(গত সংখ্যার পর)
‘তোমরা তাহলে এই গ্রাম ও এর মানুষদের নিয়ে রচনা লিখতে চাও?’ ফরহাদ হাবিব জিজ্ঞেস করলো দুই গোয়েন্দাকে। সিদ্ধান্ত মতো, বিকেলে ফরহাদ হাবিবের বাসায় এসেছে দুই গোয়েন্দা। বাড়ির সামনে সুন্দর লন। হরেক রকম ফুলের গাছ শোভা পাচ্ছে লনে। ওখানেই তিনটা চেয়ার নিয়ে বসেছে ওরা। মাঝখানে একটা টেবিল। ইতোমধ্যে চা আর বিস্কুট দিয়ে গেছে কাজের ছেলেটা।
‘জি হ্যাঁ, আঙ্কেল।’ বললো শাহীন।
‘কিন্তু কেন বলো তো?’
‘আসলে, এতে আমাদের কোনো কিছু লেখার দক্ষতা বাড়বে।’ চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললো শাহীন। বললো, ‘ভালো জ্ঞান অর্জন হবে, সেই সাথে আমাদের কল্পনাশক্তিও বৃদ্ধি পাবে।’ কথাটা মিথ্যে বলেনি শাহীন। এমনিতেই সে এই গ্রাম ও গ্রামের মানুষদের নিয়ে রচনা লিখবে বলে ঠিক করে রেখেছিলো।
‘ভেরি গুড! ভেরি গুড!’ ফরহাদ হাবিব মুখে হাসি টেনে বললো, ‘তোমরা খুব ভালো ছেলে। শেখার এই আগ্রহটা ধরে রেখো। এখন বলো আমার সম্পর্কে কি জানতে চাও।’
‘বেশি কিছু না।’ শাহীন বললো, ‘এই যেমন আপনি কি করেন। কোথায় যাওয়া প্রয়োজন পড়ে, এইসব আরকি।’
‘আমার একটা বিস্কুট ফ্যাক্টরি আছে, ওটা দেখাশোনা করি। মাঝে মাঝে জেলার বাইরেও যেতে হয়। বিজনেসের কাজে।’
‘শেষ দুইদিন কেমন ব্যস্ত ছিলেন?’
‘ভালোই ব্যস্ততার মধ্যে কেটেছে। ঢাকা থেকে আজ সকালে বাড়ি এলাম। তাহলে বুঝতেই পারছো কেমন ব্যস্ত ছিলাম।’
‘আরেকটা প্রশ্ন ছিলো।’ শাহীন বললো, ‘গতকাল গ্রাম থেকে একটা ছেলে নিখোঁজ হয়েছে। নাম অয়ন, কিডন্যাপিং কেস। এ ব্যাপারে কিছু বলবেন?’ শাহীন খেয়াল করলো তার মধ্যে কেমন প্রতিক্রিয়া হয়।
‘কি বলছো এসব, এটা কিভাবে হলো।’ চোখ কপালে তুলে বললেন, ফরহাদ হাবিব। ‘পুলিশ কিছু করতে পারেনি?’
‘না, তারা…।’ শেষ করতে পারলো না সিয়াম। হঠাৎ করে তার ঘাড়ের উপর আছড়ে পড়লো কেজি দশেক ওজনের কোনো বস্তু। আচমকা এমন আচরণে ভড়কে গেলো সে। মরিয়া হয়ে, ঘাড় থেকে ওটাকে নামানোর জন্য চেষ্টা করতে লাগলো। শাহীন ও ফরহাদ আঙ্কেল কিছু বললো তাকে, কিন্তু সে কথা কানে ঢুকলো না ওর। ঘাড়ে আঁচড়ের যন্ত্রণায় আউ করে উঠলো সে। জোরাজোরিতে চেয়ারসহ কাত হয়ে পড়ে গেলো সে। মাটিতে পড়ে দুইটা গড়ানি খেলো সিয়াম। হাত চলে গেলো ঘাড়ের উপর। না নেই, পালিয়েছে ওটা। ‘মিয়াও… মিয়াও…।
দূরে সরে গেলো পাজি বেড়ালটা। তার পিছু নিলো আরেকটা বিড়াল। ওকে ধরে তুললো শাহীন। ‘কী ব্যাপার, এতো অস্থির হচ্ছো কেন?’ ওকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বললো শাহীন। ‘একটা বিড়াল, অন্য আরেকটা বিড়ালের তাড়া খেয়ে তোমার উপর পড়েছিলো।’
‘হঠাৎ এমন ভূমিকম্প শুরু হলে ভয় পাবো না?’
গায়ের ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে বললো সিয়াম, ‘হতচ্ছাড়া বিড়াল কোথাকার!’
‘ডাক্তারের কাছ থেকে একবার ঘুরে এসো, ঘাড়ে আঁচড় লেগেছে বিড়ালের।’ ফরহাদ আঙ্কেল হাসতে হাসতে বললো সিয়ামকে, কিন্তু সিয়ামের সেদিকে কান নেই। সে তাকিয়ে আছে টেবিল থেকে একটু দূরের ঘাসের উপর। যেখানে একটু আগে সে পড়ে গেছিলো। দুইটা কার্ড পড়ে আছে সেখানে। একটু আগে গড়াগড়ির সময় তার পকেট থেকে পড়েছিলো ও দুটো। দ্রুত চেয়ার থেকে উঠে কার্ড দুটো পকেটে পুরলো সে। বিষয়টা নজর এড়ালো না ফরহাদ আঙ্কেলের- ‘কি হলো?’ ফরহাদ আঙ্কেল জিজ্ঞেস করলো, ‘পকেটে কী ঢোকালে?’
‘না, কিছু না।’ ধরা পড়া চোরের মতো করে বললো সিয়াম।
‘দেখাও ওটা আমাকে।’ আদেশের সুরে বললো ফরহাদ আঙ্কেল। শাহীনের দিকে তাকালো সিয়াম। শাহীন ইশারায় দিতে বললো।
‘আচ্ছা, দুই কিশোর গোয়েন্দা। বাহ! ভালো তো।’ কার্ডটা হাতে নিয়ে বললো ফরহাদ আঙ্কেল। ‘তোমরা তাহলে গোয়েন্দা?’
‘জি আঙ্কেল।’ বললো শাহীন।
‘আমার বাড়িতে এসেছো গোয়েন্দাগিরি করতে? তোমাদের সাহস তো কম না।’ আচমকা রেগে গেলো ফরহাদ হাবিব। ধমকে ছেলেদের বললো, ‘চলে যাও এখান থেকে।’
‘আঙ্কেল আমরা আসলে…।’
‘আর কোনো কথা নয়, ভালোয় ভালোয় যাও এখান থেকে।’
আর কোনো কথা বাড়ালো না ওরা। ওখান থেকে বেরিয়ে এলো দুই গোয়েন্দা।
‘আঙ্কেল আমাদের সাথে এমন ব্যবহার, না করলেও পারতো।’
সিয়াম বললো, ‘তাকে তো বিশ্বাস করেই ফেলেছিলাম। কিন্তু, শেষে তার ব্যবহার দেখে ভালো লাগলো না।’
‘আমারও ব্যাপারটা অদ্ভুত লেগেছে।’ শাহীন বললো, ‘তবে আর যাইহোক লোকটাকে বোকা মনে হলো, নয়তো কেউ এমন ব্যবহার করে? কিডন্যাপিং এর সাথে তার সম্পর্ক থাকতে পারে।’
‘থাকতে পারে কী? আমি তো নিশ্চিত আছি!’
