রুমানি এক শৌখিন ভ্রমণবিলাসী কাক। কেবল রুমালগুলো নিপুণ কৌশলে পোক্ত দু’টি ঠোঁটের ফাঁকে আটকে তেলেসমাতি হাওয়া হয়ে যায়। ফ্ল্যাটবাড়িটার ভেতরের ব্যালকনি জুড়ে লম্বালম্বি তারে কাপড় শুকানো হয়। রুমাল ইতুর মায়ের দারুণ শখের বস্তু। উনি রোজ অন্তত তিন-চারটি রুমাল নিজ হাতে কেচে ক্লিপ এঁটে দেন তারে। ওমা কী কাণ্ড! পরপর তিনদিন একটা দুটো ফুরফুরে রঙিন রুমাল হাওয়া। তত্ত্ব তালাশ করে জানা গেল ঐ মহাত্যাদর কাকের কাণ্ড। একদিন ইতু তক্কে তক্কে থেকে বমাল ধরে ফেলল রুমাল চোরকে। ধরা পড়ে তারস্বরে ক্রা ক্রা শুরু করলো। এরমধ্যে ইতু কাঁচি দিয়ে তড়িঘড়ি করে ওর লেজের আগা কেটে দিয়েছে। আর তিতু রক্সি পেইন্টের কৌটা থেকে একপোজ হলুদ রঙ লাগিয়ে দিয়েছে পালকে। চিহ্নিত সন্ত্রাসী! এরপরও রুমাল চোর কাকটি ইতুদের জানালার কার্নিশে বসে বসে কুমতলব এঁটেছে। বুয়া কিচেনের বারান্দায় মাছ মাংস কুটতে বসলে লেজা কাটা রুমানি কতবার যে গ্রিলের ফাঁক ফোকর দিয়ে নব নব ছোঁ বিদ্যা প্রয়োগ করেছে। কখনো মুরগির নাড়িভুঁড়ির গিলা কলিজার থলে নিয়ে চোখের পলকে হাওয়া। কখনো বড় এক টুকরো রুইমাছ গায়েব।
রুমানি নাম দিয়েছে ইতু। রুমাল চোর থেকে রুমানি। এত অপমানের পরও লাল ইটের ফ্ল্যাটবাড়িটা ওর খুব প্রিয়। রুমানি রুমানি বলে ইতু চেঁচামেচি করলে একা মনে খুব একচোট হেসে নেয় রুমানি। মানুষগুলো খুব হাড়কিপটে। একটুকরো মাছের পিস একপিস পাউরুটি ছোঁ মেরে তুলে নিলে কী এমন ক্ষতি তাদের। কাক সমাজকেও তো বেঁচে বর্তে থাকতে হবে। দিনভর কত আর ডাস্টবিন ঘাঁটা যায়। ছোঁ বিদ্যা তাই আরও ভালোভাবে রপ্ত করার জন্য ও ছাদে গাছের ডালে মিটিং বসায়।
আজ সাত সকালে খুব খিদে পেয়েছে রুমানির। ইতুদের কিচেনের ছোট বারান্দার গ্রিলে ওঁৎ পেতে ছিল ও। কখন বুয়া উচ্ছিষ্ট পাউরুটি তলানিতে চাসহ কাপ এসে জমা করবে কলের তলে! নাগরিক পাখি, ব্রেকফাস্ট অভ্যেস হয়ে গেছে। ওমা! আজ আবার আমিরুন বুয়া গলাবাজি শুরু করেছে। হায় আমার ছাই কপাল! সাত সক্কালে বজ্জাত কাউয়া ল্যানজা কাটা কাউয়া! রুমানি না তুমানি! বেলাজ বে-শরম। এমন কাউয়া বাপের জন্মে দেহি নাইকা। একটুকরো পাউরুটির লোভেই ৪/এ লেকভিউ অ্যাপার্টমেন্টের কিচেনে ধরনা। ভীষ-ণ ভীষ-ণ মন খারাপ হয়ে গেল আজ।
