মাগরিবের নামাজ শেষ করেই বাড়িতে এলো শামীম। খুব তাড়াহুড়ার সাথে ঘরে যাচ্ছে শামীম। মন বেশি ভালো নেই তার। দশম শ্রেণিতে পড়ছে সে। ক্লাসে ফার্স্ট বয়। আজ ফিজিকস সাবজেক্টে পরীক্ষা হলো। এটাই শেষ পরীক্ষা ছিল। শামীম একা। কোনো ভাইবোন নেই। সবচেয়ে আপন যে মা তিনি-ই আজ তার কাছে নেই। মা দুই বছর আগে গত হয়েছেন। এখন একমাত্র বাবাই তার ভরসা। মাঝে মাঝে মায়ের কথা মনে করে কেঁদে ওঠে শামীম। যখন কাঁদে তখন তার মনে হয় তার সাথে গল্প সাথে আশপাশের সবকিছু তার সাথে কাঁদে। তার দুঃখে ব্যথিত হয়। শামীম একা একাই বেশির ভাগ সময় থাকে। তখন তার মায়ের স্মৃতিগুলো খুব কাঁদায়। তার মায়ের সবচেয়ে বড় স্মৃতি হলো তার মায়ের দেয়া একটি রুমাল। শামীমের জন্মদিনে তার মা উপহার দিয়েছিলেন। যখন মায়ের কথা খুব মনে পড়ে তখন শামীম রুমালটি বের করে বুকের সাথে জড়িয়ে থাকে। রুমালটি সে অনেক যত্ন করে রাখে।
বাবাও তাকে খুব ভালোবাসেন। তার সব সমস্যা দূর করার চেষ্টা করেন। তবে কখনো পুরো দিন তার সাথে কাটাতে পারে না। কারণ তারা গরিব। টাকা পয়সা কম। ছেলেকে বড় মানুষ করার জন্য দিনরাত খাটতে হয় তার বাবাকে। মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা অভাব। অভাবের ফলে প্রতিনিয়ত কত ফুল ঝরে পড়ে। সময়ের পরিবর্তনে মানুষ চলে যায় ধ্বংসের পথে। এসব কথা ভাবতে ভাবতে বিছানায় শুয়ে পড়ে শামীম। সে ভাবে অর্থ ছাড়া এ জীবন কিছুই না। তাই তাদের অভাব থাকলেও সে অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে। টাকাই যে সব তা সে চোখের সামনেই প্রমাণ পেয়ে যায়।
তার ক্লাসের ছাত্র রাকিব। বাবার অনেক টাকা। তা সত্ত্বেও সে মেধাহীন ছেলে। শুধু টাকার বড়াই। হাতে পায়ে মানুষ শুধু। কিন্তু চরিত্র পশুর চেয়েও অধম। মনুষ্যত্ব বলতে কিছুই নেই। তারা টাকার অপব্যবহার করে হরহামেশাই। অথচ তার মতো আরো অনেক ছাত্র আছে যারা টাকার অভাবে পড়তে পারে না। ভালো জামা কাপড় পরতে পারে না। ভালো খেতে পায় না। টাকার অভাবে ভালো ছাত্ররা বড় হওয়ার স্বপ্নকেও ভুলে যায়। ফলে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এইতো সেদিন তার চোখের সামনেই ধ্বংস হয়ে গেল তার ক্লাসমেট সজীব।
ক্লাসের সেকেন্ড বয়। প্রাইভেটের টাকা দেয়ার কোনো সামর্থ্য ছিল না। সায়েন্সের ছাত্র। তাই প্রাইভেট পড়তেই হতো। বাবা নেই, মা অন্যের বাড়ি কাজ করে খায়। কয়েক মাস কোনো রকমে টাকা জোগাড় করে দিত। কিন্তু কয়েক মাস আর দিতে পারলো না। তাই স্যার খুব বকাঝকা করতেন। ক্লাসের সবার মধ্যে অপমান করতেন। কয়েকদিন হলো মায়ের শরীরটাও খুব ভালো নেই। এই অবস্থায় কিভাবে মাকে বলবে এতগুলা টাকার কথা।
তাই সজীব চুরি করতে বাধ্য হয়। চুরি করে প্রাইভেটের টাকাও শোধ করলো আবার মায়ের জন্য ওষুধপত্র কিনলো। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস। চুরি করতে গিয়ে একদিন ধরা পড়ে সজীব। পাড়ার সবাই মিলে কী মারটাই মারল সজীবকে। এই অপমান সহ্য করতে না পেরে শেষে আত্মহত্যা করলো সজীব। শামীম এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ে।
