তোমরা নিশ্চয়ই ক্লাসের ভূগোল, পাটিগণিত, বীজগণিত করতে করতে বোর হয়ে গেছো। ব্রেক নাও, দেখে ফেলো প্রিয় কোনো সিনেমা। তোমরা নিশ্চয়ই সত্যজিৎ রায়কে চেনো! আহ, কে না চিনবে, ফেলুদার গল্পগুলো পড়লে কে অমৃতের স্বাদ ভোলে বলো? হ্যাঁ! তোমাদের যাদের মনের ভেতর সিনেমা বানানোর উইপোকা ঘুরঘুর করছে তারা অস্কারজয়ী চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পরিচালিত ‘পথের পাঁচালী’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘পরশ পাথর’, ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’- এই সিনেমা কয়টি ঝটপট দেখে ফেলো। উহু, এক বসাতেই না। সময় নিয়ে আরো দেখতে পারো ‘সোনার কেল্লা’ আর ‘জয়বাবা ফেলুনাথ’। অমিতাভ রেজা নামের এক চলচ্চিত্রকার কী বলেছেন জানো? তিনি বলেছেন, সিনেমা দেখতে হয় সিলেবাস করে, যেমন ক্লাসের পড়া সিলেবাস অনুসারে পড়ি। তো যাকগে, উপরে ‘পথের পাঁচালী’ নামের যে ছবির কথা বলা হয়েছে তার সিকুয়্যাল বের হয়েছে ২০১৩ সালে। ‘অপুর পাঁচালী’ নামের সিনেমাটিও দেখতে ভুলো না যেন।
মাঝে মাঝে এমন হয় না? তুমি রুমে আছো অথচ আম্মু-আব্বু না জেনে দরজা তালা মেরে বাইরে গেলেন। ‘ছুটির ঘণ্টা’ নামে মর্মন্তুদ এক সিনেমা আছে; খোকন নামের এক ছোট্ট ছেলে আটকা পড়ে স্কুলের বাথরুমে। আহ! এক দুইদিন না, এগোরো দিন, ছেলেটি কি আদৌ বের হতে পেরেছিলো? তোমরা ছবিটি দেখলে বুঝতে পারবে কী কষ্ট সেই দুঃসহ দিনগুলোতে। আরেকটা চমৎকার ছবি দেখতে পারো ‘দূরবীন’ নামে। ২০০৯ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিটি না দেখলে তোমার ষোলো আনাই বৃথা। ছবিতে দেখবে তোমাদের বন্ধু লাবিবের পড়ালেখায় একদম মনটি নেই। খালি মার জন্য কান্না। মা তার মরে গেছে। কিন্তু এমন পর্যায়ে লাবিবের এক স্কুলটিচার তার মেন্টর হিসেবে আসেন। মেন্টর মানে যার উপদেশ মতো চলা যায়, যাকে অনুসরণ করা যায়।
তোমাদেরও নিশ্চয়ই কোনো মেন্টর আছে, তাই না। লাবিবের বাবা হঠাৎ করে লাবিবকে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ পাঠাতে চান। এদিকে লাবিবের মন তো প্রচণ্ড খারাপ। লাবিবকে কি বিদেশে পাঠাতে পেরেছিলো? এর উত্তর আর নানা রকম শিক্ষা পেয়ে যাবে ছবিটি দেখলে।
তোমরা যারা গল্প উপন্যাস পড় তারা নিশ্চয়ই এতোদিনে মুহম্মদ জাফর ইকবালের নাম জেনে গেছো। তিনি কিন্তু ছোটদের জন্য চমৎকার চমৎকার শব্দে গল্প বলে গেছেন। এই যে, ‘দীপু নাম্বার টু’, ‘আঁখি ও তার বন্ধুরা’, ‘আমার বন্ধু রাশেদ’- ছবিগুলো তোমাকে খুব অনুপ্রেরণা জোগাবে। চাইলে বইগুলোও পড়তে পারো।
তোমাদের জন্য চলচ্চিত্র । ফয়সাল মুনাওয়ারতোমরা যারা বইপত্তর পড়ো তারা নিশ্চয়ই শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় আর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অনেক গল্প পড়ে ফেলেছো? শীর্ষেন্দু’র ‘হীরের আংটি’ নামের বই নিয়ে চমৎকার এক ছবি বানিয়েছেন ঋতুপর্ণা সেন। ছবির নামও ‘হীরের আংটি’। আর সুনীলের ‘কাকাবাবু’ সিরিজ থেকে ছবি হয়েছে পাঁচটি। ‘কাকাবাবু হেরে গেলেন’, ‘এক টুকরো চাঁদ’, ‘সবুজ দ্বীপের রাজা’, ‘মিশর রহস্য’ এবং ‘ইয়েতি অভিযান’। কাকাবাবু পড়ার পাশাপাশি ছবিগুলো দেখে ফেলো।