গতকাল একটু হাওয়া খেতে গেছিল রমনা পার্কে। গ্রীষ্মকালের সাদা রঙের ফুলগুলোর কী ঘ্রাণ। গন্ধরাজ বেলি। স্বর্ণচাপাও ফুটেছে বড় সবুজ গাছজুড়ে। রুমানির মনে হয়েছিল ওগুলো যদি সাদা রঙের পাউরুটি হতো। তখন থেকেই পাউরুটির জন্য মনটা লোভাতুর হয়ে উঠেছিল। নাছোড়বান্দা মনটাকে নিয়ে আর পারা যায় না যেন। ঠুকরে ঠুকরে দু’ এক পিস পাপড়ি খেয়েছিল, কোনো স্বাদ নেই। উড়তে উড়তে হঠাৎ ছোটবেলার বন্ধু পাতকুয়ার সঙ্গে দেখা। বহুদিন পর। ওর নাম পাতকুয়া, কেননা ও পানি দেখলেই চুকচুক করে খাওয়া শুরু করে। সে নর্দমাই হোক আর ডাবের খোসার জমানো পানিই হোক! পাখায় পাখায় কোলাকুলি করল। তারপর ওরা ঝোপাল রাজশিরীষ গাছটায় গিয়ে বসল। ও ঠিক করল আজ সারা শহর টহল দেবে ভ্রমণ করবে উড়ে উড়ে জিরিয়ে জিরিয়ে। বিশাল ছায়া গাছটায় অসংখ্য বাদুড় ঝুলে আছে। পাতকুয়া ক্রা ক্রা করে ছেলেমানুষি আনন্দে বলেই চলেছে, ‘চল দোস্ত, বাদুড়গুলোর সঙ্গে একটু মশকারা করে আসি। দিব্যি ঝুলে ঝুলে দোল খাচ্ছে। ঢঙ দেখে বাঁচি না। বাপ-দাদার সম্পত্তি যেন।’
রুমানি একটা ঠোক্কর দিতেই কাঁচ ম্যাঁচ করে উঠলো বাদুড়গুলো। তুমুল গালিগালাজ অকথ্য ভাষায় শুরু করল ইন্দুরপনা বিশ্রী মুখ খিঁচিয়ে। রুমানিও কম যায় না। সেও শুরু করল প্রাণপণ ক্রোত ক্র্যা… ক্র্যা… ক্র্যা…আ…। বহুদিন পর গলা খুলে একটু ঝগড়াঝাঁটি করতে পেরে রুমানির খুব আহ্লাদ হলো। ধানমন্ডির ফ্ল্যাটবাড়িগুলো বেশি হল্লা চিৎকার করার জো নেই। পারলে ওখানের মানুষগুলো বন্দুকের গুলি ছুঁড়বে যেন। …
যাহোক, গতকাল মনটা ফুরফুরে ছিল, পেটে ক্ষিধে ছিল অবশ্য। আজ তাই সাতসকালে ৪/এ লেকভিউ অ্যাপার্টমেন্টে ইতু কিচেনে সবে একটু নাশতার জন্য এসেছিল। বুয়ার মুখ ঝামটায় মনটা বেমালুম নষ্ট হয়ে গেল। এর আগে একটা পাগলি মতো বুয়া ছিল। সে রোজ মাছ কুটতে বসলে পিত্তথলির সঙ্গে কিছু নাড়িভুঁড়ি আলগোছে রেখে দিত। যেন রুমানি আলগোছে নিয়ে যেতে পারে। বুয়াটা আবার দেশের বাড়ির টুকরো টুকরো গল্প করতো। পাগলিটা পান খাওয়া দাঁত ঝিকিয়ে বলত, ‘দোয়া করিস। দ্যাশে মাইয়াডার বড় অভাব। বেগম সাহেবা একদিন দেখে ফেলে কী ভীষণ রাগারাগি করলেন।’
‘কাকটাকে এভাবে লোভ দেখোচ্ছে কেন! ওটাতো রোজই আসবে। গ্রিলে নোংরা মাখাবে। তোমার আক্কেল দেখে মরে যাই। হোপলেস! হোপলেস!’