‘এমনটা নাও হতে পারে, এটাও হতে পারে সে নির্দোষ, কিন্তু তাকে সন্দেহ করা হচ্ছে এজন্য রেগে গেছে।’ শাহীন বললো, ‘অনেক কিছুই হতে পারে, তার ব্যাপারে আরো খোঁজ খবর নিতে হবে। জানতে হবে সে কি আসলেই দুইদিন বাহিরে ছিলো কিনা।’

ছয়.
‘এবার তুমি বলো, কপিল দেওয়ানের উপর নজর রেখে তুমি নতুন কী জানলে?’ শাহীন বললো। সন্ধ্যার পর আবার হেডকোয়ার্টারে মিলিত হয়েছে তিন গোয়েন্দা। সারাদিনের কাজগুলো নিয়ে আলোচনা করছে এখন ওরা।
‘দুঃখিত, নতুন কিছু জানতে পারিনি।’ ইমন বললো, ‘সে কাঠ কেটেছে, বাজারে গেছে, বাড়িতে রান্না করেছে নিজের জন্য, এমনি সব সাধারণ কাজ করতে দেখেছি তাকে। কোনো অস্বাভাবিকতা দেখিনি, এমনকি কারো সাথে দেখা সাক্ষাৎ করতেও দেখিনি তাকে।’
‘ওহ,’ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো শাহীন, ‘তোমরা দু’জন তৈরি তো?’
‘কিসের জন্য?’ সমস্বরে বলে উঠলো সিয়াম ও ইমন।
‘আমরা এখন কপিল দাদুর বাড়িতে যাবো।’
‘এই রাতের বেলা?’ সিয়াম বললো, ‘লোকটাকে আমার সুবিধার মনে হয়নি, তার বাড়িটাও ভুতুড়ে জায়গায়। রাতে না গেলে হয় না?’
‘এখনি সঠিক সময়,’ শাহীন বললো, ‘আর কোনো কথা নয়, চলো সবাই।’ অনিচ্ছা সত্ত্বেও হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো সিয়াম।
ঘড়ির কাঁটা রাত দশটা ছুঁই ছুঁই করছে। নীরবতার মাঝে টিক টিক শব্দ করে ঘড়িটা রাতের কথা জানান দিচ্ছে। গ্রামের শেষ প্রান্তে পাহাড়। তারপরেই কপিল দেওয়ানের কটেজ। ইতোমধ্যে পাহাড় পেছনে ফেলে এসেছে গোয়েন্দারা। আকাশে আজ চাঁদ উঠেছে, জোৎস্নায় আলোকিত গ্রাম। তা সত্ত্বেও কপিল দেওয়ানের কটেজটা দূর থেকে দেখার উপায় নেই। গাছপালায় পরিপূর্ণ কটেজর আশপাশে। কটেজের কাছাকাছি চলে এসেছে তিন গোয়েন্দা। ভুতুড়ে এই পরিবেশে একাই থাকে কপিল দেওয়ান। তার ছেলে সন্তানরা বহু আগেই বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। মনে হয় মাটির মায়ায় তিনি এখনো রয়ে গেছেন।
অন্ধকার চিড়ে একটা কালো মানুষের অবয়ব স্পষ্ট হলো কটেজের সামনে। একটু পরে ওরা বুঝতে পারলো, ওটা কপিল দেওয়ান। এই অসময়ে কেন বের হলেন তিনি? প্রশ্নটা উঁকি দিলো ওদের মনে। আস্তে আস্তে হেঁটে রাস্তার দিকে চলে গেলো কপিল দেওয়ান।
‘ইমন, তুমি তাকে অনুসরণ করো, তুমি গ্রামটা ভালো চিনো।’
শাহীন বললো, ‘আমরা বাড়ির ভেতরে ঢুকবো, দেখি আমার সন্দেহ সত্য করার জন্য কোনো সূত্র লুকিয়ে আছে কিনা। আর হ্যাঁ, সে ফিরে আসতে লাগলে অবশ্যই ফোনে আমাদের সতর্ক করবে।’
বাড়ির সামনে পেছনে বিভিন্ন ফলের গাছ, বেশ নিরিবিলি পরিবেশ। ইমন চলে যাবার পর, কটেজের সীমানায় ঢুকে পড়লো দুই গোয়েন্দা। সময় হয়তো বেশি পাওয়া যাবে না, যেকোনো সময় কপিল দেওয়ান চলে আসতে পারে, তাই সময় নষ্ট করা চলবে না। এজন্য তার রুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো ওরা। দরজায় তালা দেয়া, সে ব্যবস্থা আগেই করে এনেছে শাহীন। মাস্টার কি দিয়ে তালায় মোচড় দিতেই খুলে গেলো তালা, ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলে ফেললো সিয়াম, রুমের বাল্ব জ্বালালো না ওরা, হাতের টর্চলাইট দিয়েই কাজ চালালো।
অগোছালো একটা রুম। না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না মানুষের রুম এত অগোছালো হয়। এতে অবশ্য অবাক হলো না দুই গোয়েন্দা। খুঁজতে শুরু করলো ওরা, খাটের তলা, ড্রয়ার, আলমারি কোন কিছুই বাদ দিলো না। বেরিয়ে এলো একগাদা কাগজ ও জিনিসপত্র, যেগুলোর কোনো দরকার নেই ওদের।
বেশ হতাশ হলো সিয়াম কিছু না পেয়ে। সবকিছু আবার ঠিকঠাক মতো রাখতে গিয়ে একটা কাগজে চোখ আটকে গেলো শাহীনের। একই রকম দুইটা ম্যাপ, কিসের ম্যাপ তা বুঝতে পারলো না, তবে একটা ম্যাপের কাগজ দেখে চিনতে ভুল হলো না। এটা অয়নের ডায়েরির পাতা। পুরো পৃষ্ঠাজুড়ে ম্যাপ আঁকা।
অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ডায়েরির বাকি আর একটা পাতা খুঁজে পাওয়া গেলো না। সিয়াম বললো, ‘এটা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। বাকি পাতাটা তো পেলাম না।’
‘এটাই বা কম কী? সূত্র তো একটা পেলাম।
সামনে এগোনোর জন্য।’ অন্য কাগজগুলো আবার ভালোভাবে চেক করতে লাগলো দুই গোয়েন্দা। কাগজগুলা নাড়াচাড়া করতে করতে কোন দিক দিয়ে সময় গড়িয়ে যাচ্ছিলো তা খেয়াল ছিলো না ওদের দু’জনের।
ওরা কাগজপত্র নিয়ে এতই মগ্ন ছিলো যে, বাহিরে কেউ এসেছে তা বুঝতেই পারলো না।
বুঝলো যখন জোরে ধাক্কা মেরে দরজা খুলে আগন্তুক ঘরে প্রবেশ করলো। হঠাৎ এমনভাবে কারো আগমনে চমকে উঠলো ওরা দুজন, সিয়ামের হাত থেকে খসে পড়ে গেলো টর্চলাইট, নীরব পরিবেশে লাইট মেঝেতে পড়ার শব্দ বিকট শোনালো। কিন্তু পরক্ষণেই ওরা দেখলো ইমন এসেছে, হাঁফাচ্ছে সে।
‘ধুর, ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে তো, এভাবে কেউ আসে?’ একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে সিয়াম বললো।
‘দুঃখিত ভাই আসলে…।’
ওকে কথা শেষ করতে না দিয়ে শাহীন জিজ্ঞেস করলো, ‘কী ব্যাপার চলে এলে কেন? কপিল দেওয়ান কোথায়? আর কী হয়েছে, এত হাঁফাচ্ছো কেন?’