ভোরে বাবার ডাকে ঘুম ভাঙে। অজু করে বাবার সাথে মসজিদে যায় শামীম। নামাজ শেষ করে বাবাকে বলে মসজিদ থেকে বের হয়ে নদীর ধারে হাঁটতে যায় শামীম। নদী বাড়ি থেকে খুব বেশি দূরে না। সকালে নদীর শান্ত হাওয়া তার খুব ভালো লাগে। তাই সে মাঝে মাঝেই নদীর ধারে আসে। নদীর পাড়ে বসে পানিতে পা দুটো ভিজিয়ে দেয়। নদীর পানি দেখতে দেখতে সে আবার ভাবনায় ডুবে যায়। ভাবনার মায়াজাল তাকে আচ্ছন্ন করে রাখে। ঘোরের মাঝেই তার মায়ের কথা মনে পড়ে। ছোটবেলায় মা তাকে বলেছিলেন,
– বাবা কখনো হতাশ হবে না। এগিয়ে যাবে তোমার স্বপ্নের দিকে। মনে রাখবে মেধায় বড় হওয়া যায় না, মেধার সাথে চাই পরিশ্রম। পরিশ্রম একজন মানুষকে সফলতা অর্জনে সহায়তা করে।
মা আরো বলেছিলেন,
– অর্থের অভাবে কোনদিন পড়ালেখা ছেড়ে দিবে না। প্রথম জীবনে কষ্ট করলে কর্মজীবনে তুমিই আশীর্বাদ হয়ে থাকবে। মায়ের কথাগুলো মনে পড়তেই মনটা ভালো হয়ে গেল। সকালের সূয্যিমামা মুচকি হেসে নদীর মাঝখানে উঁকি দিতে লাগল। শামীমও মুচকি হাসল। আর প্রতিজ্ঞা করল যতই বাধা আসুক সে তার জীবনের সফলতার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য প্রাণপণ লড়াই করে যাবে আর বড় হয়ে তার মতো এতিম অবহেলিত মেধাবী ছাত্রদের সাহায্য করবে। নদীর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে শামীম বাড়ির পথে পা বাড়ায়।
স্বপ্নজয়ী প্রতিজ্ঞা আতিক হাসান বাইজিদ মাগরিবের নামাজ শেষ করেই বাড়িতে এলো শামীম। খুব তাড়াহুড়ার সাথে ঘরে যাচ্ছে শামীম। মন বেশি ভালো নেই তার। দশম শ্রেণিতে পড়ছে সে। ক্লাসে ফার্স্ট বয়। আজ ফিজিকস সাবজেক্টে পরীক্ষা হলো। এটাই শেষ পরীক্ষা ছিল। শামীম একা। কোনো ভাইবোন নেই। সবচেয়ে আপন যে মা তিনি-ই আজ তার কাছে নেই।
মা দুই বছর আগে গত হয়েছেন। এখন একমাত্র বাবাই তার ভরসা। মাঝে মাঝে মায়ের কথা মনে করে কেঁদে ওঠে শামীম। যখন কাঁদে তখন তার মনে হয় তার সাথে সাথে আশপাশের সবকিছু তার সাথে কাঁদে। তার দুঃখে ব্যথিত হয়। শামীম একা একাই বেশির ভাগ সময় থাকে। তখন তার মায়ের স্মৃতিগুলো খুব কাঁদায়। তার মায়ের সবচেয়ে বড় স্মৃতি হলো তার মায়ের দেয়া একটি রুমাল। শামীমের জন্মদিনে তার মা উপহার দিয়েছিলেন। যখন মায়ের কথা খুব মনে পড়ে তখন শামীম রুমালটি বের করে বুকের সাথে জড়িয়ে থাকে। রুমালটি সে অনেক যত্ন করে রাখে।
বাবাও তাকে খুব ভালোবাসেন। তার সব সমস্যা দূর করার চেষ্টা করেন। তবে কখনো পুরো দিন তার সাথে কাটাতে পারে না। কারণ তারা গরিব। টাকা পয়সা কম। ছেলেকে বড় মানুষ করার জন্য দিনরাত খাটতে হয় তার বাবাকে। মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা অভাব। অভাবের ফলে প্রতিনিয়ত কত ফুল ঝরে পড়ে। সময়ের পরিবর্তনে মানুষ চলে যায় ধ্বংসের পথে। এসব কথা ভাবতে ভাবতে বিছানায় শুয়ে পড়ে শামীম। সে ভাবে অর্থ ছাড়া এ জীবন কিছুই না। তাই তাদের অভাব থাকলেও সে অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে। টাকাই যে সব তা সে চোখের সামনেই প্রমাণ পেয়ে যায়।
