হীরার বয়স নয় বছর, পঞ্চম শ্রেণীতে লেখাপড়া করে হীরা। একদিন স্কুলে যাবার পথে হঠাৎ একটি শালিক পাখি চোখে পড়লো। পাখিটির পায়ে জাল বাঁধা ছিলো। হীরা পাখিটির পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে, পাখিটিকে ধরলো, পায়ের বাঁধন খুলে, পাখিটিকে নিয়ে বাড়িতে চলে এলো। সেই দিন আর হীরার স্কুলে যাওয়া হলো না। বাড়িতে এসে, পাখিটিকে একটি খাঁচায় বন্দি রেখে, হীরা চলে গেলো একটি পিঞ্জর খোঁজতে মামার বাড়ি। মামার আর হীরাদের বাড়ি খুবই কাছাকাছি।
পিঞ্জর নিয়ে হীরা আবার বাড়িতে ফিরে এলো। পাখিটিকে পিঞ্জরে রেখে, খাবারের সন্ধানে বের হলো। বেশ কিছু খাবারও সংগ্রহ করে নিয়ে এলো।
এভাবেই হীরা তার লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে, পাখিটিকে সেবাযত্ন করে আসছে।
এক এক করে প্রায়ই তিন বছর হয়ে গেলো, পাখিটি এখন কথা বলতে পারে। হীরা পাখিটির একটি নামকরণ করেছিল, ‘হীরা শালিক’। এই নামে পাখিটিকে সবাই ডাকতো।
হীরা এবার এসএসসি পরীক্ষা দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে, আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি আছে পরীক্ষার। সে তার পাখিটির দায়িত্ব দিয়ে দিলো তার এক খেলার সাথী রনিকে। রনিকে দায়িত্ব দেয়ার কারণ হচ্ছে, হীরার ফ্যামিলির কেউই পাখিটির প্রতি খেয়াল রাখেনি। তাই হীরা তার খেলার সাথীকে পাখিটা বুঝিয়ে দিলো। আজ হীরা চলে যাবে শহরে, পরীক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে। পাখিটির কাছে বিদায় নিতে এলো হীরা। ডাকছে হীরা শালিক, হীরা শালিক, রাগ করিসনে সোনা, আমি কিছুদিন পর আবার চলে আসবো তোর কাছে। প্লিজ আমার সাথে কথা বল! হীরা শালিক কেঁদে কেঁদে বললো, যাও বন্ধু ভালো থেকো। এই বলেই হীরা বিদায় নিয়ে চলে গেলো। পরীক্ষা দিয়ে হীরা এবার বাড়িতে যাবে, তাই পাখিটির জন্য একটি লোহার তৈরি খাঁচা কিনে নিলো, খাঁচাটি নিয়ে বাড়িতে ফিরলো হীরা।
বাড়িতে এসেই খাঁচাটাকে রেখে সোজা চলে গেলো তার খেলার সাথীর বাড়ি। বাড়িতে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ডাকছে, আবির.. আবির.. এই আবির।
আবির বের হলো, কিরে দোস্ত কবে এলি, আয় ঘরে আয়।
নারে দোস্ত ঘরে আসবো না, আমার পাখিটি কোথায়, দে চলে যাবো।
আমি এসেই পাখিটিকে না দেখে আর থাকতে পারছি না, তাই চলে এলাম।
বন্ধু আবির হীরার কথা শুনেই, সাথে সাথে কেঁদে বলছে, দোস্ত রে তোর পাখিটা হারিয়ে গেছে। হীরা এ কথা শোনার সাথে সাথেই পাগলের মতো হয়ে বললো, একি বলছিস! কী করে এসব হলো? কী করেছিস পাখির সাথে?
এই বলে হীরা কেঁদে কেঁদে, হীরা-শালিক, হীরা-শালিক বলে দৌড়ে দৌড়ে, চলে যাচ্ছে, হাওরের দিকে।
এই যে হীরা চলে গেলো, আর ফিরে এলো না বাড়ি।
বাড়ির সবাই হীরাকে খোঁজতে খোঁজতে প্রায়ই পাঁচ বছর হয়ে গেলো, হীরার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ দিকে হীরার খেলার সাথী আবির, হীরা বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবার পাঁচ বছর পর, পেটে ব্যথা নিয়ে মারা যায়।

Share.

মন্তব্য করুন