(গত সংখ্যার পর)

শুক্রবার সকালে সবুজেরা ঘুম থেকে ওঠার আগে তাদের রুমে একবার ঢুঁ মেরে গেল আরাফাত। তাদেরকে ঘুমে দেখে চলে গিয়েছিল। সবুজেরা ঘুম থেকে ওঠার পরে তাদের রুমে এলো আরাফাত। তখনো নাস্তা করেনি আকুভাইয়েরা। আরাফাত বলল, চলো, আমার কবুতরটা উদ্ধার করে দাও।
আরাফাতের কথা শুনে হঠাৎ মনে পড়ল কবুতরের কথা! কথা দিয়েছিল উদ্ধার করে দেবে, অথচ কোনো প্ল্যান করেনি। প্ল্যান ছাড়া কোনো কাজে যাওয়া ঠিক না। আকুভাই আরাফাতকে বলল, ঠিক আছে উদ্ধার করে দেবো, তার আগে নাস্তাটা করে নিই?
– হ্যাঁ, করো। কিন্তু পারবে তো আমার কবুতরটা উদ্ধার করতে?
– না-পারলেও তো করে দিতে হবে, তোমাকে না কথা দিয়েছি!
– হ্যাঁ, তাহলে তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।
– আচ্ছা। একটা কথা বলো তো, অনিকদের বাসায় কে কে আছে?
– ওর আব্বু-আম্মু ও ওর বোন।
– কে বড়? অনিক নাকি ওর বোন?
– অনিক বড়, ওর বোন ছোট।
– ওদের বাসা কয় তলায়?
– আমাদের মতোই নিচতলায়।
– আচ্ছা, ঠিক আছে। নাস্তা করে তোমাকে ডাকব, একসাথে বের হবো।
আরাফাত খুশি মনে ভেতরের রুমে চলে গেল।
আরাফাত ভেতরে গেলে সবুজকে আকুভাই বলল, কী করা যায়? এটা নিয়ে তো গতকাল কিছুই ভাবিনি!
– হ্যাঁ, আমিও ভাবিনি। রাতে একবার মনে পড়েছিল, কিন্তু কেমন করে যেন ভুলে গিয়েছি। একবার অনিকের সাথে কথা বলি, তারপর দেখা যাবে! আমি ভাবছি ওর বাবা-মায়ের সাথে একবার কথা বলি। ওর বাবা-মাকে রাজি করাতে পারলে ওর কাছ থেকে কবুতর ফেরত নেওয়া কোনো ব্যাপার – না!
– তাহলে সেটাই করি!
– কিন্তু…
– কিন্তু কী?
– ওর বাবা-মাকে বললেও যে কাজ হবে তা-ও বলা যাচ্ছে না!
– তাহলে?
– আমাদের এমনভাবে কাজ করতে হবে যেন ওদের পুরো ফ্যামিলি স্বেচ্ছায় কবুতরটি ফেরত দেয়!
– তো, কী করবেন?
– সেটাই ভাবতেছি। তুমিও ভাবো, আমিও ভাবি। চা খেতে-খেতে নিশ্চয় একটা আইডিয়া বের হবে। চা চীন দেশ থেকে এসেছে তো, নিশ্চয় চা খেলে একটা চায়নিজ আইডিয়া বের হবেই!
সবুজ হেসে দিলো। এই সময়েও না হাসিয়ে ছাড়লেন না আকুভাই।
চা-খাওয়া শেষ, কোনো আইডিয়াই এলো না।
তবে আরাফাত আসতে দেরি করেনি। এসেই বের হওয়ার জন্য তাড়া দিতে লাগল। আকুভাই বলল, মাত্রই তো খেয়ে শেষ করলাম, একটু পরে বের হই!
– এখন নয় কেন?
– টয়লেটে যাব। ওখান থেকে এসেই বের হবো।
টয়লেটের কথা বলাতে আরাফাত আর কিছু বলার সুযোগ পেল না। আকুভাই টয়লেট থেকে ফেরা পর্যন্ত চুপচাপ অপেক্ষা করল। আকুভাই এলে সবুজসহ আরাফাতকে নিয়ে বের হলো। আরাফাত সামনে হাঁটছে, পেছনে ওরা দুজন। সবুজ বলল, ভাই, কী করবেন? প্ল্যান না-করেই কাজে নামবেন?
– আইডিয়া পেয়ে গেছি!
– কখন? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল সবুজ।
– টয়লেটে গিয়ে পেয়েছি। শুধু আজ নয়, আগেও বহুবার টয়লেটে গিয়ে এরকম আইডিয়া পেয়েছি!
– বলেন কী? বলে সবুজ হাসতে লাগল। সবুজের হাসি শুনে আরাফাত বলল, হাসছো কেন?
– হাসা যাবে না?
– যাবে না কেন? তবে কোনো কারণ ছাড়া কেউ হাসে নাকি? ডিটেকটিভদের গম্ভীর থাকতে হয়!