তারেক মাসুদ নামের একজন গুণী শিল্পী ছিলেন আমাদের দেশে। এই যে তোমরা ২০১৮ সালে ‘কিশোর বিদ্রোহ’ করলে নিরাপদে পথ চলার জন্য, সড়ক দুর্ঘটনা থেকে বাঁচার জন্য। সেই সড়ক দুর্ঘটনা এ মানুষটিকেও আমাদের কাছ থেকে বহুদূরে নিয়ে গেছে। তারেক মাসুদের একটি বিখ্যাত ছবি হচ্ছে ‘মাটির ময়না’। মুক্তিযুদ্ধ আর ভাইবোনের ভালোবাসা কি দরুণভাবেই না ফুটে উঠেছে ছবিতে।
‘মাটির প্রজার দেশে’ নামে দারুণ এক ছবি আছে। ছবিটিতে আমাদের শৈশব-কৈশোর দারুণভাবে ধরা আছে। এটাও দেখতে পারো। বিদেশী কাহিনী অবলম্বনেও আমাদের দেশে দারুণ দারুণ ছবি হয়েছে। জার্মানির এরিখ কাস্টনারের ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’ নামের গল্প থেকে বাদল রহমানত একটি ছবি বানিয়েছেন। এটি কিন্তু বাংলাদেশের প্রথম শিশুতোষ ছবি।
তোমাদের সবার প্রিয় কালজয়ী কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের গল্প কে না পড়েছে বলো? হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে ‘দূরত্ব’ নামের একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন মোরশেদুল ইসলাম। এই পরিচালক বেশির ভাগ বাংলাদেশী শিশুতোষ ছবির পরিচালক। ছবিতে দেখা যায় এগারো বছরের ছোট ছেলে পুতুল, মা-বাবা ব্যস্ত। তাকে সারাদিন কম্পিউটার গেইম খেলতে হয়। একদিন পুতুল এই বন্দিজীবন থেকে বের হয়ে যায়। পুতুল হারিয়ে যায়। কোথায় হারায়- জানতে হলে ছবিটি দেখতে হবে। আচ্ছা, তোমরাও কি পথশিশুদের সৌভাগ্যে ঈর্ষান্বিত হও? হা হা, তাদের আবার সৌভাগ্য! তারা না পারে পড়তে না পারে খেলতে। তাদের নিয়ে একটি দারুণ ছবি এসেছে গত বছর ‘পাঠশালা’ নামে।
তোমাদের জন্য চলচ্চিত্র । ফয়সাল মুনাওয়ারউফ! তোমাদেরকে তো একটি চমৎকার ছবির নামই বললাম না। কাবুলিওয়ালা! ইয়েস, রবি ঠাকুরের সেই বিখ্যাত কাবুলিওয়ালা। ঐ যে ঝুনঝুন করা আফগান ফলবিক্রেতা আর সেই ছোট্ট মেয়েটি। যাহ, গল্পটা তোমাদের বলে দিলে হবে? তোমরা তো জানোই, গল্প বলে ফেললে ছবি দেখার মজা পানসে হয়ে যায়। তাহলে ঝটপট দেখে ফেলো। ছবিটি বানিছেন তপন সিংহ। তপন সিংহ পরিচালিত আরেকটি ছবি ‘আজব গাঁয়ের আজব কথা’, ‘এক যে ছিল দেশ’, ‘গল্প হলেও সত্যি’ এবং ‘অতিথি’। এই চলচ্চিত্রকার বলা যায় ছোটদের জন্য এক পথিকৃৎ। জীবনের বেশির ভাগ সময় ছোটদের ছবি নির্মাণ করেছেন।
ষষ্টীপদ চট্টোপাধ্যায়ের ‘চতুর গোয়েন্দা চতুরাভিযান’ নামের গোয়েন্দা সিরিজ অবলম্বনে গত বছর বের হলো টাটকা ছবি ‘গোয়েন্দা তাতার’। তোমরা যারা কিশোর মুসা-রবিনহুড পড়ো এবং দেখো তাদের জন্য তো বলা চলে পোয়াবারো। আর কী লাগে!

