ইংল্যান্ডের এক ছোট্ট শহরে বাবা-মার সাথে থাকি আমি। আমাদের এই শহরটা রাজধানী থেকে অনেক দূরে। তবে দেখার মতো অনেক কিছুই আছে। আমাদের শহরের রাস্তাঘাট বাড়িঘর খুবই সুন্দর, সাজানো গুছানো। আমাদের স্কুলও খুব সুন্দর।
আমি দশম শ্রেণিতে উঠেছি এবার। আমি প্রতিদিন স্কুলে যাই। আসলে স্কুলে না গেলে আমার ভালোও লাগে না। স্কুলে অনেক মজা হয়। সবাই অনেক আনন্দ নিয়ে ক্লাস করি। ক্লাসের পড়ার ফাঁকে ফাঁকে টিচার আমাদের অনেক সুন্দর সুন্দর গল্প বলেন। এ ছাড়াও আমাদের একটা স্টোরি টেলিং ক্লাস আছে। সেই ক্লাসে আমরা নিজেদের লেখা গল্প বলি।

আমার বাবা আমাকে অনেক সুন্দর রূপকথার সুন্দর গল্প বলেন। আমি সেগুলো শুনে শুনে নিজেও গল্প লেখার চেষ্টা করি এবং সে গল্পগুলো ক্লাসে বন্ধুদের শোনাই। তারা শুনে প্রশংসা করে।
গত সপ্তাহে লিখেছিলাম, ‘জ্যাকের স্বপ্ন’। উপত্যকায় বেড়ে ওঠা এক ছেলে জ্যাক। তার স্বপ্ন, সে শহরে যাবে, পড়াশোনা করবে। তাদের উপত্যকায় কোনো স্কুল নেই। তবে সে মায়ের কাছে লিখতে পড়তে শিখেছে। মা ছাড়া কেউ নেই তার। সবুজ পাহাড়ের উপত্যকায় চাষবাস করে ও ভেড়া চরিয়ে সংসার চালায় তারা। খুব সচ্ছল না হলেও মা-ছেলের ভালোই চলে যায়। কিন্তু জ্যাকের যে স্বপ্ন, শহরে গিয়ে পড়াশোনা করা, সেটা পূরণ করতে পারছেন না বলে জ্যাকের মায়ের ভারী দুঃখ।
মাঝে মধ্যে বিভিন্ন প্রয়োজনে মায়ের সাথে শহরে আসে জ্যাক। অবাক হয়ে সে চারপাশ দেখে। স্কুলগুলোর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে। কী সুন্দর ছেলেমেয়েরা এখানে পড়ে! আমিও যদি তাদের সাথে পড়তে পারতাম! মনে মনে ভাবে সে। কিন্তু তাকে হতাশ হতে হয়। শহরের স্কুলে ভর্তি করানো এবং শহরে থাকার মতো সামর্থ্য তার মায়ের নেই। তবে জ্যাকের পড়াশোনার আগ্রহ দেখে তার মা সাধ্যমতো বইপত্র কিনে নিয়ে যান তার জন্য। সেগুলো পেয়ে মহাখুশি হয় জ্যাক। কী সুন্দর একেকটা বই!
সকালে যখন মাঠে ভেড়ার পাল নিয়ে চরাতে যায়, তখন তার সাথে বইগুলো নিয়ে যায়। পাহাড়ের ছায়া বসে বইগুলো পড়ে সে। অনেক কিছু জানা হয় তার। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন, স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করা, সেটা আর পূরণ হয় না। দিনে দিনে বড় হয় জ্যাক। তার স্বপ্নের কথা ভুলেনি সে। তার বিশ্বাস একদিন সে সত্যি শহরে গিয়ে পড়াশোনা করবে।
শেষ পর্যন্ত কি জ্যাক পারবে শহরে যেতে? তার পড়াশোনার স্বপ্ন কি পূরণ হবে? এরপর আমি  লিখিনি।
জ্যাকের গল্পটা আমি ইচ্ছে করেই অসম্পূর্ণ রেখেছি। হয়ত সম্পূর্ণ করব কোন একদিন। গ্রীষ্মের ছুটিতে একটা উপত্যকায় বেড়াতে গিয়ে জ্যাকের কথা আমার মাথায় আসে। ওই উপত্যকার অনেক ছেলেমেয়ের সাথে কথা বলে বুঝেছি, কত স্বপ্ন ঝিলিক দেয় তাদে চোখে। জ্যাকের মাঝে কোথাও যেন নিজেকে খুঁজে পাই। আমার বাবার বড় চাকরি না থাকায় ইংল্যান্ডের কোন বড় শহরের স্কুলে আমি ভর্তি হতে পারিনি। অবশ্য এ নিয়ে আমার খুব একটা আফসোস নেই। এই ছোট শহরটাই আমার আপন। আমার ইচ্ছা, এই শহর থেকেই একদিন আমি উঠে দাঁড়াব এবং জ্যাকের মতো অনেক ছেলেমেয়ের স্বপ্নপূরণ করব।

Share.

মন্তব্য করুন