সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়/পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’ কিংবা হুমায়ূন আহমেদের ‘রুচির রহস্য ক্ষুধায়। যেখানে ক্ষুধা নেই সেখানে রুচিও নেই।’ এ রকম বহু কথাই আছে ক্ষুধা নিয়ে। মূলত খাওয়ার ইচ্ছাকে ক্ষুধা বলে। আর এ খাবার খাওয়া থেকেই তো আসে মানুষের জীবনীশক্তি।
তবে খাবার খাওয়ার এ ইচ্ছা তথা ক্ষুধা সবার সমান না। কারও বেশি কারও কম। ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করা আবার সহজ নয়। তবে সম্প্রতি মানুষের মস্তিষ্কে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণের নির্দিষ্ট একটি অংশ আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। এতে করে মস্তিষ্কের ওই অংশের নিউরনে কেমিক্যাল ব্যবহার করে ক্ষুধার অনুভূতিকে দমন করার কৌশল উদ্ভাবন করা যাবে বলছেন তারা।
অ্যারিজোনা ইউনিভার্সিটির গবেষকরা ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করতে মস্তিষ্কের সেই অংশকে কাজে লাগাতে চান। এতে করে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমিয়ে মানুষের মুটিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দূর হবে বলেও জানান বিজ্ঞানীরা। মস্তিষ্কের সে অংশকে প্রভাবিত করে ডাক্তাররা অসুস্থ বা ক্ষুধা-মন্দায় ভোগা মানুষকে যেমন চিকিৎসা করতে পারবেন, তেমনি বেশি খাওয়ার অভ্যাস যাদের আছে, তাদের ক্ষুধাও কমিয়ে দিতে পারবেন। অ্যারিজোনা ইউনিভার্সিটির গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন মানবমস্তিষ্কের ইমোশনাল সেন্টার যা এমিগডালা নামে পরিচিত এবং মস্তিষ্কের এই অংশটি আমরা ক্ষুধার্ত নাকি ক্ষুধার্ত না, সেই অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রতিদিন বেঁচে থাকার জন্যই আমাদের খেতে হয়। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে বিশ্বের অন্তত ৭ কোটি মানুষ কোনো না কোনো ইটিং ডিজঅর্ডার বা খাদ্যগ্রহণ জটিলতায় ভুগছে। কেউ বেশি খান, কেউ কম খান বা খাবার নিয়ে অনেকেরই অনীহা আছে। জেনেটিক বা পরিবেশগত কারণ থাকলেও বেশি খাওয়ার কারণে মানুষ মোটা হয়ে যায়। আর এই সমস্যা এখন বিশ্বের অনেক তরুণ-তরুণীর মাঝেই দেখা যাচ্ছে। মস্তিষ্কের হাইপো থ্যালামাস অংশ থেকে নিঃসৃত হরমোন আমাদের ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ঘুমের আকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণ করে।
তবে মানুষ আবেগজনিত কারণেও খায়, যা অ্যারিজোনা ইউনিভার্সিটির গবেষকরা নতুন গবেষণায় প্রমাণ করেছেন। কেমোথেরাপিক সাইলেন্সিং টেকনিকের মাধ্যমে মস্তিষ্কের এমিগডালা অংশের নিউরনকে নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষুধামন্দা বা অতিরিক্ত খাওয়ার সমস্যা দূর করা সম্ভব বলে জানান গবেষকরা। গবেষকরা প্রাথমিকভাবে ইঁদুরের মস্তিষ্কের ওপর তাদের এই গবেষণা চালিয়ে সফলতা পেয়েছেন। ভবিষ্যতে মানবমস্তিষ্কে এই গবেষণা চালানো হবে।

Share.

মন্তব্য করুন