বাড়ির সামনে অনেক ভিড় দেখে জাবিরের মেজাজটা একটু খারাপ হলো। এতো সকালে বাসার গেটের সামনে কোলাহল কার ভালো লাগে? রাগে গজগজ করতে করতে বাসায় ঢুকে দাদুর কাছে গিয়ে বসল। দাদু জাবিরের ভাবখানা দেখে জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে দাদুভাই? কার সাথে এতো রাগ করে এলে? আরে, বলবেন না! বাবার সাথে ঈদের নামাজ পড়ে এসে দেখি এখনই কত মানুষ গোশত নেয়ার জন্য বসে আছে। দেখে কার না মেজাজ খারাপ হয় বলেন!
দাদু একটু গম্ভীর স্বরে বললেন- হ্যাঁ, তাতো খারাপ হতেই পারে। তবে এর পেছনে একটা কারণও আছে। কী কারণ? জানতে চাইল জাবির। তবে শোনো একটি হাদিস বলি। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, ‘কোরবানির ঈদের দিন নবী (সা.) বলেছেন, তোমরা ঈদের নামাজের পর পশু জবেহ করবে। যারা আগেই করে ফেলেছ তারা পুনরায় কোরবানি করবে। এক ব্যক্তি তার (দরিদ্র) প্রতিবেশীদের অবস্থা বর্ণনা করে বললো, অনেকেই সারা বছরের মধ্যে এই দিন একটু গোশত খাওয়ার অপেক্ষায় থাকে। নবী (সা.) তার কথার সত্যতা স্বীকার করলেন। সে বললো, আমার কাছে এক বছরের একটি মেষশাবক আছে যা দু’টি বকরির চেয়ে আমার কাছে প্রিয়। আমি কি এটি কোরবানির জন্য জবেহ করতে পারি? রাসূল (সা.) তাঁকে অনুমতি দিলেন। (সহিহুল বুখারি হা: নং ৯০০)
জাবির মনোযোগ দিয়ে হাদিসটা শুনলো। দাদু বললেন, যারা আজ এখানে গোশত নিতে এসেছে তারা হয়তো সারা বছরে কোনো গোশত খাওয়ার সুযোগ হয়নি। আর কোরবানি দেয়ার সামর্থ্যও তাদের নেই। একটু গোশতের জন্য তারা এক বছর অপেক্ষা করে। তাই আমাদের চেয়ে তাদের তাড়াটা বেশি। বুঝলে দাদুভাই? এখন তো আগের মতো এতো বেশি গোশত মানুষকে দান করা হয় না। সবাই রিফ্রেজারেটরে গোশত সংরক্ষণ করে রাখে। তাই দরিদ্র মানুষগুলো পরে এলে যদি না পায় সেই ভয়ে আগেই চলে এসেছে। আর আমাদের কোরবানি তো এক আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই, যা এই দরিদ্র মানুষদের গোশত বিলানোর মাঝে নিহিত আছে। আমাদের প্রিয় নবী (সা) বলেছেন, ‘যেন কোরবানির গোশতের কম পক্ষে তিন ভাগের এক ভাগ গরিব মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেয়া হয়। এক ভাগ নিজেদের আর এক ভাগ আত্মীয়স্বজনদের।’ যদি এই গরিব মানুষগুলো আমাদের কাছে না আসতো তবে আমাদেরকেই কষ্ট করে তাদের ঘরে ঘরে গোশত দিয়ে আসতে হতো। তা না হলো আমাদের কোরবানি শতভাগ শুদ্ধ হতো না। সুতরাং তারা আগে চলে এসে আমাদের কাজ কমিয়ে দিয়েছে। কী বলো দাদুভাই? জাবির মুচকি হেসে বললো, ‘হ্যাঁ ঠিক বলেছেন দাদু, তারা আমাদের কষ্ট অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে।’
তাহলে আমাদের উচিত তাদেরকে ধন্যবাদ দেয়া, তাই না দাদু ভাই? যাও তাদের সবাইকে মিষ্টি খাইয়ে ধন্যবাদ দিয়ে গোশতের জন্য অপেক্ষা করতে বলো। জাবির ফ্রিজ থেকে অনেক মিষ্টি নিয়ে সবার মাঝে ভাগ করে দিলো। কষ্ট করে আসার জন্য ধন্যবাদ দিলো। কোরবানির গরু জবাই করার পর গোশত তৈরি করে জাবির আজ নিজ হাতে অপেক্ষারত মানুষদের দান করলো। জাবির এই কোরবানির গোশত বিলিয়ে মনে এক অজানা প্রশান্তি অনুভব করলো, যা আগে কখনো অনুভব করেনি।

Share.

মন্তব্য করুন