ডিং ডিং ঘণ্টা বাজিয়ে ২০১৯ সালের যবনিকাপাত ঘটে গেছে। নতুন বছর মানেই নতুন স্বপড়ব দেখা। নতুন বছর মানে পত্রিকার ভাঁজে পাওয়া ছোট এক চিলতে ঝকমকা ক্যালেন্ডার, যেখানে শুক্রবারগুলো লাল লাল দাগে ভরা। লাল দাগ মানে বিপদ হলেও ক্যালেন্ডারের লাল দাগ মানেই খুশির খবর। ৫২ সপ্তাহে ৫২টা ছুটি নিশ্চিত করে দিয়েছে এই লাল দাগ। এরপর ঈদ-পুজো; কত্তো কত্তো ছুটির দিন রে…! ৩৬৫ দিনে বছর হলে গড়পরতা ১০০ দিন ছুটিই থাকে, তা আর ক্যালেন্ডারের দোষ কী? নানান রকম ঐচ্ছিক ছুটির ফাঁদে পড়ে বেচারার এক্কেবারে কাহিল দশা। তোমরা নিশ্চয়ই খুব মজা নিচ্ছো। কারো পৌষ মাস আবার কারো সর্বনাশ। তো যাকগে ছুটির দিনগুলোয় তোমরা খুব মজা আত্তি করবে তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু প্রতিটা দিনতো ২৪ ঘণ্টায়। একটা দিন চলে গেলে খুব ক্ষতি হয়ে যাবে কিন্তু। খুব ভারী কথা হয়ে গেলো তো? এসো হালকা হয়ে নিই। বলো তো, বছরের প্রথম মাস কোনটি? জানুয়ারি তাই না? কিন্তু রোমানরা জানুয়ারিকে না- বরং মার্চকে প্রথম মাস ধরতো। তাদের কাছে বছর ছিল ১০ মাসের। পরে গ্রেগরিয়ান নামের এক লোক ১২ মাস করে দেন ক্যালেন্ডারে, যোগ হয় জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি। না হলে কি একটা বাজে অবস্থা হয়ে যেতো! ডিসেম্বর শেষে ৬০ দিন বসে বসে কাটাতে হতো। কোনো মাস নেই, দিন নেই- কী একটা বিচ্ছিরি অবস্থা!
জানুয়ারি : জানুয়ারি শব্দের অর্থ হচ্ছে কোনা কিছু শুরু করার পথ। নতুন বছরে ঢোকার পথকে তো জানুয়ারিই বলা হবে, নাকি? জানুয়ারির জন্য আমরা কিছু পরিকল্পনা রাখতে পারি, যেহেতু এটা বছর শুরুর মাস, স্বভাবতই একটু ঢিলেঢালা শুরু করি আমরা।ত প্রথম মাসটা চলে যায় ক্লাসের পাঠ্যবইয়ের প্রথম পাঠ দিয়েই। এই ঢিলেঢালা সময়ে আমরা দারুণ একটা কাজ করতে পারি।
এক. যারা সাঁতার জানো না, সাঁতার শিখে ফেলো। মাইকেল ফেলপসের নাম শুনেছো? তাকে জলদানব বলা হয়। বলা হয়ে থাকে হাঙরের সাথে পাল্লা দিয়ে সাঁতার কাটতে পারেন তিনি। না না, মোটেই তোমাকে ওভাবে পাল্লা দিতে বলছি না। ছোট পুকুরেই বন্ধুদের সাথে পাল্লা দাও। আর যদি শহুরে হও, তাহলে খুঁজে বের করো কোথায় পুকুর আছে, সপ্তাহে একটা দিন দাপিয়ে বেড়াও, সাঁতার মস্তিষ্কে প্রচুর শক্তি দেয়। ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়া ব্রজেন দাশের নাম শুনেছো? স্বপ্ন সাজাও ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেয়ার।
দুই. আর কী করতে পারো? ফিল্ম দেখতে পারো অবসরে। সুভাষ দত্তের ছবি ‘গলির ধারের ছেলেটি।’ দেখলে বুঝবে তুমি যখন নতুন বইয়ের গন্ধ নিচ্ছো তখন আরেকটি ছেলে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে, তোমরাইতো বৈষম্য ঘুচাবে! ‘দূরবীন’ সিনেমাটা দেখো।
তিন. অন্তত একটি বই পড়ে শেষ করতে পারো। না না, ক্লাসের বইয়ের কথা বলছি না। গল্পের বই, উপন্যাস, ইসলামি সাহিত্য এবং ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো। ঝটপট সদস্য হয়ে যাও নিকটস্থ পাবলিক লাইব্রেরি কিংবা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির; আর প্রত্যেক সপ্তাহে একটি করে বই নিয়ে পড়ে ফেলো।