তো যাই হোক, আজ মন খারাপ নিয়ে ও ঝট করে মুখ ঘুরিয়ে উড়াল দিল। মান মর্যাদা বলতে কী কিছুই অবশিষ্ট নেই রুমানির। অপমানিত মন নিয়ে উড়তে লাগল রুমানি। ল্যাব এইডের ছাদে এসে বসল। একটু জিরিয়ে উপরে উঠল। আরো উপরে। আবার খানিকটা উড়ে একটা চৌদ্দতলা অফিসের ছাদে খানিকটা জিরিয়ে নিলো। তারপর আবার ওড়ার পালা। তারপর রুমানি ডেমরার দিকে উড়তে লাগল। পাতিকাকের জানে কি মান অপমান বোধ এক রত্তি নেই! … … উড়তে উড়তে মন একটু হালকা হলো। কিন্তু পাখা ব্যথায় খানিক টনটন করে উঠল। ক্লান্তি এলো। আর একটু উড়লেই বিশাল অশ্বত্থ গাছটি। আজ রুমানির মনটা খুব একরোখা আর ব্যথাতুর। উড়ছে… আবার দুই পাখা মেলে… ঐতো দেখা যায় অশ্বত্থ গাছের আবছা ছবি। একেবারে চকচকে পানপাতার মতো পাতাগুলো দেখা যাচ্ছে যেন হাত নেড়ে ওকে ডাকছে। বেশ ক’জন জাত ভাই গাছের ডালে বসে গল্প গুজব করছে। রুমানিকে দেখে পাখায় পাখা মিলিয়ে হ্যান্ডশেক করল।
‘কি ভাইসাব কোন মহল্লায় ঘর গেরস্থি?’
রুমানির মনটা আচানক ভালো হয়ে গেল। ও বিগলিত হেসে বলল, ‘ঐতো ধানমন্ডি লেকের পাড়। আশেপাশের ফ্ল্যাটগুলোয়ই আমার ওড়াউড়ি… দানাপানির ঠিকানা।’
‘তা এত দূর কী মনে করে ভাইজান?’
শুকনো মতো এক পাতিকাক আলাপ জমাতে প্রশ্ন করল, ‘রুমানি মোলায়েম গলায় ক্রা-ক্রা করে বলতে লাগল, ‘আমি সপ্তাহে অন্তত একটি দিন ভ্রমণ করি। শনির আখড়ায় আমার এক জ্ঞাতিভাই আছেন, তাকে দেখতে মনটা খুব আনচান করছে, তাই…।’
‘চল না আমরাও যাই।’ একটু ভ্রমণ না করলে কি পোষায়? মনটাকে তো তরতাজা রাখতে হয়, নাকি?
বয়স্ক এক পাতিকাক বলে উঠল।
রুমানি নামের কাকটি । দিলারা মেসবাহওরা উড়তে লাগল। বহুদিন পর রুমানির মনটাও আকাশের মতোই উদাস আর সুন্দর হয়ে গেল। ভুলে গেল পাউরুটির শোক আর বুয়ার বকাঝকা।
বামদিকের আকাশে ভুবনচিল আর পাতিকাকের ‘ডকফাইট’ চলছে। ওরা দলবেঁধে একটা চারতলার বাড়ির ছাদের রেলিংয়ে বসে জিরিয়েও নিল আর আয়েশ করে ‘ডগফাইট’ দেখল। তিনজন পাতিকাক অতঃপর মনের আনন্দে খেয়াল গাইল। রুমানিও একটা রাগসঙ্গীত গাইল। বেশ জমে উঠেছে ভ্রমণ। হঠাৎ এক ঠোঁটকাটা কাক রুমানির কাটা পাখা আর রক্সি পেইন্টের হলুদ রঙ দেখে ক্রা-ক্রা-ক্রা… করে হইচই করতে লাগল।
‘কী ব্যাপার দোস্তজি! এ আবার অভিজাত মহল্লায় কোন বিষয়?’
রুমানি একটু না ঘাবরিয়ে শান্ত গলায় বলল, ‘ও একটা এক ধরনের সাজ বলতে পার। একটা মানুষ বন্ধু ইতু তার নাম, আমাকে সাজিয়ে দিয়েছে। হাজার কাকের মধ্যে চেহারা চিনতে যেন ভুল না হয়।’
ফাজিল কাকটা তারস্বরে চেঁচিয়ে বলল, ‘তাই নাকি! তাই নাকি! তোমার মানুষ বন্ধু তোমাকে দারুণ ভালোবাসে!’