– আমার ওস্তাদ তো আমাকে তেমন গম্ভীর হয়ে থাকার ডিটেকটিভগিরি শেখাননি। সব সময় হাসিমুখে কাজ করতে শিখিয়েছেন!
– তোমার ওস্তাদ কে?
– এই যে, যার সাথে আমরা অপারেশনে যাচ্ছি- বলে আকুভাইয়ের দিকে দেখিয়ে দিলো সবুজ। আকুভাই চুপচাপ আছেন। ততক্ষণে তারা মসজিদের উত্তর পাশে চলে গেছে। যে বাসার সামনে গিয়ে তারা দাঁড়িয়েছে সেটা চারতলা একটা ভবন। ভবনের নিচতলায় অনিকদের বাসা। বাসার সামনে বড় একটা আমগাছ, একটা রক্তজবা ফুলগাছ ও একটা ক্যাকটাসজাতীয় গাছ। বাসায় ঢুকতে একটা ব্যালকনি।
ব্যালকনিতে কবুতরের খোপ বানানো আছে। দুটো কবুতর তখন বাইরে মাথা বাঁকা করে তাকাচ্ছিল। দরজায় গিয়ে কলিংবেল দিলো অনিক। একটু পরেই দরজা খুলল এক মহিলা, তিনি অনিকের মা। আরাফাতকে দেখে বলল, তুমি? ওরা কারা?
– ওনারা আমার মামা।
– ওহ, ওরা কী জন্য এসেছে?
আরাফাতকে জবাব দিতে দিলো না আকুভাই। সে নিজেই বলল, আরাফাতের কবুতরটা দেখতে এসেছি।
– আরাফাতের কবুতর মানে? কী বলতে চান! ওর কবুতর তো ওদের বাসায়।
ততক্ষণে অনিকের বাবা ও অনিক এসে দাঁড়িয়েছে মায়ের পাশে। অনিক বলল, এটা আমার কবুতর! আরাফাত বলল, মিথ্যা বলবে না! ওটা আমার কবুতর, চুরি করে নিয়ে এসেছো তুমি, চোর একটা!
অনিকের মা বলল, আরাফাত, তোমাকে তো ভালো বলে জানতাম, তুমি আমার ছেলেকে চোর বলছো?
– আন্টি, আপনি নিজেই দেখুন ওটা আমার কবুতর। অনিকের কবুতরের গায়ে বাদামি দাগটা ছিল না!
– কিন্তু ও তো বলছে ওটা ওরই কবুতর! অনিকের বাবা বলল এবার।
– না, আঙ্কেল, সে মিথ্যা বলছে। আমি আগেও খুঁজেছি, অনিক দিচ্ছে না!
আকুভাই ও সবুজ এতক্ষণ শুনলেও এবার মুখ খুলল। আকুভাই বলল, আসলে আপনাকে আঙ্কেল ডাকব নাকি ভাই ডাকব বুঝে উঠতে পারছি না। তবুও বলছি, আসলে ব্যাপারটা সেরকম না!
– কোন ব্যাপারটা?
– এই কবুতর বদলের ব্যাপারটা!
আরাফাত কিছু একটা বলতে চাইলে সবুজ তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, তুমি এখন কোনো কথা বলবে না, আকুভাই বলুক। আরাফাত চুপ মেরে গেলে আকুভাই বলল, আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে, ঐ কবুতরটাকে আরেকটা ইনজেকশন দিতে হবে!
– আরেকটা মানে? অবাক হয়ে বলল অনিকের বাবা।
– আরেকটা মানে হচ্ছে আগে একটা দিয়েছি, আজ আরেকটা দিতে হবে আর তিনদিন পরে আরো একটা ইনজেকশন দিতে হবে!
– ইনজেকশন কেন?
– কবুতরটা খুব অসুস্থ! আপনি খেয়াল করলে দেখবেন ঐ কবুতরের চোখে ঝিমুনি-ঝিমুনি একটা ভাব আছে! দেখেছেন?
– না, তা তো দেখিনি! অনিক জানবে!
অনিককে জিজ্ঞেস করলে সে বলল, কাল থেকে আমার সেরকম লাগছিল। কিছু খেতে চাচ্ছিল না, জোর করে খাইয়েছি!
এমন একটা উত্তর আশা করছিল আকুভাই। সে বলল, তো, কবুতরটাকে আরেকটা ইনজেকশন আজকে দিতেই হবে!
– কবুতরের হয়েছেটা কী? ইনজেকশন কেন দেবে?
– বার্ড ফ্লু হয়েছে- চেহারায় একটা অসহায় ভাব এনে আকুভাই বলল।
– বলো কী? বার্ড ফ্লু! আতঙ্কিত কণ্ঠে বলল অনিকের বাবা।
– হ্যাঁ। জানেনই তো বার্ড ফ্লু ভাইরাসজনিত ছোঁয়াচে রোগ। এ রোগ পাখি থেকে মানুষে সংক্রমিত হতে পারে। কবুতর বা পাখি আক্রান্ত হওয়ার ২/৩ দিনের মধ্যেই ব্যাপক হারে পাখি মারা যায়। অনেক সময় ঘাড় ও মাথা বাঁকা হয়ে যেতে পারে। জীবনিরাপত্তা বা বায়োসিকিউরিটিই এ রোগ দূরীকরণের একমাত্র উপায়। প্রথম ইনজেকশনটা দেওয়াতে একটু সুস্থ আছে হয়তোত কবুতরটা!