চার. শরীর গঠনের এখনই সময়। ভর্তি হয়ে যাও কোনো জিমে, শরীর গঠন মোটেই ফেলনা জিনিস নয়। আমি চিকনা তালপাতার সেপাই। আমাকে দিয়ে হবে নাত- এসব অজুহাত দেওয়ার ঢের সময় পাবে। আগে শরীরটা বানাও। নইলে দেখা যাবে ক্লাসের প্রথম টেবিলে বসতেই পারছো না, হা হা হা। মারামারির জন্য শরীর বানিও না, সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য বানাও।
পাঁচ. এই মাসে আরেকটা কাজ করতে পারো- আব্বু যে পত্রিকা ঘরে আনেন ওখানে দেখবে শব্দ খেলা অথবা সুডোকু আছে। ওগুলো মেলাও। পত্রিকার ঠিকানায় পাঠিয়ে দাও। অরিগ্যামি শিখতে পারো, কাগজ দিয়ে নৌকা বানানো, শার্ট বানানো- এসব তো পারোই। এবার হাতি ঘোড়া বানানো শিখে ফেলো, জিগসাও শিখতে পারো। জিগসাও মানে ছবি মেলানো- দোকানেই পাবে নানা রকম ছবিওয়ালা বোর্ড। তাহলে জানুয়ারিটাকে কাজে লাগিয়ে ফেলো। আর হ্যাঁ, নতুন বই হাতে পেয়েই মলাট লাগিয়ে ফেলতে ভুলো না। পুরাতন বছরের ক্যালেন্ডার এ ব্যাপারে কাজে লাগাতে পারো।
ফেব্রুয়ারি : ‘ফেব্রুয়া’ মানে শোধন। সবকিছু পরিপাটি করার মাস, এ মাসটা বড় আদুরে মাস, সবচেয়ে ছোট মাস। ছোটরা একটু আদুরে হয় কি না! ধীরে ধীরে পড়াশুনার চাপত আসতে থাকবে এ মাসে। মোটেই ভড়কে যেও না।
এক. এ মাসে তোমাদের প্রথম কাজটি হবে সাইক্লিং শিখে ফেলা। আগে কতো দারুণ ব্যাপার হতো। দোকান থেকে ১০ টাকা ঘণ্টা হিসেবে সাইকেল ভাড়া নেওয়া যেতো, ২ টাকায় ১ মিনিট ফোন করা যেতো- এই দুইটা জিনিস উঠে গেছে। আহারে, তোমাদের জন্য বড্ড আফসোস হয়! আবার হিংসেও হয়। এখন তোমরা চাইলেই সাইকেল হাতে পাও। তাহলে আর দেরি কেনো? দুই চাকায় দুনিয়া দেখার লোভ কার না আছে। ক্লাসের কয়েকজন বন্ধু মিলে সাইকেল ক্লাব করে ফেলতে পারো। প্রতি শুক্রবার তোমরা রাইড দিতে পারো শহরের আনাচে কানাচে। সাইকেলে চড়তে আগে কান পেতে শুনে রাখো, ‘নো হেলমেট নো রাইড।’ সাইকেলে ঘুরতে গিয়ে তোমরা মজার একটা কাজ করতে পারো। যেমন- পলিথিনের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে পারো। একটা ছোটখাটো ব্যাকপ্যাক নিয়ে যাবে। আর কিছু হাতে আঁকা পোস্টার। ধরো, তোমরা কোনো ঝর্ণায় গেলে তারপর একটা নির্দিষ্ট স্থানের সব পলিথিন জড়ো করে ব্যাগে ভরে নিয়ে এলে। লোকজনকে ডাস্টবিন ব্যবহারে উৎসাহ দিলে। নিজেদের টাকায় ডাস্টবিনও দিয়ে আসতে পারো। দেখবে ছোট ছোট কাজ দেশকে বড় রকমের ধাক্কা দিবে।
আরেকটা ব্যাপার, সাইক্লিং ফেডারেশন অথবা বিডিসাইক্লিস্ট এর সাথে যোগ দিয়ে জিতে নিতে পারো অনেক পুরস্কার।
দুই. রুবিক্স কিউবিং ও দাবা খেলা; দুটোই কিন্তু মস্তিষ্কের খেলা। এগুলোকে বলা হয় মস্তিষ্কের ব্যায়াম। নিয়মিত এই জিনিসগুলোর চর্চা করলে দেখবে বছর শেষে দারুণ ফল পাচ্ছো। একটা ছেলে সারাদিন বইয়ের পেছনে জানপ্রাণ দিয়ে দিচ্ছে আর তুমি দিব্যি হেসে খেলে প্রথম হয়ে যাচ্ছো- এমন হলে দারুণ ব্যাপার হবে না?
