বিড়ালটি মিউ মিউ করতে করতে দৌড়ে পালালো। প্রতিদিন ঠিক খাবারের সময় হলে কোথা থেকে যেন হাজির হয় এ বিড়ালটি। যতক্ষণ খাবার চলে ততক্ষণ মিউ মিউ করতে থাকে টেবিলের চারপাশে। কখনো কখনো লাফ দিয়ে উপরে ওঠার চেষ্টা করে। এতে সায়ন খুব বিরক্ত হলেও তার বোন মারিয়া কিন্তু বিড়ালটাকে প্রশ্রয় দেয়। এতে মারিয়ার ওপরও সায়নের জেদ হয়। আজ মারিয়ার স্কুল থেকে আসতে দেরি হবে। তাই বিড়ালটাকে জব্দ করতে মোটা একটা লাঠি নিয়ে তৈরি সায়ন। যেই বিড়ালটা ঘরে ঢুকছে অমনি কয়েক ঘা বসিয়ে দিল পিঠে। গোঙাতে গোঙাতে দরজার বাহিরে গিয়ে দাঁড়ালো। এমন সময় সায়নের বাবা ঘরে প্রবেশ করলেন। বিড়ালটাও বাবার পেছন পেছন আবার ঘরে প্রবেশ করল। সায়ন বিড়ালের আভাস পেয়ে আবার তেড়ে এলো, কিন্তু বাবা বাধা দিলেন।
তিনি বললেন, ‘শোনো সায়ন! বিড়াল হলো নিরীহ একটা প্রাণী। বেওয়ারিশ বিড়াল বা কুকুর যদি মানুষের জীবনের ঝুঁকির কারণ না হয় তবে তাদের আঘাত বা হত্যা করা ঠিক না। এগুলো মহান আল্লাহর সৃষ্টি এদের প্রতি ভালোবাসা ও সেবার দৃষ্টি দেয়া সৃষ্টির সেরা মানুষের কর্তব্য। যে সকল প্রাণী জঙ্গল ছেড়ে আমাদের সমাজে বসবাস করে সেসব প্রাণীর রক্ষণাবেক্ষণ করাও আমাদের দায়িত্বের অংশ।’ সায়ন বললো, কিন্তু বাবা ওই বিড়ালটা আমাদের খাবার নষ্ট করে। বাবা বললেন, ‘আমরা একটু সচেতন হলেই খাবার নষ্ট করবে না। যদি আমাদের খাবার যথাযথভাবে সংরক্ষণ করি এবং বিড়ালের নাগালের বাইরে রাখি, তবে সমস্যার সমাধান হয়। বরং আমাদের উচ্ছিষ্ট খাবার যদি একটি পাত্রে করে বিড়ালকে দিতে পারি তবে বিড়ালের খাবারও হবে আবার আমাদের পরিবেশটাও ভালো থাকবে। এ ছাড়া বিড়াল থাকলে ঘরে ইঁদুরের উপদ্রব কমে যায়। এ ব্যাপারে আমাদের নবীজি (সা.) হাদিসে বলেছেন, “ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, এক স্ত্রীলোক একটি বিড়ালের কারণে জাহান্নামি হয়েছিল। সে বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছিল। তাকে সে খাবার খেতে দেয়নি। আবার তাকে ছেড়েও দেয়নি যাতে বিড়ালটি জমিনে গিয়ে পোকা-মাকড় ধরে খেতে পারে।” (সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৩০৭৯)।
এই হাদিস থেকে একটি বিষয় আমাদের শিক্ষা লাভ করার আছে। আর তা হলো, অকারণে কোনো প্রাণীকে কষ্ট দেয়াটা আল্লাহ অপছন্দ করেন। আর এ অপরাধের জন্য জাহান্নামি হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। সুতরাং আমাদের সমাজে যে সকল অবলা প্রাণী বেওয়ারিশ ঘুরে বেড়ায় তাদের যতœ নেয়া আমাদেরই দায়িত্ব। তবে তারা যদি মানবসমাজের ক্ষতির কারণ হয় তবে সে ব্যবস্থা সরকারের নেয়া উচিত। যেমন কুকুরের কামড়ে জলাতঙ্ক হতে পারে তাই সরকার মাঝে মাঝে বেওয়ারিশ কুকুরকে ইনজেকশন দিয়ে থাকে। যাতে রোগ সংক্রমিত করতে না পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে এ প্রাণীগুলোও আমাদের সমাজেরই অংশ। তাদের সেবা করা মানে সৃষ্টির সেবা, আর সৃষ্টির সেবা মানে স্রষ্টার সেবা। সায়ন মনোযোগ দিয়ে বাবার কথাগুলো শুনলো এবং বাবার সাথে একমত পোষণ করে বিড়ালের দিকে মমতার দৃষ্টিতে তাকালো।

Share.

মন্তব্য করুন