– তাহলে নিয়ে যাও কবুতরটা, ঘরের মধ্যে আজরাইল ডেকে আনব নাকি!
– না, না, আপনাদের বাসায় থাকবে। আমরা জাস্ট ইনজেকশনটা দিয়ে আবার আপনাদের বাসায় ফিরিয়ে দেবো!
আরাফাতের খুব খারাপ লাগছে কবুতরটার জন্য, ও বারবার বলাতে এলাম এখানে।
আকুভাইয়ের এমন তুখোড় অভিনয় দেখে হাসি এলেও চেপে
রাখল সবুজ। আরাফাত বুঝতে পারছে না কেন আকুভাই কবুতর
ফেরত দেওয়ার কথা বলছে! একথা না-বললেই তো পারতো।
অনিক কবুতরটা দিতে না-চাইলেও ওর বাবা-মা একপ্রকার জোর করে কবুতরটা আরাফাতকে দিয়ে দিলো। আকুভাই বলল, থেঙ্কয়্যু আঙ্কেল। ইনজেকশন দিয়ে আবার নিয়ে আসব!
অনিকের বাবা বলল, না, না, আর আনতে হবে না। তোমরা যদি মনে করো এটা আরাফাতেরই কবুতর তাহলে যার কবুতর, তার কাছেই থাক, অনিকের কবুতরটা তাকে ফিরিয়ে দিও। আচ্ছা বলে আকুভাই, সবুজ ও আরাফাত বের হয়ে এলো অনিকদের বাসা হতে। আরাফাতের খুশি তখন কে দেখে! একটু দূরত্বে এসে আকুভাই বলল, কেমন দেখলে আমার ডিটেকটিভগিরি!
– দারুণ! এককথায় আপনি একজন বেস্ট ডিটেকটিভ।
– অনিককে আবার এসব বলতে যেও না, তখন দেখবে সে আবার তোমার কবুতর নিয়ে চম্পট!
– না, না, মোটেও বলব না। তোমাদের অনেক ধন্যবাদ আমার কবুতরটি উদ্ধার করে দেবার জন্য।

বইচোরের সন্ধানে । আরকানুল ইসলাম৬.
শুক্রবার বিধায় মেলা আজ সকাল থেকেই শুরু। সুজন সকালে চলে গেছে বইমেলায়। দুপুরে খেয়ে আকুভাইকে বইমেলায় একটু তাড়াতাড়ি যেতে বলে গেছে। সুজনের কথামতো দুপুরে খেয়ে দেরি করেনি আর, সবুজকে নিয়ে চলে গেল বইমেলায়।
অন্য শুক্রবারগুলোতে মেলায় যে রকম ভিড় থাকে আজ সে রকম ভিড় নেই। মেলার সময় বৃদ্ধির খবরটা প্রচার কম হওয়ার কারণে হতে পারে এটা। আকুভাইয়ের বেশ ভালোই লাগছে। বেশি ভিড়, গ্যাঞ্জাম সহ্য হয় না। এখন পুরো মেলাপ্রাঙ্গণ ইচ্ছেমতো হেলেদুলে ঘুরাফেরা করা যাবে। স্টলে পৌঁছলে সুজন বলল, আকুভাই, একটা খবর আছে!
– কী খবর?
– মেলার অফিস থেকে শুনলাম, আরো কয়েকটি স্টল থেকে বই চুরি হয়েছে!
– বলেন কী?