‘তাকে জঙ্গলের দিকে যেতে দেখলাম, আমি তার পিছু পিছু অনেক দূর গেলাম, তারপর হঠাৎ করে তাকে আর দেখতে পেলাম না। আশপাশে খোঁজাখুঁজি করেও আর পেলাম না। মনে হলো জঙ্গলে হঠাৎ করে অদৃশ্য হয়ে গেলো সে। এজন্য ওখানে আর থাকারও সাহস হলো না আমার, তাই দৌড়ে চলে এসেছি।’
‘জঙ্গলে? আচ্ছা যাই হোক।’ ডায়েরির পাতাটা ইমনকে দেখিয়ে বললো শাহীন, এটার একটা ছবি তুলে নাও ফোনে। সামনে এগোনোর সূত্র একটা পেলাম মনে হয় ’
‘শেষ পর্যন্ত তোমার সন্দেহই সত্যি হলো, তুমি আসলেই জিনিয়াস।’ শাহীনের পিঠ চাপড়ে বললো ইমন। ওখানে আর কোনো কাজ না থাকায় ডায়েরির পাতা ও কাগজপত্রগুলো আগের মতো রেখে বেরিয়ে এলো গোয়েন্দারা।

সাত.
পরদিন সকল ১০টা। হেডকোয়ার্টারে আলোচনায় বসেছে তিন গোয়েন্দা। ফোনে তোলা ফটোর অনুরূপ একটা ম্যাপ কাগজে এঁকেছে ইমন। মনোযোগ দিয়ে সেটা দেখছে তিন জোড়া চোখ। ম্যাপটা কিসের তা বুঝতে তেমন বেগ পেতে হয়নি গোয়েন্দাদের। গোপন কোনো পথের নির্দেশ আছে ম্যাপে। ম্যাপের নির্দেশ অনুযায়ী এগোলে, নিঃসন্দেহে বিপজ্জনক অজানা অচেনা কোনো জায়গায় পৌঁছে যাবে ওরা। শাহীনের ধারণা, হয়তো এর মাধ্যমেই অয়নের নিখোঁজ রহস্যের সমাধান হবে। ম্যাপে দেখানো পাকা সড়কটা, এই গ্রামের জঙ্গলের পাশ দিয়ে যাওয়া রাস্তার অনুরূপ। সড়ক থেকে উত্তর দিকে একটা রেখা নির্দেশ করা হয়েছে। এটাও একটা ছোট পথ, যেটা সড়ক থেকে হাফ কিলোমিটার গিয়ে শেষ হয়েছে। এরপরেই সেখানে অ চিহ্নিত একটা গাছের চিত্র দেখানো হয়েছে। এই ম্যাপটা বনপাড়া গ্রামের জঙ্গল দিয়ে গোপন কোনো স্থানে যাওয়ার। যা ভেবেছিলো শাহীন সোহেল, তার চেয়েও ঝুঁকিপূর্ণ কেস এটা। ম্যাপের নির্দেশনা জঙ্গলে না গেলে এখান থেকে বোঝা যাবে না। তাই পুরোপুরি প্রস্তুত হয়েই অভিযানে যেতে চায় শাহীন সোহেল। সিয়াম ও ইমন এটা পুলিশকে জানাতে বলেছিলো, কিন্তু শাহীন উল্টো যুক্তি দেখিয়ে, সে বলেছে, এই ম্যাপ কিছুই প্রমাণ করে না। আমরা একটা সূত্র পেয়েছি মাত্র, আমাদের সন্দেহ সত্যি নাও হতে পারে। কোনো উপায় না দেখে গোয়েন্দা প্রধানের কথাতেই রাজি হয়েছে বাকি দু’জন।
সবুজের ছায়া ঢাকা জঙ্গল, নানা রকম পাখির কিচিরমিচির শব্দে মন ভালো করা পরিবেশ।
নাম না জানা অনেক পাখি জঙ্গলে, যেগুলো গণনা করতে একদিন পার হয়ে যাবে। জঙ্গলের আধা কিলোমিটার ভেতরে চলে এসেছে তিন গোয়েন্দা। হালকা ক্যাম্পিং এর প্রস্তুতিও নিয়ে এসেছে ওরা। সাথে নিয়েছে স্লিপিং ব্যাগ, আগুন জ্বালানোর জন্য দিয়াশলাই, পানির বোতল, দড়ি, কিছু শুকনো খাবার এবং টর্চলাইট। জঙ্গল থেকে ফিরতে দেরি হলে এগুলো দরকার হবে। সকালে আলোচনার পর প্রস্তুতি নিয়ে এখানে আসতে বেশি দেরি হয়নি। কৌশলে বাড়ি থেকে অনুমতিও নিয়েছে ওরা।
‘ইমন, কালকে সর্বশেষ কোন জায়গায় কপিল দেওয়ানকে দেখেছিলে?’ শাহীন জিজ্ঞেস করলো। নিজের অবস্থান থেকে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে ইমন জায়গায়টা দেখালো।
শাহীন বললো, ‘সবাই খুঁজে দেখো, এখানে কোনো গাছে অ চিহৃ দেয়া আছে কিনা।’ সবাই খুঁজতে লাগলো এবং ইমনের চোখে তা ধরা পড়লো। অ চিহ্নিত গাছের কাছে চলে এলো ওরা, প্রথম চিহ্নটা খুঁজে পেয়ে আরো উৎসাহী হয়ে উঠলো ওরা। আবার ম্যাপ দেখলো শাহীন, অ চিহ্নিত গাছ থেকে পূর্ব দিকে সোজা ২৫ নম্বর গাছের দিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সেখান থেকে একটা পথ এর চিহ্ন দেখানো হয়েছে ম্যাপে। কিন্তু একি, এখানে পথ কোথায়? শুধু বড় বড় ঘন গাছপালা আর একটা বড় টিলা। আশপাশে চোখ বুলিয়েও কোনো পথের অস্তিত্ব পাওয়া গেলো না। শাহীন বললো, ‘যেহেতু ম্যাপে রাস্তা দেখানো হয়েছে, তাই অবশ্যই রাস্তা এখানেই কোথাও লুকিয়ে আছে, ভালো করে খুঁজো।’
টিলার নিচে পাশাপাশি দুইটা গাছ, গাছের গোড়া ঝোপে ঢেকে আছে, ঝোপ সরাতেই চোখে পড়লো একটা পায়ে হাঁটা সরু রাস্তার মতো। রাস্তার প্রথম গাছ দুটি অন্যান্য গাছপালার সাথে এমনভাবে আছে যে কেউ আগে থেকে না জানলে বা ম্যাপ নাথাকলে খুঁজে পাবে না। সরু রাস্তায় সাবধানে ঢুকে পড়লো ওরা।
রাস্তার দুই পাশ দিয়ে গাছ। মাঝখান দিয়ে চলাচলের জন্য অল্প ফাঁকা জায়গা। সর্বোচ্চ দুইজন এক সাথে চলাচল করতে পারবে এ পথ দিয়ে। দেখে বোঝা যায়, পরিকল্পিতভাবে গাছগুলোকে লাগানো হয়েছে। কিন্তু, ঘন জংগলে তা বোঝার উপায় নেই।
