কিছুদিন হলো ইয়াসিন সাহেব বাড়িতেই আছেন।
বাহ্, বাড়িতে তো সবাই থাকে, এ আর নতুন কী? হ্যাঁ- ঠিকই ভাবছ তোমরা। তবে মাস চারেক হলো তিনি ব্যাংকের চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন, তাইতো উনি সারাক্ষণ বাড়িতেই থাকেন।
এই কিছুদিন আগেও ভোরবেলা থেকে শুরু হতো ইয়াসিন সাহেবের ছুটোছুটি। অফিসে ঠিক সময়ে তার পৌঁছানো চাই। এ হলো তার সারাজীবনের নিয়ম।
হাঁক দিতেন, ‘বউমা, আমার নাশতা দাও।’ তড়িঘড়ি করে নাশতার প্লেট নিয়ে আসত নীলা। নাশতা খেতে খেতে উঁচু স্বরে বলতেন, এখনও উঠলে না ইকবাল? নয়টা বাজে যে।
নীলা টিপট থেকে চা ঢালতে ঢালতে বলত, ওর আজ সাড়ে বারোটায় ক্লাস আব্বা।
নিঃশ্বাস ফেলে ইয়াসিন সাহেব বলতেন, তা হোক নীলা, জীবনে ডিসিপ্লিন মেনে চলতে হয়, টাইম ইজ মানি।
সময় কারো জন্য বসে থাকে না।
বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে পেস্ট মাখানো ব্রাশ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে বোকান। দাঁতে ব্রাশ না ছুঁইয়ে হাঁ করে তাকিয়ে দেখে মায়ের ছুটোছুটি। শোনে দাদাজানের গম্ভীর কথা।
কথা বলতে বলতে মাঝে মাঝে ইয়াসিন সাহেব কাশতে থাকেন।
নীলা বলে, আস্তে আস্তে খান আব্বা। বিষম খাবেন যে।
ইমন চাচু এসে বলে, আবার তুমি খাবার সময় কথা বলছ আব্বা! কতদিন না মানা করলাম।
ইয়াসিন সাহেব মন খারাপ করা স্বরে বলেন, আগে তো কথা বলার সময়ই পেতাম না। এখন রিটায়ার করেছি- অঢেল সময়, একটু আধটু কথা বলব না?
হ্যাঁ- তাইতো।
বোকান ভাবে- সত্যিই তো, দাদু ভালো কথাই তো বলেন। এতক্ষণে এসে গেছে বোকানের আব্বা ইকবাল। গলা নামিয়ে বলে, আব্বার এই একটু আধটু কথা- ওগুলো তো উপদেশ আর উপদেশ। আই মিন, সারমন আর কী।
নীলা বলে, আব্বা তো ঠিকই বলেছেন, তাড়াতাড়ি করতে হবে না? সময় কি কারো জন্য বসে থাকে?
এখনও তুমি দাঁত ব্রাশ করোনি, এরপর রয়েছে ড্রেস পরা, তারপর খাওয়া, স্কুলে যেতে দেরি হবে না তোমার? ম্যাম আজকে তোমাকে ক্লাসের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবে- দ্যাখো?
– আমি ছোট তো, দাদাজানের মতো এত তাড়াহুড়ো কি করতে পারি?
ইয়াসিন সাহেব বলেন, এখন থেকেই চটপট কাজ করার অভ্যেস করতে হবে, যাকে বলে প্র্যাকটিস। ইংরেজিতে একটা কথা আছে- প্র্যাকটিস মেকস অ্যা ম্যান পারফেক্ট। আমাকে দশটার আগে পৌঁছাতে হবে। আমি যদি ঠিক টাইমে না পৌঁছাই- তবে অন্যরা আমার কাছ থেকে কী শিখবে বলো!