– হ্যাঁ, সিন্ডিকেট চোর মনে হচ্ছে এখন। এদের একটা গ্যাং আছে, এরাই নিয়মিত বই চুরি করে যাচ্ছে।
– আপনার কথায় তো তা-ই মনে হচ্ছে এখন।
– সো, আজ কড়া পাহারা দিতে হবে। চোর এলে কোনো মতেই হাতছাড়া করা যাবে না আজ।
– একদম, আজ আর মিস হবে না। প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল আকুভাই।
বেলা বাড়ার সাথে-সাথে পাঠক-দর্শনার্থীর ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। আজও স্টলে মোবাইলের ক্যামেরা সেট করে রেখেছে আকুভাই, সবুজও যথারীতি বাহির থেকে নজর রাখছে স্টলে আসা ক্রেতাদের দিকে। সন্ধ্যা পর্যন্ত সন্দেহজনক কিছুই ঘটল না। ঘটল সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পরে। স্টলে তখন ভিড় ছিল। ব্যাপারটা প্রথমে কেউই বুঝতে পারেনি। এক মহিলা কিছুক্ষণ বই ঘাঁটাঘাঁটি করে হঠাৎ একটা বই হাতে নিয়ে হাঁটা দিলো, সেটা দেখে সবুজ দ্রুত এগিয়ে এসে দেখে মহিলা স্টলের অন্য মুখটাতে গিয়ে আরো কিছু বই দেখতে লাগল। নিজের ভুল বুঝতে পেরে একটু লজ্জা পেল বটে, কিন্তু সন্দেহের বাইরে কাউকে রাখতে চাইছে না। ঐ মহিলা আসলে বই পছন্দ করে একটা একটা হাতে রাখছে, একসাথে দাম পরিশোধ করবে বলে। কিছুক্ষণ পরে এক স্যুট-টাই পরা ভদ্রলোক এসে বই উল্টাচ্ছে, পাল্টাচ্ছে। বয়স হবে ষাটের মতো। ফর্সা, ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি আছে, কিছু দাড়ি পেকেছেও। তাকে এই কাটে মানিয়েছে বেশ। তিনি কয়েকটা বই কিনলেন। লোকটাকে দেখে জোহেব সালাম দিলো। কারণ তিনি আগেও কয়েকবার বই কিনেছেন।
চেহারাটা পরিচিত লাগছে জোহেবের। দূর থেকে সবুজ পর্যবেক্ষণ করছে সব। লোকটা জোহেবকে পছন্দের বই এগিয়ে দেওয়ার সময় নিজের শরীরের অর্ধেক স্টলের ভেতরে ঢুকিয়ে ফেলেছে, কোমর গিয়ে ঠেকেছে স্টলের টেবিলে। এই সুযোগে সে একটা বই তার স্যুটের মধ্যে দ্রুত ঢুকিয়ে ফেলছে। আকুভাই স্টলের ভেতরে থাকায় এই দৃশ্যটা দেখেনি, দেখার সুযোগও নেই। কিন্তু সবুজ স্পষ্ট দেখেছে। সে দ্রুত আকুভাইয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে লাগল, কিন্তু আকুভাই অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। স্যুট-টাই পরা একটা জলজ্যান্ত সাহেব সাধারণ একটা বই চুরি করবে তা কল্পনায়ও আনেনি সবুজ। সে দ্রুত স্টলে গিয়ে আকুভাইকে ইশারায় বলল, এই লোকটা বই চুরি করেছে! ততক্ষণে লোকটা হাঁটা দিলো।
আকুভাই বলল, কী বলো? এই লোক বই চুরি করেছে! আমার তো বিশ্বাস হয় না!
– সত্যি বলছি!
– তুমি নিজ চোখে দেখেছো তো? আমি তো দেখিনি!
– আমি নিজ চোখেই দেখেছি সে বই একটা নিয়ে তার স্যুটের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলছে।
কথা বলতে-বলতে আকুভাই ও সবুজ লোকটার পিছু নিল। লোকটা একটু দূরেই চলে গেলেও দৃষ্টির সীমানায় আছে।
আকুভাই আবার বলল, দেখো সবুজ, লোকটাকে ধরব ঠিক আছে, কিন্তু তার কাছে যদি বই না-পাই তো খুব ধরা খাবো, অপমানও করতে পারে!
– আমি শিওর আকুভাই।
সবুজের কথার দৃঢ়তা দেখে লোকটার কাছাকাছি চলে গেল আকুভাই। লোকটাকে একটা প্রাইভেট কারে উঠে বসতে দেখে আকুভাই সামনে গিয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করল। লোকটা গাড়ির গ্লাস নামিয়ে বলল, কী সমস্যা? কিছু বলবে?
– জি, একটু সমস্যা হয়ে গেছে, একটু স্টলে আসতে হবে!
– স্টলে কেন? লোকটা একটু অবাক হলো।
– আপনার হিসাবে একটু গরমিল হয়েছে, হিসাবটা আবার করতে হবে।
লোকটা বলল, তোমরা হাঁটো, আসছি আমি।
আকুভাই একটু সামনে গেল বটে, লোকটা গাড়ি থেকে নামার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। গাড়ি থেকে নামলে আকুভাই লোকটাকেসহ স্টলের সামনে চলে গেল। সুজনকে ডেকে বলল, উনি যে একটু আগে বই কিনেছে তাতে তো হিসাবে গরমিল হয়েছে?
এর মধ্যে সুজনকে চোখের ইশারায় বুঝিয়ে দিলো যে লোকটা বই
চুরি করেছে! সুজনও দ্রুত বুঝে নিল।
– গরমিল মানে? সুজন আকাশ থেকে পড়ার মতো করে বলল।
– গরমিল মানে ওনার কাছ থেকে টাকা কম রাখা হয়েছে!
– টাকা তো কম রাখেনি, যা এসেছে তা-ই দিয়েছি!
– না, তা দেননি! সবুজ বলল।
– কী বলতে চাও! লোকটা উত্তেজিত হয়ে বলল।
– বই যতটা নিয়েছেন ততটার দাম দেননি আপনি?
