পাঁচটি রণতরীতে ভেসে আসা ৫ শ’ হেলিকপ্টার, ৩ লাখ সেনা ও হাজার হাজার মিত্রজোট এবং অক্ষজোটের জঙ্গিবিমানের মুহুর্মুহু গর্জনে তছনছ হয়ে গেল প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার সহস্র বছরের পুরনো সভ্যতা। চলছে ত্রিপক্ষীয় যুদ্ধ। সবার টার্গেট ফোরাত নদী দখলে আনা। ফোরাতের কিরকিসিয়া অঞ্চলে আবিষ্কৃৃত হয়েছে ৭ শ’ কুইন টিলিয়ন ডলার মূল্যের গুপ্তধন। মূল্যবান স্বর্ণের পাহাড়। এই সোনার পাহাড়ের ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ ও রহস্য উদঘাটন এখন পর্যন্ত বিজ্ঞান করতে পারেনি। এটি একটি অলৌকিক রত্ন ভাণ্ডার। স্বাভাবিকভাবে উত্তোলন করা হলে বর্তমান পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই এক ট্রিলিয়ন ডলার ভাগে পাবে। বিশাল মূল্যের এই গুপ্তধনের দখল নিতে ছুটে এসেছে মার্কিন জোট, এসেছে তুর্কি জোট এবং সিরীয়জোট তাদের মোকাবেলায় নেমেছে ভয়ঙ্কর যুদ্ধে।
যুদ্ধের তাণ্ডবে ধ্বংস হচ্ছে স্থাপনা, মরছে নিরীহ মানুষ। নিহত হয়েছে শত শত নারী-শিশু। জীবন দিচ্ছে হাজার হাজার সাধারণ নাগরিক। বোমার আঘাতে পঙ্গু হয়ে মরণের দিন গুনছে লাখ লাখ ফোরাতপাড়ের মানুষ। খোলা আকাশ পানে তাকাতেও ভয় পাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ।
ঈগলের ডানায় ভর করে নামছে মৃত্যু। এই মৃত্যুর মিছিলে আমাকেও মহড়া দিতে হবে। কারণ আমি একজন মিলিটারি পাইলট। ছোটবেলায় আকাশে বিমান উড়তে দেখলে বিমান বিমান বলে চিৎকার করে সারা বাড়ি মাতিয়ে তুলতাম। একদিন আকাশে উড়ে বেড়াবো বলে স্বপ্ন দেখতাম। সেই স্বপ্নপূরণের চ্যালেঞ্জ হিসেবে পাইলট হলাম। ঈগলের মতো আমিও আকাশে ভেসে বেড়াই।
ঈগলের ডানার নিচে থাকে চতুর ও ভয়াল মারণাস্ত্র। অভূতপূর্ব স্মার্ট ও স্যাটেলাইট গাইডেড বোমা। কৃত্রিম এই ঈগলরাই সিরিয়ার ওপর চড়াও হয়েছে। ভয়ানক জঙ্গিবিমান বি-২, বি-৫২, এফ-১৬ বোমারু জঙ্গিবিমান, লেজার বোম, ই-বোমা ও ডিনো হেলিকপ্টারের প্রতিচ্চায়া সর্বদা ঘুরে ফিরে সিরিয়ানদের ছানাবড়া চোখে। বোমার প্রতিশব্দে আতঙ্কগ্রস্ত ওদের মন। ঘরে-বাইরে সর্বত্রই এদের মৃত্যভয়। সিরিয়ার রাকাহ দেইর আজজুর এবং ইরাকের কারবালা, হিল্লাহ এবং নাজাফ ও কারবালার আকাশ কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি মারণাস্ত্রের প্রায় সবকটিই এই যুদ্ধে হামলায় অংশ নিচ্ছে। এগুলোর মধ্যে যে যান্ত্রিক ঈগলের জঙ্গি আক্রমণে বিষিয়ে তুলছে মধ্য প্রাচ্যবাসীদের জীবন সেটি হলো ডিনো রোবট হেলিকপ্টার। উত্তর-দক্ষিণ থেকে পূর্ব পশ্চিম মধ্যপ্রাচ্যের সারা আকাশজুড়ে এই হেলিকপ্টারের ডানার বিস্তার। ডিনোর শকুন চক্ষুর নিশানা থেকে রেহাই পায় না হাসপাতালের রোগীরা এমনকি মসজিদ-গির্জার উপাসনাকারীগণও।
কিরকিসিয়ার যুদ্ধের খলনায়ক হিসেবে ডিনো রোবট হেলিকপ্টারের ধ্বংসলীলার ইতিবৃত্ত সমর ইতিহাসে কিংবদন্তির উদাহরণ হয়ে থাকবে। স্বয়ংক্রিয় রাডারসমৃদ্ধ ডিনো উড়ন্ত অবস্থায় একসঙ্গে ১২০টিরও বেশি টার্গেট করতে সক্ষম। তার মধ্যে অতিবিপজ্জনক ১৬টি শক্র ছাউনিতে আক্রমণ চালানোর পাশাপাশি বাকি টার্গেটগুলোর তথ্য অন্যান্য জঙ্গিবিমানকে অতিদ্রুত সরবরাহ করতে পারে। যাতে করে অন্যান্য জঙ্গিবিমান প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে টার্গেটগুলোকে আঘাত হানতে পারে। আক্রমণের প্রস্তুতি, তথ্য প্রদান ও লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো ইত্যাদি সবকিছু করতে মারণাস্ত্রের সময় লাগে মাত্র ৩০ সেকেন্ড। আকাশে অবস্থান করে ৩০ মিলিমিটার চেইন গানশিপ থেকে অনবরত বৃষ্টির মতো গুলির লড়াই চালাতে ডিনো সক্ষম। সম্মুখ পানে দেখার জন্য এর কপালে উন্নত প্রযুক্তির লেন্স সংযুক্ত। দৈত্যাকৃতির এই হেলিকপ্টার লম্বায় এক শ’ ৬০ ফুটের মতো। এর সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৫০০ মাইল। পাইলট ও কো-পাইলট মিলে মাত্র ২ জন ক্রুই এর নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট। এই রোবো হেলিকপ্টার এর প্রতি ডানার নিচে ৮টি করে মিসাইল বহনে সক্ষম। প্রয়োজন অনুসারে মিসাইল বা ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আকাশ থেকে ভূমিতে অথবা আকাশ থেকে আকাশে ছুড়ে মারতে সক্ষম।
