আমাকে যেতে দেন। আমি তো আপনার কোনো ক্ষতি করিনি। আমার পথ কেন আপনি আটকিয়েছেন? কথাগুলো বলে রাহমি এক প্রকার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করে দিল। তার কান্নায় ইকবালের মন গলছে না। সে রাহমির গায়ে হাত তুলতে প্রস্তুত হয়। হঠাৎ পিছন থেকে জাফরের ডাক শোনে ইকবাল নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলো। জাফর কাছে আসতেই রাহমি বলতে শুরু করলো। ‘ভাইয়া ওনারা আমার পথ আটকিয়ে মারতে এসেছেন অথচ আমি ওনাদের কোনো ক্ষতি করিনি।’ জাফর ওপরের ক্লাসের ছাত্র। বেশ মেধাবী তাই সবাই তাকে সম্মান করে। সে ইকবালের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইল কী হয়েছে!
“গতকাল রাহমির ভাই আমাদেরকে মাঠে খেলতে দেয়নি এবং আমাদের তাড়িয়ে দিয়েছে, আজ সে স্কুলে আসেনি তাই ভাইয়ের পরিবর্তে রাহমিকে একটু সাইজ করতে চাই” এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বললো ইকবাল। জাফর বুঝতে পারল যে কী হয়েছে। সে রাহমির মাথায় হাত বুলিয়ে জানতে চাইল রাহমি! তোমার ভাই আজ আসেনি কেন? ভাইয়া গতকাল খেলার মাঠে অনেক ব্যথা পেয়েছে, হাঁটতে পারছেন না রাহমি ভয়ার্ত স্বরে জবাব দিল। জাফর পকেট থেকে একটি চকোলেট বের করে রাহমির হাতে দিয়ে খেতে ইশারা করলো। রাহমি ভয়ে ভয়ে চকোলেট মুখে পুড়ে দিলো। জাফর একটি হাত রাহমির কাঁধে অপর হাত ইকবালের কাঁধে দিয়ে দু’জনকে আরো কাছে নিয়ে এলো।
জাফর ইকবালের দিকে তাকিয়ে বললো, আচ্ছা ইকবাল বল তো রাহমি যে চকলেটটি খাচ্ছে তার স্বাদ কেমন? প্রশ্ন শোনে ইকবাল হতবাক হয়ে আবার উল্টো প্রশ্ন করলো, ভাইয়া চকোলেট খাচ্ছে রাহমি তো আমি কেমন করে বলব যে তার স্বাদ কেমন? তখন জাফর ইকবালকে লক্ষ্য করে বললো তাই শোন! একজন মিষ্টি খেলে আরেকজন এর স্বাদ পায় না, তাহলে একজনের অন্যায়ের শাস্তি আরেক জনকে দিলে প্রকৃত অপরাধী কিভাবে শাস্তির স্বাদ পাবে?
এই যে তোমরা রাহমিকে শাস্তি দিতে চাও এতে করে কি তার ভাই বুঝবে শাস্তির কেমন স্বাদ? আর বিনা দোষে রাহমি কেনইবা শাস্তি পাবে? ইকবাল বুঝতে পারলো তার পরিকল্পনা ভুল। আসলে একজনের অপরাধের শাস্তি আরেক জন্য পেতে পারে না। অনুতাপের দৃষ্টিতে জাফরের দিকে তাকাল। জাফর বললো, শোনো একটি হাদিস বলি, আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। নবী (সা) বলেছেন, নবীদের মধ্যে কোন এক নবী একদা একটি গাছের তলায় বসলেন। একটি পিঁপড়া তাকে কামড়াল। তিনি তার প্রয়োজনীয় বস্তু সম্পর্কে নির্দেশ দিলেন। অতএব, বৃক্ষনিম্ন হতে তা বাইরে ফেলে দেয়া হলো। এরপর তিনি পিঁপড়ার বাসা জ্বালিয়ে দিতে নির্দেশ দিলেন এবং তা জ্বালিয়ে দেয়া হলো। অতঃপর আল্লাহ তার প্রতি ধমক দিয়ে ওহি নাজিল করে বললেন, “তুমি কেবলমাত্র একটি পিঁপড়াকে কেন সাজা দিলে না?” (সহীহ বুখারি হাদিস নং ৩০৮০)
জাফর বললো, শোনো ইকবাল! যে অপরাধ করে শাস্তি তারই প্রাপ্য, অপরাধ না করে কেন নিরপরাধী শাস্তি পাবে? নিরপরাধীকে শাস্তি দিলে তা জুলুমের শামিল হয়। তুমি কি জালিম হতে চাও? প্রকৃত অপরাধী অবশ্যই শাস্তি পাবে। সে জন্যই হয়তো রাহমির ভাই আজ ব্যথায় হাঁটতে পারছে না, সে তার কর্মফল পেয়েছে। যেহেতু আল্লাহ নিজেই তাকে শাস্তি দিয়েছেন সুতরাং তোমার উচিত হবে না তার প্রতি রাগ পোষণ করা। ইকবাল নিজের ভুল বুঝতে পেরে রাহমির হাত চেপে ধরে ক্ষমা চাইল। রাহমি বাসায় এসে পুরো ঘটনাটি তার ভাইকে শুনাল। সব কিছু শুনে রাহমির ভাই অনুতপ্ত হলো, মোবাইলটা হাতে নিয়ে ইকবালকে ফোন দিয়ে গতকাল মাঠে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাইল।

Share.

মন্তব্য করুন