এই লেখা যখন তোমাদের হাতে ততদিনে শুরু হয়ে যাওয়ার কথা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) এবারের আসর। এটি বিপিএলের সপ্তম আসর। এই ‘লাকি সেভেনে’ এসে অনেক পরিবর্তন এসেছে লিগটিতে। বলতে গেলে এবার সম্পূর্ণ নতুন রূপে হবে বিপিএল। অনেকগুলো নতুন বিষয় আসছে এবারের আসরে।
তার মধ্যে প্রথমটি হলো- এক বছরের মধ্যেই দুইবার বিপিএল হওয়া। তোমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে ২০১৯ সালেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিপিএলের ষষ্ঠ আসর। ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ফাইনালে ঢাকা ডায়নামাইটসকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। আবার সপ্তম আসরটি হচ্ছে একই বছর ডিসেম্বরে। অর্থাৎ এক বছরেই দুই বিপিএল। বিশ্বে আর কোথাও এমন নজির নেই। সাধারণত ফ্রাঞ্চাইজি টি- টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট বছরে একবারই হয়। এই যে দেখ কী ভুল করলাম!
বিপিএলকে তো এখন আর ‘ফ্রাঞ্চাইজি’ টুর্নামেন্টও বলা যাবে না। কারণ এবারের বিপিএলে কোন ফ্রাঞ্চাইজির অর্থাৎ বেসরকারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কাছে দলের মালিকানা থাকবে না। যাক সে কথায় একটু পরে আসছি। তার আগে জানিয়ে রাখি- ২০১৮ সালের
ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কারণে তখন বিপিএল আয়োজন করা যায়নি। তাই সেই আসরটি সরিয়ে নেয়া হয়েছিল ২০১৯ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে।
এরপর ২০১৯ সালের আসরটি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড(বিসিবি) বাদ দিতে চায়নি। সেটিও তারা আয়োজন করলো বছরের শেষে। তাই এক বছরে দুই বিপিএল।

যে কারণে নেই ফ্রাঞ্চাইজি
গত আসরের পরই ফ্রাঞ্চাইজিগুলোর সাথে বিসিবির চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। নতুন চুক্তি করতে গিয়ে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে ক্রিকেট বোর্ডের সাথে তাদের বনিবনা হচ্ছিল না মালিকদের। বিশেষ করে এক বছরের দুইটি টুর্নমেন্ট খেলতে চায়নি দল মালিকরা।
এছাড়া টুর্নামেন্ট থেকে বিসিবির আয়ের ভাগ চাইছিল দলগুলোর মালিকরা। বিসিবি সেটাতেও রাজি হয়নি। দলগুলো বলছে, তারা লোকসান গুনছে প্রতি বছর।
তাই টুর্নমেন্টের আয়ের একটি অংশ তাদের দেয়া হোক। কিন্তু বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেন এসব দাবি কোনোভাবেই মানতে পারবেন না তারা, ‘কোনোভাবেই ওদের দাবি-দাওয়া মানা সম্ভব না। রেভিনিউ শেয়ার (লাভের টাকা ভাগ) কোনোভাবেই সম্ভব না।’ ফ্রাঞ্চাইজি মালিকদের উদ্দেশ্যে তার সাফ কথা, বিপিএলে আসতে হলে ব্যবসা করার মানসিকতা ছাড়তে হবে। বিপিএলে যারা আসবে তারা খেলোয়াড়দের উন্নতির কথা ভেবে আসবে, লাভের কথা ভেবে আসবে না। এখানে লাভের কোনো সুযোগ নেই।’
এসব ঘটনার পরই বিসিবি জানিয়ে দেয় যে এবারের বিপিএলে কোন ফ্রাঞ্চাইজি থাকবে না। সবগুলো দলের মালিকানা থাকবে বিসিবির হাতে। বোর্ডে তত্ত্বাবধানেই দলগুলোর থাকা-খাওয়া, বেতনসহ সব কিছু করা হবে।
অনেকটা অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশের মতো। গত কয়েক মাস ধরেই বিষয়গুলো নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে। যদিও সমালোচকরা বলেন, ঢাকা ডায়নামাইটসের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে রংপুর রাইডার্স কিনে নেয়ার পর থেকেই এই দ্বন্দ্বের শুরু। নিলাম ছাড়া এভাবে দল বদল নিয়ে আপত্তি ছিল কোন কোন মালিকের।

নতুন নামে
ফ্রাঞ্চাইজি বাতিলের পাশাপাশি এবারের বিপিএলে আরো কিছু পরিবর্ত এনেছে বিসিবি। তার মধ্যে অন্যতম নামে পরিবর্তন। এবারের বিপিএলের নাম ‘বঙ্গবন্ধু বিপিএল’। ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। সরকারিভাবে বিভিন্ন আয়োজনে বছরটি পালন করা হবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড তাই বিপিএলের এবারের আসরটি উৎসর্গ করেছে বঙ্গবন্ধুকে। যে কারণে নাম রাখা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু বিপিএল’।
পুরো আসরের ব্যবস্থাপনা থাকবে বিসিবির হাতে। দলগুলো আগের মতোই থাকবে। গতবার যে সাতটি দল অংশ নিয়েছিল তারাই খেলবে। চিটাগং ভাইকিংস, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, ঢাকা ডায়নামাইটস, সিলেট সিক্সার্স, রংপুর রাইডার্স, খুলনা টাইটান্স ও রাজশাহী কিংস। দলগুলোর কোচ ও অন্যান্য স্টাফ ও বিসিবি ঠিক করে দিয়েছে। তাই লাভ লোকসানের খতিয়ানটাও বিসিবির হাতেই থাকবে।

সাকিববিহীন বিপিএল
যে সাকিব আল হাসানের দল বদল নিয়ে বিপিএলে ‘মতবিরোধের সূত্রপাত’ সেই সাকিব আল হাসানই নেই এবারের বিপিএলে। তোমরা ইতোমধ্যেই জেনে গেছ যে, আইসিসির নিষেধাজ্ঞার কারণে এক বছর মাঠের বাইরে থাকতে হবে সেরা অলরাউন্ডারকে। জুয়ারির কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন সাকিব। সে প্রস্তাবে তিনি রাজি হননি।
তবে বিষয়টি আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগকে না জানানো কারণে তাকে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অবশ্য এক বছরের শাস্তি স্থগিত রয়েছে, যার মানে হচ্ছে প্রম বছর শাস্তি ভোগ করার সময় সকল আইনকানুন মেনে চললে এবং আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী প্রচারণায় অংশ নিলে- আইসিসি যদি সন্তুষ্ট হয় তবে আর সাকিবকে দ্বিতীয় বছরের শাস্তি ভোগ করতে হবে না। তাই আমরা আশা করতে পারি যে ২০২০ সালের অক্টোবরের শেষ দিকে সাকিব আল হাসান মাঠে ফিরবেন।
নিষেধাজ্ঞার সময়টাতে আইসিসি বা বিসিবির স্বীকৃত কোন টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পারবেন না সাকিব। তাই এবারের বিপিএলে তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন সাকিব আল হাসান, তাকে ছাড়া বিপিএল তাই রঙ হারাবে সেটি নিশ্চিত।
তবে সব কিছুর পরেও আসরটি সফল হোক সেটিই আমাদের প্রত্যাশা। কারণ এই টুর্নামেন্ট থেকে প্রতি বছর তরুণ খেলোয়াড় গড়ে উঠছে এদেশে। যারা আগামী দিনে লাল-সবুজ জার্সি পড়ে দাপটের সাথে বিচরণ করবে বিশ্ব ক্রিকেটে।

Share.

মন্তব্য করুন