কম্পিউটার। বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার। প্রতিনিয়ত আমাদের সামনে হাজির হয় নিত্য নতুন চমক নিয়ে। এবারের চমক কোয়ান্টাম কম্পিউটার। এটা এমন একটা কম্পিউটার যেটা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যকে সরাসরি কাজে লাগিয়ে সব কাজ করে। কোয়ান্টামের জগতে পরমাণু প্রথাগত পদার্থবিদ্যার সূত্র মানে না। কোয়ান্টাম কণা একই সময়ে দুটি স্থানে অবস্থান করতে পারে। একটি কণা একই সঙ্গে তার সব রকম অবস্থায় থাকতে পারে এবং প্রত্যেক অবস্থার বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করতে পারে।
আমাদের প্রচলিত কম্পিউটারে ০ ও ১ দিয়ে সবকিছু হিসাব করা হয়; সার্কিটে নির্দিষ্ট মাত্রার ভোল্টেজের উপস্থিতি হলো ১, অনুপস্থিতি হলো ০। ০ ও ১ হলো বর্তমান কম্পিউটারে তথ্যের একক, যাকে বলা হয় বিট। কোয়ান্টাম কম্পিউটারে তথ্যের একক হলো কিউবিট।
কোয়ান্টাম কম্পিউটারে বিটগুলো সুপার পজিশনে থাকে অর্থাৎ একই সময় ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে থাকতে পারে। ফলে এই ধর্মকে কাজে লাগিয়ে কম্পিউটার তৈরি করা গেলে সেটার গতি হবে হাজার গুণ বেশি। সুপারপজিশন ছাড়াও কোয়ান্টামে আরও কিছু ধর্ম আছে যেমন এনট্যাঙ্গলমেন্ট। আর এসব অদ্ভুত ধর্ম নিয়ে গবেষকরা যে কম্পিউটার তৈরির চেষ্টা করছেন সেটাই কোয়ান্টাম কম্পিউটার।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে বর্তমান কম্পিউটার ব্যবস্থায় একবারে হয় ০ নতুবা ১ ব্যবহার করতে পারে কম্পিউটার। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটার ০ ও ১ দুটিরই প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। আবার একই সময়ে একই সঙ্গে ০ ও ১ এর প্রতিনিধিত্ব করতে পারে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। প্রযুক্তি দুনিয়ার বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শুরু করে ধনী রাষ্ট্রের সরকার, সামরিক বাহিনী সবাই এই কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির জন্য ছুটছে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার দিয়ে কী কী করা যায়? এক কথায় কোয়ান্টাম কম্পিউটার যাদের আয়ত্তে আসবে তারা এক লাফে অনেক এগিয়ে যাবে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার আসলে ঠিক কী কী করতে পারে? এবারের আলোচনা সেটা নিয়েই।
গুগলের এক ঘোষণার কারণেই কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে এত আলোচনা। গুগলের দাবি তাদের নির্মিত সিকামোর প্রসেসর সাড়ে তিন মিনিট সময়ে এমন এক গাণিতিক হিসেব সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে, যা প্রচলিত সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পিউটারের করতে ১০ হাজার বছর সময় লাগত। বিখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে গুগল প্রথম এই তথ্যত জানায়। যদিও গুগলের এই অগ্রগতি নিয়ে কানাঘুষা চলছিল অনেক আগে থেকেই। গুগলের এই অর্জনকে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের প্রম ধাপ মনে করা হচ্ছে। এদিকে প্রযুক্তি যুদ্ধ এরই মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে।
আইবিএম দাবি করেছে গুগল তাদের অর্জনকে বাড়িয়ে বলছে এবং গুগল যেটা করেছে সেটা তারা (আইবিএম) তাদের কাছে থাকা সুপার কম্পিউটার দিয়ে আড়াই দিনে করে দেখাতে পারবে। বেশ কয়েক সপ্তাহ নীরব থাকার পর গুগলও নীরবতা ভেঙ্গে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে আইবিএমকে। ‘পারলে করে দেখাক’ বলে তারা খোঁচা দিয়েছে আইবিএমকে। সুতরাং বুঝতেই পারছো যুদ্ধ শুর হয়ে গেছে।
বর্তমান কম্পিউটার সংশ্লিষ্ট যে কোন কিছুর নিরাপত্তাকে যথেষ্ট মনে হতে পারে। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটার বর্তমান নিরাপত্তাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে পারে।
প্রচলিত বেশির ভাগ এনক্রিপশন পদ্ধতি ভেঙে দিতে পারবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। কিন্তু কীভাবে? সহজে বলতে গেলে অকল্পনীয় গতি দিয়ে সম্ভাব্য বিলিয়ন বিলিয়ন ‘এনঙ্ক্রিপশন কি’ কয়েক সেকেন্ডে পরীক্ষা করে দেখতে পারবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। আর এই জন্যইত পরাশক্তিগুলো ছুটেছে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের পেছনে। যে সবার প্রথমে পরিপূর্ণ কোয়ান্টাম কম্পিউটার অর্জন করতে পারবে সে রাতারাতি সবার থেকে এগিয়ে যাবে। মুহূর্তেই ঢুকে যেতে পারবে প্রতিপক্ষের ডাটাবেসে।
যুক্তরাষ্ট্র চীন রাশিয়াসহ অনেক দেশই তাই কোয়ান্টাম কম্পিউটার নির্মাণে উঠেপড়ে লেগেছে। এই কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করবে ভবিষ্যতের কোয়ান্টাম জগৎ। এবং অত্যাধুনিক সব কম্পিউটার দিয়েও যেসব সমস্যা সমাধান করা যাচ্ছে না, সেসবও সমাধান করা সম্ভব হবে এই কম্পিউটারের মাধ্যমে। তবে আমাদের নাগালের মধ্যে আসতে হয়তো অপেক্ষা করতে হবে অনেক।

Share.

মন্তব্য করুন