তোমাদের জন্য ইংলিশ মুভি
ইংরেজি নিয়ে খুব প্যারায় আছো? প্যারাগ্রাফ মুখস্থ করতে করতে তামা তামা হয়ে যাচ্ছে জীবন? চাপ নিচ্ছো ক্যান? দেখে ফেলো সিলেবাসের মতো করে কিছু ইংরেজি সিনেমা। তোমরা নিশ্চয়ই চাচ্চু-কাকুদের কাছে এক ধরনের কয়েন গেইমের কথা শুনেছো। স্কুল পালিয়ে গেইমের দোকানে গিয়ে কয়েন ফেলে এক ধরনের গেইম খেলতে হতো তাদের। এখনকার প্রজন্ম তো ট্যাব প্রজন্ম। তোমরা তো সেই কয়েন গেইমের মজাটাই নিতে পারোনি। লোকে ওটাকে মোস্তফা গেইম বললেও ওটার আসল নাম ছিল ‘ক্যাডিলাক অ্যান্ড ডায়নোসরস’। তাতে কি! দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর জন্য দেখে ফেলতে পারো ‘র‌্যাক ইট রালফ’ নামের সিনেমাটি। না-না, তাতে কিন্তু মানুষের চরিত্র নেই। আছে সাচ্চা গেইমের চরিত্রগুলোর জীবন্ত হয়ে ওঠার কাহিনী। কী চমৎকার কাহিনী! তোমাকে দুই লাইনে বোঝানো মোটেই সম্ভব নয়। ঝটপট ইউটিউব সার্চ করে দেখে ফেলো। ভালো কথা, সাবটাইটেলসহ দেখবে। নইলে কিচ্ছুটি বুঝবে না। গেইমের চরিত্র বলে কথা!
তোমরা যারা সায়েন্স ফিকশন পড়তে ভালোবাসো, প্রতি মাসে কিশোর পাতা হাতে পেলেই যারা আঁতিপাঁতি করে সায়েন্স ফিকশন খোঁজো তাদের জন্য দারুণ খবর! বিখ্যাত পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গ তোমার কথা ভেবেই ‘ইটি দ্য এক্সট্রা টেরিস্ট্রিয়াল’ নামের দুর্দান্ত সায়েন্টিফিক মুভি বানিয়ে বসে আছেন। জাস্ট দেখবে আর এলিয়েন-মানুষের বন্ধুত্ব কিভাবে হয় তা অনুভব করবে। বুঝবে বন্ধুত্বে জাত-পাত-রাষ্ট্র-গ্রহ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। দেখে ফেলো তাহলে!
