তাহমিদ এবং তাওসিফ দু’বন্ধু। তাহমিদ অনার্সে পা রাখলেও তাওসিফ এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক এমন যে, একজন অপরজনকে না দেখে একটা দিনও থাকতে পারে না। তাদের সম্পর্কের মাঝে মিশে গেছে জুনিয়র-সিনিয়র ব্যবধান। ঘুচে গেছে বয়সের পার্থক্যও। সেদিনও ছিল একে অপরের অপরিচিত মুখ। কিন্তু হঠাৎ তাদের মাঝে এমন সম্পর্ক!
তাদের মধ্যে কোন রক্তের বন্ধন নেই, নেই আত্মীয়তার সম্পর্কও। দূরত্ব আছে তাদের ঘরবাড়িরও। এরপরেও কোন সে সম্পর্ক তাদেরকে এভাবে আবদ্ধ করে ফেলছে!
দ্বীন তথা ইসলাম। দ্বীনি সম্পর্ক তাদেরকে এমন সম্পর্কে আবদ্ধ করে ফেলেছে। যারা ক’দিন আগেও একে অপরের অপরিচিত ছিল। দ্বীনি সম্পর্কের কারণে তারা এভাবে একজন আরেকজনকে ভালোবেসে ফেলেছে। যে ভালোবাসার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় ক’দিন আগেও অপরিচিত দুইজন যুবক একে অপরকে ভালোবেসেছে। যে ভালোবাসায় কোনো ক্ষত নেই। তাদের এই ভালোবাসা পৌঁছে গেছে কুরআনে বর্ণিত বুনিয়ানুম মারসুস তথা সীসা ঢালা প্রাচীরের পর্যায়ে।
তাহমিদ এবং তাওসিফের বাসার দূরত্ব রয়েছে অনেক। এই দূরত্বকে মাড়িয়ে তারা একে অপরের সাথে সাক্ষাতে মিলিত হন প্রভুর সন্তুষ্টির জন্য। যেদিন তাদের মধ্যে দেখা হয় না সেদিন তারা অন্তত ফোনে কথা বলবে। এভাবেই যাচ্ছে তাদের সময়।
সেদিন লং টাইম ক্লাস ছিল তাহমিদের। শরীরটা একেবারে ক্লান্ত। বাসায় এসেই ক্লান্ত-শ্রান্ত দেহটা নিয়ে বেডের সাথে মিশে গেল। ব্যস! আর কোন খবর নাই। আবু তোরাবের ‘ভাইয়া’ শব্দে ঘুম ভেঙে গেল তাহমিদের। বাম হাতে পাশ থেকে মোবাইলটা নিয়ে স্ক্রিনটা মেলে ধরল চোখের সামনে। দেখেই তো অবাক! রাত এগারোটা বাজবার বাকি আর সাত মিনিট। স্ক্রিনে আরেকটা লেখা ভেসে উঠল, থ্রি মিসকলড ফ্রম তাওসিফ। লেখাটা দেখে তাওসিফের কথা মনে উঠছে তাহমিদের।
আজ সারাদিন কথা হয়নি তার সাথে। তবে গত রাতে কথা হয়েছিল। কলটা ব্যাক করে তাওসিফের সাথে কথা বলল তাহমিদ। কিন্তু তাওসিফের সে কি রাগ! আজকাল তার কোন খবর নিচ্ছে না তাহমিদ। তাহমিদ বলল, ‘ক্লাসে গেছিলাম আজ। তাই ব্যস্ত ছিলাম। তাছাড়া কালকেই তো কথা বলছিলাম তোমার সাথে। কিন্তু তাদের সম্পর্ক এতই গভীরে পৌঁছে গেছে যে, একটা দিন যেন তাওসিফের কাছে এক সপ্তাহ মনে হতে লাগল। লাগবেই না কেন, যে ভালোবাসাগুলো নিষ্কলুষ, পবিত্র, কোন ক্ষত নেই, তা তো এমন হওয়ারই কথা। কাল সকালে দেখা হবে বলে মোবাইল রেখে দিল তাহমিদ।
পরের মাসে বাসা চেঞ্জ করছে তাহমিদ। সাথে তাওসিফও। এখন আর বাসার দূরত্ব নেই তাদের। বাসার দূরত্ব ঘুচিয়ে এখন দু’জনেই একটা বাসায় চলে এসেছে। তাওসিফ তো মহা খুশি তাহমিদের সাথে বাসায় উঠতে পেরে। তাহমিদও খুশি তাওসিফকে পাশে পেয়ে।
দেশের পরিস্থিতি তেমন ভালো না। এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৭ জন মারা গেছে। চিকিৎসাধীন আছে ১৬৪ জন। আজ গোটা দেশ যেন অঘোষিত লকডাউনে।
সরকারের সিদ্ধান্তে গণপরিবহন, ট্রেন, নৌযান, দোকানপাট, অফিস-আদালত সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সবাই যার যার মতো বাড়ি চলে যাচ্ছে। বাড়ি চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফাহমিদ আর তাওসিফও। কিন্তু তাদের মনে দুশ্চিন্তার একটা রেখা পড়ে গেছে। করোনাভাইরাসের যে মহামারী চতুর্দিকে, সেটা থেকে রক্ষা পেয়ে দুজনেই কি নিরাপদে থাকতে পারবে? তারা কি আবার ফিরে আসতে পারবে তাদের সেই চিরচেনা শহরে? আবার কি মিলিত হতে পারবে দু’জনেই? মনের কোনায় এসব প্রশ্নগুলো নিয়ে উভয়ই পথ চলল বাড়ির উদ্দেশ্যে। অনিশ্চিত গন্তব্যে…।

জাহেদুল ইসলাম
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

Share.

মন্তব্য করুন