বন্ধু সেলিম আর রেজাকে দৌড়াতে দেখে আসিফ অনেকটা বাধ্য হয়েই দৌড়ে পালালো। আর সে কি দৌড়! এক দৌড়ে পরিমরি করে কোনো রকমে স্কুলের গেইটের ভেতর ঢুকল। এরপর মাথাটা নিচু করে কিছুক্ষণ ঘনঘন নিঃশ্বাস নিয়ে একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আবার দৌড়ে তিন তলায় ক্লাসে প্রবেশ করল। এখনো স্যার ক্লাসে আসেনি, এই দেখে আসিফ বললো, ‘যাক, বাঁচা গেল’। সেলিম ও রেজার পাল্লায় পড়ে আসিফের আজ এই অবস্থা। স্কুলের সোজা রাস্তা বাদ দিয়ে সেলিম বললো, ঐ বাগান বাড়ীর ভেতর দিয়ে যাবে। কিন্তু তাদের মতলবটা তখন আসিফ বুঝতে পারেনি। সারি সারি আমগাছের নিচ দিয়ে হেঁটে আসতে ভালই লাগছিল আসিফের। মনে মনে তাদের তখন ধন্যবাদও দিয়েছিল। বাগানের শেষ মাথায় এসে হঠাৎ দাঁড়ায় সেলিম আর রেজা। এদিক ওদিক কি যেন খুঁজতে থাকে। আসিফ বার বার তাড়া দিচ্ছিল, ‘কিরে, কী খুঁজছিস? চল ক্লাস শুরু হয়ে যাবে!’ এই বলে আসিফ হাঁটতে শুরু করলো। এমন সময় কি যেন একটা শব্দ হল। পেছন ফিরে দেখে সেলিম আম গাছে ঢিল ছুঁড়ছে আর রেজা আম কুড়াচ্ছে। ‘এই! কি করসিছ? কাজটা কিন্তু ঠিক না, চলে আয়।’ বলে ডাকতে লাগল আসিফ। এমন সময় কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ শোনা গেল। সেই সাথে পাহারাদারের হাঁকডাক। আর অমনি দৌড়।
টিফিন পিরিয়ড চলছে। রেজা দু’টো পাকা আম আসিফের কাছে নিয়ে আসল কিন্তু আসিফ তা ফেরত দিয়ে বললো, ‘আমি চুরি করা কোনো কিছু খাই না।’ এই বলে আসিফ নামাজ ঘরের দিকে চলে গেল। স্কুলের পুরো সময়টা আসিফ তাদের সাথে কথা বলেনি। সেলিম ও রেজা বিষয়টা আঁচ করতে পেরেছে। ছুটির পর আসিফ হনহন করে বেরিয়ে বাড়ির দিকে একা একাই হাঁটতে শুরু করল। সেলিম ও রেজা অনেকটা দৌড়ে এসে আসিফের সঙ্গি হল। ‘দোস্ত, রাগ করিসনে দু’টো আমই তো! তাছাড়া কেউ তো দেখেনি আর কেউ জানেও না।’ বললো সেলিম।
‘হ্যাঁ দেখেছে, তোরা যা যা করেছিস সবই দেখেছে! শুধু দেখেনইনি ভিডিও করে রেখেছেন।’ আসিফের দীপ্ত কন্ঠে এমন কথা শুনে চমকে গেল ওরা। আসিফ বললো, ‘ভিডিও যখন প্রকাশ হবে তখন মানুষের সামনে মুখ দেখাবি কেমনে তোরা?’ কথা শুনে থমকে দাঁড়ালো সেলিম এবং রেজা। ‘কি বলছিস! কে করেছে?’ ওদের পেরেশানী বেড়ে গেল। আসিফ পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে বললো, ‘শোন আমরা মানুষকে ফাঁকি দিতে পারি কিন্তু আল্লাহকে কি ফাঁকি দেয়া সম্ভব? না কখনোই না। তিনি সব দেখেন, সব শুনেন এবং হাশরের দিন আমাদের সকল আমলের ভিডিও চিত্র দেখাবেন। এখন বল, সবার সামনে তোদের এই অপরাধের জন্য দোজখের ফেরেশতারা ধরে নিয়ে যাবে। বাবা, মা, আত্বীয়-স্বজন এবং সকল মানুষ সেদিন দেখবে। লজ্জায় তখন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবি না। জাহান্নামের ফেরেশতারা ধরে নিয়ে যাবে। কেউ সেই দিন তোদের রক্ষা করতে পারবে না।’
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের সুরা নিসার ১০৮ নং আয়াতে বলেছেন, ‘এরা নিজেদের মানুষ থেকে আড়াল করে কিন্তু আল্লাহ থেকে আড়াল করে না অথচ (অপরাধ করার সময়ও) তিনি তাদের সাথে; এমনকি রাতের আধাঁরে গোপনে অপছন্দনীয় আলাপচারিতার সময়ও তিনি তাদের সাথে। আর তারা যা কিছু করে আল্লাহ সর্বতোভাবে অবগত।’ শোন! আমরা মানুষের চোখের আড়ালে অপরাধ করলে মনে করি কেউ দেখেনি কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালা গোপন-প্রকাশ্য এমনকি রাতের নির্জনে ঘরের দরজা বন্ধ করে যদি অপরাধ করি তাও তিনি দেখেন এবং ফেরেশতার মাধ্যমে রেকর্ড করে রাখেন।
আসিফের কথা শুনে সেলিম ও রেজা অনেকটা ঘাবড়ে গেল। ‘ভুল হয়ে গেছে দোস্ত, আর কখনো এমন কাজ করবো না। প্লিজ রাগ করিস না।’ এই বলে সেলিম ও রেজা অশ্রুভেজা চোখে আসিফের হাত ধরল। আসিফ তাদের অনুতপ্ত হওয়া দেখে বুকে জড়িয়ে নিল। ওরা তিনজনই আল্লাহর দেয়া বিধান মেনে চলার সিদ্ধান্ত নিল।

Share.

মন্তব্য করুন