সন্ধ্যা হতেই শুরু মশা মারার মিশন। ইদানীং মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় পড়ার টেবিলে মনোযোগ দিতে পারছে না সোহেল। মাগরিবের নামাজের পর পড়তে বসলেই শুরু হয় মশার কামড়ানি। সোহেলও নাছোড়বান্দা ঠাস ঠাস করে থাপ্পড় মেরে মশা মারতে থাকে। টেবিলের নিচে প্রায় শ’ খানেক মশার লাশ পড়ে আছে। গৃহশিক্ষক মাজেদ স্যার আসতেই অতি উৎসাহী সোহেল তার বীরত্ব দেখাতে মশার লাশ গুনতে শুরু করে। স্যার এসব দেখে বাহবা দিয়ে বড় দেখে একটা মশা হাতের তালুতে নিলেন। আলতু করে দুই আঙ্গুলে চেপে ধরে মশার শুঁড়টাকে প্রসারিত করে বললেন ‘এটা এভাবে ধর’ সোহেল তাই করলো। স্যার এবার বললেন ‘মশা এই শুঁড়টা দিয়ে মানুষের শরীর থেকে রক্ত চুষে নেয়। এর জন্য মশা অনেক শক্তি প্রয়োগ করে এই শুঁড়কে মানুষের শরীরের ভিতর প্রবেশ করায়। তুমি যদি মশার চেয়ে শক্তিশালী হয়ে থাক তবে এই মশার শুঁড়টা তোমার শরীরে ঢুকিয়ে দেখাও তো! সোহেল অনেকবার চেষ্টা করলো কিন্তু সুতোর মতো এই শুঁড়টা শরীরে ঢুকাতে পারলো না। বিরক্ত হয়ে স্যারের দিকে তাকালো। স্যার মুচকি হেসে বললেন, ‘কী পারলে না তো!’ সোহেল একটু লজ্জা পেলো। স্যার বললেন ‘এটাই আল্লাহ তায়ালার নিদর্শন! তুমি হাজার চেষ্টা করেও এই শুঁড়কে শরীরে ঢুকাতে পারবে না অথচ মশা এই শুঁড় দিয়ে শুধু মানুষ নয় অন্যান্য পশুদের শরীর থেকেও রক্ত খায়।’ আচ্ছা সোহেল! এই মশার শুঁড়টা যদি আমাদের ইঞ্জেকশনের সুইয়ের মতো শক্ত হতো, তাহলে কি তুমি মশাকে থাপ্পড় দিয়ে মারতে পারতে? সোহেল কিছুক্ষণ ভেবে বললো, না স্যার! তখন তো মশা গায়ে বসে রক্ত খেতে থাকলেও থাপ্পড় দিতাম না।’ কেন? স্যার জানতে চাইলেন। সোহেল বললো ‘তখন তো থাপ্পড় দিলেই এই শুঁড় আমার গায়ে অথবা হাতে বিঁধে যেত। এতে ব্যথা আরো বেশি পেতাম।’ স্যার বললেন, ‘তুমি যাতে মশা সহজেই তাড়াতে বা মারতে পার সে জন্য আল্লাহ মশাকে রক্ত চুষার যে সুই দিয়েছেন তা এতো সফট করেছেন। তাহলে এখানেও কিন্তু আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির নিদর্শন রয়েছে।’ তিনি আরো বললেন, ‘পবিত্র আল-কুরআনে এই অতি ছোট ও তুচ্ছ মশাকেও উপমা হিসেবে আল্লাহ তায়ালা আমাদের শিক্ষা দেয়ার জন্য পেশ করেছেন।’ বলেন কী স্যার! এটাও আল-কুরআনে আছে? হ্যাঁ আছে সূরা বাকারার ২৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা লজ্জাবোধ করেন না মশার মতো বা তার চেয়ে তুচ্ছ কোনো জিনিসের উপমা পেশ করতে। যারা সত্য গ্রহণকারী তারা জানে যে এসব আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্য। আর যারা কাফের (সত্যকে গ্রহণ করতে চায় না) তারা বলে যে এসব উপমা দিয়ে আল্লাহ কী বুঝাতে চান? এসব উপমা দ্বারা (শিক্ষা দিয়ে) অনেককে সত্য পথ দেখান আবার অনেকে (শিক্ষা না নিয়ে) পথ ভ্রষ্ট হয়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে যারা ফাসেক তারাই পথভ্রষ্ট হয়ে যায়।”
মশা যতই ক্ষুদ্র হউক না কেন! এটাও মহান আল্লাহর সৃষ্টি জীব। মশা যেমন ক্ষতিকর তেমনি এর মাঝে কিছু কল্যাণও আছে। মশারি, কয়েল, মশার স্প্রে, লোশন ইত্যাদি অনেক প্রোডাক্ট আমরা ব্যবহার করি যার সাথে রয়েছে অনেক মানুষের জীবন-জীবিকার সম্পর্ক। এভাবে প্রতিটি মন্দের সাথেও আল্লাহ মানুষের কল্যাণ রেখেছেন যাতে দুনিয়াতে ভালো মন্দের ভারসাম্য তৈরি হয়। এটাই আল্লাহর কুদরত। একাত্ববাদী আল্লাহর মহিমা ও দৃষ্টান্ত।

Share.

মন্তব্য করুন