একই পাখির বাহারি রং। যেমন রং, তেমনি চমক লাগানো কাজকর্ম। গড়ন আমাদের দেশের টিয়াপাখির মতো। তবে আকারে অনেক বড়। মাথা থেকে গলা, বুক ও পিঠ টকটকে লাল। পাখনায় একস্তর কাঁচা হলুদ পালক, শেষাংশ আকাশের মতো নীল। লেজের লম্বা পালকগুলো লাল আর চোখের পাশ দিয়ে সাদা রঙের প্রলেপ। পাখিটির নাম স্কারলেট ম্যাকাও। উজ্জ্বল লাল, নীল ও হলুদ রঙের সমাহারে স্কারলেট ম্যাকাওয়ের মোহনীয় রূপে সকলেই মোহিত হতে বাধ্য। শক্তিশালী বাঁকা ঠোঁট, দীর্ঘতম সময় উড়তে পারার বৈশিষ্ট্যও উল্লেখযোগ্য।
দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন বন এদের আদিনিবাস। এ ছাড়া মেক্সিকো, কোস্টারিকা, পানামা ও এল সালভাদরেও এই পাখির দেখা মেলে। ম্যাকাও ঠোঁট থেকে লেজ পর্যন্ত ৩৩ থেকে ৩৫ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। গভীর জঙ্গলে বড় গাছের কোঠরে, বিশেষ করে পাইন গাছে এরা বাসা বাঁধে। এদের গড় আয়ু বনে ৫০ বছর হলেও খাঁচাতে এবং পোষ্য হিসাবে এদের ৭০-৮০ বছর অবধি বেঁচে থাকতে শোনা যায়। তবে তার জন্য দরকার হয় ভালো খাবার এবং বড় জায়গার।
প্রকৃতিতে এরা বছরে একবার দুই থেকে চারটি ডিম পাড়ে। ডিমের রং হয় সাদা। সাধারণত ২৮ দিনে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হয় এবং প্রায় ৯৭ দিন পর বাচ্চাগুলো বাসা ত্যাগ করে।
ম্যাকাও দলবেঁধে চলাচল করে। এক দলে ১০টি থেকে ৩০টি পর্যন্ত থাকে। চোখ জুড়ানো ঝলমলে রং আর মিশুক স্বভাবের কারণে সারা বিশ্বেই পাখিটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। শৌখিন পাখি অনুরাগীরা একে খাঁচায় পোষেণ। তবে আমাজনের আদিবাসীরা ম্যাকাওয়ের পালক দিয়ে তাদের মুকুট ও অলঙ্কার তৈরি এব পোশাক সজ্জিত করে।
শুধু দেখতে সুন্দর তাই নয়, অনেক গুণও আছে। পাখিটি বিভিন্ন ধরনের কথা বলে, খেলাধুলা করে, হাতে ওঠে এবং সবার সঙ্গে মিশতে পারে। বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে চোরা শিকারিরা ম্যাকাও পাখি ধরে বিক্রি করে। এ ছাড়া বৈশ্বিক উষ্ণতা, বনভূমি ধ্বংস ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও ম্যাকাওয়ের সংখ্যা এখন আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। বর্তমানে ম্যাকা অত্যন্ত বিপন্ন পাখির তালিকাভুক্ত। পাখিটি বনাঞ্চল থেক উল্লেখযোগ্য হারে শিকার হচ্ছে; ফলে এটি সঙ্কটাপন্ন অবস্থা রয়েছে। কিন্তু এদের বংশবিস্তার কার্যক্রম ব্যাপকভাবে গ্রহণ করায় এটি এখনো প্রকৃতিতে বিদ্যমান।
অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ায় খাঁচায় পোষা পাখি হিসেবে ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও যুক্তরাষ্ট্রে ম্যাকাও নিয়ে গবেষণা চলছে এবং সফলভাবে এসব দেশে খাঁচায় ডিম ও বাচ্চা ফোটানো সম্ভব হয়েছে। বর্তমান বাজারে খাঁচায় জন্ম নেওয়া স্কারলেট ম্যাকাওয়ের দাম প্রায় ২০ হাজার ডলার, বাংলাদেশী টাকায় ১৪ লাখ টাকার মতো। সম্প্রতি আমাদের দেশে মেক্সিকো থেকে খাঁচায় জন্ম নেওয়া একটি স্কারলেট ম্যাকাও এনেছেন বাংলাদেশ ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন অ্যান্ড রিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব পাখিপ্রেমিক আবদুল ওয়াদুদ।
সংগ্রাহক আবদুল ওয়াদুদ জানিয়েছেন, প্লাটিনাম জিমে ফিকামলি ব্যায়াম প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য তিনি পাখিটি সংগ্রহ করেছেন।
এখানে পশু-পাখির বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি অনুকরণ অনুসরণ করে ব্যায়াম, অ্যারোবিকস, জোগাসন ও ধ্যান শেখানো হয়। আগ্রহী ব্যক্তিরা ম্যাকাওসহ বিভিনড়ব দুর্লভ প্রজাতির পাখি বিনা খরচায় এই মিনি চিড়িয়াখানায় এসে দেখতে পাওয়া যাবে। অনেকের কাছেই এটা স্বপ্নের পাখি।

Share.

মন্তব্য করুন