তিন. লোকজনের নানান শখ থাকে। কারো বাগান করার শখ, তো কারো পাখি পোষা; কেউ বিড়াল-কুকুর পোষে, তো কেউ অ্যাকোরিয়ামে মাছ পুষতে ভালোবাসে। খাঁচায় বন্দি পাখি আর অ্যাকোরিয়ামের মাছ, চিড়িয়াখানা-চিড়িয়াখানা ব্যাপার। চাইলে এগুলো এড়িয়ে চলতে পারো। বাগান করা একটা দারুণ আইডিয়া। গ্রামে হলে তো জমিতেই বাগান করা সম্ভব। শহরে হলে ছাদে টবে নানান ফুলের চারা রাখতে পারো। তবে এগুলো করতে গিয়ে লোকজনকে বিরক্ত করা চলবে না।
চার. মোবাইলে ফুটবল খেলতে দারুণ মজা তাই না? একদম সত্যিকারের ফুটবলের আনন্দ পাওয়া যায়। কিন্তু এতে হয় কী? আমরা ধীরে ধীরে অসুখী হয়ে যাই। চোখ নষ্ট হয়ে যায়। আবার আম্মুর ভয়ে হেডফোন দিয়ে খেলতে গিয়ে কান নষ্ট হয়ে যায়। তার চেয়ে কি মাঠে খেলা ভালো না? ক্রিকেট, ফুটবল এসব তো মাঠের খেলা। চলো আবার মাঠে ফিরি।
পাঁচ. ১৩-১৪ বছর বয়স থেকেই ফেসবুক চালানোর অনুমতি দিচ্ছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। যদি তোমার বয়স ১৩-১৪ হয় তাহলে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলো। নিজে নিজে না। বরং বড় ভাইকে বলো ঠিকঠাক করে দিতে। অনেকে ফেসবুকে ফুল প্রজাপতি এসবের ছবি দিয়ে ফেসবুক খোলে। তুমি মোটেও অমন করবে না। নিজের নাম নিজের ছবি আর ফেসবুক কর্তৃপক্ষ যদি চায় সেক্ষেত্রে নিজের স্টুডেন্ট আইডি কার্ড দিয়ে ফেসবুক আইডি খুলবে। চেনা কেউ ছাড়া অন্য কারো কাছে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানো ঝুঁকিপূর্ণ। তেমনিভাবে তুমি চেনো না এমন কারো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টও একসেপ্ট করবে না। সপ্তাহে একটি সুন্দর লেখা তোমার ওয়ালকে সুন্দর রাখবে।
মার্চ : মার্চ মানেই বিক্ষুব্ধ। এই মাসেই আমাদের স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়। সুতরাং এ মাসটা একজন বাংলাদেশী হিসেবে তোমার জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এক. স্কুলে নানা ধরনের প্রতিযোগিতা থাকে এই মাসে। সে সবে অংশ নিয়ে নিজেকে প্রমাণ দিতে ভুলবে না। থাকে উপজেলায় নানা ধরনের প্রতিযোগিতা। প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে জেনে নিবে কোথায় কোথায় প্রতিযোগিতা হচ্ছে। এসব প্রতিযোগিতার পুরস্কার সার্টিফিকেট পরবর্তী জীবনে দারুণ কাজে দেবে।