যুদ্ধংদেহী এই হিংস্র ঈগলেরা মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে ক্ষণে ক্ষণে উড়ে বেড়াচ্ছে। ভূমিতে চষে বেড়াচ্ছে ঈগলের শিকার সন্ধানী চৌকস সেনারা। সযত্নে ধরে রেখেছে ফোরাত নদী তীরে জেগে ওঠা গুপ্তধন। সোনার পাহাড় বাদে সব কিছুতে চলছে ধ্বংসের মহড়া। প্রাগৈতিহাসিক স্থানগুলো কালের সাক্ষী হয়ে অর্ধভগ্ন অবস্থায় নিথর দাঁড়ানো। লুটপাট হয়ে গেছে স্থাপনাস্থিত অমূল্য সম্পদ। আবহমানকাল ধরে সংরক্ষিত সভ্যতার নিদর্শনগুলো বেহাত হয়ে গেছে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ইমারতসমূহে এখন শুধু আছে মরুধুলো। বছরের পর বছর ধরে এরা সিরিয়ায় জেঁকে বসেছে। বিশে^র শান্তিকামী মানুষের প্রতিবাদের ঢলকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দজলা ফোরাতের জলস্রোতে বয়ে দিচ্ছে প্রতিবাদী সিরীয় জনতার রক্তপ্রবাহ। সিরিয়ান শিশু-কিশোররা মুক্ত আকাশে ডানা মেলে ভেসে বেড়ানো ঈগল দেখলেই লুকোতে চেষ্টা করে। তারা ভাবে এই বুঝি এলো মৃত্যুদূত।
ডগফাইট-ডগফাইট বলে লিনার আর্ত চিৎকারে খেই ফিরে এলো। লিনা হলো আমার কো-পাইলট। একটি সারভাইভাল কোর্স করতে যেয়ে লিনার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। প্রকৃতির বিরূপ পরিবেশে সুন্দরবনের গহিন অরণ্যে একত্রে ২১ দিন কাটিয়েছিলাম। কোন প্রকার খাবার দাবার, আশ্রয় ও বস্ত্রবিহীন অবস্থায় টিকে থাকার কী কঠিন লড়াই! আগুন ধরাবার জন্য একটি ফায়ার স্টার্টার, দু’জনের জন্য দু’টি দা এবং একটি ম্যাপ সঙ্গে নিয়ে বনে প্রবেশ করতে হয়েছিল। সুন্দরবন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন। ঝোপঝাড়ে মোড়া লবণাক্ত জল মাড়িয়ে ম্যাপের প্রদর্শিত স্থানে শুকনো মাটির সন্ধান পেলাম। লিনা আশপাশে খাবার পানির উৎস পরখ করল। কেননা, বেঁচে থাকার প্রথম শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বিশুদ্ধ খাবার পানি, আগুন ও একটি শেল্টার। সূর্য ডোবার আগেই আমরা আস্তানা তৈরির কাজে লেগে গেলাম। ৫-৭ ফুটের মতো জায়গায় কয়টা খুঁটি পুঁতে উপরে লতা পাতার ছাউনি দিয়ে নির্মিত হলো আমাদের রাতের শোবার শেল্টার। আগুন ধরানোর জন্য খড়কুটো খুঁজে পাওয়া গেল না। যা পাওয়া গেল সবই ভেজা। কোনোমতেই আগুন জ্বালাতে পারলাম না। সন্ধ্যা ঘনিয়ে ক্রমেই রাত হলো। কাদামাখা শরীরে শেল্টারে আশ্রয় নিলাম। দিনের বেলায় শেল্টারের পাশেই চোখে পড়েছিল বিভিন্ন জন্তুর পায়ের ছাপ। ভয় পাবে ভেবে যা আমি লিনাকে বলিনি। বিশাল বনে নেমে এসেছে গভীর অন্ধকার। সুন্দরবনের রাতের নীরবতা ভেঙে কানে ভেসে আসতে থাকলো ভয়ঙ্কর জন্তুদের আনাগোনার শব্দ। কানের কাছে শিকারি প্রাণীদের ফুঁস-ফাঁস আওয়াজ। একহাতে দা অন্য হাতে লাঠি নিয়ে দু’জনেই গায়ের সাথে গা লাগিয়ে অসহ্য মশার যন্ত্রণা ও ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করে কোনরকমে রাতটা পার করলাম। দুচোখের পাতা এক করতে পারলাম না। বেলা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ভাবলাম বিপদ কেটে গেল কিন্তু দিনের বেলায় কুমিরের হামাগুড়িতে অস্থির হয়ে উঠলো পুরো বনাঞ্চল। কাজেই চোখ কান খোলা রেখেই চলতে হলো। অনেক চেষ্টার পর লিনা আগুন জ্বালাতে পারলো। আমরা খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম। টিকে থাকার সংগ্রামে আমরা প্রথমবার জয়ী হলাম। খাবার পানি গরম করার ব্যবস্থা হলো। খাবার খুঁজতে বেরিয়ে