জোহেবের দিকে দেখিয়ে লোকটা বলল, কেন, ওই ছেলেটা যা বলেছে তা-ই তো দিয়েছি!
আকুভাই বলল, আপনি বই কয়টা কিনেছেন?
– চারটা।
– দাম দিয়েছেন কয়টার?
– চারটার দামই তো দিলাম। আপনি এটা নিয়ে জেরা করছেন কেন আমায়?
– ঠিক ঠিক চারটাই নিয়েছেন তো? মানে কী? এভাবে আমাকে হেনস্থা করতে পারো না তুমি!
– আমি বলছি আপনি বই আরো একটা অতিরিক্ত নিয়েছেন, কিন্তু সেটার দাম আপনি ইচ্ছে করে দেননি! সবুজ বলল।
– মানে!
– এত মানে মানে করছেন কেন? একটা বই চুরি করে আপনি কি বড়লোক হয়ে যাবেন? পোশাকে তো…
আকুভাইকে কথা শেষ করতে না-দিয়ে লোকটা বলল, পোশাক নিয়ে কোনো কথা বলবে না!
আচ্ছা বললাম না কথা। কিন্তু আপনি আপনার বইগুলো দেখান!
– বই দেখাবো কেন? বই তো কিনে নিয়েছি, আবার দেখাতে হবে কেন?
– অতিরিক্ত একটা নিয়ে দাম পরিশোধ করেননি তাই দেখাতে হবে। আর আপনি অতিরিক্ত না-নিলে তো দেখাতে সমস্যা হওয়ার কথা না!
লোকটা বলল, চলো, দেখাই তোমাদের।
লোকটা দেখাতে নিয়ে যাচ্ছে দেখে আকুভাইয়ের বুকটা একটু ডিপ ডিপ করতে লাগল। সত্যি যদি বই না-নিয়ে থাকে তো সবার সামনে নাজেহাল হতে হবে! সবুজের কথার উপর ভিত্তি করে ভদ্রলোকের মতো দেখতে একজনকে এভাবে জেরা করেই যাচ্ছে। লোকটার সাথে আকুভাই, সবুজ, সুজন ও জোহেব গেল গাড়ির কাছে। গাড়ি থেকে বইয়ের প্যাকেটটা বের করে আকুভাইয়ের হাতে দিলো। আকুভাই প্যাকেট থেকে বের করে দেখল তাতে চারটা বই। জোহেব বলল, এই চারটার দাম পরিশোধ করেছেন তিনি।
সুজন বলল, তাহলে দাম পরিশোধ করেনি কোনটার?
লোকটা এবার আকুভাইকে একহাত নিয়ে যাচ্ছেতাই বলে যাচ্ছিল। সবুজ সেটা থামিয়ে দিয়ে বলল, যেটার দাম দেননি, ইচ্ছে করে গোপন করেছেন সেটা ওনার স্যুটের ভেতরেই আছে!
সবুজের মুখে এইকথা শুনে লোকটার চেহারা হঠাৎ পালটে গেল। আকুভাই বলল, আপনার স্যুটটার ভেতরে দেখতে দিন।
– তোমরা কিন্তু অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে ফেলছো! লোকটা রাগ দেখিয়ে বলল।
– আচ্ছা, দেখাতে সমস্যা কী? গাড়ির প্যাকেটটা তো দেখিয়েছেন, এবার স্যুটটা খুলে দেখান!
স্যুট খুলতে দেরি করলে সবুজ লোকটার স্যুটের
মধ্যে হাত ঢুকিয়ে ‘এই যে সেই বইটা’- বলে বইটা বের করে আনল! তখন লোকটার চেহারা লাল হয়ে উঠেছে, টিউবলাইটের আলোয় যা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিল।
লোকজন কমে আসছিল ধীরে। সুজন বলল, আপনি না আপনার পোশাক নিয়ে কথা বলতে বারণ করছিলেন! এই পোশাকের দাম কি রেখেছেন? এই পোশাকের আড়ালেই তো নিজের চুরির জিনিস আড়াল করে আসছিলেন দীর্ঘদিন ধরে! আপনি টানা পনেরো-ষোলোদিন বই চুরি করেই যাচ্ছিলেন। একমাত্র আপনার পোশাকের কারণেই আমরা আপনাকে সন্দেহ করতে পারছিলাম না! কয়টা বই চুরি করেছেন এ পর্যন্ত?
লোকটা মাথা নিচু করে আছে। সেটা দেখে আকুভাইয়ের যেন করুণা হলো এবং ভিন্ন একটা চিন্তা মাথায় এলো। সে বলল, বাসায় আপনা আর কে কে আছে?
– আমার ছেলে আছে, স্ত্রী আছে।
– ছেলে কী করে?
– সে সরকারি সিটি কলেজে মাস্টার্সে পড়ছে।
– তার নম্বরটা দিন।
– তার নম্বর কেন?