তার ক্লাসের ছাত্র রাকিব। বাবার অনেক টাকা। তা সত্ত্বেও সে মেধাহীন ছেলে। শুধু টাকার বড়াই। হাতে পায়ে মানুষ শুধু। কিন্তু চরিত্র পশুর চেয়েও অধম। মনুষ্যত্ব বলতে কিছুই নেই। তারা টাকার অপব্যবহার করে হরহামেশাই। অথচ তার মতো আরো অনেক ছাত্র আছে যারা টাকার অভাবে পড়তে পারে না। ভালো জামা কাপড় পরতে পারে না। ভালো খেতে পায় না। টাকার অভাবে ভালো ছাত্ররা বড় হওয়ার স্বপ্নকেও ভুলে যায়। ফলে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এইতো সেদিন তার চোখের সামনেই ধ্বংস হয়ে গেল তার ক্লাসমেট সজীব। ক্লাসের সেকেন্ড বয়। প্রাইভেটের টাকা দেয়ার কোনো সামর্থ্য ছিল না। সায়েন্সের ছাত্র। তাই প্রাইভেট পড়তেই হতো। বাবা নেই, মা অন্যের বাড়ি কাজ করে খায়। কয়েক মাস কোনো রকমে টাকা জোগাড় করে দিত। কিন্তু কয়েক মাস আর দিতে পারলো না। তাই স্যার খুব বকাঝকা করতেন। ক্লাসের সবার মধ্যে অপমান করতেন। কয়েকদিন হলো মায়ের শরীরটাও খুব ভালো নেই। এই অবস্থায় কিভাবে মাকে বলবে এতগুলা টাকার কথা।
তাই সজীব চুরি করতে বাধ্য হয়। চুরি করে প্রাইভেটের টাকাও শোধ করলো আবার মায়ের জন্য ওষুধপত্র কিনলো। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস। চুরি করতে গিয়ে একদিন ধরা পড়ে সজীব। পাড়ার সবাই মিলে কী মারটাই মারল সজীবকে। এই অপমান সহ্য করতে না পেরে শেষে আত্মহত্যা করলো সজীব। শামীম এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ে।
ভোরে বাবার ডাকে ঘুম ভাঙে। অজু করে বাবার সাথে মসজিদে যায় শামীম। নামাজ শেষ করে বাবাকে বলে মসজিদ থেকে বের হয়ে নদীর ধারে হাঁটতে যায় শামীম। নদী বাড়ি থেকে খুব বেশি দূরে না। সকালে নদীর শান্ত হাওয়া তার খুব ভালো লাগে। তাই সে মাঝে মাঝেই নদীর ধারে আসে। নদীর পাড়ে বসে পানিতে পা দুটো ভিজিয়ে দেয়। নদীর পানি দেখতে দেখতে সে আবার ভাবনায় ডুবে যায়। ভাবনার মায়াজাল তাকে আচ্ছন্ন করে রাখে। ঘোরের মাঝেই তার মায়ের কথা মনে পড়ে। ছোটবেলায় মা তাকে বলেছিলেন,
– বাবা কখনো হতাশ হবে না। এগিয়ে যাবে তোমার স্বপ্নের দিকে। মনে রাখবে মেধায় বড় হওয়া যায় না, মেধার সাথে চাই পরিশ্রম। পরিশ্রম একজন মানুষকে সফলতা অর্জনে সহায়তা করে।
মা আরো বলেছিলেন,
– অর্থের অভাবে কোনদিন পড়ালেখা ছেড়ে দিবে না। প্রথম জীবনে কষ্ট করলে কর্মজীবনে তুমিই আশীর্বাদ হয়ে থাকবে। মায়ের কথাগুলো মনে পড়তেই মনটা ভালো হয়ে গেল। সকালের সূয্যিমামা মুচকি হেসে নদীর মাঝখানে উঁকি দিতে লাগল। শামীমও মুচকি হাসল। আর প্রতিজ্ঞা করল যতই বাধা আসুক সে তার জীবনের সফলতার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য প্রাণপণ লড়াই করে যাবে আর বড় হয়ে তার মতো এতিম অবহেলিত মেধাবী ছাত্রদের সাহায্য করবে। নদীর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে শামীম বাড়ির পথে পা বাড়ায়।

Share.

মন্তব্য করুন