পড়লাম। ক্লান্ত শরীরে অলস ভল্লুকের মতো গাছে চড়ে একটি গিরগিটি শিকার করতে সমর্থ হলাম। পানি পান করেই আমরা সারাদিন পার করলাম। রাতের খাবার হিসেবে গিরগিটিটা রাখা হলো। একটি গিরগিটিকে আগুনে পুড়িয়ে দু’জনের ডিনার হিসেবে যতটুকু প্রোটিন পাওয়া গেল তা দিয়ে দেহকে মানাতে পারলেও মাথা ঘুরাঘুরিতে অস্থির ছিলাম। এরকম কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি থেকে ২১তম দিনে যখন আমাদেরকে উদ্ধার করা হলো তখন দুজনেরই ওজন ১০ কেজি করে কমে গিয়েছিল। তবে আমরা কঠিন পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে জয়ী হলাম। আমাদের পিএসআর-৫ থেকে বেড়ে ৭ এ উঠলো। আমরা সেরা সারভাইভার হিসেবে মনোনীত হলাম। রয়েল এয়ারফোর্স কর্তৃক একই মিশনে আমরা দু’জন নিযুক্তি পেলাম। এর চেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে আমরা অপেক্ষা করছি। দুরবীন চোখে লিনা যুদ্ধ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিল। তার দৃষ্টিসীমার নজরে আসে এক জাঁক জঙ্গিবিমান। বিমানগুলো একটি শত্রুবিমানকে তাড়া করে বৃত্তাকারে ঘুরছে। শত্রুবিমানটি কোনোভাবেই পালাবার পথ পাচ্ছে না। সামরিক পরিভাষায় এমন পরিস্থিতিকে ডগফাইট বলে।


অত্যন্ত বিভীষিকাময় এই যুদ্ধ। শাঁ শাঁ শব্দে উড়ে আসে বোমারু বিমান। বৃষ্টির মতো বোমবর্ষণ করে ফিরে যায় আস্তানায়। গগনবিদারী কানফাটা শব্দে দিশেহারা হয়ে যায মানুষ। এই যুদ্ধে কয়েক মিনিটের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে যে কোনো জনপদ। যুদ্ধে সর্বপ্রথম বিমান ব্যবহৃত হয় প্রথম মহাযুদ্ধে। যুদ্ধ ইতিহাসের প্রথম বিমান আক্রমণ। একটি জার্মান পর্যবেক্ষক বিমানকে ধাওয়া করে ব্রিটিশ বিমান বাহিনী। এতে ব্রিটেনের ৩টি যুদ্ধ বিমান অংশ নিয়েছিল। ব্রিটিশ বিমানের তাড়া খেয়ে জার্মান বিমানটি ল্যান্ড করতে বাধ্য হয়েছিল। আকাশ যুদ্ধের সর্বপ্রথম জয়ের তিলক ফোঁটা পরে নিল-ব্রিটিশ বিমান বাহিনী। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে প্রাধান্য বিস্তার করেছে তারাই যারা আকাশযুদ্ধে পারদর্শী। পার্ল হার্ভারে জাপানি বিমান হামলায় সাগরতলে বিলীন হয়ে গিয়েছিল মার্কিন রণতরীগুলো। হাজারো মার্কিন সেনার জীবন্ত সলিল সমাধি-আজো ইতিহাস হয়ে আছে।

আকাশযুদ্ধের সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনাটি হলো হিরোশিমা-নাগাসাকিতে অ্যাটম বোমা বর্ষণ মার্কিন বোমারু বিমানের পারমাণবিক বোমার আঘাতে লাখ লাখ জাপানি নিহত হয়েছে। মারাত্মক অ্যাটম বোমার প্রতিক্রিয়া আজো বয়ে বেড়াচ্ছে শহর দুটিতে। আজো জন্ম নিচ্ছে বিকলাঙ্গ শিশু। মানব সভ্যতা ধ্বংসকারী এই আকাশযুদ্ধ। তবু থেমে নেই আকাশ প্রতিযোগিতা। উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে বোমারু বিমান। যারা আকাশসীমা মোকাবিলায় পারদর্শী তারাই সেরা যোদ্ধা। অতি আধুনিক বোমারু বিমানের অধিকারী হতে পারলেই হলো। শক্তিশালী দেশ হিসেবে সবাই তাকে সমীহ করে। এ প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে এগিয়ে আছে মিত্রজোট। তাদের হাতে রয়েছে ইলেকট্রনিক বিমান। এটি আণবিক শক্তিচালিত বিমান। ভয়ানক দ্রুতগতিসম্পন্ন। এর ধারে-কাছে কোনো সাধারণ বিমান এলেই আর রক্ষে নেই। বিদ্যুৎশক্তির প্রভাবে সাধারণ বিমানটির ধ্বংস অনিবার্য। এ ছাড়াও এই জোটের হাতে রয়েছে ড্রাগন, ফ্যালকন এফ-১৬, বি-৫২ নামের সুপারসনিক আধুনিক যুদ্ধবিমান। একবারের জ্বালানি দিয়ে এগুলো দীর্ঘক্ষণ আকাশে উড়তে সক্ষম। এগুলো প্রায় ২০টি ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম। এসব বোমারু বিমানের গতিবেগ শব্দের গতির প্রায় তিনগুণ। শব্দের গতি ঘণ্টায় প্রায় ৭৬০ মাইল। আর ওইসব আধুনিক বিমানের গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ২১০০ মাইল। যুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে চালকাবিহীন গোয়েন্দা বিমান গ্লোবাল হ্যাক। এটি পর্যবেক্ষণ ও হামলা দুটোই করতে সক্ষম। প্রচলিত জঙ্গি বিমানগুলো ৩০ হাজার ফুট উপর দিয়ে উড়ে চলে। গ্লোবাল হ্যাক উড়ে ৬০ হাজার ফুট উপর দিয়ে। ওখান থেকে শত্রুঘাঁটি লক্ষ্য করে এটি ৫ মিনিটের মধ্যে আঘাত হানতে সক্ষম। ইউরোপিয়ান ও স্ক্যান্ডিনিভিয়ান দেশগুলোও আধুনিক জঙ্গি বিমানের অধিকারী। র‌্যাপটর, ফ্ল্যাস্কার প্লাস মিরেজ, ডেসাল্ট ইত্যাদি জঙ্গিবিমান রয়েছে অক্ষজোটে। রাশিয়ান অত্যাধুনিক মিগ-৩৯ এবং হরনেট আকাশ মারণাস্ত্র নিয়ে মোকাবেলায় ব্যস্ত মধ্যপ্রাচ্য জোট। এই জোটে ইউরো ফাইটার ও গ্রিপেন নামের অতি আধুনিক রোবো বোমারু বিমানকেও উড়তে দেখা যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য পক্ষে সবচেয়ে ভয়ানক মারণাস্ত্র হিসেবে যুক্ত রয়েছে চাইনিজ হাইপারসনিক বোমারু বিমান। শব্দের গতির কয়েকগুণ বেশি গতিতে এরা শত্রুবিমানকে তাড়িয়ে বেড়ায়। শত্রুপক্ষের ঘুম কেড়ে নিয়েছে এই আধুনিক জঙ্গিবিমান।
ডগ ফাইটিং এর মাধ্যমে এইমাত্র যে বিমানটিকে ভূপাতিত করা হলো এটি একটি রোবো বোমারু বিমান। এর পাইলট একটি রোবট। পাইলট প্যারাশুট জাম্পিং করে আকাশমুখী উড়ে গেল। মহাভারতের অভিমান্যুর মাতো রাশান বিমানের চক্রব্যূহে আটকে গেলো রোবোটটি। প্যারাসুটে ভর করে অবতরণের সাথে সাথে ধরা পড়লো রোবট পাইলট। আন্তর্জাতিক স্তরে প্রবল চাপ এবং জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী সিরিয়া ধৃত রোবো পাইলটকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছে। রোবটটি ধরা পড়ার খবর প্রকাশ্যে আসার পরই তার মুক্তির জন্য বিশ্বজুড়ে আন্দোলন শুরু হয়। দীর্ঘ সময় রোবটটি প্যারসুটে আকাশে ভেসে বেরিয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।
মধ্যপ্রাচ্য স্বর্ণবেষ্টিত অঞ্চলকে নো ম্যানস ল্যান্ড ঘোষণা করে এর চারপাশে ৫ শ’ সশস্ত্র রোবট সৈনিক দ্বারা চৌকি দিচ্ছে। দিবা -রাত্র ২৪ ঘণ্টা সতর্ক দৃষ্টিতে পাহাড়ারত এই রোবটেরা। রণাঙ্গনে গুলির লড়াইয়ে এরা অতিদক্ষ। টিকে থাকার লড়াইয়ে এরা অতুলনীয়। শত্রুপক্ষের অগ্নি চক্রব্যূহ ভেদ করেও এরা অক্ষত অবস্থায় রেরিয়ে আসতে সক্ষম। রোবট পারে না- এমন কাজ নেই। বুদ্ধিদীপ্ত বানর ওরাংওটাং এর (বনমানুষ) ভূমিকা থেকে শুরু করে কালজয়ী নায়িকা ম্যাডোনার অভিনয় ইত্যাদি সবই করতে পারে রোবটেরা। ডিজিটাল কম্পিউটার যুগ পেরিয়ে অতিদ্রুতগতিতে রোবট যুগে আমাদের পদার্পণ ঘটলো। যন্ত্রমানব এসিমো, রোবট ডগ-আইবু, রোবট পুষি বিড়াল-ব্যান্দাই এবং মৎস্য মানব-সিম্যান, রোবটমানবী সুফিয়া ইত্যাদি রোবটেরা বিনোদনের পাশাপাশি মানুষের বিকল্প হিসেবে নিত্যনৈমিত্তিক কাজকর্ম করে দিচ্ছে। সমর প্রযুক্তিতে রোবট এসেছে ভিন্ন আকার আকৃতিতে। স্বয়ংক্রিয় মারণাস্ত্র যানের ভূমিকায় দায়িত্ব পালন করা এবং কীটপতঙ্গের আকার ধারণ করে গোয়েন্দাগিরির কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে রোবট। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রেÑ এই রোবটেরা প্রকৃতির বন্য কীট-পতঙ্গের সাথে মিশে গিয়ে ওদের আচার-আচরণ ও বৈশিষ্ট্য নকল করে পোকা-মাকড়ের মতো আমাদের চারপাশে বিচরণ করছে এবং ছদ্মবেশে তথ্য পাচারের কাজে লিপ্ত রয়েছে। মানুষের মাধ্যমে করানো বিপজ্জনক এমন কাজগুলো রোবট দ্বারা সম্পন্ন করা হচ্ছে। মাইন তোলা এবং বোমা নিষ্ক্রিয়করণ কাজে ইতোমধ্যেই রোবট ভূমিকা রেখে চলেছে। দ্য ইউএস ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্ট এজেন্সি মিত্র সামরিক বাহিনীর জন্যে ৫০০ টেলি-অপারেটেড রোবট কিরকিসিয়ার যুদ্ধে নিযুক্ত করেছে। দুর্গম স্থানে অপারেশন চালাতে রোবটগুলো মানুষের অগম্য স্থানে প্রবেশ করতে পারে। অতি সন্তর্পণে লোকচক্ষুকে