তোমরা আমাকে বৃা খুঁজে ফেরো: কোথায় আমাকে পাবে…
আমি পাই রোজ মেঘেদের চিঠি রূপা রং কিংখাবে।
সেই চিঠি পেয়ে দোর খুলে রেখে মাঝরাতে ছুটি দূরে-
সারা-সারা রাত বেড়াই আকাশে মেঘের গাড়িতে ঘুরে।
তারাদের দেশ দেখে দেখে থামি চাঁদের কিনারে এসে…
আমাকে দেখেই চাঁদের পরিরা লুটোপুটি খায় হেসে।
কেন ওরা হাসে- ভাবতে এ-কথা শুকতারা বলে শোনো-
তোমার মতন ডানাহীন প্রাণী দেখে নাই কক্ষনো।
তাই ওরা হাসে, হাসে আর ভাবে, কি-করে এখানে এলে-
মহাখুশি হবে তোমাকে ওদের আলোর আসরে পেলে।
থাকা তো হয় না মায়ের মায়াতে; ফিরে আসি শেষরাতে…
ঘুমাই মাথাটি আলগোছে রেখে মায়ের মায়াবী হাতে।
এইভাবে যায় রাতটি আমার- ঘুরে তারাদের পিছু-
রাতভর আমি কোথায় ছিলাম মা তার বোঝে না কিছু।

আমাকে পাবে না, পাবে না তোমরা- নিঝুম দুপুরে এলে;
আমি ছুটে যাই পিয়ালের বনে, মা-মণি ঘুমিয়ে গেলে।
টুপটুপ করে ফুল ঝরে পড়ে, ঝিল্লিরা মাতে সুরে…
হঠাৎ মায়াবী বেদনা ছড়িয়ে ঘুঘুটা ডাকল দূরে।
ডাকল হুতুম হুমহুম করে, কাঁদল ডাহুক মেয়ে-
আমি চুপি-চুপি খুঁজে ফিরি তাকে বুনোপথ বেয়ে-বেয়ে।
দুপুর গড়ালে বনের কাহিনি বুকের সিড়িতে ভরে-
মা-মণি জাগার একটু আগেই ফিরে আসি ঠিকই ঘরে।

বিকেলে যখন কাশবনে দোলে, নদী বহে নিরবধি-
কোথাও আমাকে পাবে না তখন খুঁজে খুঁজে ফেরো যদি!
ঝাউবন রেখে সাগরের মায়া জড়িয়ে যেখানে পাহাড়
নির্ঝর ধারা যেখানে রচেছে রুপোলি নদীর বাহার
শাদা ডানা মেলে গাংচিলগুলো যেখানে উড়েছে সুখে
দু-হাত বাড়িয়ে থাকি আমি সেই নীল মোহনার মুখে।
সাঁঝের পিদিম জ্বলেছে যখন, হাওয়া বহে ঝিরিঝিরি-
আমিও তখন মায়ের মায়ায় চুপি-চুপি ঘরে ফিরি।
ঘরে ফিরে এসে বই নিয়ে বসি, মা বলে, লক্ষ্মী ছেলে-
লেখাপড়া শিখে আঁধার ঘুচাবে আলোর দীপালী জ্বেলে।

Share.

মন্তব্য করুন