দুই. মার্চে যেহেতু প্রচুর ছুটি পাচ্ছো। বড় কোনো ট্যুরের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারো। ধরো, এ সময় বান্দরবান যাওয়া যেতে পারে। বান্দর মানে বানর আর বান মানে বাঁধ। বান্দরবানে গেলে তুমি চিড়িয়াখানায় থাকা বানরের চেয়ে বন-বাদাড়ের বানর দেখে বেশি পুলকিত হবে। এখানে সব কিছু প্রকৃতি প্রদত্ত। বান্দরবানে স্বর্ণমন্দির ও পাসিংপাড়া দেখলে তোমার মন জুড়িয়ে যাবে। জাদিপাই ঝর্ণা, তিনাপসাই ডাবল ফলস আরো নানা রকম ঝর্ণায় তুমি অবিশ্বাস্য আনন্দ পাবে। দার্জিলিং পাড়া, চিম্বুক শৈলপ্রপাত আর আঁকাবাঁকা পাহাড় ছুঁয়ে তুলোর মতো ভেসে যাওয়া নীলগিরি। আহা, ভালো লাগা বাংলাদেশের প্রায় সব সর্বোচ্চ পাহাড়ই বান্দরবানে আছে। কেওক্র্যাডং, তাজিংডং, সাকা হাফং এসব পাহাড় তো আর একদিনে যাওয়া যাবে না। সে এক লম্বা সময়ের ব্যাপার। তবুও যে কোনো একটি ভ্রমণ তালিকায় রাখতে পারো।
তিন. এ মাসে নিজেকে একটু সময় দিতে পারো। ধরো, নতুন কোনো ভাষা শেখার জন্য এ মাসটাকে কাজে লাগাতে পারো। ইংরেজিতে আজীবন দুর্বল না থেকে এ মাসে ভালোমতো প্র্যাকটিস করলে কাজে দেবে। আরো শিখতে পারো বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর ভাষা ম্যান্দারিন, মানে চায়না ভাষা। জাপানের ভাষার সাথে আমাদের বাংলা ভাষার দারুণ মিল আছে। শিখে নিতে পারো। এমনকি জাপানের পতাকার সাথেও আমাদের পতাকার ভালো মিল আছে। শিখতে পারো জার্মান-ফ্রেঞ্চ। গুরুত্বপূর্ণ ও সহজ ভাষা হচ্ছে আরবি। আরবি শিখলে ব্যাপক কাজে দেবে। নিজের ভাষাও ভালোভাবে শেখো। বাংলা ব্যাকরণ নাকি লোকজনে মাথার উপর দিয়ে যায়। তুমিই না হয় হয়ে যাও সেরা বাংলাবিদ।
চার. ডায়েরি লেখা : এক যান্ত্রিক সময়ে বাস করছি আমরা। এখন ডায়েরি লেখে কয়জন। কিন্তু যারা লেখে তারা তো স্পেশাল ওয়ান। নিজেকে স্পেশাল মানুষ বানিয়ে ফেলো। ডায়েরিতে থাকতে পারে দিনের কর্মপরিকল্পনা, দিনের স্মরণীয় ঘটনা কিংবা টুকরো গল্প, অনুসরণ করতে পারো বিখ্যাত মানুষদের ডায়েরি। যেমন- আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি, আহমদ ছফার ডায়েরি- এসব।
পাঁচ. ভিডিও করা অথবা ফটোগ্রাফি করা খুব দারুণ একটা ব্যাপার। তোমার ভিডিও খুবই একটা ভালো হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। তুমি ভিডিওটা কোন চিন্তা থেকে করছো সেটাই আসল কথা। ধরো, বন্ধুদের মাঝে ঝগড়া হচ্ছে, আবার একই বন্ধুর সাথে খেলাধুলা করছে ঝগড়া করা বন্ধুটা। তুমি আলাদা আলাদা করে দুটো ভিডিও করে রেখে দিলে। কিংবা ধরো, তোমার পোষা বিড়ালটা রাগ করেছে অন্য বিড়ালটার ওপর, এসব ছোট ছোট দৃশ্য ইউটিউবে আপলোড দিতে পারো।