রুমানির মনটা আবার ছলছল করে উঠল। মনে মনে বলল, ভালোবাসা না ছাই। মান ইজ্জত বাঁচাতে একটা মিথ্যা কথা বলতে হলো! আসলে আমরা পাতিকাকেরা হাউজ ক্রো তাই নাগরিক জীবন ভালোবাসি মানুষের সাথে বাস করতে চাই। আর দাঁড়কাকেরা জঙ্গল ক্রো। তাদের জীবন গ্রামে গঞ্জে গাছগাছালির ঘন জঙ্গলে। ওদের আর চিন্তা কী! আমি ছোটবেলা থেকেই ডাস্টবিন ঘাঁটতে পারি না। ভীষণ দুর্গন্ধ লাগে। লজ্জাও করে। ইতুভাইদের কিচেনে ছোট বারান্দা আমার খুব পছন্দ। ৪/এ যাই পাউরুটি মাছের আঁতপাত মুরগির নাড়িভুঁড়ি খাওয়ার শখে। আর তো সারাক্ষণই জাতভাইদের সঙ্গে উড়ে বেড়াই ছাদে পাথর কুচি খুঁটে খাই কখনো। যেসব নতুন বাড়ি তৈরি হচ্ছে সেসব ছাদে নুড়িপাথর আর ফুল খুঁটে খাই সুযোগ পেলে। সন্ধ্যায় বিকেলে ছাদের চিলেকোঠার কার্নিশে বসে গল্পগুজব করি। ঐ খিদে পেলেই কেবল মাথাটা গড়বড় হয়ে যায়। …
তিনটে চোরাই রুমাল অসংখ্য শুকনো ডালপাতা গুঁজে চমৎকার বাসা বানিয়েছে লেকের ধারে। জারুল গাছের ডালে। কতগুলো ডিম থেকে ছানা ফুটেছে। ওর মধ্যে দুটো কোকিলের ছানা আছে। তাদেরও কম যতড়ব করে না রুমানি। এই উদারতা ওর আছে। নিজের এই উদারতার কথা ভেবে নিজের মনেই একটা মিষ্টি বাতাসের মতো আত্মতৃপ্তি খেলে গেল।
এবার আবার উড়াল। দুটো গাছ লাগোয়া রাজশিরীষ গাছটি। ওখানে জ্ঞাতিভাইটি থাকতো। নাম চুনিয়া। এখনো আছে না বাসা বদল করেছে কে জানে। উড়ে উড়ে গাছের ডালে বসতেই অনেক পাতিকাকই হাসি হাসি মুখ করে এগিয়ে এলো। রুমানি তার জ্ঞাতিভাইয়ের তত্ত্বতালাশ করতে শুরু করল। কাক সমাজে ওকে সবাই চালিয়াত পাতি বলে চেনে। সবই বিধিলিপি। চালিয়াত না হয়েই যেন ওদের উপায় নেই। জীবনধারণের জন্য চালবাজ হয়ে যেতে হয়। রোগামত কাকটা ক্রোও… ক্রোও… করে বলা শুরু করল, ‘একটা দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গেছে ভাই। ‘চালিয়াত পাতি’ তো প্রায় আশপাশের গেরস্থ বাড়ি থেকে মুরগির ছানা ছোট্ট তুলতুলে বেড়ালছানা বাবুই পাখির বাচ্চা তুলে আনতো। অবশ্য খেতাম আমরা সবাই মিলে। অনেক সময় সবাই মিলে ওকে পাঠানো হতো ছানা চুরির ব্যাপারে। কেননা কাজটা ও খুব ভালোভাবে করে আসতো অনেকের চেয়ে সহজে। অনেক দিন ভালো-মন্দ খাবার দাবারের আয়োজন না হলে আমরা সবাই চালিপাতির শরণাপনড়ব হতাম। আজই দুপুরে সামনের মাঠের পরে ঝুপড়ি