– তার সাথে কথা আছে।
স্যরি, আমাকে আর লজ্জা দিও না।
জোহেব, সবুজ, সুজন সবাই লোকটার অনুনয় দেখতে লাগল।
আকুভাই বলল, দিন আপনার ছেলের নম্বর, কথা আছে। লোকটা নম্বর দিলে একপাশে গিয়ে তাতে কল দিলো আকুভাই। রিসিভ করে ওপাশ থেকে পরিচয় জানতে চাইলে আকুভাই নিজের পরিচয় দিয়ে সংক্ষেপে ঘটনাটা বললে ছেলেটা বলল, বিষয়টা আমি বুঝতে পেরেছি। আপনারা এখন কোথায় আছেন?
– চট্টগ্রাম বইমেলায় আছি, জিমনেশিয়াম মাঠে।
– একটু ওয়েট করুন, আমি আসছি। মিনিট পনেরোর মধ্যে ছেলেটা এসে তার বাবাকে গাড়িতে উঠে বসতে বলে সে আকুভাইদের সাথে কথা বলা শুরু করল।
– আসলে আমার বাবা তো একটু অসুস্থ, তাই হয়তো…
– অসুস্থ হলে এরকম ধারাবাহিকভাবে কি চুরি করে যায়?
– ওটা তো ঠিক চুরি না, রোগ!
– রোগ বলতে? রোগের নাম দিয়ে কি আপনি আপনার বাবাকে বাঁচাতে চাইছেন?
– না। এটা একটা রোগই। রোগটা সম্পর্কে আপনি হয়তো জানেন না। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে ক্লিপটোম্যানিয়া বলে।
– মানে চুরিরোগ? আকুভাই অবাক হয়ে জানতে চাইল।
– হ্যাঁ, এটা একটা মানসিক রোগ। এ রোগে আক্রান্ত হলে শত চেষ্টা করেও কোনো ব্যক্তি চুরি করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারে না- অথচ এ ইচ্ছার সঙ্গে তার ব্যক্তিগত বা আর্থিক লাভের কোনো সম্পর্ক নেই।
– আপনার বাবাকে দেখে তো সেরকম মনেই হচ্ছিল না!
– হ্যাঁ। আমার বাবার গাড়ি আছে না? যার গাড়ি আছে সে কি এরকম ঠুনকো জিনিস চুরি করতে যাবে? আপনার কী মনে হয়? এটাকে ওসিডি বলে। মানে অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসওর্ডার (ওসিডি)- অনাকাঙ্ক্ষিত নিয়ন্ত্রণহীন চিন্তা যখন আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করে- অর্থাৎ ব্যক্তি সচেতন ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার অবচেতন মনের অনাকাঙ্ক্ষিত ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দেয়।
সাধারণভাবে ক্লিপটোম্যানিয়া মানসিক সমস্যা- মনমেজাজের ভারসাম্যহীনতা, হতাশা, দুশ্চিন্তা, অবচেতন মন, মানসিক রোগ যেমন- বুলিমিয়া নার্ভোসার ও অ্যালকোহলের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি রোগ। মানসিক স্বাস্থ্যবিজ্ঞানে এ রকম আচরণ ইম্পালস কন্ট্রোল ডিসঅর্ডারের অন্তর্ভুক্ত।
– আচ্ছা।
আবার বলা যায় এগুলো করার জন্য ব্যক্তি নিজের মধ্যে একধরনের অপ্রতিরোধ্য ইচ্ছা অনুভব করেন বা চুরি করতে বাধ্য হন। কখনো এটি তাড়নাগত আবার কখনো হয়ে ওঠে বাধ্যতাধর্মী।
– এতকিছু তো জানতাম না, তবে এ রোগের কথা শুনেছি।
– হ্যাঁ, অনেক সময় দেখা যায়, লুকিয়ে নিয়ে আসা জিনিসটি তিনি কখনো ফেলে দেন বা লুকিয়ে রাখেন বা অগোচরে সেটি জায়গামতো ফিরিয়েও দিয়ে আসেন। পুরুষদের চেয়ে নারীদের এই সমস্যা বেশি, আর প্রতি এক হাজার মানুষের মধ্যে প্রায় ছয়জনের এই সমস্যা রয়েছে বলে গবেষকেরা মনে করেন। আর এতকিছু জানতে পেরেছি বাবার এই রোগটি হবার পর থেকে। নইলে এই রোগ সম্পর্কে আমার ধারণাই ছিল না।
– স্যরি আসলে এতকিছু জানতাম না। তাছাড়া, আপনার বাবার এই রোগটা না-গেলে তো তিনি নিজেই অপদস্থ হবেন আর আপনারাও সামাজিকভাবে অপমানিত হবেন!