ফাঁকি দিয়ে এই রোবট শত্রু সেনার প্রকৃত অবস্থানসহ যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে অতি দ্রুত তা নিজ ঘাঁটিতে প্রেরণ করতে সক্ষম। এই যুদ্ধে মানব সেনারা সরাসরি রণাঙ্গনে নেই। রোবট ও ড্রোন পরিচালনায় নিয়োজিত রয়েছে মানবসেনারা। মানবসেনারা রিমোট টিপে টিপে যুদ্ধে পরিচালনা করছে। আকাশপথে গেরিলা ড্রোন হঠাৎ আছড়ে পড়ছে মোস্ট-ওয়ান্টেড সমরনায়কের ওপর। ড্রোন হলো মনুষ্যবিহীন যুদ্ধবিমান। একপক্ষের যন্ত্রসেনাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছে অন্য পক্ষের যন্ত্রসেনারা। এই যুদ্ধে ন্যানো প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। দুর্ভাগ্যবশত ন্যানো প্রযুক্তির কোন মারণাস্ত্রকে খালি চোখে দেখা সম্ভব নয়। যন্ত্রপাতিগুলো অতি ক্ষুদ্রতম, যা রোবট দেখতে পারে।
লিনা হাসিমুখে বলল, ‘আমাদের ই-বোমার আঘাতে সমস্ত রোবটিক ও নানোটিক কারিশমা ম্লান হয়ে যাবে। ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্রে সজ্জিত আমাদের পদাতিক বাহিনী কিরকিসিয়া যুদ্ধে বিজয় লাভ করবে।’ আমি বললাম, ‘তুমি কি শোননি যে, আমাদের সর্বাধুনিক মিসাইল ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কিরকিসিয়া অঞ্চলে অকার্যকর। এমনকি তুর্কিদের ছোড়া সমস্ত মিসাইল ফোরাতের আকাশসীমা ভেদ করার আগেই মাটিতে আছড়ে পড়ছে। মাঝারি বা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো শাঁ শাঁ শব্দ করে আকাশ কাঁপিয়ে শক্রঘাঁটিতে ছুড়ে মারা হচ্ছে। আকাশ থেকে আকাশে, ভূমি থেকে আকাশে, সাবমেরিন থেকে আকাশে যেভাবেই ছোড়া হোক না কেন কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। লিনা চোখ দুটি কপালে তুলে বলল, ‘এতো দেখছি আরেক রহস্যজনক বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল!’


আমি বললাম, হতে পারে। এ রকম রহস্যেঘেরা স্থান পৃথিবীতে অনেক রয়েছে। কিছু কিছু স্থানের ভৌতিক রহস্য ভেদ করে মানুষ ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। যেমন-সাগর আঙিনা উত্তমাশা অন্তরীপ। প্রশান্ত মহাসাগরের এক রহস্যময় স্থান এটি। এককালে নাবিকদের কাছে অন্তরীপ ছিল মৃত্যুপুরী। কোন এক অজানা রহস্যের ফাঁদে আটকা পড়ে যেতো জাহাজ। আদিকালের পালতোলা জাহাজের গতি অন্তরীপের স্রোতহীন- বাতাসবিহীন পরিবেশে এসে কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ থমকে যেতো। হাজারো চেষ্টা করেও নাবিক তার জাহাজকে ওখান থেকে সরাতে পারতো না। ফলে, মরণ ছাড়া আর কোনো গতি ছিল না। কালজয়ী নাবিক ভাস্কোদা গামা রহস্যঘেরা অন্তরীপ ডিঙিয়ে প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে প্রথম ইউরোপীয় হিসেবে অনুপ্রবেশ করেছিলেন ভারত উপ-মহাদেশে। রহস্যময় স্থান উত্তমাশা অন্তরীপ এর ভৌতিক রহস্য সেই থেকে আর লৌকিক কথামালায় নেই। আটলান্টিক মহাসাগরের রহস্যময় স্থান অশ্বরেখার বুক চিড়ে ওপারে উঠে নাবিক কলম্বাস আবিষ্কার করেছিলেন আমেরিকা। কিন্তু এই আটলান্টিকেরই আরেক ভুতুড়ে স্থান বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল যার রহস্য আজও অজানা। যেখানে নিখোঁজ হয়েছে শ’ শ’ জাহাজ। এমনকি এর উপর দিয়ে উড়ে চলা বিমানের নিরুদ্দেশ হওয়ার কাহিনীও রহস্যাবৃত। এর প্রকৃত রহস্যের সমাধান আজ পর্যন্ত কেউ দিতে পারেনি বলে এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলকে নিয়ে চালু আছে নানা জল্পনা-কল্পনা ও রূপকথা।

