উপরের দিকে তাকিয়ে বিস্ময়ে হতবাক ফরহাদ। প্রায় ১৬২ ফিট উঁচু পাথুরে পাহাড় থেকে শাঁ-শাঁ শব্দে ঝড়ে পড়ছে স্বচ্ছ পানির ঝর্ণাধারা। এতো সুন্দর সবুজ পাহাড়ের বুক চিড়ে নেমে আসা ঝর্ণার পাশে দাঁড়িয়ে ভাবছে ফরহাদ। না জানি কবে থেকে এই ঝর্ণার শুরু! আর কত দিন জানি এভাবে ঝরতে থাকবে অনবরত।
কি বিস্ময়কর সৃষ্টি! কত সুন্দর! আশে পাশে ছড়িয়ে পরছে! কুয়াশার মত স্বচ্ছ জলকণা। বিমোহিত ফারহান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ঝর্ণার উঁচু প্রান্তের দিকে।
শীতের ছুটিতে বন্ধুদের সাথে শিক্ষা সফরে এসে মাধবছড়ার এই ঝর্ণার পাশে দাঁড়িয়ে মহান আল্লাহর বিস্ময়কর অপরূপ সৃষ্টি দেখে অজান্তেই সিজদায় মাথা নত হয়ে আসে ফরহাদের। বন্ধু হাসানের কণ্ঠে সুবহানাল্লাহ শব্দটি শুনে ফরহাদ যেন সম্ভিৎ ফিরে পেল।
হাসানের দিকে তাকিয়ে ফরহাদ বিস্ময়ের সাথে বললো, ‘এতো সুন্দর সৃষ্টি না আসলে কি বুঝতে পারতাম?’
মাথা নেড়ে সহমত প্রকাশ করে বললো হাসান- ‘এই পৃথিবীতে অগণিত বিস্ময়কর সৃষ্টি রয়েছে, যা দেখে মহান আল্লাহর অস্তিত্ব, তার কুদরত ও একাত্ববাদের ধারনা মজবুত করা যায়।’ এই পাহাড় থেকে যেমন সচ্ছ মিঠা পানির ঝর্ণা নেমে আসছে। তৈরী হয়েছে নদীর, যে নদীর চারপাশে গড়ে উঠেছে মানব বসতি, ফসলের সবুজ মাঠ, দৃষ্টি নন্দন ও হৃদয় প্রশান্তকারী দৃশ্যের।
তেমনি বিশ্বে অনেক পাহাড় আছে যেখান থেকে নেমে আসছে তরলাকারে আগুনের লাভা। জ্বালিয়ে দিচ্ছে আশে পাশের সবকিছু। সীমাহীন ধ্বংসের এক বিরানভূমি তৈরী করছে।” ফরহাদ মনোযোগ দিয়ে শুনছে হাসানের সুন্দর কথাগুলো। একটু থেমে হাসান আবার বলতে শুরু করলো “ এই নিদর্শন সমূহ দেখে মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস আরো মজবুত হয়। সে জন্যই পবিত্র কুরআনের সূরা আনকাবুতের ২০ নং আয়াতে বলা হয়েছে “ হে রাসুল (সাঃ) আপনি বলুন- তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ কিভাবে তিনি সৃষ্টির সূচনা করেন। অতপর তিনি পুনর্বার সুষ্টি করবেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।”
পহাড়, পর্বত, সাগর, নদী, ঝর্ণা, ঝলপ্রপাত, রং বেরঙের মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী কিভাবে সৃষ্টি করেছেন! কিভাবে কালের পরিক্রমায় ধ্বংশ করেছন আর ধ্বংস স্তুপের উপর নতুন করে আবার তৈরী করছেন অনুপম অন্য কোনো সৃষ্টি। যা একাত্ববাদি মহান আল্লাহর নিদর্শন। এই সকল নিদর্শন থেকে মানুষকে শিক্ষা গ্রহনের জন্য আল্লাহ তায়ালা উৎসাহিত করেছেন।
যারা এই সব দেখেও আল্লাহর কুদরতকে অস্বিকার করে তাদের ধ্বংস অনিবার্য। অনুরূপ কথা আল্লাহ তায়ালা সুরা আলে ইমরানের ১৩৭ নং আয়াতে বলেছেন “অতীতে তোমাদের বহু ঘটনা পেছনে অতিবাহিত হয়েছে, সুতরাং পৃথিবীতে ভ্রমন কর এবং দেখ মিথ্যাবাদিদের পরিণাম কি হয়েছিল!” ফরহাদ লক্ষ করলো অনেইে তার মতো হাসানের কথা শুনছে। এক ধরনের জটলা তৈরী হয়েছে সবাই খুব মনোযোগের সাথে হাসানের কথা গুলো শুনছে। হাসান সবার দিকে তাকিয়ে আবার বলতে শুরু করলো- “ভ্রমণে চাক্ষুস ও বাস্তব জ্ঞান অর্জণ হয় এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালা কে উপলব্ধি করা সম্ভব। আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টিকে নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ হয়। সৃষ্টিকর্তার প্রতি অবিচল বিশ্বাস তৈরী হয়। একটু ভাবুন তো যিনি এতো সুন্দর প্রকৃতির সৃষ্টিকর্তা তিনি কত সুন্দর!! আর এই সব কিছু সৃষ্টি করেছেন মানুষের কল্যানের জন্য আর মানুষ সৃষ্টি করেছেন আল্লাহর দাসত্ব করার জন্য।”
হাসানের কথা শুনে ফরহাদ সহ সকল উপস্থিতি আবেগে আপ্লুত হয়ে গেল। আল্লাহ তায়ার সৃষ্টি জগতের বৈচিত্র রূপ ও মহান আল্লাহ তায়ালা ওয়াহদানিয়্যাতের বহিঃপ্রকাশ দেখতে দেখতে কানে ভেসে আসলো যোহরের সালাতের আজান। হাসানের প্রস্তাবে রাজি হয়ে সকলেই মসজিদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো। মহান আল্লাহর দরবারে দাসত্বের সিজদা আদায়ের জন্য।

Share.

মন্তব্য করুন