– আর পাপা, পাপা তো তাড়াহুড়ো করে না, ধীরে-সুস্থে বেরোয়।
দাদাজান বলেন, তোমার পাপা ইকবাল কলেজে পড়ায় তো, কোনোদিন বারোটা, কোনোদিন একটায় ক্লাস থাকে, এজন্য সময় নিয়ে রেডি হয়। এরপরও বলব বোকান, এত আলসেমি ভালো নয়। কারণ শুয়ে থাকলে ভাস্যও শুয়ে থাকে।
খুব খুশি হয়ে বোকান বলে, এজন্যই তো দাদাজান আমি সব কিছু তোমার মতো তাড়াতাড়ি করি।
এসব কথাবার্তা হতো ইয়াসিন সাহেব যখন চাকরিতে ছিলেন। এখন তার অবসর, অঢেল সময় হাতে।
সারাদিন বাড়িতেই থাকেন। সকাল আর বিকেলে রমনাপার্কে হাঁটতে যান শুধু।
সময় আর কাটতে চায় না তার। বোকানের জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকেন। কখন নাতি আসবে, কখন ওর সাথে দু’টো কথা বলে মনের ভার হালকা করবেন- সেই আশাতে জানালার দিকে তাকিয়ে বসে থাকেন।
কলিং বেল বেজে উঠল। এই তো স্কুল থেকে বোকান এসে গেছে।
জোরে হাঁক দেন ইয়াসিন সাহেব।
– এই আলোর মা চা দিয়ে যা তো আমাকে। চায়ে রেলিশ করে চুমুক দিতে থাকেন। নাতির দেখা আর পান না, শুধু মা-ছেলের কথা শুনতে পান।
ছেলের টিফিন বক্স খুলে নীলা খুশি হয়ে বলে,
– বাহ, সন্দেশ এগ রোল কেক সব খেয়েছ? রোজ এমনই টিফিন বক্স যেন খালি থাকে। বুঝেছ বোকান? বোকানের খুশিমাখা গলা শুনতে পান ইয়াসিন সাহেব।
– আমি একা খাইনি আম্মু, আমাদের ক্লাসের তামিম আছে না, আমরা দু’জনের মিলে ভাগ করে খেয়েছি। নীলার খরখরে গলা শুনতে পান ইয়াসিন সাহেব।
– এটা তোমার টিফিন বোকান, তুমি একাই খাবে।
অন্যকে দিতে গেলে কেন? অন্যদের দেবার জন্য তো টিফিন দিইনি। ভীরু ভীরু স্বর ছেলের।
– আম্মু, আমার টিফিন বক্স দেখে ও বলল, কী চমৎকার তোর টিফিন ইশরাত, আমাকে দে না রে।
– তুমিই দিয়ে দিলে- তাই তো? এমন ভ্যাবলা তুই- তাইতো তোর নাম বোকান।
এসব শুনে ইয়াসিন সাহেবের ছুটে গিয়ে নাতিকে বুকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে। মিলে মিশে ভাগ করে টিফিন খাওয়া তো খুশির ব্যাপার। বন্ধুদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে খাবে না?
বোকান কান্নাভাঙা গলায় বলে, ও আমার সন্দেশ রোল খেয়েছে, আমাকেও তো ওর টিফিন থেকে দিয়েছে আম্মু।
– কী দিয়েছে শুনি?
– রুটি আর আলুভাজি।
কড়া গলায় নীলা বলে, সন্দেশ এক্সচেঞ্জ করে তুমি এগুলো নিয়েছ- তাইতো? বোকা কোথাকার।
বহুদিন ব্যাংকের উঁচু পদে বসে কাজ করা ইয়াসিন সাহেবের শরীরের রক্ত টগবগ করে ফুটে ওঠে। মায়েরা ওসব কী শেখাচ্ছে? একসাথে সবাই মিলেমিশে থাকবে, খাবার ভাগ করে খাবে- কথাগুলো বড়দের এ যুগে বুঝি শেখাতে মানা?
জোরে ধমক দিতে ইচ্ছে করে বউমাকে। এসব কী শেখাচ্ছ নীলা?
পরমুহূর্তে নিজেকে সামলে নেন। যতদিন চাকরিতে ছিলেন ততদিন বাড়িতে তার দাপট ছিল। সবকিছুতে মতামত নিত ছেলে ইকবাল-ইমন, নীলা সব সময় জিজ্ঞেস করত-
– এটা কি করব আব্বা?