পৃথিবীর এমন কিছু কিছু রহস্য আছে যেগুলোর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ আমরা এখনো জানি না। আর ওইসব অজানা রহস্যকে আমরা ভৌতিক, কাল্পনিক, অলৌকিক এবং লৌকিক রূপকথা হিসেবে চালিয়ে দেই। এমন একটি অদ্ভুত ভৌতিক রহস্য লুকিয়ে আছে ফোরাতের জলাশয়ে। উত্তর কিরকিসিয়া কৃষিজমি পেরিয়ে জনমানবহীন পরিবেশে ফোরাতের অববাহিকায় অবস্থিত এই স্থানটি। এটি একটি রহস্যময় জায়গা। মার্কিনিরা প্রথমে জায়গাটিকে দখলে নিয়ে রাস্তা নির্মাণের কাজ করতে ছিল। তখনই এই ভৌতিক স্থানের কথা মানুষ জানতে পারে এবং জায়গাটির ভৌতিক কাহিনী প্রথম প্রকাশিত হয়। ওখানে যেসব মিলিটারি কনভয় পাঠানো হতো, সোনার পাহাড়ের কাছাকাছি যেয়েই সেগুলো অদৃশ্য হয়ে যেত। এই ভুতুড়ে ঘটনা জানার পর সবাই আতঙ্কিত। রণসাজে সজ্জিত হয়ে একদল তুর্কি সৈনিক রণ-হুঙ্কার দিয়ে যেই না জায়গাটা পার হয়ে ওপারে যেতে চাইল আর তাদের দেখা পাওয়া গেল না, একেবারে গায়েব! হেলিকপ্টারে চড়ে অনেকেই এই অলৌকিক পাহাড় অতিক্রম করেছে। তবে এক্ষেত্রেও নতুন রহস্যের জন্ম হয়েছে। এর উপর দিয়ে উড়ে যাবার কালে বিস্ময়কর পরিবর্তন দেখা যায় আকাশচারীদের শরীরে। আরোহীরা পুনঃযৌবন লাভ করে। মানে বুড়ো থেকে একেবারে যুবক। এ যেন এক রোমান্টিক রহস্যময়তা। আরোহীদের পাকা চুল কালো হয়ে যায়। দু-তিন দিন পরেই অবশ্য তা আগের অবস্থায় ফিরে আসে। এই সোনার পাহাড়ের ছবি তোলার সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়। আকাশ থেকে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েও এ পর্যন্ত এই রহস্যময় সোনার পাহাড়ের কোনো ছবি তোল যায়নি। আকাশ থেকে সুস্পষ্টরূপে রহস্যময় এলাকাটি দেখা গেলেও ক্যামেরায় এর ছবি আসে না। বিজ্ঞানীদের ধারণা পুরো অঞ্চলে হয়তো বিকিরণ হচ্ছে কোনো অজানা রশ্মি- যার প্রভাবে ওখানকার ছবি ফটোপ্লেটে ধরা পড়ে না। তা ছাড়াও এই অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি কিছুক্ষণ পর পর বদলে যায়। কখনো জলাভূমি, কখনো জলাধার আবার কখনো বা এটিকে মরুমরীচিকা মনে হয়। এই অঞ্চলের বাসিন্দারা জানিয়েছে, রাত ঘনিয়ে এলে তারা এই লেক অঞ্চল থেকে বাতাসে ভেসে আসা মানুষের কথা-বার্তার শব্দ শুনতে পায়। নির্জন রাতে ওখানে জনপদের যে হট্টগোল/ শোরগোল তা-আজো স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে অবোধ্য। সিরিয়া জোটের প্রধান জেনারেল সুফিয়ান জায়গাটির নামকরণ করেছেন ‘জাবাল সাইক’যার ইংরেজি ঘড়ৎবঃঁৎহংযরষষ অর্থাৎ যে পাহাড় থেকে কেউ জীবিত ফিরে আসে না। এই পাহাড়কে দখলে আনার বাকযুদ্ধে কেউ পিছিয়ে নেই, মিত্র জোটের প্রধান জেনারেল মি: কুসু রণহুঙ্কার দিয়ে ইন্টারনেট বট ওয়েব সাইটে বার্তা পাঠিয়েছে যে, ফোরাত অববাহিকা থেকে মধ্যপ্রাচ্য জোট সরে না গেলে ফোরাতের প্রতিটি জলকণাকে মরুকণায় পরিণত করা হবে। পাল্টা জবাবে মধ্যপ্রাচ্য জোটের প্রধান মি: সুফিয়ান হ্যাশট্যাগে হুমকি দিয়েছেন যে, মিত্রজোটের একটি মিত্র সৈন্যকেও জীবিত অবস্থায় স্বদেশে ফিরে যেতে দেয়া হবে না। কিরকিসিয়ার মাটিতে তাদের কবর রচিত হবে। অক্ষ জোটের প্রধান জেনারেল মি: ফসিয়ার টুইটারে বলেছেন যে, ফোরাতের পবিত্র ভূমিতে বর্গিদের পদচারণা মেনে নেয়া যায় না। এদেরকে নিশ্চিহ্ন করা হবে। সশস্ত্র যুদ্ধের পাশাপাশি সমান তালে চলা কূটনৈতিক লড়াইয়ে যুক্ত রয়েছে ইন্টারনেট বট ওয়েব সাইটসহ বিভিন্ন ভুয়া সংবাদ সংস্থা। তারা নিজ জোটের পক্ষে তথ্য হ্যাক, তথ্যফাঁস, অপতথ্য, সত্য-মিথ্যার মিশেল, মিথ্যা খবর (ফেক নিউজ) ছড়িয়ে যাচ্ছে। সবচে আতঙ্কবাদী সাইবার হামলায় মুখ থুবড়ে পড়ছে যুদ্ধে জড়িত দেশগুলোর নেটওয়ার্কসমূহ।

