শহিদ সাহেব বাড়ির ছাদে পা দিতেই একটা ঢিল এসে কপালে লাগলো। খানিকটা কেটে গিয়ে সামান্য রক্তও বের হয়েছে। চোখ তুলে তাকাতেই দেখলেন ভাড়াটিয়া হোসেন সাহেবের দুই ছেলে ফরহাদ আর ফাহাদ। অনেকটা ভয়ে ভয়ে কোনো রকমে দৌড়ে পালিয়ে গেলো। শহিদ সাহেব বুঝলেন যে তাদের অনিচ্ছাকৃত বা অযথা ঢিল ছোড়ার কারণে অনাকাক্সিক্ষত এ ঘটনাটি ঘটেছে। ছেলে দু’টির চেহারায় অপরাধবোধ স্পষ্ট লক্ষ করলেন তিনি।
ফরহাদ ও ফাহাদ দৌড়ে বাসায় প্রবেশ করলো। তাদের চেহারায় উৎকণ্ঠা। লকডাউনে স্কুল বন্ধ থাকায় সারাক্ষণ ঘরে থেকে হাঁফিয়ে উঠছিল। তাই ছাদে একটু মুক্ত বাতাসের স্বাদ নিতে গিয়েছিল দুই ভাই। ছাদের এক কোণে কিছু ইটের খোয়া ছিল। তাই নিয়ে ছোট ভাই ফাহাদ অযথা ঢিল ছোড়াছুড়ি করছিল। ঠিক ঐ সময় বাড়িওয়ালা শহিদ সাহেব ছাদে আসেন আর ওমনি একটি ঢিল এসে লাগে উনার কপালে। এটা দেখে ফরহাদ ও ফাহাদ দৌড়ে পালিয়ে এলো। ছেলেদের এভাবে আসতে দেখে হোসেন সাহেব বুঝলেন যে কোনো সমস্যা হয়েছে। তিনি ছেলেদের বারবার জিজ্ঞেস করতে থাকেন ‘কী হয়েছে? তোমরা এভাবে দৌড়ে চলে এলে কেন?’ কিন্তু ছেলেরা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। কোনো জবাব দিচ্ছে না। এমন সময় কলিং বেলের আওয়াজে ছেলে দু’টির চেহারা যেন আরো ফ্যাকাসে হয়ে গেল। হোসেন সাহেব দরজা খুলতেই বাড়িওয়ালা সালাম দিলেন। তিনি দূরত্ব বজায় রেখে ছেলেদের খোঁজ-খবর নিলেন। ফরহাদ ও ফাহাদ অনেক বিনয়ের সাথে স্যরি বললো। ফাহাদ তো স্যরি বলে একেবারে কেঁদেই দিলো। আর কখনো এমনটি হবে না বলে ওয়াদা করতে থাকে। শহিদ সাহেব বললেন, ‘ঠিক আছে! আমি জানি তোমরা ইচ্ছা করে কাজটি করনি। অনিচ্ছাকৃত, দুষ্টমি বা খেলার ছলে তোমরা কাজটি করছিলে। আমি কোনো আওয়াজ ছাড়াই সেখানে উপস্থিত হয়েছিলাম তাই এই পরিস্থিতিতির শিকার হয়েছি।’ তিনি হোসেন সাহেবকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘আমি কিন্তু কোনো নালিশ নিয়ে আসিনি, আর ছেলেদের এ জন্য বকাঝকাও করবেন না। আমি আমাদের প্রিয় নবী সা.-এর একটি হাদিস শোনাতে এসেছি। ফরহাদ ও ফাহাদের বয়সীদের এ সুন্দর হাদিসটি সবসময় মনে রাখা ও আমল করা উচিত।’ শহিদ সাহেবের কথায় দুই ভাইয়ের ভয় অনেকটা কেটে গেল। মনে মনে আল্লাহকে শুকরিয়া জানালো। বাড়িওয়ালা আংকেলের সুন্দর ক্ষমাসুলভ আচরণের জন্য ধন্যবাদ জানালো। তিনি বললেন, ‘তোমরা কি শুনতে চাও হাদিসটি?’ দুই ভাই একসাথে জবাব দিলো ‘জি আংকেল আমরা হাদিসটি শোনবো, মনে রাখবো এবং সারা জীবন আমল করবো ইনশাআল্লাহ।’ শহিদ সাহেব বললেন তাহলে শোনো! “আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা. অযথা ঢিল ছুড়তে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন অযথা ঢিল কোনো শিকারও মরে না, শত্রুকেও আহত করে না। তবে চক্ষু নষ্ট করে এবং দাঁত ভেঙে দেয়।” (সহীহ বুখারি ৫৭৮২)
এই হাদিসটিতে অযথা খেলার ছলে ঢিল ছোড়াছুড়ি করতে নিষেধ করা হয়েছে। এতে করে অনেক অনাকাক্সিক্ষত বা অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। কারো চক্ষু ঢিলের আঘাতে ক্ষতি হতে পারে। কারো দাঁত ভেঙে যেতে পারে। সুতরাং হাদিসটি আমল করলে আমরা অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যেতে পারি। আল্লাহ আমাদের এ হাদিসটি আমল করার তাওফিক দিন। আমিন॥

Share.

মন্তব্য করুন