ম্যাপে চোখ বুলিয়ে পথ খুঁজতে বেশ দেরি হয়ে যাচ্ছে। গন্তব্য থেকে ফিরে আসার সময় এ ঝামেলা থেকে পরিত্রাণের জন্য, ওদের সাংকেতিক চিহ্ন + দিয়ে যাচ্ছে রাস্তার পাশের গাছগুলোতে। দিনের বেলাতেই আলো-আঁধারি হয়ে আছে রাস্তাটা। একসময় রাস্তাটা শেষ হয়ে গেল, কিন্তু জংগল শেষ হলো না। ম্যাপ দেখে রাস্তা থেকে ডানে ১০ নং গাছের কাছে এগিয়ে গেলো ওরা। তারপর সেখান থেকে টিলার উপর কয়েকটা গাছ অতিক্রম করেই পেয়ে গেলো প্রথমটার মতো আরেকটি রাস্তা। একে একে এভাবে রাস্তা শেষ হয়ে যাচ্ছিলো, ম্যাপ দেখে ওরা আবার নতুন রাস্তায় প্রবেশ করছিলো। ম্যাপ না থাকলে ওরা এত দূর আসতে পারতো না, আর বুঝতেও পারতো না কতদূর আছে। দুই ঘণ্টা এভাবে চলার পর ম্যাপের শেষ মাথায় চলে এলো ওরা।

আট.
ঘন জঙ্গল থেকে খোলা জায়গায় বেরিয়ে এলো তিন গোয়েন্দা। সামনে একটা বক্স ক্যানিয়ন চোখে পড়লো ওদের। এতক্ষণে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছে ওরা। তাই ওখানেই বসে একটু জিরিয়ে নিলো ওরা। শুকনো কিছু খাবার ও পানি পান করে আবার চলতে শুরু করলো। সামনে থাকা বক্স ক্যানিয়ন পেরিয়ে আবার জঙ্গলে প্রবেশ করলো তিন গোয়েন্দা। গাছপালার মধ্যে জিনিসটা হঠাৎই ওদের চোখে পড়লো। জঙ্গলের মধ্যে কয়েকটা ঘর। গাছের মধ্যে লুকিয়ে আছে ঘরগুলো। দূর থেকে দেখার উপায় নেই। ঘন জঙ্গলে এর অবস্থান। পাহাড় দুটো দেয়ালের মতো ঘিরে রেখেছে, আর গাছগুলো ছাতার মতো আগলে রেখেছে ঘরগুলোকে। এইজন্য স্যাটেলাইটেও এটার চিত্র ধরা পড়েনি।
ঘরগুলো দেখে মনে হলো এটা ছোটখাটো কোন ক্যাম্প। কিন্তু, এটা কিসের ক্যাম্প তা ওরা জানে না। দিনের বেলাতেও ভুতুড়ে একটা পরিবেশ বিরাজ করছে এখানে। ভয় ওদের তাড়িয়ে দিতে চাচ্ছে এখান থেকে। শাহীন ব্যতীত, অন্য দুজন ভয় পাচ্ছে, তা সত্ত্বেও লজ্জায় কেউ এ ব্যাপারে মুখ খুলছে না।
‘এখানে আসতেই তো কয়েক যুগ লেগে গেলো,’ কাঁধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে বললো সিয়াম, ‘আমার তো মনে হচ্ছে এটা মানুষের চলাচলের পথ নয়।’
‘বাজে কথা রাখো এখন।’ শাহীন বললো, ‘আমাদের ব্যাগগুলো কোথাও লুকিয়ে রেখে ক্যাম্পে ঢুকতে হবে।’
ইমনের মাথা ঝাঁকানো দেখে, সিয়াম কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো। বোঝা গেলো সে এই কাজ না করতে পারলেই খুশি হতো।
আশপাশের পরিবেশটা দেখে নিচ্ছে শাহীন। ম্যাপ ছাড়া ক্যাম্পটা খুঁজে পেতে, কম করে হলেও তিন চারদিন লাগবে। কোন কোন সময় তাও অসম্ভব, কারণ পাহাড়ি জংগলটা খুবই দুর্গম। এজন্য হয়তো, এখনো ক্যাম্পটির কথা কেউ জানতে পারেনি। অনেক বড় এলাকা এটা। ঘন গাছপালা, সূর্যের আলো গাছের নিচে পৌঁছানোর জো নেই। এ জন্য কোন আগাছা নেই এদিকে। প্রায় ছয় ফুট উচু কাঁটাতারের বেড়া ক্যাম্পের চারিদিকে, সম্ভবত বন্য প্রাণীর আক্রমণ থেকে ক্যাম্পকে রক্ষার জন্য এই ব্যবস্থা। কিন্তু এই জঙ্গলে তেমন হিংস্র প্রাণী নেই। তাহলে নিশ্চয়ই অন্য কারণে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। বেড়ার ভেতরের ঘরগুলো সব একতলা বাড়ির মতো, উপরে ছাদ। ছাদে শেওলা পড়ে কালো হয়ে আছে। একমাত্র গেটটা বন্ধ, আশপাশে কাউকে দেখা গেল না। তাই বেড়া টপকানোর সিদ্ধান্ত নিলো শাহীন। কিন্তু কোনোভাবেই বেড়াতে হাত দেওয়া যাবে না। এই জঙ্গলে ক্যাম্প থাকতে পারলে, বেড়া ইলেকট্রিফাইড থাকাও অসম্ভব নয়। ক্যাম্পের চারপাশে একটা চক্কর দিলো ওরা। খুঁজতে খুঁজতে ক্যাম্পের পেছনে একটা গাছ পেয়ে গেলো ওরা, গাছটার ডাল তারকাঁটা পেরিয়ে ক্যাম্পের মধ্যে গিয়ে পড়েছে।
প্রথমে শাহীন তারপর একে একে অন্যরা নামলো ক্যাম্পের ভেতরে। গাছের সারি পেছনে ফেলে, সাবধানে একটা দরজার কাছে চলে এলো ওরা। অজানা আশঙ্কায় বুকের খাঁচায় আত্মাটা লাফাতে শুরু করেছে ওদের। ভয় তাড়ানোর জন্য বক্স বিদ্রিং পদ্ধতি ফলো করলো ওরা। চার সেকেন্ড ধরে নিঃশ্বাস নেয়া, চার সেকেন্ড নিঃশ্বাস আটকে রাখা এবং চার সেকেন্ড ধরে নিঃশ্বাস ছাড়া। বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীর স্পেশাল ফোর্সে এই পদ্ধতিতে ব্যবহার করা হয়। এটা খুবই কার্যকর একটা পদ্ধতি। ভয় একটু দূর হলে, দরজার নব ধরে মোচড় দিয়ে দরজা খুলে ফেললো শাহীন। ভেতরে প্রবেশ করলো ওরা, রুমটা বড় একটা হলঘরের মতো। আসবাবপত্র বলতে শুধু দুইটা সোফা রয়েছে এখানে দেয়ালে কিছু ছবি ঝুলছে। বেশ পরিষ্কার রুম, মানুষ থাকলে যেমনটা হয়। রুমের শেষ মাথার দরজা দিয়ে আরেকটা রুমে চলে এলো ওরা, সবার আগে ছিলো ইমন, এমন একটা অভিযানে এসে ভীষণ এক্সাইটেড সে। সবার আগে তাই সে হাঁটছে। কিন্তু পরের রুমে প্রবেশ করেই সে একটা চিৎকার দিলো।