এইমাত্র ওয়েব সাইট ও বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে যে, মিত্রজোটের এক হাজার রোবট সেনা রণাঙ্গনে অনুপ্রবেশ করেছে। চলছে তুমুল গুলির লড়াই। অক্ষজোট ড্রোন হামলা অব্যাহত রেখেছে। প্লাটুন কমান্ডার মেজর ডেকান এর মেসেজ পেয়ে তড়িৎগতিতে ক্যাম্পে ফিরে এলাম। আমাকে ও লিনাকে জেনারেলের নির্দেশ বুঝিয়ে দেয়া হলো। এখনি ছুটতে হবে হ্যাঙ্গারে। যেয়ে দেখি টারমাকে যুদ্ধবিমানটি আগে থেকেই লোডেড করা। আমাদের মিশনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ভয়ঙ্কর ই-বোমা মারতে হবে কিরকিসিয়ায়। মারণাস্ত্র হিসেবে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রচণ্ড শক্তিধর এই ই-বোমা শুধু রোবট সেনা ও ইলেকট্র্রনিক/রোবটিক সরঞ্জামাদিকে বিকল করতে সক্ষম। যার জন্য এই বোমা বর্ষণে রোবট পাইলটরা রাজি হয়নি। পাইলট সিটে আমি এবং কো-পাইলট হিসেবে লিনা। বোমারু বিমান নিয়ে টারমাক থেকে ধীরে ধীরে ট্যাক্সিওয়ে পার হয়ে রানওয়ের দিকে এগোচ্ছি। র‌্যাডার থেকে আকাশে ওড়ার সবুজ সঙ্কেত পাওয়া গেল। চলমান যুদ্ধের হটটক কিরকিসিয়ার যুদ্ধে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোওয়েব সমরাস্ত্রের মতো অতি গোপনীয় অস্ত্র আমি বহন করছি।
এই ইলেকট্রনিক বোমার বিধ্বংসী ক্ষমতা এখনো আমাদের ধারণার বাইরে। উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোওয়েব হলো হাই-ভোল্টেজ আলোক বিচ্ছুরিত বোমা। যা মিসাইলে গাঁটবন্দী থাকে। কিরকিসিয়ার যুদ্ধে নতুন এই বোমাটি মিত্রজোটের মূল মারণাস্ত্র। কম্পিউটারসহ যাবতীয় ইলেকট্রনিক সরঞ্জমাদিকে অগ্নিদগ্ধ করে ফেলতে ই-বোমার রয়েছে প্রচণ্ড ক্ষমতা। এর বিধ্বংসী শক্তি থেকে রক্ষা পাবে না বাংকার বা গর্তে লুকানো ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম। বাংকারের ভেন্টিলেটর বা প্লাম্বিং লইনের ফাঁকফোকর দিয়েও এটি দ্বারা ধ্বংসযজ্ঞ চালানো যায়। কিন্তু ই-বোমা দ্বারা কোন ফাঁকা জায়গায় আঘাত হানা হবে না। যার ফলে বেসামারিক লোকজন রক্ষা পাবে এর ভয়াবহতার কবল থেকে। শুধু নেটওয়ার্ক বিভক্ত ও বিচ্ছিন্ন করতে মোক্ষম স্থানগুলোতে আঘাতের মাধ্যমে শত্রু বাহিনীর ওপর বিপর্যয় ঘটাতেই এটি ব্যবহার করা হবে। হাই-পাওয়ার মাইক্রোওয়েব ব্যবহারের বিষয়টি অত্যন্ত গোপন পরিকল্পনা হিসেবে পেন্টাগন এটিকে গোপনেই রাখতে চাচ্ছে। মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা কিরকিসিয়ার ওপর নতুন মারণাস্ত্র প্রয়োগের ব্যাপারে ইঙ্গিত প্রদান করেছেন। মিত্রবিমান বাহিনীর কর্নেল মি. ফক্স ই-বোমা সম্পর্কে ছিটেফোঁটা ধারণা সংবলিত একটি তথ্য প্রকাশ করেন। যেটিকে ইতোমধ্যেই সামরিক বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখন স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে যে, মাইক্রোওয়েব মারণাস্ত্রটিই কিরকিসিয়ার যুদ্ধে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে। কেননা এটি মানব বিধ্বংসী অপেক্ষা যন্ত্র বিধ্বংসী হিসেবে বেশি কার্যকর। ই-বোমার অনিয়ন্ত্রিত ঝালকানিতে দুই বিলিয়ন ওয়াট এর চেয়ে অধিক শক্তিসম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। এই বিদ্যুৎ প্রবাহ অব্যাহত থাকবে ২৪ ঘণ্টাব্যাপী। মিসাইলের রেঞ্জের মধ্যে বিচ্ছুরিত ই-বোমা আলোর সমান গতিতে লক্ষ্যবস্তুর ওপর আঘাত হানতে থাকবে। বিরূপ আবহাওয়াতেও ই-বোমা তার উপর্যুপরি ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে সক্ষম। ই-বোমা বিচ্ছুরিত আলোর ঝলকে তিন হাজার মিটারের মধ্যে যাবতীয় বৈদুতিক সংযোগ বিকল হয়ে যায়। এমনকি এর প্রচণ্ড গতির আকস্মিক আঘাত থেকে রক্ষা পাবে না কম্পিউটারের মাদারবোর্ড, ইন্টারনেট, ই-মেইল, টিভি বেতার এবং রেফ্রিজারেটরসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিকস যন্ত্রাদি। ব্যবহারকারীগণও চমকে উঠবেন এর ভৌতিক আক্রমণযজ্ঞে। যুদ্ধ বিশারদগণ এটিকে সফট বোমা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন কিন্তু এর ধ্বংসযজ্ঞ থেকে রক্ষা পাবে না হাসপাতাল ও আশপাশের এয়ারক্রাফ্টের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি।