আর্থার সি ক্লার্কের লেখা ‘ডলফিন আইল্যান্ড’ ও ‘চাইল্ড অব দ্য সান’ কিন্তু দেখবেই। এ ছাড়া বড়দের বিজ্ঞান কল্পকাহিনী নির্ভর ছবি ‘২০০১ : স্পেস ওডিসি’ও দেখতে পারো।
ভয়ের গল্প লিখতে জুড়ি নেই যে মানুষটির, সে মানুষটি হচ্ছেন স্টিফেন কিং। তার লেখা ‘স্ট্যান্ড বাই মি’ হচ্ছে এমন এক ফিল্ম যেখানে আছে ভয় আর বন্ধুত্বের গল্প, গল্পটা অদ্ভুত। চার বন্ধু একটা ডেডবডির সন্ধানে নামে। তাদের একেকজন একেক ধরনের ফ্যামিলি থেকে আসে। এই বন্ধুদের কেউ হয়তো বস্তি থেকে এলো, কেউ বড় লোক ফ্যামিলি থেকে; আদৌ কি তারা সেই লাশ উদ্ধার করতে পেরেছিল? দেখে ফেলো।
ফ্রি উইলি। ‘ফ্রি উইলি’ সিনেমাটা কিকো নামের এক তিমিকে কেন্দ্র করে। তিমিটা ধরা পড়েছে শিকারির জালে। তারপর এক বিশাল অ্যাকুরিয়ামে তাকে প্রদর্শনের জন্য রাখা হলো। সেখানে জেসি নামের এক মেয়ে তার বন্ধু হয়ে যায়। জেসি চায় তিমিটা আবার সমুদ্রে ফিরে যাক। কিন্তু কিভাবে ফিরে যাবে? সে এক মস্ত কাহিনী। দেখতে পারো ‘ফ্রি উইলি টু : দ্য অ্যাডভেঞ্চার হোম’, ‘ফ্রি উইলি থ্রি : দ্য রেসকিউ’- চাইলে তুমি এই কিকো নামের তিমিটিকে নিয়ে করা প্রামাণ্য চিত্র ‘কিকো : দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ও দেখে ফেলতে পারো।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বেশ কিছু ছবি সম্পর্কে জেনেছো উপরের বাংলা ছবির আলোচনায়। এবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে করা দারুণ এক ছবির নাম শোনো। ‘দ্য বয় ইন স্ট্রাইপড পাজামাস’। কি দারুণ ছবি তুমি বিশ্বাসই করতে পারবে না! ভুল বললাম, মোটেই দারুণ নয়, ভয়ানক।
এছাড়া তোমরা ‘পার্সিপোলিস’ নামের কার্টুন মুভিটিও দেখতে পারো। আরো দেখতে পারো ‘বার্থ অফ এ বাটারফ্লাই’, ‘লাইফ অ্যান্ড নাথিং মোর’, ‘রিটার্ন অব রবিন হুড’, ‘হোম এলোন ওয়ান’, ‘হুগো’ ও ‘হোম এলোন টু’। ‘ওয়াল ই’ নামের একটা চমৎকার কার্টুন মুভি আছে। যারা কার্টুন মুভি দেখতে পছন্দ করো তারা মিস করো না যেন। আরেকটা ছবির নাম তো তোমরা জানোই ‘দ্য জঙ্গল বুক’। এটা নিশ্চয়ই দেখে ফেলেছো। না দেখলে সিলেবাসের প্রথমে রাখো এটা। ‘লাইফ অব পাই’ দেখেছো? কি বলো! সত্যি দেখোনি? ধূর। অবশ্যই দেখে ফেলো এক্ষুনি।
কোনো শব্দ নেই এমন ফিল্ম দেখেছো? ‘এভরি চাইল্ড’ ছবিটিতে কোনো শব্দ নেই।
১৯৭০ সালের চমৎকার এক দশ মিনিটের নাটক আছে, ‘দ্য ব্রেড অ্যান্ড দ্য অ্যালি’ নামে। দারুণ আর একটি কার্টুন মুভি হচ্ছে ‘ফর দ্য বার্ডস’ ছবিটি দেখার পর পাখিরা কেন তোমাদের মাথায় হঠাৎ হঠাৎ পিটি করে দেয় তা নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকবে না।