এপ্রিল : এপ্রিল মানে দ্বিতীয়। যেহেতু রোমানরা মার্চ মাসকে বছরের প্রথম ধরতো, স্বভাবতই এপ্রিল মাসের কপালে এমন নাম জুটেছে। এ মাসের শুরুতে কেউ কেউ দেখবে পশ্চিমা ঢঙে তোমাকে বোকা বানাচ্ছে। ১ এপ্রিলকে বলা হয়ে থাকে এপ্রিল ফুল ডে। কিন্তু ইতিহাস বলে, স্পেনে এই দিনে মুসলিমদের ওপর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চলেছিল। এরপর প্রতি বছর লোকজনকে বোকা বানিয়ে এ দিনটি শুরু করার এক উৎসব চালু হয়। সাবধান! ঠাট্টাচ্ছলেও এমন উৎসবে যোগ দিও না।
এক. এ মাসে একটি বড় কাজ করতে পারো। নিজে
নিজে ইমেইল খুলে বন্ধুবান্ধবদের আমন্ত্রণ জানাতে পারো। ইউটিউবের চ্যানেল খুলে নিজের ভিডিও আপলোড দিতে পারো। চাইলে ওয়েবসাইটও খুলতে পারো। তবে এটি মেইনটেইন করা বেশ ঝামেলার কাজ। ফেসবুকে মেজেসের চেয়ে মেইলের মেসেজে বেশি সক্রিয় হলে ভবিষ্যতে ভালো অভিজ্ঞতা হবে। সবাই যখন ‘আইসিটি ক্লাসে কী পড়বো, কী শিখবো’ হাবুডুবু খাবে, তোমার ঠোঁটের কোণে তখন থাকবে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার মিষ্টি হাসি। ইংরেজি পরীক্ষায় সবাই যখন মেইল লিখতে গলদঘর্ম হয়ে যাবে, নাভিশ্বাস উঠবে, তখন তুমি ‘কেল্লা ফতে’ টাইপের হাসি হাসতে পারবে। সুতরাং ইন্টারনেটকে কাজে লাগাতে এ মাসটাকে খুবই গুরুত্ব দাও।
মে : মেইয়া নামের রোমান দেবতার নামে মে মানের নামকরণ করা হয়েছে। মে মাসটা অন্য মাসগুলোর চেয়ে একটু আলাদা। আলাদা মানে এ সময় অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষা কড়া নাড়ছে তোমার ঘরে। সুতরাং এতো দিন যেসব ‘কুবুদ্ধি’ দিয়েছি ওগুলো থেকে কেটে পড়ো। এখন সময় পড়াশুনার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া। তবুও এ মাসে কয়েকটি ছোটখাটো কাজ করে রাখতে পারো।
এক. পাসপোর্ট বানিয়ে ফেলতে পারো, ম্যাথ অলিম্পিয়াডসহ নানা কিছুতে কাজে লাগবে।
দুই. ব্যাংকে স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্ট খুলে ফেল। পাবে ফ্রি এটিএম কার্ড।
তিন. রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করে ফেলতে পারো।
চার. ক্যালিগ্রাফি কোর্স/আইইএলটিএসের প্রস্তুতি/ছবি আঁকা শিখতে পারো।
পাঁচ. প্রতিদিনের জন্য ঘরে একটা পত্রিকা রাখতে হকারকে বলে দাও।
জুন : রোমানদের দেবতা জুপিটারের স্ত্রী জুনো, তার নামেই এই জুন মাস। জুন মাসটা প্রায় সকলেরই অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষার মৌসুম। এ সময় বই-পুস্তকে খুব মন দিতে হবে। অন্য সবার চেয়ে গুনে গুনে দশ কদম এগিয়ে থাকো। এ জন্য শুধুমাত্র অর্ধ-বার্ষিকের জন্য না পড়ে টার্গেট করো ফাইনালকে। এ মাসে আগে যা যা করতে পারো তা হলো :