জামগাছটার পাশের কাপড় ব্যবসায়ীর বাড়ির উঠোন থেকে মুরগির ছানা আনতে গেছিল চুনিয়া। কী সর্বনেশে কাণ্ডরে ভাই কেমন করে বাড়ির দাজ্জাল গিন্নি পলো দিয়ে চালিপাতিকে আটকে ফেলে। এখন আমাদের জরুরি মিটিং হবে। সবার মন খারাপ ভাইরে। একদল লিডার কাক আগেভাগেই কুইক অ্যাকশন শুরু করে দিয়েছে। জানোইতো কাজ সমাজের ঐক বড় গুরুত্বপূর্ণ। এখন পরিকল্পনা হচ্ছে কী করে তুমুল হল্লা করে বন্দী জাতভাইকে উদ্ধার করা যায়। তবে অবস্থা বড্ড থমথমে। সারা দুপুর গোটা তিরিশ পাতিকাক গলার সবটুকু দিয়ে ক্রো ক্রো ক্রো ধ্ববনি তুলে বাড়িঘর মাতিয়ে তুলেছে। কিন্তু সবই নিষ্ফল। গেরস্থ বাড়ির জোয়ান দুই ছেলে অফিস থেকে বাড়ি ফিরেছে। ‘চালিয়াত ভাই’-এর প্রাণনাশের আশঙ্কা আছে। তবু তো আমরা হাল ছাড়ছি না। আমরা আরো ঝাঁক বেঁধে যাবো। প্রচুর প্রতিবাদ বজ্র আওয়াজ তুলবো।
সুযোগমত নিষ্ঠুর গেরস্থবাড়ির মানুষগুলোর মাথায় ঠোক্কর দিয়ে রক্তাক্ত করে দেবো। বড় বটগাছ থেকে একদল ট্রেনিংপ্রাপ্ত কাকও আসছে। আমরা ভেঙে পড়ার পাত্র নই। জীবনমরণ লড়ে যাবো জাত ভাইয়ের জীবনরক্ষার্থে। কিন্তু গেরস্থের ছেলে দুটো মহা ত্যাদড়। … কী বলব আমাদের সব প্রচেষ্টা একসময় ব্যর্থ হয়ে গেল। ওরা দু’ ভাই নিষ্ঠুরভাবে লাঠিপেটা করে মেরে ফেলল ছানাচোর কাককে। তারপর বাঁশের আগায় লটকিয়ে দৃষ্টান্তমূলক মৃত্যুদ-ের নমুনা ঝুলিয়ে দিল। হায়রে মাতম … জাতভাইয়ের জন্য হাজার কণ্ঠে শোকগাথা রচিত হলো ক্রা-য়া- ক্রা… ক্রা!
আর সহ্য হয় না রুমানির। মন তরতাজা করতে এসে কি এক ভয়াবহ স্মৃতি বুকে করে বাড়ি ফেরা। ঘরে তো ফিরতেই হবে। ভারাক্রান্ত মন নিয়ে উড়াল দিল ধানমন্ডির দিকে। পথ আর ফুরাতে চায় না। খানিক জিরিয়ে নেয় অচেনা মহল্লার ছাদে ঝুপড়ি গাছের মগডালে। খিদেও পেয়েছে দারুণ। রুমানির মন কেমন করছে। বুকটা হু হু করছে ছানাপোনাদের জন্য। রুমাল আর গাছের শুকনো ডালপালা এটা-সেটা গুঁজে সদ্য যে বাসা বানিয়েছে সেখানে ছানাগুলো একটু ডাগরডোগর হয়েছে। সারাদিন কী খেয়েছে বাছারা। কোকিলের সৎ ভাবইবোনদের সঙ্গে ওরা হুটোপঠি করতে শিখেছে। তবু এত দীর্ঘ সময় মাকে না দেখে বাছারা না জানি কী হালে আছে? রুমানি আর জিরোয় না। ডানা ব্যথা হয়ে গেছে। তবুও উড়তে থাকে। উড়তে থাকে… উড়তেই থাকে।

Share.

মন্তব্য করুন