বাবার চিকিৎসা করিয়েছিলাম। কয়েক বছর ভালো ছিল। ইদানীং আবার শুরু হয়েছে রোগটা। ক্লিপটোম্যানিয়ার প্রকৃত কারণ সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও প্রচলিত তত্ত্ব অনুসারে- মস্তিষ্কের একটি নিউরোট্রান্সমিটার সেরাটোনিনের কম নিঃসরণই এ আচরণের জন্য দায়ী। কারণ সেরাটোনিনই আবেগ-অনুভূতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। হতাশা, দীর্ঘদিন ধরে বয়ে বেড়ানো মানসিক চাপ বা আঘাত ও সমস্যা, ব্যক্তিগত সমস্যার পারিপার্শ্বিকতায় এ রোগ হতে পারে। ভার্সিটি লাইফে বাবা একটা বড় ধরনের আঘাত পেয়েছিলেন, ডাক্তাররা বলছেন সেই আঘাত থেকেই এই রোগটার সূচনা হয়ে থাকতে পারে। এরকম বহু ঘটনা আছে।
সুজনেরা সবাই দাঁড়িয়ে শুনতে লাগল ছেলেটার কথা। সুজন বলল, স্টলে প্রতিদিন চুরি হচ্ছে দেখে এদেরকে নিয়ে এসেছি আমি!
– নিয়ে এসেছেন মানে? এরা কি ডিটেকটিভ নাকি? ছেলেটা জানতে চাইল।
– হ্যাঁ, খুদে ডিটেকটিভ। তবে এটা ওদের ভাষায়, আমার কাছে ডিটেকটিভ ডিটেকটিভই। বড়-ছোট নেই।
আকুভাই যেন একটু লজ্জা পেল, তর্জনী দিয়ে নিজের মাথাটা একবার চুলকে নিল।
বইচোরের সন্ধানে । আরকানুল ইসলামসুজন বলল, এরকম আরো কয়েকটা ঘটনা শুনেছি। কিন্তু এটাও যে সেরকম চুরি সেটা বোঝার ক্ষমতা তো আমার নেই। ভার্সিটি পড়ুয়া এক মেয়ে নাকি বাবা-মার সঙ্গে বিদেশ যাচ্ছিল। এয়ারপোর্টে ডিউটি ফ্রি দোকানে ঢুকে বের হওয়ার সময় ওই দোকানের বিক্রয়কর্মী দাবি করলেন, তাদের দোকান থেকে কিছু একটা না-বলে নিজের ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়েছে মেয়েটি। বিষয়টা শুনে তো মেয়েটির বাবা-মা রেগে গেলেন এবং প্রতিবাদও করলেন। পরে মেয়েটির ব্যাগ চেক করে পাওয়া গেল অল্প দামের একটা লিপস্টিক। মেয়েটি সত্যিই ওই দোকান থেকে সেটা নিয়েছিল। বাবা-মা তো লজ্জায় একাকার। মেয়েটির বক্তব্য ছিল, সে এমনিই সেটা তুলে নিয়েছিল! কিছু ভেবে সে এটা করেনি, এসময় সে নিজেকে সংবরণ করতে পারছিল না। পর নিয়মকানুনের বালাই শেষে তারা ফ্লাইট ধরেন। মেয়েটিও ক্লিপটোম্যানিয়া বা চুরিরোগে আক্রান্ত ছিল। এ রোগে আক্রান্তরা কারণে-অকারণে হরহামেশাই নাকি চুরি করে থাকে। চুরি করার পরে ব্যক্তি প্রচণ্ড মানসিক চাপ থেকে সাময়িকভাবে মুক্তি পায়।
সুজনের কথার রেশ ধরে ছেলেটা বলল, আমার এক ফ্রেন্ড একটা প্রাইভেট ব্যাংকে জব করে। তাদের ব্রাঞ্চ থেকে টানা কয়েকবার ‘পেপার ওয়েট’ হারিয়ে যায়। প্রথম কয়েকবার সন্দেহ হয়নি। এভাবে টানা চুরি হতে থাকলে তার কলিগরা পরস্পরের সাথে দুষ্টুমি করে দোষারোপ করা শুরু করলে একপর্যায়ে ম্যানেজারের কানে যায়। ম্যানেজার বলল, এত ছোটলোকি কাজ করার কোনো মানে হয় না, কেউ স্যালারি কম পায় না, এত ছোট জিনিসেরত দিকে নজর যায় কেন?
ম্যানেজারের মুখে একথা শোনার পর সবার খুব মনখারাপ হয়ে যায়। আমার ফ্রেন্ডটা তখন ম্যানেজারকে গিয়ে বলল, স্যার, অফিসের সিসি ক্যামেরায় একবার দেখে নিলেই তো হয়!
– হ্যাঁ, এটা তো মাথায় আসেনি!
অফিসশেষে সেদিন সবাই সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে গিয়ে হতবাক! ব্যাংকেরই এক নিয়মিত গ্রাহক কাজটি করেছে, যার আশি লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে ব্যাংকে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, পেপার ওয়েটটা তিনি প্রথমে টেবিলের কিনারে নিয়ে এসে একটা পেপারের মধ্যে মুড়ে নিলেন। এরপর সেটা নিয়েই তিনি ব্যাংক থেকে বের হয়ে গেলেন! এটা দেখে কলিগরা নাকি সেইরকম গালাগাল করছিল লোকটাকে। ম্যানেজার তাদের থামিয়ে দিয়ে বলেছিল, এটা নিয়ে আর কোনো কথা নয়। এটা একটা রোগ। এই রোগীরা তাদের রোগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে চুরি না-করে থাকতে পারে না। চুরি করেই ক্ষান্ত হয় এরা। সেদিন নাকি আমার ফ্রেন্ডসহ সবাই হতবাক হয়েছিল এমন রোগের কথা শুনে। বাবার এ রোগ হওয়ার আগে তো আমরা নিজেরাই জানতাম না এমন রোগের কথা!