পেছন ঘুরে দৌড় দিতে গিয়ে শাহীনের গায়ের উপর পড়লো। হঠাৎ এমন ধাক্কা সামলানোর জন্য প্রস্তুত ছিলো না শাহীন। এতে যা হবার তাই হলো একই লাইনে তিনজন থাকায়। ওদিকে ধাক্কা থেকে বাদ গেলো না সিয়ামও।
নিস্তব্ধ পরিবেশে মনে হলো একসাথে চারটা আলুর বস্তা আছাড় খেলো যেন! হাতে সব থেকে বেশি ব্যথা পেলো সিয়াম, ব্যথায় কঁকিয়ে উঠলো সে। জনমানবশূন্য রুমটার প্রতিটা দেয়াল ও জিনিসগুলো যেন খিলখিল করে হেসে উঠলো গোয়েন্দাদের আছাড় খাওয়া দেখে। সবার চোখ সামনে একটা জিনিস দেখছে এখন। যেটা দেখে ইমন ভয় পেয়েছে। একটা মানুষের কঙ্কাল হাত-পা নেড়ে হেঁটে আসছে ওদের দিকে। কিন্তু না, কঙ্কালটা একই স্থানে দাঁড়িয়ে হাত-পা নাড়ছে। ওটাকে ওভাবেই সেট করা হয়েছে, ট্রেডমিলে দৌড়ানোর মতো। সম্ভবত নতুন কাউকে ভয় পাওয়াতে এই সিস্টেম। ধুর, নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছা করছে ইমনের, বেশ লজ্জায় পড়ে গেলো সে। মেঝে থেকে উঠে কাপড় চোপড় ঝেড়ে নিলো ওরা। এবার ইমন সবার পেছনে থাকলো। রুমের বাহিরে বেরিয়ে এলে ওরা। এরপর আবার ডানের রুমটাতে প্রবেশ করলো, তিন গোয়েন্দা।
এইটা বেশ আধুনিক রুম, কোনো ল্যাবরেটরি রুমের মতো। কোথাও সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছে হয়তো।
জঙ্গলে এমন আধুনিক রুম দেখে হাঁ হয়ে গেলো ছেলেরা। রুমের টেবিলের উপর কম্পিউটারটা অন করা, অর্থাৎ একটু আগেও এখানে কেউ ছিলো। এখন কোথায় গেলো?
অবস্থা বুঝতে পেরে দ্রুত সে রুম থেকে বের হতে চাইলো ওরা। কিন্তু বুঝতে পারলো কেউ আসছে রুমের এদিকে। লুকানোর জন্য এদিক ওদিক তাকিয়ে জায়গায় খুঁজতে শুরু করলো ওরা। শেষে রুমের এক পাশে রাখা বাক্স, আর ড্রামের আড়ালে লুকিয়ে পড়লো গোয়েন্দারা।
কিন্তু জায়গাটা খুব একটা নিরাপদ মনে হলো না ওদের, ওদিকে দরজার দিক হতে, কারো আসার শব্দ ক্রমেই স্পষ্ট হতে লাগলো।
আশপাশে কিছু খুঁজতে শুরু করলো শাহীন, এ সময় একটা সুইচ দেখতে পেলো দেয়ালে। কী মনে করে টিপে দিলো সুইচটা। ওদের অবাক করে দিয়ে মেঝের কিছু অংশ নিঃশব্দে দুই দিকে সরে গেল। বেরিয়ে এলো আন্ডারগ্রাউন্ড রুমের সিঁড়ি। কিছু না ভেবেই সিঁড়িতে নেমে গেলো তিন গোয়েন্দা। ওরা সিঁড়িতে নামতেই মেঝেতে লাগানো পাল্লাটা লেগে গেল।
বিদঘুটে অন্ধকার ঘিরে ধরলো ওদের। চমৎকার, নিজেরাই বন্দী হলো খাঁচায়, নিজের নাকে ঘুষি মারতে ইচ্ছে হলো শাহীনের।

নয়.
উপরে ওদের কেউ খুঁজছে এটা স্পষ্ট বুঝতে পারলো ওরা। ইংরেজিতে জোরে জোরে নির্দেশ দিচ্ছে কেউ। কথাও বলছে ইংরেজিতে। তার মানে কি এরা বিদেশী?
অন্ধকার রুমে খস খস শব্দ শুনে চমকে উঠলো ওরা। পকেটে করে আনা, ছোট টর্চলাইট জ্বালালো শাহীন। খুবই নোংরা একটা রুম। বাজে গন্ধে নাক কুঁচকে ফেললো ওরা। কতদিন হলো পরিষ্কার করা হয় না কে জানে। সিঁড়ি থেকে নেমে একটু ফাঁকা জায়গা। তারপর জেলখানার মতো একটা কামরা। বাহির থেকে তালা দেয়া। ভেতরে দুজন মানুষ দেয়ালে শরীরটা ঠেস দিয়ে আধা শোয়া হয়ে আছে। দুর্বল ভঙ্গিতে চোখ পিটপিট করে লাইটের আলোর দিকে তাকালো লোক দুটো। আবার চমকে উঠলো শাহীন, লোক দুটোকে দেখে। এতো ড. রাফাত আমান, বাংলাদেশের বিখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী। মাসখানেক আগে তিনি ও তার সহকারী নিখোঁজ হয়ে যান। পুলিশ ও গোয়েন্দারা কোনো খোঁজ পায়নি তাদের।
সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী সতর্ক অবস্থানে চলে যায়। এ জন্য হয়তো বিজ্ঞানীকে দেশের বাহিরে নিতে পারেনি এখনো। শাহীনের ধারণা তাদের মুখ থেকে আবিষ্কারের থিওরিও বের করতে পারেনি, এ জন্য এখনো বাঁচিয়ে রেখেছে। তবে অনেক টর্চার করেছে এতে সন্দেহ নেই। ড. রাফাত আমান ও তার সহকারী খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছেন। এখন ওরা এই তিনজন ছেলে, বিজ্ঞানী ও তার সহকারীকে এখান থেকে বের করে নিয়ে যেতে পারবে না, পুলিশকে খবর দিতে হবে। ওরা এসেছিলো নিখোঁজ রহস্যের তদন্ত করতে, কিন্তু এসে এসব কী দেখছে? দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে বেশি সময় লাগলো না শাহীনের। এটা যে বিদেশী কোন গুপ্তচরদের ক্যাম্প এ ব্যাপারে আর কোন সন্দেহই রইলো না। এ যেনো কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসার মতো। ওরা অনেক কিছু জেনে ফেলেছে, এখন ধরা পড়লে ওদের কাউকেই বাঁচিয়ে রাখা হবে না এটা নিশ্চিত শাহীন। এটা মনে হতেই আরেকটা অজানা আশঙ্কা উঁকি দিলো ওর মনে, অয়নকে ওরা বাঁচিয়ে রেখেছে তো?
