দুনিয়া জুড়ে রয়েছে বিজ্ঞানীদের নানা রকম আবিষ্কার। প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন জিনিস। সেই সাথে আছে রোবট আর ড্রোন। বিভিন্ন কাজের সুবিধার জন্য বিভিন্ন ধরনের রোবট তৈরি হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে বিজ্ঞানীরা তৈরি করলেন পিঁপড়া রোবট।
বিজ্ঞানীরা রোবট পিঁপড়াগুলোকে আকর্ষণীয় করে তৈরি করেছেন। এগুলোকে দেখলে মনে হয় ‘বায়োলজিক্যাল টাইগার’।
পরিশ্রমী হিসেবে পিঁপড়ার দুনিয়া জোড়া খ্যাতি রয়েছে। পিঁপড়ার এই সুখ্যাতির কারণে জার্মানির একদল বিজ্ঞানী রোবট পিঁপড়া তৈরি করেছেন। জীবন্ত পিঁপড়ার মত এরাও পরিশ্রমী এবং দল বেঁধে কাজ করে।
আকারে ক্ষুদ্র হলেও পিঁপড়া থেকে অনেক কিছুই শিখেছে মানুষ। বিশেষ করে পরিশ্রমের কোনো উদাহরণ দিতে হলে সেই আদিকাল থেকেই তুলনা চলে পিঁপড়াদের সাথে। তাই পিঁপড়ার
কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করে বানানো হয়েছে বিশেষ এই রোবট। রোবট পিঁপড়া দেখতে অন্যসব পিঁপড়াদের মত ক্ষুদ্র নয়। এগুলোর এক একটির সাইজ মানুষের হাতের তালুর সমান।
মূলত পিঁপড়ারা যেভাবে খুব সহজেই মাটির নিচ দিয়ে সুড়ঙ্গ তৈরি করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে ঠিক সেভাবে পিঁপড়া রোবটগুলোও বিভিন্ প্রতিবন্ধকতা ভেদ করে চলাফেরা করতে পারে।
এর ফলে ভবনধস বা কোনো স্থানে আটকে পড়া মানুষ সম্পর্কে অনেক দ্রুত ও নির্ভুল তথ্যও
জানতে পারবেন উদ্ধারকাজে নিয়োজিত থাকা ব্যক্তিরা। গবেষণাগারে তৈরি এসব বায়োনিক পিঁপড়ার শরীর ত্রিমাত্রিক প্রিন্টারে তৈরি। পিঁপড়ার পাগুলো নমনীয় সিরামিক দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। চোখে বসানো হয়েছে স্টেরিও ক্যামেরা।
পিঁপড়া যখন রোবট । আতিক হাসানএই পিঁপড়াগুলো সমতলে চলাফেরা করতে পারে। দেয়াল বেয়েও উঠতে পারে। নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে দলগতভাবে কাজ করতে এরা বেজায় পটু।
নিউ জার্সি ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির গবেষকেরা এসব রোবট পিঁপড়া তৈরি করেন। গবেষক দলের প্রধান সিমন গার্নিয়ার জানান, প্রতিটি পিঁপড়া দেখতে খুবই সুন্দর। তবে তাদের স্মৃতিভান্ডার খুবই সীমিত এবং ক্ষমতাও সীমিত।
গবেষকেরা দ্রুতগতির ক্যামেরা ও কাচের বিশেষ পর্দা ব্যবহার করে ফায়ার অ্যান্ট নামক পিঁপড়াপ্রজাতির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেন যারা পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে মাটি বা বালির নিচে অসাধারণ দক্ষতায় স্থিতিশীল সুড়ঙ্গ তৈরি করে।
ঠিক একইভাবে পিঁপড়ারোবটগুলোও তাদের পায়ে লাগানো চাকার সাহায্যে চলাফেরা করতে পারবে। আর এই চাকাগুলো সচল রাখবে অতি ক্ষুদ্রাকৃতির দু’টি মোটর।
আসল পিঁপড়ারা যেভাবে তাদের শরীর থেকে নিঃসৃত এক ধরনের রস শুঁকে শুঁকে দিক ঠিক রাখে তেমনি এই পিঁপড়া রোবটগুলোও নিজেদের পথ ঠিক রাখার জন্য গন্ধের পরিবর্তে আলোকসঙ্কেত ব্যবহার করবে। এ জন্য পিঁপড়া রোবটের সাথে সংযুক্ত থাকছে বিশেষ এক ধরনের আলোক নিঃসরক যন্ত্র।
এই আলো যেন অন্যরা অনুসরণ করতে পারে সেজন্য প্রতিটি রোবটের মাথায় আবার একটি করে অ্যান্টেনাও রাখা হয়েছে।
আবার অ্যান্টেনা দিয়ে রোবট পিঁপড়াগুলোর ব্যাটারি চার্জ করা হয়।
যখন পিঁপড়ারোবটগুলো একই পথে চলাচল করবে তখন নিঃসরিত আলোকের উজ্জ্বলতা বাড়বে। এভাবে এই অ্যান্টেনা থেকে অন্যসব পিঁপড়াদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য সিগন্যাল প্রেরণ করা হয়।
পিঁপড়া যখন রোবট । আতিক হাসানএ সময় কোনো রোবটের বাঁ-দিকে অ্যান্টেনায় বেশি আলো পড়লে সে বাঁ-দিকে এবং ডানদিকের অ্যান্টেনায় বেশি আলো পড়লে সে ডানদিকে যাবে।
এভাবেই বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে আস্তে আস্তে সুড়ঙ্গ বানিয়ে প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছুবে রোবট পিঁপড়া। আর সেখান থেকে সংযুক্ত ক্যামেরার মাধ্যমেই জানা যাবে ঘটনাস্থলের সর্বশেষ অবস্থা।
এসব পিঁপড়াদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পিঁপড়ার শরীরের নিচে সেন্সর বসানো হয়েছে। পিঁপড়াদের চলাফেরার জন্য ওয়ারলেস সিগন্যাল ব্যবহার করা হয়েছে।
কোনো কারণে এরা বিচ্ছিনড়ব হয়ে পড়লে, সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য পথ বেছে নিয়ে একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে। বিজ্ঞানীরা বলেন, দলগতভাবে এরা বেশ কার্যকর হলেও আলাদাভাবে রোবটগুলোর তেমন কোনো বিশেষত্ব নেই।
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন ভবিষৎতে মানুষের পরিবর্তে এই পিঁপড়াগুলো কারখানায় শ্রমিকের কাজ করবে। পাশাপাশি বিনা বাক্যব্যয়ে এদের দিয়ে ঘরদোর সাফ করার কাজও করানো যাবে। অন্যসব পিঁপড়াদের মত রোবট পিঁপড়াগুলোও ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করতে পারে।

Share.

মন্তব্য করুন