন্য অমানুষিক পরিশ্রম করে। খারাপ রাস্তা ছেড়ে মানিক অব্যাহত চেষ্টা ও পরিশ্রম দিয়ে তার স্বপ্ন পূরণের লেগে থাকে। পরিশেষে সফলও হয়।
যদি ছবির সার্বিক দিক আলোচনা করতে হয় তাহলে বলবো, ছবির অভিনয় শিল্পীরা দারুণ অভিনয় করেছেন। বিশেষ করে, মানিক, কালু, আর চুমকির কথা না বললেই নয়। হাবিবের বন্ধু চরিত্রের ইমা খুবই স্বতঃস্ফূর্ত। ফারহানা মিঠুর প্রধান শিক্ষকের অভিনয় স্ট্রং। কাজী শাহির হুদা রুমি অসাধারণ। সবগুলো গানই ছিল পরিস্থিতি এবং কনটেন্ট অনুযায়ী পারফেক্ট। তাছাড়া ছবির সিনেমাটোগ্রাফি আর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছিল অসাধারণ। ক্যামেরায় রূপসী বাংলার প্রাকৃতিক আবহের পাশাপাশি একটা সুন্দর শহরও এসেছে দেখার মতো।

একটা দৃষ্টিনন্দন গাছের নিচে সাইকেল, ব্ল্যাকবোর্ড হেলে রেখে ছাত্রকে শিক্ষক প্রকৃতির মাঝে পড়াচ্ছেন এই প্রাকৃতিক পাঠশালার স্মৃতিও মনে রাখার মতো। এককথায় অসাধারণ একটা মুভি। আমরাও নির্মাতাদের সাথে বলতে চাই, ‘সব মানিকের জন্য স্কুল চাই’ আর ‘শেখনের ইচ্ছা থাকলে পুরা দুনিয়াডাই একটা স্কুল।’

Share.

মন্তব্য করুন