এখানে ধরা পড়া চলবে না ওদের। বিজ্ঞানী ও তার বন্ধুকে বাঁচাতে যেভাবেই হোক বাহিরে বেরুতে হবে। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলো শাহীন, আর সময় নষ্ট করা চলবে না। দুই বন্ধুকে বুঝিয়ে দিলো কী করতে হবে। বাহিরে বেরোনোর জন্য সিঁড়ির কাছে চলে এলো তিন গোয়েন্দা। কিন্তু উপরে উঠার দরজা খুলবে কী করে? ওরা তো সেটা জানে না। ওরা যখন এসব ভাবছে, তখন ওদের অবাক করে দিয়ে খুলে গেলো দরজা। একটা লোক নেমে পড়লো সিঁড়িতে, সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো ছেলেরা। সিঁড়ির পাশে অন্ধকার জায়গায় লুকিয়ে পড়লো ওরা।
আগন্তুক সিঁড়িতে পা দিতেই সামনের পা বাড়িয়ে দিলো শাহীন। শাহীনের পায়ের সাথে বেধে টাল সামলাতে পারলো না লোকটা, কাত হয়ে গেলো। আর দেরি করলো না ইমন, আগন্তুকের কানের নিচে বরাবর নরম অংশে চালিয়ে দিলো ঘুষি। কিছু বুঝে উঠার আগেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল সে। তাকে সেখানেই ফেলে রেখে উপরে উঠে এলো ওরা। এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। ইতোমধ্যে ক্যাম্পের সবাই অ্যালার্ট হয়ে গেছে, পালানো খুব কঠিন হয়ে যাবে এখন। গাছের আড়ালে আড়ালে রুম থেকে দূরে চলে এলো ওরা।
এখন পেছনে ফেলে আসা সেই রুম। সামনে আরেকটা ছোট রুম, তারপরই ছয় ফুট উঁচু কাঁটাতারের বেড়া, ডানে ও বাম থেকে এগিয়ে আসছে দু’জন পিস্তলধারী লোক। এখনো ওদের দেখেনি তারা, তবে ওরা এখানে থাকলে দেখে ফেলবে। এখন লুকানো বা পালানোর কোনো রাস্তা অবশিষ্ট নেই। কোন উপায় না দেখে, দ্রুত সামনের রুমটাতে ঢুকে পড়লো তিন গোয়েন্দা। না দরজা ওদের লাগানোর প্রয়োজন হলো না। ধাম করে কেউ লাগিয়ে দিলো বাহির থেকে। তারপর দরজায় তালা ঝুলিয়ে দূরে সরে গেল একটা পদশব্দ। আবার আটকা পড়লো ওরা!
অন্ধকার রুম, টর্চ জ্বালালো শাহীন, গুদামঘরের মতো রুম এটা। সিমেন্ট দিয়ে প্লাস্টার করা দেয়াল। উপরে ছাদ, লোহার দরজা। কাজেই বের হবার কোন উপায় নেই। ওরা এখানে এসেছে তা কেউ জানে না। তাই কেউ ওদের উদ্ধারও করতে আসবে না। গুপ্তচররা ওদের ছেড়ে দেবে না। কী করবে সেটা জানে না শাহীন। হয়তো মেরে ফেলবে, নয়তো সুযোগ বুঝে বিদেশে পাচার করে দেবে। তবে নিঃসন্দেহে গুপ্তচরদের বিপদে ফেলে দিয়েছে ওরা। এতগুলো ছেলে একসাথে নিখোঁজ হলে হইচই পড়ে যাবে। ওরা যে একটা কিসের তদন্ত করছিলো এটা জেনে যাবে সবাই। এতে করে পুলিশ এই জঙ্গলেও অভিযান চালাবে ছেলেদের খোঁজে। এইটুকু ভেবে একটু স্বস্তি পেলো শাহীন। মৃত্যু ভয় সে মোটেও পেলো না। মৃত্যু বা ভাগ্য তো আল্লাহর হাতে এবং তা নির্ধারিত সময়ের এক সেকেন্ড আগেও হবে না।
এখন দেখা যাক, গুপ্তচররা কী ব্যবহার করে ওদের সাথে। দরজার তালা খোলার শব্দে ভাবনায় ছেদ পড়লো শাহীনের, খুলে গেলো দরজা। বাহিরের আলো হুমড়ি খেয়ে ঘরে প্রবেশ করলো। দরজায় দাঁড়ানো লোকটাকে দেখে অবাক হলো না ছেলেরা। কপিল দেওয়ান। ‘আহা, বাছারা তাহলে চলেই এলে? আমি নিষেধ করার পরও! তোমরা সাহসী। কিন্তু এখানে এসে ঠিক করোনি।’ কপিল দেওয়ান এখন স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলছে, তার মানে রহস্যময়ভাবে কথা বলা তার শয়তানি। একটু চুপ থেকে আবার বলতে শুরু করলো সে, ‘ফালতু সব গোয়েন্দা উপন্যাস পড়ে এমন জেদি হয়েছো তোমরা। ঐসব লেখকদের নামে মামলা হওয়ায় উচিত, কারণ তাদের ফালতু সব গোয়েন্দা উপন্যাস পড়েই ছেলেগুলা নষ্ট হয়।’
‘মামলা তো আপনার নামে হবে।’ রাগে ফুঁসে উঠেছে ইমন, ‘শয়তান লোক কোথাকার! পাগল সেজে মানুষকে ধোঁকা দেন আপনি। অয়নকে কোথায় রেখেছেন?’