এ ছাড়া দেখতে পারো ‘দ্য লিটল রাস্কেলস’, ‘দ্য গুনিস’, ‘মনস্টার’, ‘ইনক’, ‘রাটাটুই’, ‘ক্রিস্টোফার রবিন’, ‘দ্য আয়রন জায়ান্ট’, কিং হিরো, ‘বল্ট’, ‘মিনিয়ন্স’, ‘রালফ ব্রেক দ্য ইন্টারনেট’- এগুলো কিন্তু বেশির ভাগই কার্টুন ফিল্ম। কার্টুন ভালোবাসলে দেখে ফেলো ‘দ্য স্পেস ট্রিলজি’, ‘রিটার্ন টু দ্য রিফ’, ‘এ ফল অব মুনডাস্ট’- এই টিভি সিরিজগুলো সায়েন্স ফিকশন যারা পড়ে তাদের খুব ফেভারিট। ‘গডজিলা’ দেখলে কার না গায়ে কাঁটা দেয়। ‘জুরাাসিক পার্ক’ও দেখতে পারো। টিভি সিরিজ ‘জুমানজি’, ‘উডি উড পেকার’, ‘ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট’ আর আমাদের দেশের ‘মীনা রাজু’, ‘সিসিমপুর’- এগুলোর কথা তোমাকে আর কী বলব। উল্টো তুমিই বলবে।
আচ্ছা ‘আলিফ লায়লা’ দেখছো? ‘দি অ্যাডভেঞ্চার অফ সিনবাদ’ দেখোনি? হারকিউলিস দেখেছো? ‘রবিন হুড’ ‘রোবোকপ’, ‘ম্যাকগাইভার’ এগুলো কিন্তু এখনও বেশ জনপ্রিয় ধারাবাহিক। এ ছাড়া ‘হ্যারি পটার সিরিজ’, ‘টয় স্টোরি সিরিজ’, ‘হাউ টু ট্রেইন ইউর ড্রাগন সিরিজ’, ‘মাদাগাস্কার সিরিজ’, ‘উইনি দ্য পুহ সিরিজ’- এগুলো হচ্ছে দুর্দান্ত কিছু সিরিজ। সিলেবাসের বাইরে রেখো না কিন্তু।

তোমাদের জন্য চলচ্চিত্র । ফয়সাল মুনাওয়ারভারতীয় কিশোর সিনেমা
তোমরা জানো? তোমাদের বয়সী একটি মেয়ে নোবেল প্রাইজ পেয়ে ফেলেছে। মালালা ইউসুফজাই, পাকিস্তানি এ কিশোরীকে নিয়ে ‘গুল মাকাই’ নামের এক অসাধারণ ফিল্ম বেরুবার কথা আছে। চলতি ২০১৯ অথবা ২০২০ এ মুক্তি পাবে এই ছবিটি।
তোমাদেরকে আরেকটি তথ্য দিয়ে রাখি। জাতিসঙ্ঘ ১২ জুলাইকে ‘মালালা ডে’ ঘোষণা করেছে। আচ্ছা তোমরা কি জানো ঠিক তোমাদের বয়সী একটা মেয়েই কিন্তু এভারেস্ট জয় করে ফেলেছে। অবাক হচ্ছো? মাত্র ১৩ বছরের পূর্ণা মালাভাতের এভারেস্ট জয় করাকে নিয়ে একটা দারুণ ফিল্মও ‘পূর্ণা’ নামে। দেখে ফেলো আর স্বপ্ন এঁকে ফেলো কবে জয় করবে এভারেস্ট। স্বপ্নকে টার্গেটে রূপ দাও। আর হয়ে ওঠো কনিষ্ঠতম বাংলাদেশী এভারেস্ট জয়ী।
আরেকটি ভারতীয় ছবি দেখতে পারো। ‘তারে জমিন পার’ প্যাট্রিসিয়া গোলাক্কোর বই ‘থ্যাংক ইউ, মি. ফকার’ থেকে নেয়া গল্প নিয়ে এই ছবিটি। ঈশান নামের একটা ছেলের ডিসলেক্সিক রোগ। এই রোগটা কেমন সেটি তোমাদের বলি। যাদের এমন রোগ তারা কিন্তু আমাদের মতো স্বাভাবিক দেখতে পায় না। তাদের চোখে শব্দগুলো জীবন্ত হয়ে দেখা দেয়। কি আজব কা- দেখো!