এক. যদি গান করো ৪-৫ জন মিলে দল গঠন করে ফেলো।
দুই. যদি ভ্রমণপ্রিয় হও তাহলে করতে পারো অ্যাডভেঞ্চার টিম।
তিন. খেলাধুলার জন্যও টিম বানিয়ে ফেলা যায়।
চার. টিম বানাতে পারো পড়াশুনার জন্যও। গ্রুপ রিডিং খুব কাজে দেয়।
পাঁচ. এমনকি ফিল্ম দেখে আলোচনার জন্যও টিম বানাতে পারো।
ছয়. আগারগাঁও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে প্রতি শনি ও রোববার সন্ধ্যায় তারা দেখতে যেতে পারো। পড়তে পারো তারা পরিচিতি, নুনকি একটি তারার নাম।
সাত. প্রতিদিন তিন কিলোমিটার অথবা ৩০ মিনিট দৌড়াতে পারো। এতে নাকি দুই বছর আয়ু বাড়ে।
জুলাই : জুলিয়ন ক্যালেন্ডার প্রবর্তক জুলিয়াস সিজারের নামে জুলাই মাসের নামকরণ হয়েছে। জুলাই মাসে তুমি কয়েকটা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে পারো।
এক. যদি বই পড়তে ভালোবাসো, তাহলে বুকশেলফ কেনার টার্গেট রাখো।
দুই. প্রিয় ফুটবল বা ক্রিকেট দলের জার্সি, ক্যাপ সংগ্রহে রাখতে পারো।
তিন. অজনপ্রিয় (খো খো, অ্যার্চারি শ্যুটিং ইত্যাদি) অথচ দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনে- এমন খেলার দিকে টার্গেট করতে পারো।
আগস্ট : আগস্ট মাসের নাম অগাস্টাস সিজারের নামানুসারে করা। এই মাসটাতে যে সমস্ত কাজ টার্গেটে রাখতে পারো তা হলো-
এক. কারাতে, সার্ফিং বা রোলার স্কেটিং শিখতে পারো।
দুই. পারতপক্ষে চিঠির চল উঠে গেলেও তুমি কাউকে চিঠি পাঠিয়ে চমকে দিতে পারো। পত্রিকাগুলোয় চিঠি পাঠাতে পারো।
তিন. প্রত্যেক দিন ডায়েরি লিখতে পারো।
চার. দিনের শুরুতে নিজেকে বেশ কিছু টার্গেট ছুঁড়ে দাও আর দিনশেষে নিজেকে পুরস্কৃত করো।
পাঁচ. তুমি মেয়ে হলে অ্যানা ফ্রাঙ্ক, পূর্ণা মালাভাতের সফলতার গল্প পড়তে পারো। আর ছেলেদের মধ্যে সোমেন চন্দ, সুকুমার রায় এরা তোমার বয়সে কেমন চিন্তা করতো- তা দেখতে পারো।
সেপ্টেম্বর : সেপ্টেম ল্যাটিন শব্দ, অর্থ সপ্তম। বাংলা শব্দের সাথে একটু মিল আছে তাই না? সেপ্টেম্বরে লোকজন নানা দিকে ঘোরাঘুরি করতে যায়। তুমি যদি ঘোরাঘুরি করতে পছন্দ করো সেই ক্ষেত্রে যা করতে পারো- সবাই তো ঘুরতে যায় কিন্তু তুমি শিখতে যাও।
এক. যেখানে ঘুরতে যাবে ওখানকার স্থানীয় পরিবেশ সম্পর্কে লিখতে পারো।
দুই. জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে আলাদা কোনো ভাবনা হলে জানতে পারো।
তিন. ঐ স্থানে জন্ম নেওয়া (দেশবরেণ্য) লোকদের তালিকা করতে পারো।