অবসর নেবার পর চার মাসেই অন্যরকম হয়ে গেছে বাড়ির আবহাওয়া। আগে তিনি বলতেন সবাই শুনত।
এখন কোনো ব্যাপারে কথা বলতে গেলে ইকবাল বলে, আহ আব্বা- তুমি খবরের কাগজ পড়ো, টিভি দ্যাখো, সব ঝামেলায় তোমার ঢোকার দরকার কী?
ইমন চাচুও বলে, সব ব্যাপারে আপনি কেন নাক গলাতে যান আব্বা?
বোকান ছোট্ট হলে কী হবে সব কিছু খেয়াল করে।
বলে, আগে তুমি কত কথা বলতে দাদাজান, এখন তুমি সব কিছুতেই কথা বলো না কেন? কী হয়েছে তোমার? কী করে নাতিকে বোঝাবেন, বয়স হলে মানুষের সব কথা উপদেশের মতো হয়ে যায়, কেউ শুনতে চায় না। বিকেল বেলা বোকান তার কাছে এলে ইয়াসিন সাহেব বলেন, আম্মু খুব বকেছে- নারে বোকান? গম্ভীর মুখে বোকান জবাব দেয়- আমি তামিমকে সন্দেশ দিয়েছি, ও আমাকে দিয়েছে রুটি-আলুভাজি। আমি কি ভুল করেছি দাদাজান?
– মোটেও নয়। বন্ধুদের সঙ্গে সবকিছু এক্সচেঞ্জ করতে
হয় ভাইয়া। সবার সাথে টিফিন ভাগ করে খেয়ো।
এমনই ছোটখাটো ঘটনা প্রায়ই কষ্ট দেয় ইয়াসিন সাহেবকে। নিজের মনের সঙ্গে ঠিক মেলাতে পারেন না নীলা, ইকবাল কিংবা ইমনের ব্যবহার।
এই তো সেদিন, খুব খুশি খুশি গলায় বোকান বলতে থাকে, তুমি যে বর্ষার বৃষ্টি নিয়ে আমাকে নোট করে দিয়েছিলে ফয়সালের মা বলেছেন খুব চমৎকার হয়েছে এটি। উনি ফয়সালের খাতায় এটি লিখে নিয়ে গেছেন।
– বোকান-
চেঁচিয়ে উঠে নীলা, ইয়াসিন সাহেব হকচকিয়ে যান।
সন্ধ্যাবেলা চা খেতে বসেছে সবাই।
নীলা বলে, আমি তোমাকে নোট করে দিয়েছি ক্লাসের ছেলেদের দিয়ে দেবার জন্য?
ইয়াসিন সাহেব বলেন, এইটুকুন ছেলেকে তুমি নোট লিখে দাও নীলা? কেন- বোকান নিজে নিজে বইটি ভালো করে পড়তে পারে না?
নীলা জবাব দেয়,- আজকাল পড়ার সিস্টেম আগের মতো নয় আব্বা, সিটিতে যদি ভালো নম্বর না পায়- নীলার কথা থামিয়ে ইয়াসিন সাহেব বলেন, সিটিটা আবার কী?