এরকম আবার কিছু সাধারণ রোগ থাকে, যেমন- ‘কালার ব্লাইন্ড’। এসব রোগীরা সব রং ধরতে পারে না। ধরো, তুমি যেটাকে সবুজ দেখছো ও ওটাকে কালো দেখছে। তো ঈশান অক্ষরগুলোকে বাগে আনতে পারতো না। কিন্তু তার ছবি আঁকার হাত ভালো। ভালো মানে খুব ভালো। কিন্তু আঁকা দিয়ে তো জীবন চলে না। জেলস্কুল চেনো? মানে দূরের আবাসিক স্কুল। ঐ রকম এক স্কুলে ঈশানকে ভর্তি করানো হলো ‘মানুষ’ করার জন্য। কিন্তু যেই লাউ সেই কদু। ঈশান পরীক্ষায় আরো খারাপ করতে লাগলো। এ সময় চারুকলার শিক্ষক রাম শঙ্কর এলেন। এরপর ঈশান কি পারলো আবার পরীক্ষায় ভালো করতে? ছবিটা দেখো। দেখতে দেখতে মনে হবে- আহা! ঈশানের মতো যদি আঁকতে পারতাম! কমলাপুরে গেলে তুমি তোমাদের বয়সী কিছু ছেলে পাবে যারা ঠিকমতো খেতে পায় না। পড়তে পারে না। যাদের দিনমান কেটে যায় হয়তো ঘুড়ি উড়ানোর পেছনে। এমন এক ছেলে গাট্টু। ‘গাট্টু’ সিনেমাটা দেখলে তোমার মনে হবে গাট্টু আর তুমি একাকার হয়ে গেছো।
ভূতকে কে ভয় পাও? ‘আরে ধূর ধূর! মশাই, এখন কি ভূতের যুগ আছে?’ বলে যারা দূর দূর করে দিচ্ছে। তারা স্রেফ ‘ভূতনাথ’ ছবিটা দেখতে পারে। পিলে চমকে যাবে এক্কেবারে। ছবির গল্প লিখেছেন বিখ্যাত লেখক অস্কার ওয়াইল্ড। আরেকটি ভয়ানক ছবি দেখতে পারো, ‘মাকড়ি’। তোমাদের মধ্যে যারা অন্যকে ভয় দেখাও তাদের জন্য এ ছবির কোনো জুড়ি নেই।
স্টানলি কী ডাব্বা ছবিটির কথা কী বলব। স্টানলি নামের পিচ্চিটা টিফিন বক্স নিয়ে কি কা-টাই না করে- না দেখলে একদম বুঝবে না। পারি আর ছোটু দুই ভাইবোন। ভাইবোন শাহরুখ আর সালমান খানের ভক্ত। তারা দারুণ এক কাহিনী করে। কাহিনীটা হচ্ছে কয়েন দিয়ে টস করে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার সময় গল্প বলে। যে টসে জিতে তার গল্প বলার পালা। ‘ধানাক’ নামের মুভিটি দেখলে ভাইবোনের যে দুষ্টু-মিষ্টি সম্পর্ক তা দেখতে পাবে। তোমাদের ভাইবোনদের সাথেও নিশ্চয়ই এরকম দুষ্টুমি হয়, তাই না? মিলিয়ে দেখো তো, পারি আর ছোটুর মতো কিনা।
তোমরা এর আগে তপন সিনহার বাংলা ছবি কথা পড়েছো। তিনি কিন্তু হিন্দি ছবিও পরিচালনা করেছেন। ‘সফেদ হাতি’ নামের অসাধারণ এ ছবি আছে। ছবিতে দেখবে হাতির সাথে মানুষের কিভাবে বন্ধুত্ব হয়। হাতির সাথে বন্ধুত্ব! দারুণ না! এই ছিল ভারতীয় সিনেমার খবর। সময় করে ঝটপট দেখে ফেলো তাহলে!