ঘণ্টায় দুই হাজার মাইল গতিতে কিরকিসিয়াকে টার্গেট করে ছুটছে আমাদের বোমারু বিমান। প্যারাসুট কাঁধে সিটবেল্ট বেঁধে পাইলট সিটে আমি। পাশে আমার কো-পাইলট লিনা। আমাদের চোখের সামনে একটি নকশা। লাল দাগ চিহ্নিত স্থানে ই-বোমা ফেলতে হবে। আকাশ সীমায় সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরুতেই শত্রুঘাঁটির র‌্যাডার থেকে ভেসে আসতে থাকলো সতর্ক সঙ্কেত। সতর্ক হোন, সতর্ক হোন, সতর্ক হোন। এরই মধ্যে আকাশ থেকে আকাশে ছোড়া মিসাইলের আঘাত এসে লাগে। আমাদের বিমানে আগুন ধরার আগেই বেল-আউট করলাম। আকাশে ভাসতে ভাসতে ধূসর মরুভূমিতে প্যারাসুটে অবতরণ করলাম। সাথে সাথে প্যারাসুটের কাপড় দিয়ে নিজেকে ঢেকে নিলাম। আমি জানতাম যে কোনোমতে প্যারসুটটি গায়ে জড়াতে পারলে আমাকে কোনো শক্রসেনা দেখতে পাবে না। দৃশ্যমান নয় এমন কাপড়ে প্যারাসুটটি তৈরি। আমি অদৃশ্য হয়ে গেলাম। কিন্তু মৃত্যুভয় পিছু ছাড়েনি। যে কোন সময় শক্রদের হাতে ধরা পড়ে যেতে পারি। দুর্গম মরুপ্রান্তরে কোথাও খাবার পানির লেশমাত্র চোখে পড়েনি। খুবই তৃষ্ণার্ত। লিনাকেও আকাশে ভাসতে দেখলাম। যে দিকে তাকাই ধূ ধূ মরুভূমি। আমার কাছে রক্ষিত স্যাটেলাইট সেলফোনের মাধ্যমে মনিটর সেলের সাথে যোগযোগ করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কাজ হলো না। ল্যান্ডিংয়ের স্থান থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরে পড়ার চেষ্টা করি। হাঁটতে থাকলাম বেঁচে থাকার লড়াইয়ে। মানুষ ০৩ সপ্তাহ খাবার ছাড়া থাকতে পারে। কিন্তু পানি ছাড়া ৩ দিনের বেশি বাঁচা যায় না । আর মরুভূমিতে ২ দিনও বেঁচে থাকা সম্ভব না। দূরে পাহাড় দেখা যাচ্ছে। পাহাড়ের গুহায় পানি পাওয়া যেতে পারে। সূর্য ডোবার আগেই পৌঁছতে পারলাম। পাহাড় উপত্যকায় একটু নিচু জায়গায় সবুজ ঘাস চোখে পড়ল। দুজনে মিলে খুঁড়তে থাকলাম। মাটি খুঁড়ে ভেজা বালু আবিষ্কার করলাম। পায়ের মোজা খুলে লিনা এর ভেতরে বালু ভরে জোরে চাপ দিতে থাকলো। বালু থেকে ফোঁটা ফোঁটা পানি পড়ছিল। আমি মুখ হাঁ করে কয়েক ফোঁটা পানি পান করে মনে হলো দেহে প্রাণ ফিরে এলো। লিনা বলল, তাড়াতাড়ি পালাতে হবে। আমি বললাম, চলো এখানকার কোন গুহায় মাথা গুঁজে রাতটা পার করি।
আমরা নিখোঁজ পাইলট। আমাদের ওয়েবসাইটে হয়তো ইতোমধ্যেই খবরটি ভাইরাল হয়েছে। আমাদেরকে বন্দি করতে শত্রুপক্ষের টিকটিকিরা হন্যে হয়ে খুঁজছে। যে কোন সময় ধরা পড়ে যেতে পারি। অন্ধকার ঘনিয়ে আসার আগেই লিনা একটি গুহার খোঁজ পেল। সাপ বিচ্ছুর হাত থেকে রক্ষার জন্য প্যারাসুট মাটিতে বিছিয়ে নিলাম। ধীরে ধীরে ঘুটঘুটে আঁধার নেমে এলো। আমরা দু’জন নিখোঁজ পাইলট উদ্ধারের প্রতীক্ষায় আকাশের দিকে চেয়ে জড়াজড়ি করে বসে রইলাম। কোন হেলিকপ্টারের শব্দ কানে এলেই ছানাবড়া চোখে আশার প্রদীপ খুঁজে ফিরি। নিঝুম পাহাড়ে ঘন অন্ধকারে হঠাৎ জোনাকির আলো ভেসে আসে। আলো দেখে লিনা নড়েচড়ে বসল, জোনাকি ধরে গুহায় আনবে কি না জানতে চাইল। আমি বললাম, এই জোনাকিরা শত্রু পক্ষের গোয়েন্দাও হতে পারে। আমাদের অবস্থান জেনে তথ্য শত্রুঘাঁটিতে পাচারের জন্য এরা এখানে নিয়োজত থাকতে পারে। ভয়ে লিনা আমার গা জড়িয়ে ধরলো। শীতে হিম হয়ে যাওয়া শরীরে কিছুটা উত্তাপ অনুভব হলো। রাতের মরুগুহায় এত ঠাণ্ডা তা আগে জানা ছিল না। শীতে ঠক ঠক করে লিনা বলল, রোবটেরা রোবটকে নির্মূল করতে রাজি হলো না। অথচ সৃষ্টির সেরাজীব মানুষ হয়েও আমরা মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে ফেলি। আমাদের মধ্যে যে মানবতা জেগে ওঠে না তা রোবটের মধ্যে স্বজাতীয়তাবোধ কিভাবে জেগে উঠল।
তবুও থেমে নেই যুদ্ধ। হয়তো বিশ্ববাসী যুদ্ধের বিপক্ষে প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠবে। পাহাড়ের কাছেই একটি হেলিকপ্টার অবতরণ করল। হ্যান্ডস্ আপ-হ্যান্ডস্ আপ কমান্ড করে শত্রু সেনারা আমাদের দিকে এগিয়ে এলো। আমাদেরকে হেলিকপ্টারে উঠিয়ে নেয়া হলো।
##

Share.

মন্তব্য করুন