ইমন বলে, ক্লাস টেস্ট আব্বা। এই টেস্টে ভালো নম্বর না পেলে প্লেস পাবে না।
ইয়াসিন সাহেব মন দিয়ে শোনেন। ভাবতে থাকেন, ক্লাস থ্রি-ফোর-এ নোট লিখতে হয়? নিচু ক্লাসে প্লেস না পেলে কি মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে? ক্লাসের বন্ধু ফয়সাল যদি বর্ষার বৃষ্টি লিখে নেয়- তাতে ক্ষতিটা কী?- এসব প্রশ্নের জবাব কিছুতেই খুঁজে পান না তিনি।
নীলা রেগে বলতে থাকে, – তুমি আসলে বোকাইতো, এজন্যই তো তোমাকে বোকান বলে ডাকি। বোকা ছেলে কোথাকার।
বোকানের বড় বড় পাপড়ি ঘেরা চোখ কান্নায় ছলোছলো।
ইয়াসিন সাহেব আদর করে নাতিকে নিজের ঘরে নিয়ে আসেন। বলেন, দূর বোকা- ক্লাসের বন্ধুদের সঙ্গেই তো পড়াশোনা শেয়ার করবে। আম্মু, আব্বু, চাচু, দাদাজান যে যা বলুক না কেন- তোমার যা করতে ভালো লাগবে, যা করে তুমি আনন্দ পাবে- তুমি তা-ই করবে।
– তাই? খুব খুশি বোকান,- আমার তো গালিব আংকেলের বাড়িতে যেতে ভাল্লাগে। খুব যেতে ইচ্ছে করে।
ইয়াসিন সাহেব ওর ঝাঁকড়া চুল আঙুল দিয়ে নেড়েচেড়ে বলেন,
– তাই যাবে তুমি।
– আংকেলের বাড়িতে বুলডগ আছে, টিয়ে-ময়না পাখি আছে বেশ লাগে আমার। আম্মুর গলার মুক্তোর মালা রঙের গাড়িও আছে।
– বাহ্।
– স্যার বলেন, লেখাপড়া করে যে/গাড়ি-ঘোড়া চড়ে সে।
– না না, ইয়াসিন সাহেব কাঁচাপাকা চুল ঝাঁকিয়ে বলেন, কবিতাটি হবে এ রকম- ‘লেখাপড়া করে যে,/ ভালো মানুষ হয় সে।’
হাসতে থাকে বোকান।
– কবিতাটি তোমার- তাই না দাদাজান? আমি জানি, তুমি সবার মতো ভাব না, অন্যরকম কিছু একটা ভাবো। বেশ, অন্যরকম করে ভাবতে আমার ভালো লাগে। তোমরা এখনকার ছেলেমেয়েরা কী করো?
– কী করি বলো।
– তোমরা ট্যাবে ফেসবুক দ্যাখো। ম্যাসেনজারে বন্ধুদের সাথে কথা বলো, ছবি পোস্ট করো।
– হ্যাঁ হ্যাঁ দাদাজান। খুব মজার একটা ব্যাপার হয়েছে।
– কী রকম বলো তো?
– আমাদের ক্লাসে অথৈ পড়ে, ও ফেসবুকে না ওর একটি ছবি পোস্ট করেছে।
– হুঁ, বুঝলাম, তারপর?
হাসতে হাসতে বোকান বলে, কেউ কমেন্ট করেনি। এ নিয়ে সে কি কান্না ওর। তাইতো ওর মন খারাপ। দাদু আর নাতি খুব হাসেন এ নিয়ে।

২.
ঠিক সন্ধ্যার মুখে গালিব আংকেলের বাড়ি থেকে ফিরে আসে বোকান। সঙ্গে নীলা। নীলা খুশি মুখে বলে, দারুণ একটা ডুপ্লেক্স বাড়ি তৈরি করেছে গালিব ভাইয়া। টাইলসগুলো লাল আর নীল রঙে মেশানো। এমন কখনও দেখিনি আব্বা।
ইয়াসিন সাহেব নীলার কথা শোনেন, মনে মনে ভাবেন শুধু বোকানের কথা। ওর প্রিয় আংকেলের বাড়ি থেকে ফিরে এসে ওর মুখ গোমড়া কেন? মুখে কলকল হাসি নেই। ব্যাপারটা কী? অবসরের পর বাড়িতে শুধু ওর সঙ্গেই বন্ধুত্ব, সবার কথা তিনি শুনেন, কথা বলেন শুধু নাতির সঙ্গে।
ডিনারের পর বলেন, চলো বোকান ছাদ থেকে ঘুরে আসি।
তক্ষুনি রেডি সে।
সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে ইয়াসিন সাহেব বলেন, বুঝলে বোকান, এখন শুক্লপক্ষ। ছাদে উঠে আমরা চাঁদের আলো দেখব।
– চাঁদের আলো আমরা খুব এনজয় করব।
– হ্যাঁ, এজনয় করব।
কী চমৎকার লাগছে চৈত্র মাসের এই রাতকে। সারা ছাদ চক্কর দিচ্ছে বোকান। হু হু করে বাতাস বইছে। ওকে জড়িয়ে ধরে দাদাজান বলেন, কি রে বোকান, এত প্রিয় আংকেলের বাড়ি থেকে ফিরে এসে মুখ গোমড়া করে বসে রইলি যে।
বোকান বলে, আমি আর কক্ষনো গালিব আংকেলের বাড়িতে যাবো না। কক্ষনো না, কোনো দিনও না।
– কেন রে- কী হয়েছে?