চার. ভ্রমণটাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে আরেকটা জিনিস কাজে লাগে। ক্যামেরা, তুমি ভ্রমণ নিয়ে ডকুফিল্ম বানাতে পারো। ক্যামেরা দিয়ে খটাস খটাস ছবি না তুলে কাজের ছবি তোলো, যে ছবি অন্যেরা তোলে না।
পাঁচ. সবাই ছবি তোলে, সব ছবিতে তোমাকে থাকতে হবে এমন কথা নেই। ছবি তোলার চেয়ে চোখ দিয়ে দৃশ্যগুলো অনুভব করো, কি যে ভালো লাগবে! বলা হয়ে থাকে- প্রকৃতি দেখলে দৃষ্টি প্রসারিত হয়, আর ছবি দেখলে দৃষ্টি সঙ্কীর্ণ হয়, আবদ্ধ হয়।
অক্টোবর : অক্টোপাসের নামকরণ কিভাবে হলো? আট পা বলেই তো? ‘অক্টো’ রোমানদের শব্দ, এর অর্থ ৮, বাংলা একই শব্দ একটু উনিশ-বিশ করে হয়েছে ‘অষ্টম’। তাহলে ল্যাটিনের সাথে তো দারুণ মিল বাংলার! তুমি ভাষাবিজ্ঞানী হতে চাও? এভাবে ভাষার মিলগুলো তোমাকে চমকায়? কিংবা নানান প্রাণিজগতের মধ্যে মিল খোঁজো? তাহলে এ মাসে যা করতে পারো :
এক. ল্যাটিন ও সংস্কৃত ভাষা এবং বাংলা ব্যাকরণটা এ মাসে টার্গেট নাও।
দুই. বড় ভাইদের জীববিজ্ঞান বইটা আর তোমার বিজ্ঞান বইয়ের ‘জীববিজ্ঞান’ বিষয়ক অংশ ভালোভাবে পড়ো, ভবিষ্যতে ডাক্তার কিংবা জীববিজ্ঞানী হতে গেলে কাজে লাগবে।
তিন. গত মাসে কিংবা পূর্বের মাসগুলোতে যে সমস্ত ভ্রমণ করেছো, ওখান থেকে বাছাই করে একটা সেরা ভ্রমণ কাহিনী লিখো। পাঠিয়ে দাও কোনো পত্রিকার ঠিকানায়, কিশোর পাতায়ও পাঠাতে পারো।
চার. এ মাসে দেখে ফেলতে পারো সায়েন্স ফিকশন ভিত্তিক বিখ্যাত ম্যুভিগুলো। যদিও এগুলো বেশিরভাগ ইংরেজি, তবু সাবটাইটল দেখে দেখে বুঝতে পারবে। ‘স্পাইডারম্যান’, ‘দি অ্যান্ট’- এগুলো কিন্তু সায়েন্স ফিকশন ম্যুভি। পড়তে পারো সায়েন্স ফিকশনের
নানান রকম বই।
পাঁচ. Dilemma শব্দে অর্থ উভয় সঙ্কট। বয়ঃসন্ধিকালে মানুষ সবচেয়ে বেশি উভয় সঙ্কটে পড়ে। সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। তোমার যদি এমন হয় প্রিয় মামা, প্রিয় বড় ভাই কিংবা সাইকিয়াট্রিস্টকে বলতে পারো, এখন কিন্তু পত্রিকার পাতায় মনোরোগ বিশেষজ্ঞের নম্বরও দেয়া থাকে, উনাদেরকে ফোন করতে পারো। চাইলে নিজে নিজে সিদ্ধান্তে আসতে পারো। যে বিষয়গুলো নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছো ওগুলো লিস্ট করে নিজে নিজে প্রত্যেকটা বিষয়ের পাশে প্রায়োরিটি লিস্ট দাও। ধরো, তোমার কিছু টাকা জমেছে তা দিয়ে তুমি কিছু করতে চাচ্ছো, কিন্তু ডিলেমায় ভুগছো। তাহলে কী করবে? প্রথমে লিখো-
১. ক্যামেরা
২. সাইকেল
৩. ল্যাপটপ।
ধরো, ক্যামেরা আর ল্যাপটপ ৩০% করে গুরুত্বপূর্ণ, তাহলে দেখা যাচ্ছে সাইকেল ৪০% গুরুত্বপূর্ণ। এভাবে প্রায়োরিটি লিস্ট করে সিদ্ধান্তহীনতাকে মোকাবেলা করতে পারো। এ মাসটা নিজেকে নিজে কাউন্সেলিং করো।