তোমাদের জন্য চলচ্চিত্র । ফয়সাল মুনাওয়ারমজার সব ইরানি ছবি
এসো, তোমাদের সাথে এবার ইরানি ছবি নিয়ে কিছু গপ্পোসপ্পো করি। কী বলো? তোমরা এর আগের কিশোর পাতাগুলোয় নিশ্চয়ই ইরানি সিনেমা ‘চিলড্রেন অব হ্যাভেন’র রিভিউ পড়ে ফেলেছো। তাহলে এই ছবি নিয়ে কী বলব তোমাদের। আরেকটি ইরানি ছবি হলো ‘হোয়াইট বেলুন’। আহ, কি ছবি! প্রায় কাছাকাছি নামের ফ্রেঞ্চ একটা ছবি আছে ‘দ্য রেড বেলুন’ নামে। ওটাও দেখে ফেলতে পারো।
আমাদের যাদের বয়স ১২-১৩ বছর আমরা মাঝে মাঝে ভুলক্রমে আরেকজনের নোটবুক বাসায় নিয়ে আসি। ধরো, নিয়ে আসলাম পরের দিনের অঙ্ক খাতা! বেচারা কি মারটাই না খাবে বুঝতে পারছো? ঠিক এমন ভুল করে আরেকজনের হোমওয়ার্কের খাতা নিয়ে আসে আহমেদ। বাসার এসেই বুঝতে পারে বিশাল ভুল হয়ে গেছে। দ্রুত এই হোমওয়ার্ক খাতা পৌঁছে দিতে হবে ছেলেটির বাসায়। কিন্তু সে বাসায় যেতে নানা বিপত্তি। আদৌ কি সে পেরেছিল নোটখাতা পৌঁছে দিতে? আব্বাস কিয়ারোস্তামির অসাধারণ ফিল্ম ‘হয়ার ইজ দ্য ফ্রেন্ডস হোম’ দেখে ফেলো। আমির নাদেরির ছবি ‘দ্য রানার’ হচ্ছে ইরানের বিপ্লবের ঠিক পরপর বানানো ছবি। যুদ্ধ-সংঘাত অস্থিরতা যে কিশোর মনে কী মারাত্মক প্রভাব ফেলে তাই মূলত দেখানো হয়েছে ছবিতে, দেখতে পারো।
তোমাদের জন্য চলচ্চিত্র । ফয়সাল মুনাওয়ারবাহরাম বেজাইর পরিচালনায় ‘বাশু : দ্য লিটল স্ট্রেঞ্জার’ ছবিটি একাত্মতার প্রতীক। ইরানে সাদা-কালোর একটা দেয়াল আছে। কালো মানুষদের সাদা মানুষরা দেখতে পারে না, এ ব্যাপারটি পৃথিবীর সব দেশেই আছে। ছবিটি দেখো। অনেক কিছু শিখতে পারবে।
ইরানের ছবিগুলো হয় পৃথিবীর সেরা ছবি। এই ছবিগুলো তোমার দৃষ্টিভঙ্গি পল্টে দেবে। এমন আরো কিছু ইরানি ফিল্ম দেখতে পারো। ‘মৌর্নিং’, ‘দ্য কালার অব প্যারাডাইস’, ‘দ্য মিরর’, ‘গ্রানাজ’- ছবিগুলো অসাধারণ। এ ছাড়া একটি চমৎকার ছবি দেখতে পারো ‘দ্য ফ্রোজেন রোজ’, ছবিটিতে রুকাইয়াকে তার বাবার অপেক্ষায় বসে থাকতে দেখা যায়। অথচ তার বাবা ইরাক-ইরান যুদ্ধে মারা গেছেন। দিনমান অপেক্ষা করতে করতে শেষে কি তার ভুল ভেঙেছিলো?