‘বেশি বকবক করো না, কোনো লাভ নেই। ওকে ঠিক জায়গাতেই রাখা হয়েছে। মনোযোগ দিয়ে শোনো ছেলেরা, বাস্তবতা বড় কঠিন। এখানে উপন্যাসের মতো কোনো নায়ক এসে, তোমাদের উদ্ধার করবে না। কেউ আর দিনের আলো দেখবে না তোমরা, একটু অপেক্ষা করো।’ এটা বলে পিত্তি জ্বালানো হাসি দিয়ে চলে গেলো কপিল দেওয়ান। ধপ করে বসে পড়লো শাহীন। দম বন্ধ হয়ে আসছে তার। অন্যদের জন্য খারাপ লাগছে। সিয়ামের কথা শুনলেই ভালো করতো ও। তাহলে তিনটা ছেলে আর দুজন বিজ্ঞানী আজ বিপদে পড়তো না। পুলিশ অয়নকে ও বিজ্ঞানীদের উদ্ধার করতে পারতো। কপিল দেওয়ান চলে যাবার পর পিনপতন নীরবতা নেমে এলো রুমে। ওরা ভয়ে চুপ করে আছে নাকি ওর ওপর রেগে চুপ করে আছে তা বুঝতে পারলো না শাহীন। তার নিজেরও খুব কষ্ট হচ্ছে। কোনমতে সে সবার উদ্দেশে বললো, পারলে ক্ষমা করে দিয়ো আমাকে। আমিই তোমাদের বিপদের মধ্যে টেনে এনেছি। ইমন মেঝের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। সিয়াম ওর দিকে তাকালো একবার শুধু, তারপর চোখ সরিয়ে নিলো। কেউ কোন কথা বললো না। মনে হলো সবার মুখে কেউ টেপ মেরে দিয়েছে।
এভাবে কতক্ষণ বসে থাকলো ওরা তার হিসাব রাখলো না কেউ। কল্পনার রাজ্যে ডুবে ছিলো শাহীন। দরজার ফুটো দিয়ে আসা এক চিলতে আলোর রেখা একসময় আর দেখতে পেলো না সে। রুমটা আরো অন্ধকার হয়ে গেলো। অর্থাৎ রাত হয়ে গেছে। ভ্যাপসা গরম রুমের ভেতর। ঘেমে জামা গায়ের সাথে লেগে গেছে ওদের, এখন গরমটাও সয়ে গেছে। খালামণির বাড়িতে এতক্ষণে নিশ্চয় হইচই পড়ে গেছে, ওদের না পেয়ে। ওদের কাছে থাকা মোবাইল ও টর্চলাইট কেড়ে নেয়া হয়েছে।
বসে থাকা ছাড়া কোনো কাজ হাতে নেই ওদের। বাহিরে দরজার তালা মোচড়ানোর শব্দে ভাবনায় ছেদ পড়লো শাহীনের। দুই হাঁটুতে মুখ গুঁজে ছিলো ইমন ও সিয়াম।
তারাও মুখ তুলে দরজার দিকে তাকালো। তালা ভেঙে দরজা খুললো কেউ, অন্ধকারে আগন্তুকের মুখ দেখা গেলো না। ফিস ফিস করে বললো আগন্তুক, ‘বাঁচতে চাইলে আমাকে অনুসরণ করো।’ এটা বলে ওদের কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বাহিরে বেরিয়ে গেলো আগন্তুক। বেশ অবাক হলেও ওর পিছু নিলো ছেলেরা। এ ছাড়া আর কোনো উপায়ও ছিলো না।

দশ.
‘এই যে, থামুন প্লিজ!’ কাঁটাতারের বেড়ার কাছে এসে আস্তে করে আগন্তুককে বললো শাহীন। ‘বেড়াটা ইলেকট্রফাইড হতে পারে।’
‘কোনো সমস্যা নেই, আমি বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছি।’ ওদের অবাক করে দিয়ে, অয়ন এসে বললো। সব ক’টা চোখ ঘুরে গেলো অয়নের দিকে। ‘সেকি, তুমি এখানে কিভাবে আসলে?’ ইমন দৌড়ে গিয়ে অয়নকে জড়িয়ে ধরে বললো, ‘ঠিক আছো তো তুমি?’
‘আমি ঠিক আছি।’ অয়ন আগন্তুককে দেখিয়ে বললো, ‘আমি বন্দী ছিলাম। সে ছাড়া পেতে সাহায্য করেছে।’
‘এখন এসব কথা বলার সময় নয়।’ তাড়া দিয়ে আগন্তুক বললো, ‘তাড়াতাড়ি সরে পড়তে হবে এখান থেকে।’ চলতে শুরু করলো ওরা। ক্যাম্প থেকে নিরাপদ দূরত্বে এসে দাঁড়ালো। অয়ন ধপ করে বসে পড়লো, অন্যদের থেকে বেশি ক্লান্ত সে। শয়তানগুলো তাকে বন্দী করে রেখে ঠিকমতো খেতেও দেয়নি। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ক্ষুধার্ত সে।
আগন্তুক এখনো তার পরিচয় দেয়নি, তাকে শাহীন জিজ্ঞেস করলো, ‘আপনি কে? কিভাবে জানলেন আমরা এখানে? আর কেনই বা ঝুঁকি নিয়ে আমাদের সাহায্য করলেন?’
‘আমি শিবলু রহমান।’ আগন্তুক বললো, ‘পুলিশ ডিপার্টমেন্টে কাজ করছি। অয়নের আব্বুর নির্দেশে তোমাদের ওপর নজর রাখতাম। যাতে কোনো বিপদ না হয়।’
কথাটা শুনে আমিন আঙ্কেলের উপর শ্রদ্ধা বেড়ে গেলো তিন গোয়েন্দার। শাহীন বললো, ‘এবার বুঝলাম জঙ্গলে সেদিন আপনিই নজর রাখছিলেন আমাদের উপর। আচ্ছা, আপনি কি জানেন, ক্যাম্পে পরমাণু বিজ্ঞানী ও তার সহকারী আটকে আছে?’
‘হ্যাঁ, জানি, অয়নের কাছ থেকে শুনেছি। আমি পুলিশের স্পেশাল ফোর্সকে জানিয়ে দিয়েছি, তারা এলো বলে।’ শিপলু রহমান তার কথা শেষ করতেই পুলিশের বাঁশি বেজে উঠলো, পুলিশের দাপাদাপি আর বুট জোতার শব্দে, জঙ্গলের রাতের নিস্তব্ধতাকে ভেঙে চৌচির করে দিলো। ছেলেদের ওখানে দাঁড়াতে বলে চলে গেলো শিপলু রহমান। ওদের ক্যাম্পের আশপাশে যাওয়া নিষেধ এখন। বাকি দায়িত্ব পুলিশের। ওরা যেতে চাইলে শিপলু রহমান বলেছে, গোলাগুলি হতে পারে। তাই তাদের এখানেই থাকা নিরাপদ। ওরা আর কোনো কথা বাড়ায়নি। চার জোড়া চোখ তাকিয়ে আছে ক্যাম্পের দিকে। কিন্তু অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। যেন কালো চাদর দিয়ে ওদিকটা ঢেকে দেয়া হয়েছে। কোনো শব্দও শোনা যাচ্ছে না ওদিক থেকে। আনমনে বিড়বিড় করে বললো শাহীন, ‘ওরা কিভাবে এই পথের সন্ধান পেলো?’