নভেম্বর : এই শব্দটি এসেছে ল্যাটিন ‘নোভেম’ শব্দ থেকে। বাংলায় আমরা এর অর্থ করেছি নবম। নভেম্বর মাস মানেই বছর শেষের ডুগডুগি বাজছে। অন্য দিকে তোমার মনের ভেতর ভয়ের কালোমেঘ আসা-যাওয়া করছে, ভয় কিসের? ঝটপট রিভিশন দিয়ে ফেলো সব পড়া। যেভাবে পড়তে ভালো লাগে ওভাবেই পড়ো।
এক. দিনের ১২ ঘণ্টা পড়ায় ডুবে যাও।
দুই. এমন না যে খেলাধুলা শিকেয় তুলবে। না, বরং খেলাধুলার টাইমটা কমাও।
তিন. সারা বছরের জমানো কাজগুলো একটু একটু করে শেষ করতে চেষ্টা করো।
চার. গণিত, ইংরেজি, বিজ্ঞান- এই তিনটা বিষয়কে প্রায় সবাই ভয় পায়। তুমি বরং তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে গণিত অলিম্পিয়াড, বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, ইংলিশ অলিম্পিয়াড- এগুলোতে চুটিয়ে অংশ নাও, আর পুরস্কার জেতো।
পাঁচ. নিয়মিত পত্রিকা পড়ছো তো? এখন কিন্তু নিউজ পেপার অলিম্পিয়াডেও অংশ নিতে পারো।
ডিসেম্বর : শব্দের দিকে তাকিয়ে দেখো তো, বাংলা কোনো একটা শব্দের সাথে মিল পাচ্ছো কি না? ল্যাটিন ডিসেম মানে দশম, মানে রোমানদের বছর যেহেতু মার্চ দিয়ে শুরু হতো সে হিসেবে এটি দশম মাস। কী আশ্চর্য! এমন মাসের ভুল চলছে সেই কবে থেকে। কেউ এটাকে পাল্টাতে এলো না। যেহেতু বছর শেষ হয়েই গেলো তাহলে ঝাড়া হাত পা তাই না? তোমাদের প্রায় সবার এখন টানা ছুটি। আহ কি আনন্দ আকাশে বাতাসে! ভুলে গেলে চলবে না, সারা বছর যা যা করতে পারোনি তার একটা লিস্ট লিখতে হবে। তারপর নিজের ভুলত্রুটি পর্যালোচনা কর। এই ডিসেম্বর মাসটাকে কাজে লাগাতে হবে না? তাহলে ঝটপট একটা কাজ কর।
এক. ক্লাসের বড় ভাইদের কাছ থেকে বাংলা বই নিয়ে সব গল্প একটানে পড়ে ফেলো।
দুই. ঐ যে বছরের শুরুতে একটা টাস্ক ছিলো! ৫৪ সপ্তাহে ৫৪ বই। নিশ্চয়ই এখনো ২০-৩০টা বাকি, তাই না? প্রত্যেকটা দিন গল্পের মধ্যে থাকো।
তিন. এই মাসে যেহেতু আমাদের মহান বিজয় অর্জিত হয়েছে, তাই তোমরা মুক্তিযুদ্ধের গল্প পড়তে পারো। পড়তে পারো সেলিনা হোসেনের ‘যুদ্ধ’, হুমায়ূন আহমেদের ‘সূর্যের দিন’, মোস্তফা মাহাথিরের ‘সবুজে সূর্যোদয়’ এবং মুক্তিসংগ্রাম নিয়ে রচিত অন্যান্য সব গল্প।
তো আর কী, এই মাসে তোমাদের জন্য অতো টার্গেট দিতে ইচ্ছে করছে না। এই মাসটা নিজের মতো কাটাও। একদম পাক্কা ফ্রি, নো কোচিং, নো প্রাইভেট, খালি ঘুরবে। আর হ্যাঁ, বইগুলো পড়বে। কিশোর পাতার ঈদসংখ্যার যে লেখাগুলো পড়োনি ওগুলোও পড়ে ফেলতে ভুলো না এ মাসে। ভালো থেকো। হ্যাপি ২০২০!

Share.

মন্তব্য করুন