‘ব্ল্যাকবোর্ডস’ নামের আরেকটা চমৎকার ইরানি মুভি আছে। যেটিতে দেখানো হয় শরণার্থী শিশুদের কষ্ট। গৌতম বুদ্ধকে চেনো? তাকে নিয়েও দারুণ এক ইরানি ফিল্ম আছে। ‘বুদ্ধ কলাপসড আউট অফ শাম’ নামে বুদ্ধকে জানবে। তার শান্তির বাণী জানবে।
হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়েও ইরানি ফিল্ম আছে। মাজিদ মাজিদির পরিচালনায় ‘মুহাম্মদ : দ্য মেসেঞ্জার অব গড’ নামের একটি ছবি আছে। ছবিটির পরতে পরতে তুমি ফিল করতে পারবে মহানবী (সা.) কি কষ্টই না করেছেন।
আরেকটি ছবি আছে ‘দ্য মেসেজ’ নামে। ১৯৭৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটির পরিচালক মুস্তাফা আক্কাদ। দু’টো ছবিই দেখে ফেলবে। দেখতে পাবে এক মহান নেতার বর্ণাঢ্য জীবন ও তাঁর সুমহান আদর্শ। পৃথিবীবাসীর জন্য তাঁর কষ্ট স্বীকার তোমার চোখে জল এনে দেবে।
আম্মুকে তুমি খুব ভালোবাসো তাই না? আলি হাতামির পরিচালনায় ‘মাদার’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৯১ সালে। তোমাদের জন্মের বহু আগে। কিন্তু কাহিনীগুলো কত্তো তরতাজা। একবার দেখো। মাকে নিয়ে ছবি আছে, বাবাকে নিয়ে থাকবে না, তা কি হয়? মাজিদ মাজিদির পরিচালনায় ১৯৯৬ সালে মুক্তি পায় ‘দ্য ফাদার’ ছবিটি। দুটোই দেখবে কিন্তু। মা-বাবার প্রতি কর্তব্য আর সম্পর্কগুলো মধুর কিভাবে হবে- তা শিখতে পারবে। একটা ভালো কথা, ইরানি ছবিগুলো ইউটিউবে সার্চ করার সময় নামের সাথে ইরানি ফিল্ম শব্দটি লিখে দিকে কিন্তু। কারণ একই নামে আরো বেশ কয়েকটি ছবি আছে।
বন্ধুরা, যে ছবিগুলোর কথা লেখা হলো এগুলো দেখতে তোমার স্রেফ ১২ মাস লাগবে। প্রতি সপ্তাহে একটা করে দেখে ফেলো। বাড়াও তোমার শিল্পমনস্কতা। মজা পাও আর নানান দেশের সংস্কৃতি শিখে ফেলো। এটা তোমাকে চমৎকার কাজে দিবে আর বাড়াবে সৃজনশীলতা। তুমি যদি মাজিদ মাজিদি, সত্যজিৎ রায় কিংবা মোরশেদুল ইসলামের মতো চমৎকার চলচ্চিত্র নির্মাতা হতে চাও- এ ছবিগুলো তোমাকে মারাত্মক কাজে দিবে। তুমি ইংরেজি শিখতে পারবে মজায় মজায়। গল্প লেখার আইডিয়া পাবে এমনকি হয়ে যেতে পারো স্ক্রিপ্ট রাইটারও।
তোমাদের জন্য বিশাল আয়োজনে প্রতি বছর ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেন ফিল্ম ফ্যাস্টিভাল হয়। সেখানে তোমার আইডিয়া পাঠিয়ে হয়ে যেতে পারো বিশ্বসেরা। এখন তো সার্চ ইঞ্জিন গুগল তোমাদের হাতের মুঠোয়। আর ইউটিউব তো আছেই। তাহলে আর দেরি কেন? নেমে পড়ো সিনেমার দুনিয়ায়। ভালো মানুষেরা না আসলে পৃথিবীতো খারাপে ভরে যাবে। জানো তো, প্রকৃতি কিন্তু শূন্যস্থান জিইয়ে রাখে না।

Share.

মন্তব্য করুন