– জানো দাদাজান, আংকেলের বাড়ি কী চমৎকার আম আর আমলকী গাছ ছিল, ডালে পাখিরা এসে বসত, কিচির মিচির করত, আমি আর তুমি কত দিন বসে গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে বৃষ্টি ঝরা দেখেছি- দেখিনি দাদাজান? তুমিই বলো।
শুধু বৃষ্টি ঝরা নয়, গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে রোদের ঝিকিমিকি দেখেছেন। ডুপ্লেক্স বানাতে গিয়ে সব গাছ কেটে ফেলল? প্রাণে এতটুকু ওর বাজেনি?
– তুমি একদিন বলেছ দাদাজান, গাছের প্রাণ আছে। ইমন চাচুও বলেছে। বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু পরীক্ষা করে বলেছেন, মানুষের মতো গাছের মনেও সুখ-দুঃখ আছে। তাহলে বলো তো দাদাজান, আংকেল যে গাছগুলো কাটল- ওরা ব্যথা পায়নি? ওরা কাঁদেনি?
ওদের কান্না আমরা শুনতে পেলাম না কেন? কেন শুনতে পাইনি দাদাজান?
ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে বোকান। চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় ডুবে আছে ওর শরীর। ইয়াসিন সাহেব তাকিয়ে থাকেন ছোট্ট এই নাতিটির দিকে। এ যেন ক্যানডি-ক্যাডবেরি খাওয়া ছোট বোকান নয়। মিকি মাউজ আর টেডি বিয়ার নিয়ে লুফোলুফি করা দুষ্টুমি নয়- সবার সুখ-দুঃখে কাঁদা-হাসা মানবিকবোধ নিয়ে ও যেন বিশাল এক মহামানব হয়ে উঠেছে।
সিঁড়ি ভাঙার ধুপধাপ শব্দ ভেসে আসে। ইমন এসে বলে, আমে-দুধে মিশে কী করছ শুনি? সবার সাথে আলোর মাও এসেছে।
ও বলে বোকান আর কী করব? ও তো চিনিরে সুগার, নাশতারে কয় বেরেকফাস্ট, জলদিরে কয় হারি আপ, কুনু কিছুতো ঠিকমতো কইবার পারে না, ও তো বোকাই।
চাঁদের আলোর মাঝে প্রাণ খুলে হাসে সবাই। বোকান গলা উঁচিয়ে বলে, আমি ইংরেজিতে বলি বুয়া- বুঝতে পারছ?
একে একে সবাই নিচে নামতে থাকে। এমনকি বোকানও চলে যায়। ছাদে একা দাঁড়িয়ে থাকেন ইয়াসিন সাহেব। ভাবতে থাকেন- আমি যখন থাকব না, তখন আমার ধবধবে ফর্সা নাতিটি অনেক বড় হবে। ও আমার উত্তরপুরুষ। বোকান নামে কেউ ওকে ডাকবে না- ডাকবে ইশরাত বলে।
সবাই বলবে,- দারুণ ছেলে হয়েছে তো, মানুষ হয়েছে- ভাবতে ভাবতে ইয়াসিন সাহেবের বুকের ভেতরটা খাঁ খাঁ করে ওঠে। কোঠরে ঢোকা দু’টি চোখ আবছা কান্নায় ভিজে যায়।
আমি থাকব না, বোকান থাকবে। নাম বোকান হলে কী হবে ও মোটেই বোকা নয়। কী চমৎকার ভাবনায় ঝকঝকে হয়ে আছে ইশরাত। ও মানুষ হয়েছে। ইয়াসিন সাহেবের বুকের ভেতরে মধুর এক আনন্দ খেলা করতে থাকে।

Share.

মন্তব্য করুন