দ্বীপ শব্দটি মাথায় এলেই মনের মধ্যে প্রথমেই ভেসে ওঠে কোনো রোমাঞ্চকর এক জায়গার কথা। আর দ্বীপটা যদি হয় ভাসমান, তবে তো কথাই নেই। পারানার ভেসে থাকা দ্বীপ তো অনেকেই দেখেছেন। কিন্তু এমনটা কখনও দেখেছেন যে বনবন করে ঘুরছে সেই দ্বীপ! হ্যাঁ এমনই এক দ্বীপ রয়েছে যা নিজে অক্ষের চারপাশে ঘোরে। এমন অদ্ভুতুড়ে দ্বীপের নাম দেয়া হয়েছে ‘দ্য আই’।
দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম দেশ আর্জেন্টিনা। এ দেশের উত্তর-পূর্ব দিকে রয়েছে এক বিশাল জলাশয়। সেখানে এমন একটি দ্বীপের সন্ধান পাওয়া গেছে যা সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনোস আইরেস। এটি একটি বৃহত্তম শহর ও বন্দর। বুয়েনোসের চাম্পানা ও জারাতে শহর দু’টির মাঝে পারানা ডেল্টা নদীর পাশেই বিচিত্র দ্বীপটির অবস্থান। দেখতে চোখের মতো। তাই দ্বীপটির একটি সুন্দর নামকরণও হয়েছে- দ্য আই।
অনেকের কাছে এ নামেই পরিচিত। দূর আকাশ থেকে এটি চোখের মতোই লাগে। ১৩০ গজ ব্যাসের গোলাকার দ্বীপটি প্রকৃতির এক বিচিত্র সৌন্দর্য ধারণ করছে। শুধুই গোলাকার বললে ভুল হবে, এটি পরিপূর্ণ বৃত্ত। চারপাশ দিয়ে সরু পানির পথ। ঠাণ্ডা ও পরিষ্কার পানির নিচে কী রয়েছে তা জানতে এবং দ্বীপটি দেখার জন্য পরিচালক সেরজিও নেউসপিল্লারম ও সঙ্গে দু’জন গবেষক সেখানে এক অভিযান চালান।
বিচিত্র ভূখণ্ডে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় তারা যা বুঝতে পারেন তা হলো, এটি একটি আজব দ্বীপ। একটি অদ্ভুত ব্যাপার হলো এই দ্বীপটি নিজ বৃত্তাকার অক্ষের মধ্যে আবর্তন করে। দ্বীপের এমন আবর্তনের রহস্য এখনও বিজ্ঞানীরা ভেদ করতে পারেননি।
সেরজিও নেউসপিল্লারম আর্জেন্টিনার একজন চিত্রপরিচালক। তার প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করার জন্য একটি দ্বীপ খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন। গুগল আর্থম্যাপে অনুসন্ধান করার সময় তিনি হঠা এমন এক আজব ভূখণ্ড দেখতে পান যা তাকে বিস্মিত করে। এক ভিডিওতে ওই চলচ্চিত্রকার বলছেন, ‘দ্বীপটির চারপাশে সমান ব্যাসার্ধের গোলাকার জায়গা জুড়ে রয়েছে জল। জলাজায়গা আর দ্বীপ, এই দুটোর আকার এতটাই সমানভাবে গোল, যা দেখে অবাক হতে হয়।’
তার সংস্থা ও নিউইয়র্কের একদল গবেষক মিলে এর রহস্যের অনুসন্ধান করতে থাকেন। পরে তারা সন্ধান নিয়ে দেখেন স্বল্প সরু জলপথে বেষ্টিত বৃত্তাকার দ্বীপটি ভাসমান। ভাসমান থাকার পাশাপাশি এই নির্জন স্থানটি কিছুটা নড়াচড়াও করে।
দ্বীপটি ঘুরে এসে নিউইয়র্কের হাইড্রলিক ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ার রিচার্ড পেট্রনি বলেন, ‘আমরা একটি বিচিত্র দ্বীপের সন্ধান পেয়েছি পারানা নদীর পাশে যা অদ্ভুতভাবে নিজ অক্ষে ঘোরে।’ এই জায়গার রহস্য উদঘাটন করতে এই তিনজন সম্প্রতি একটি ক্যাম্পেইন শুরু করেছে। ৯,৩৪৮ ডলার জোগাড় করেছেন তারা। ৫০,০০০ ডলার জোগাড় করতে চান তারা। এরপর তারা ওই জায়গায় অভিযানে যাবেন।
তবে ড্যানিয়েল রয় ফিংকলে নামের এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, এই ধরনের দ্বীপ এই প্রথম দেখা যাচ্ছে তা নয়। আর্জেন্টিনায় এই ধরনের দ্বীপ প্রচুর দেখা যায় বলেও জানিয়েছেন তিনি। আবার অনেকে এটাকে ভিনগ্রহীদের বাসস্থান বলেও মনে করতে শুরু করেছেন। এমন ঘূর্ণায়মান বৃত্তাকার দ্বীপ সবারত কাছে বেশ রহস্যময় ও আকর্ষণীয়।

Share.

মন্তব্য করুন