ছেলেটাকে সুজন বলল, এতক্ষণ কথা বলছি অথচ তোমার নামটাই জানা হলো না! ছেলেটা হেসে জবাব দিলো, আমার নাম হাবিব সালেহিন।
সুজন নিজের পরিচয় দিয়ে বলল, ওর নাম আকুভাই, আমরা একনামে আকুভাই বলেই ডাকি আর ওর নাম সবুজ, আকুভাইয়ের সহযোগী।
– নিশ্চয় গোয়েন্দা-সহযোগী? হাবিব বলল।
আকুভাই বলল, হ্যাঁ, আরো কয়েকজন আছে। তবে সবুজকেই প্রায় অপারেশনে সাথে রাখি। সবুজ তার চেহারায় হাসি এনে জমা করে রাখল।
হাবিব অনুরোধের সুরে বলল, তোমরা যেহেতু ডিটেকটিভ, আমার একটা কাজ করে দাও না?
আকুভাই বলল, আবার কাজ! আসার পর থেকেই তো একটার পর একটা কাজ করেই যাচ্ছি!
– একটার পর একটা মানে?
এবার সবুজ জবাব দিয়ে বলল, এসেছিলাম সুজন ভাইয়ের কথিত
বইচোর ধরতে। কিন্তু তার আগেই পতেঙ্গা সি-বিচে সুইসাইড করতে যাওয়া এক মেয়েকে বাঁচালাম, সুজন ভাইয়ের ভাগ্নে আরাফাতের কবুতর উদ্ধার করে দিলাম আর বই চুরির ব্যাপারটা তো সবাই জানেনই!
এবার সুজন নিজেই অবাক হয়ে গেল। সে বলল, কই? কবুতর উদ্ধারের কথা তো আমাকে বলোনি তোমরা!
– আপনি যা ব্যস্ত! বলার সময়ই বা কই পেলাম!
হাবিব বলল, তাহলে তো ভালোই হয়! সব যেহেতু সলভ করতে পেরেছে আমার ব্যাপারটাও তোমরা পারবে। যা যা খরচ হয় আমি দেবো।
– আহারে, এখানে তো খরচের কথা আসছে না।
সময়ের কথা বলছি। বাড়িতে দুইদিনের কথা বলে এসেছিল সবুজ। আর আজ তৃতীয়দিন হতে চলল। আপনার কাজটা করতে কতদিন লাগে তাতো বলা যাচ্ছে না, আর কী কাজ সেটাও তো জানা হলো না! আকুভাই বলল।
– সেটা তো শুনতেই চাইলে না তোমরা!
– তোমার কি খুব সমস্যা হবে সবুজ? আকুভাই বলল।
– বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দিতে হবে। আম্মা বলেছিল দুইদিনের বেশি যেন না থাকি!
– তাহলে তো সমস্যা!
হাবিব বলল, সবুজ তাহলে বাড়ি চলে যাক!
আকুভাই বলল, না, না, তা কী করে হয়? ওকে ছাড়া কাজ করা সম্ভব নয়।
আকুভাইয়ের মুখে এমন কথা শুনে সবুজের মনে একটা ভালো লাগা কাজ করল, যা ভাষায় প্রকাশের অযোগ্য।
হাবিব বলল, কী করতে পারবে, কে থাকবে না-থাকবে সেটা পরে দেখা যাবে। আমার সমস্যাটার কথা একবার শুনিয়ে রাখি, যদি সম্ভব হয় তোমরা চেষ্টা করে দেখবে।
– আচ্ছা, বলেন। আকুভাই বলল।
– আমাদের বাড়ির আশেপাশে ক’দিন ধরে কিছু লোক ঘোরাঘুরি করছে, মধ্যরাত হলেই এদের আনাগোনা বেড়ে যায়। এরা আমাদের বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করতেছে!
– আপনাদের বাড়ি মানে? আপনারা না ভাড়া বাসায় থাকেন!
– না, এটা আমাদের নিজস্ব বাড়ি। আমাদের বাড়িটা দোতলা। নিচতলায় ভাড়া দিয়েছি, দোতলায় আমরা থাকি। বাড়ির চারদিকে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। প্রাচীর ঘেঁষে রয়েছে কাঁঠাল ও সুপারি গাছ। বাড়ির সামনে রয়েছে খোলা জায়গা, বাচ্চারা যাতে খেলতে পারে।

(আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)

Share.

মন্তব্য করুন