‘এটা তোমাদের বুদ্ধির জন্যই, পথে তোমরা + চিহ্ন দিয়ে এসেছিলে। এটা দেখেই কনস্টেবল শিপলু রহমান এখানে এসে পৌঁছে ছিলো, তারপর অন্য পুলিশরা। তোমাদের কাছে আমি ঋণী।’ চোখের পানি মুছে বললো অয়ন। ‘তোমরা সত্যি আমার প্রকৃত বন্ধু, আমার জন্য অনেক বড় ঝুঁকি নিয়েছিলে।’ ‘বন্ধুত্বের জন্য এ ঝুঁকি কিছু না, শাহীন অয়নের ঘাড়ে হাত রেখে বললো। অয়ন শাহীনকে জড়িয়ে ধরলো। খুশিতে ওর চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়লো দুই ফোঁটা অশ্রু। ‘কিন্তু, তুমি একটা জিনিস ঠিক করোনি।’
সিয়াম অয়নকে বললো, ‘কপিলের পিছু নিয়ে ম্যাপটা পেয়েছিলে, এটা ইমনকে বলতে পারতে।’
‘আমি ব্যাপারটা নিশ্চিত ছিলাম না। তাই পুলিশকেও জানানো হয়নি। তবে এটা মনে হয়েছিলো, এই কাজের মধ্যে ঝুঁকি আছে, ইমন জানতে পারলে সে আরো আগেই এখানে আসার চেষ্টা করতো।’ অয়ন বললো, ‘আমি কাউকে ঝুঁকিতে ফেলতে চাইনি। আবার একা আসার সাহসও হচ্ছিলো না।
আব্বুর উপর রাগ হওয়ার পর এখানে চলে এলাম। তবে একটা বিষয়ে বুঝলাম ভালো ভাবে, রাগলে মানুষ সাহসী হয়ে ওঠে।’ ওর কথা শুনে হেসে দিলো সবাই। হঠাৎ একটা গুলির শব্দে থেমে গেলো ওরা, তারপর আরেকটা। অজনা আশঙ্কায় আঁতকে উঠলো ওরা।
ক্যাম্পের চারিদিকে ঘিরে দাঁড়ালো পুলিশের একটা দল। আরেকটা দল নিঃশব্দে ভেতরে প্রবেশ করলো। এতে করে, একজন গুপ্তচরও ক্যাম্প থেকে পালানোর সুযোগ থাকলো না।
শুধু দুইটা বুলেট অপচয় ছাড়া আর কোনো ক্ষতির মুখে পড়লো না ওরা। গ্রেফতার করা হলো সব ক’টা বিদেশী গুপ্তচর ও ওদের সাহায্যকারী এ দেশী বিশ্বাসঘাতকদের। নিরাপদে বিজ্ঞানী ও তার সহকারীকে উদ্ধার করা হলো। বিজ্ঞানীদের শারীরিক অবস্থা সুবিধার নয়।
সার্জেন্টদের ঘাড়ে ভর দিয়ে এগিয়ে চললেন তারা। চার কিশোরের কাছে এসে থেমে গেলো দলটা। ক্যাপ্টেন ইয়ামিন হোসাইন ছেলেদের দেখিয়ে বিজ্ঞানীকে বললেন, ‘স্যার, ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য এরাই। এদের দুঃসাহসিক অভিযানের কারণেই ক্যাম্পটার খোঁজ পেয়েছি আমরা। শাহীন শিপলু রহমানকে দেখিয়ে বললো, ‘ইনি আমাদের উপর নজর না রাখলে আমরা কেউই এই সময়টা পেতাম না। ইনার কৃতিত্বও কম নয়। সে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্যাম্পে ঢুকেছিলো।’ সব ক’টা চোখ ঘুরে গেলো শিপলু রহমানের দিকে। এতে সে লজ্জা পেয়ে চোখ নিচে নামিয়ে নিলো।
‘ওকে, আমি শিপলুর প্রমোশনের ব্যবস্থা করবো।’ ছেলেদের দিকে তাকিয়ে বললেন ক্যাপ্টেন ইয়ামিন হোসাইন, ‘এবার বলো, তোমরা কী পুরস্কার চাও?’
‘আমরা আমাদের পুরস্কার পেয়ে গেছি স্যার।’ মুখে হাসি টেনে শাহীন বললো, ‘যে অ্যাডভেঞ্চার হলো এটা কি কখনো পাওয়া যায়? এ ছাড়া ড. রাফাত আমান স্যার ও তার সহকারীকে উদ্ধারে সহযোগী হতে পেরেছি এটাই আমাদের অনেক বড় পাওয়া।’ ড. রাফাত আমান ছেলেদের দিকে তাকালেন, কৃতজ্ঞতায় তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো। সার্জেন্টের ঘাড় থেকে এক হাত নামিয়ে, একে একে চারজনের কপালে চুমু খেলেন। তারপর কনস্টেবল শিবলুর কপালে চুমু খেলেন। একটু পর পাহাড়ের চূড়ায় হেলিকপ্টার ল্যান্ড করলো।
বিজ্ঞানীদের নিয়ে সেদিকে গেলেন, সার্জেন্টরা। শাহীনের পিঠে থাবা মেরে কিছু একটা দেখালো সিয়াম। কপিল দেওয়ানকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে আসছে একজন সার্জেন্ট। কপিল দেওয়ান রেগে ওদের দিকে তাকালো একবার, সুযোগ পেয়ে সিয়াম বললো, ‘জঙ্গল খুব খারাপ জায়গা, যাকে সে পছন্দ করে না তাকে সে ছাড়ে না, খবরদার! এদিকে আর এসো না। অভিশপ্ত প্রাণীরা ঘোরাফেরা করে এখানে।’ ওর কথা শুনে হো হো করে সে উঠলো ওর তিন বন্ধু, হাসলেন সার্জেন্টরাও।
কপিল দেওয়ান রাগে দাঁত কটমট করলো শুধু, বোঝালো ছাড়া থাকলে এতক্ষণে ওদের কী হাল করতো।
‘আচ্ছা শাহীন, সবাই তো ধরা পড়লো, কিন্তু একজনকে তো দেখলাম না।’ সিয়াম বললো, ‘ফরহাদ হাবিবকে তো দেখছি না।’
‘সে একটা বোকা লোক।’ শাহীন বললো, ‘তার শত্রুর ছেলে নিখোঁজের পর সন্দেহজনক ব্যক্তি হিসেবে, তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমরা তার বাড়িতে গিয়েছিলাম। এটা সে বুঝতে পেরেছিল, আর তাই রেগে গিয়েছিলো আমাদের উপর। আসলে সে এসবের সাথে জড়িত নেই।’
ইমন কিছু বলতে চাইলো, কিন্তু তার কণ্ঠস্বর ঢাকা পড়ে গেলো ক্যাপ্টেনের ডাকে। ‘ছেলেরা জলদি এসো, তোমাদের হেলিকপ্টারে করে বাড়ি পৌঁছে দিবো।’
(সমাপ্ত)

Share.

মন্তব্য করুন