জন্ম তার দক্ষিণ আফ্রিকায়। পরিবারের সাথে শৈশবেই অভিবাসী হন অস্ট্রেলিয়ায়। বয়স যখন ১০ তখন পরিবারের সাথে চলে আসেন ব্রিসবেনে। বাবা কাজ খুঁজে নেন খনিজ শিল্পে। এরপর ধীরে ধীরে অস্ট্রেলিয়ান হয়ে বেড়ে ওঠা মার্নাস লাবুশেনের। আর আজ তিনি অস্ট্রেলিয়ার হয়েই রাঙিয়ে চলছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গন। অভিষেকের অল্প দিনের মধ্যেই জায়গা করে নিয়েছেন বিশ্বসেরাদের কাতারে।
এ বছরের শুরুতেই ব্যাটসম্যানদের বিশ্ব টেস্ট র‌্যাংকিংয়ের তিন নম্বরে উঠে আসেন লাবুশেন।তালিকার এক ও দুইয়ে আছেন যথাক্রমে বিরাট কোহলি ও স্টিভ স্মিথ। চার নম্বরে নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামস। কোহলি, স্মিথ, উইলিয়ামসন- এমন ব্যাটসম্যানদের তালিকায় নিজেকে তুলে নিতে হলে কী করতে হয় সেটি তোমরা বুঝতেই পারছো। লাবুশেন সেটি করে দেখিয়েছেন অভিষেকের ১৫ মাসের মধ্যেই। অথচ তার শুরুটা
ছিলো খুবই খারাপ। তখন কেউ ধারণাই করতে পারেনি এই লাবুশেন এত তাড়াতাড়ি সেরাদের কাতারে চলে আসবেন। ২০১৮ সালের অক্টোবরে দুবাইতে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক লাবুশেনের। অভিষেকটা একদমই ভালো ছিল না তার। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে রানের খাতা খোলার আগেই আউট হয়ে ফিরতে হয় তাকে। দ্বিতীয় ইনিংসেও নিজেকে মেলে ধরতে হন ব্যর্থ। করেন মাত্র ১৩ রান।
ক্যারিয়ারের প্রথম আট ইনিংসে নামের পাশে মাত্র একটি ফিফটি ছিল তার। অস্ট্রেলিয়ার মতো দলে এমন পারফরম্যান্স করে কি আর টিকে থাকা যায়?
লাবুশেনও পারেননি। দলের দুই সেরা ব্যাটসম্যান ডেভিড ওয়ার্নার ও স্টিভ স্মিথের ওপর আইসিসির নিষেধাজ্ঞা থাকায় অস্ট্রেলিয়ার জার্সি গায়ে তোলার সুযোগটা পেয়েছিলেন লাবুশেন; কিন্তু শুরুটা ছিল বিবর্ণ। তাই যখনই স্মিথ-ওয়ার্নার নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দলে ফিরলেন লাবুশেনকেও হারাতে হয় তার জায়গাটি। গত অ্যাশেজে স্কোয়াডে থাকলেও একাদশে জায়গা হচ্ছিল না তার।
যদিও ভাগ্য আবার তার সহায় হয়। লর্ডসে অ্যাশেজ সিরিজের তৃতীয় টেস্টে স্টিভ স্মিথ ইনজুরিতে পড়েন। আইসিসির নতুন নিয়ম অনুযায়ী বদলি খেলোয়াড় হিসেবে ব্যাটিং বোলিং করার সুযোগ পান লাবুশেন। যাকে বলা হয় ‘কনকাশন সাব’। আগে ক্রিকেটে বদলি খেলোয়াড়রা শুধুমাত্র ফিল্ডিং করার সুযোগ পেতেন; কিন্তু গত বছর আইসিসি এই নিয়মটি পাল্টে বদলি খেলোয়াড়দের মূল একাদশে ঢোকার সুযোগ করে দেয়। লাবুশেনই হচ্ছেন ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম কনকাশন সাব ক্রিকেটার। ওই টেস্টে স্মিথের বদলে ব্যাটিং করেন তিনি।
এই দ্বিতীয় সুযোগে ক্যারিয়ারের গতিপথটাই পাল্টে ফেলেন ২৫ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান। অস্ট্রেলিয়া দলে টিকতে হলে নতুন কিছু করে দেখাতে হবে- এটা বুঝতে পেরেই যেন জ্বলে উঠলেন তিনি। একে একে তার ব্যাটে ধরা দেয় চারটি হাফ সেঞ্চুরি। স্মিথের বদলি হিসেবে খেলতে নেমে দলে তার অভাব পূরণের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন ঘরোয়া ক্রিকেট সাউথ অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলা এই ব্যাটসম্যান।
ক্যারিয়ারের প্রথম ৮ ইনিংসে যার একটি মাত্র হাফ সেঞ্চুরি। দ্বিতীয় দফা সুযোগ পেয়েই তিনি খেললেন বিস্ময়কর সব ইনিংস। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের শেষ টেস্ট শেষ হয়েছে ৬ জানুয়ারি। এ পর্যন্ত সর্বশেষ ৮ ইনিংসে তার রান ১৮৫, ১৬২, ১৪৩, ৫০, ৬৩, ১৯, ২১৫ ও ৫৯। গত নভেম্বরে ব্রিসবেন ও অ্যাডিলেডে পাকিস্তানের বিপক্ষে হোম সিরিজে তুলে নেন দু’টি সেঞ্চুরি। পার্থে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৪৩ রানের ইনিংস খেলেন পরের ম্যাচেই। আর সিরিজের শেষ টেস্টে তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি (২১৫)।
ক্যারিয়ারের প্রথম ১৮ ইনিংসে ৬০ গড়ে স্পর্শ করেন এক হাজার রানের মাইলফলক। ২০১৯-২০ মৌসুমে ১১২ গড়ে মোট ৮৯৬ রান সংগ্রহ করেন লাবুশেন। এক মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ গড় তার। এর আগে ২০০৩-০৪ মৌসুমে ১০৭.২২ গড়ে ৯৬৫ রান করেছিলেন বিশ্বকাপ জয়ী রিকি পন্টিং। একই মৌসুমে ১০৫.৭৭ গড়ে ৯৫২ রান করেন সাবেক ওপেনার ম্যাথু হেইডেন।
লাবুশেন শেষ পর্যন্ত কত দূর যেতে পারবেন তা বলতে হয়তো অপেক্ষা করতে হবে আরো কিছু বছর। তবে যদি এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেন- নিশ্চিত করেই বলা যায় যে, পন্টিং, স্টিভ ওয়াহদের যোগ্য উত্তরসূরি পেতে চলেছে অস্ট্রেলিয়া।

Share.

মন্তব্য করুন